সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১২

নয়নাভিরাম কাপ্তাই হ্রদ, রাঙ্গামাটি।



পর্যটন শহর রাঙ্গামাটি পর্যটকদের পদচারণায় প্রায় সময়ই মুখরিত থাকে। ভ্রমন বিলাসী ও সৌন্দর্য পিপাসু অসংখ্য মানুষের উপচেপড়া ভিড় জমে রাঙ্গামাটি শহরজুড়ে। এ জেলার অসংখ্য দর্শনীয় স্থানগুলো উপভোগ ও দর্শন করতে ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল পযটর্করা ভিড় জমান রাঙ্গামাটিতে। পাশাপাশি বিদেশী পযর্টকদের আগমনও অতুলনীয়।

রাঙ্গামাটির প্রধান আকর্ষণীয় স্থান হলো সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদ। ১৯৬০ সালে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ নির্মানের ফলে সৃষ্টি হয় সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদ। মূলত পানি বিদু্ৎ উৎপাদনের জন্য এই বাঁধ নির্মিত হয়। অসংখ্য পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা আকাবাঁকা বিশাল কাপ্তাই হ্রদে নৌবিহারে ভীষন আনন্দ জাগায়। এতে করে অনুভূত হবে রোমাঞ্চকর অনুভূতিরও । দেশীয় ইঞ্জিন নৌকা,লঞ্চ, স্পিডবোটে দিনভর নৌবিহার করা যেতে পারে। চারপাশে সবুজ পাহাড়ে ঘেরা এই হ্রদের নয়নাভিরাম রূপকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে ঝুলন্ত ব্রিজটি। পর্যটন মোটেলেই অবস্থিত ঝুলন্ত ব্রিজটি, যা পর্যটন এলাকাকে আরও বেশি সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দিত করেছে। সহজেই পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে এটি।

ঢাকা থেকে সরাসরি রাঙ্গামাটিতে চলাচলের জন্য রয়েছে অনেক বিলাসবহুল বাস সার্ভিস। এছাড়া চট্রগ্রাম হয়েও আসা যায় খুবই সহজে। চট্রগ্রামের মুরাদপুর বিশ্বরোডেই রাঙ্গামাটির বাস স্টেশন। সেখান থেকে ছাড়ে বিআরটিসি এবং বিরতিহীন বাস সার্ভিস। কেসি দে রোড থেকেও এস আলম, সৌদিয়া,চ্যালেঞ্জার বাস পাওয়া যায়।

শীতের শুস্ক মৌসুমটাই রাঙ্গামাটিতে বেড়ানোর উপযুক্ত সময়। এ সময় ভ্রমন বিলাসের আনন্দ-আমেজ জমে ওঠে পুরোদম। মূলত বর্ষা শেষের পরপরই ভিড় জমান রাঙ্গামাটিতে। আর এই ভিড় জমে থাকে বসন্তকাল পর্যন্ত। যে কেউ সপরিবারে, বন্ধু-বান্ধব, আত্নীয় স্বজন নিয়ে বেড়িয়ে যেতে পারেন পর্যটন শহর রাঙ্গামাটি। আসুন অন্তত জীবনে একবার হলেও ঘুরে যান প্রাকৃতিক নৈসর্গিক লীলা ভূমি পার্বত্য শহর রাঙ্গামাটি।

সোমবার, ৫ মার্চ, ২০১২

প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনস, কক্সবাজার



কক্সবাজারের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত এই প্রবাল দ্বীপটি সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে একনামেই পরিচিত। টেকনাফ থেকে ১৭ কিমি দূরে বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত এই দ্বীপটি দেখতে খুবই সুন্দর। স্থানীয় ভাষায় এই দ্বীপের নাম �নারিকেল জিঞ্জিরা�। দ্বীপে প্রচুর পরিমাণে নারিকেল গাছ আছে বলে এই নামের উৎপত্তি। চারদিকে সাগরের নীল জলরাশির পাশাপাশি পূর্বদিকে মায়ানমারের সুউচ্চ পাহাড়গুলো এই দ্বীপের সৌন্দর্যকে করে তুলেছে ছবির চেয়েও সুন্দর। এর দক্ষিণে আরেকটি দ্বীপ রয়েছে, যার নাম �ছেড়া দ্বীপ�। এটি মূলত প্রধান সেন্ট মার্টিনসেরই একটি অংশ। জোয়ারের সময় সাগরের পানি বেড়ে গেলে দুই ভূখন্ডের নীচু সংযোগস্থলটি পানির নীচে তলিয়ে গেলে দুটোকে পৃথক দ্বীপ বলে মনে হয়। আর এজন্যই এই নামকরণ করা হয়েছে।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ গিয়ে সেন্টমার্টিনসগামী জাহাজ বা ট্রলারে করে আপনি খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন বাংলাদেশের সর্বশেষ সীমাতে। থাকা-খাওয়ার জন্য উন্নত ও মাঝারি মানের অনেক হোটেল, গেস্টহাউস, রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে।

নয়নাভিরাম কাপ্তাই হ্রদ, রাঙ্গামাটি |



পর্যটন শহর রাঙ্গামাটি পর্যটকদের পদচারণায় প্রায় সময়ই মুখরিত থাকে। ভ্রমন বিলাসী ও সৌন্দর্য পিপাসু অসংখ্য মানুষের উপচেপড়া ভিড় জমে রাঙ্গামাটি শহরজুড়ে। এ জেলার অসংখ্য দর্শনীয় স্থানগুলো উপভোগ ও দর্শন করতে ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল পযটর্করা ভিড় জমান রাঙ্গামাটিতে। পাশাপাশি বিদেশী পযর্টকদের আগমনও অতুলনীয়।

রাঙ্গামাটির প্রধান আকর্ষণীয় স্থান হলো সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদ। ১৯৬০ সালে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ নির্মানের ফলে সৃষ্টি হয় সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদ। মূলত পানি বিদু্ৎ উৎপাদনের জন্য এই বাঁধ নির্মিত হয়। অসংখ্য পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা আকাবাঁকা বিশাল কাপ্তাই হ্রদে নৌবিহারে ভীষন আনন্দ জাগায়। এতে করে অনুভূত হবে রোমাঞ্চকর অনুভূতিরও । দেশীয় ইঞ্জিন নৌকা,লঞ্চ, স্পিডবোটে দিনভর নৌবিহার করা যেতে পারে। চারপাশে সবুজ পাহাড়ে ঘেরা এই হ্রদের নয়নাভিরাম রূপকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে ঝুলন্ত ব্রিজটি। পর্যটন মোটেলেই অবস্থিত ঝুলন্ত ব্রিজটি, যা পর্যটন এলাকাকে আরও বেশি সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দিত করেছে। সহজেই পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে এটি।

ঢাকা থেকে সরাসরি রাঙ্গামাটিতে চলাচলের জন্য রয়েছে অনেক বিলাসবহুল বাস সার্ভিস। এছাড়া চট্রগ্রাম হয়েও আসা যায় খুবই সহজে। চট্রগ্রামের মুরাদপুর বিশ্বরোডেই রাঙ্গামাটির বাস স্টেশন। সেখান থেকে ছাড়ে বিআরটিসি এবং বিরতিহীন বাস সার্ভিস। কেসি দে রোড থেকেও এস আলম, সৌদিয়া,চ্যালেঞ্জার বাস পাওয়া যায়।

শীতের শুস্ক মৌসুমটাই রাঙ্গামাটিতে বেড়ানোর উপযুক্ত সময়। এ সময় ভ্রমন বিলাসের আনন্দ-আমেজ জমে ওঠে পুরোদম। মূলত বর্ষা শেষের পরপরই ভিড় জমান রাঙ্গামাটিতে। আর এই ভিড় জমে থাকে বসন্তকাল পর্যন্ত। যে কেউ সপরিবারে, বন্ধু-বান্ধব, আত্নীয় স্বজন নিয়ে বেড়িয়ে যেতে পারেন পর্যটন শহর রাঙ্গামাটি। আসুন অন্তত জীবনে একবার হলেও ঘুরে যান প্রাকৃতিক নৈসর্গিক লীলা ভূমি পার্বত্য শহর রাঙ্গামাটি।

ভ্রমণ : রোমাঞ্চকর ফাতরার বন



কুয়াকাটার খুব কাছেই রোমাঞ্চকর এই ফাতরার বন। অনেকেই কুয়াকাটা বেড়াতে যান, কিন্তু ফাতরার বনে যান না বা হয়তো নামও শুনেননি। ওই বনে যাওয়ার জন্য ভালো ও নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকাটাও অবশ্য একটা কারণ হতে পারে। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত থেকে ট্রলারে করে খুব সহজেই যাওয়া যায়। গরমের সময়টাতে সমুদ্রে ভয় পাওয়ার মতো যথেষ্ট উত্তাল ঢেউ থাকে। আর এটাও একটা অনাগ্রহের কারণ হতে পারে ফাতরার বনে যাবার। প্রায় দেড় ঘণ্টা ট্রলারে টানা চলার পর চোখে পড়বে সাত-আট কিলোমিটার বিস্তৃত সারি সারি গাছ আর ঘন বনজঙ্গল। দূর থেকে মনে হবে সবুজ বনের দ্বীপ। বনের কোলঘেঁষেই একটা খাল বনের গভীরে চলে গেছে। খালের মধ্য দিয়ে কিছু দূর এগোনোর পরই আমতলী ফরেস্ট রেঞ্জের বাংলো পড়বে। বনের মধ্যে সাজানো-গোছানো একটি পুকুর। এর পাশে বাংলোর মতো একটা বাড়ি। আর আশপাশে দু-একজন মানুষ। এই বনের মাঝেমধ্যে জেলেরা মাছ ধরতে আসে। এ ছাড়া মানুষ বা কোনো বন্যপ্রাণীর আনাগোনাও নেই। চারদিকে শুধুই ঘন বন। চারদিকে এত ঘন জঙ্গলে ভরা কল্পনাও করা যায় না। চারদিকে শুধুই নিস্তব্ধতা। ভয় পাবার মতো পরিবেশ হলেও রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষদের কাছে খুবই ভালো লাগবে। গভীর জঙ্গলের ভেতর শান্ত-কোলাহলমুক্ত এত সুন্দর একটা বাংলো বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই।

যাবেন কীভাবেঃ

ঢাকা থেকে সড়কপথে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। কুয়াকাটায় থাকার জন্য বন বিভাগের রেস্টহাউস ও বেসরকারি হোস্টেল রয়েছে। কুয়াকাটা থেকে ট্রলারে করে ফাতরার বনে যেতে পারেন। ঘন্টা হিসেবে ট্রলার ভাড়া করে নিয়ে ঘুরে দেখে আসুন চমৎকার একটা বন্য পরিবেশ।

ভ্রমণ : বেহুলা-লখিন্দরের বাসরঘর



মা মনসার রোষানল একে একে কেড়ে নিয়েছে চাঁদ সওদাগরের সবক�টি সন্তান। বাকি কেবল লখিন্দর। কিন্তু তাঁকেও কেড়ে নেওয়ার সময় বেঁধে দিয়েছেন মনসা, বাসররাতই হবে লখিন্দরের জীবনের শেষ রাত। কী করবেন চাঁদ সওদাগর? অনেক ভেবে লোহা দিয়ে নির্মাণ করলেন লখিন্দরের জন্য নিশ্ছিদ্র শয়নকক্ষ। কিন্তু তাতেও কি শেষ রক্ষা হলো? কোনো এক ফুটোপথে ঠিকই ঢুকে পড়লেন সাপের দেবী। সুযোগ বুঝে লখিন্দরের পায়ে ছোবল... দিশেহারা বেহুলা... মৃত স্বামীকে কলার ভেলায় তুলে তাঁর ইন্দ্রপুরীতে যাত্রা... নেচে গেয়ে খুশি করতে হবে ইন্দ্রকে...। সেই লখিন্দরের ভিটে কিন্তু এখনো মাথা উঁচু করে ঠায় দাঁড়িয়ে। অন্তত এলাকাবাসীর কাছে আজও তা বেহুলার বাসরঘর নামেই পরিচিত, বগুড়া শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরেই যার অবস্থান।

মূল স্থাপনাটি সমতল হতে বেশ উঁচু এবং বহু স্তরবিশিষ্ট একটি দুর্গ। প্রত্যেক স্তরেই অসংখ্য কক্ষ। সর্বমোট ১৭৮টি কক্ষ আছে এই দুর্গে। এতগুলোর মধ্যে কোনটি বেহুলার বাসরঘর ছিল তার সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ নেই। তা ছাড়া সব কটি কক্ষের আকৃতিগত কাঠামোও প্রায় একই রকম। দুর্গের একদম চূড়ায় ভিন্ন ধাঁচের একটি গোলাকৃতি কক্ষ রয়েছে এবং ধারণা করা হয় এটিই হয়তো বাসরঘর ছিল।

যেভাবে যাবেনঃ

বগুড়া শহর থেকে বাস অথবা সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে আপনাকে নামতে হবে গোকুল বাজারে। তারপর সেখান থেকে ভ্যান অথবা রিকশায় অনায়াসে পৌঁছে যেতে পারবেন বেহুলার বাসরঘরে। রাতে থাকতে চাইলে ফিরে আসতে হবে বগুড়া শহরে। কেননা, এ এলাকার আশপাশে কোনো হোটেল বা মোটেল নেই।

ভ্রমণ : সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়া হাওর



নীল আকাশ যেখানে পানির সঙ্গে খেলা করে, সাদা মেঘ যেখানে পাহাড়ের কোলে ঘুমায়, গাছের সারি যেখানে প্রতিনিয়ত সবুজ পানিতে গোসল করে, আর পানির নিচে যেন রঙিন বনের বসতি। সূর্যমামা আগে এখানে ওঠে, তারপর হাসে; তাড়াহুড়ো করে চাঁদ এসে জলের আয়নায় তার রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে থমকে দাঁড়ায়; ঢেউয়ের কোলে দুলতে দুলতে ঘুমিয়ে পড়ে তারার সারি। ভাবছেন কাল্পনিক কিছু বলছি? না, একদমই না - এই জায়গাটার নাম হল টাঙ্গুয়া হাওরওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষিত।

সুনামগঞ্জের সাহেববাজার ঘাট থেকে ইঞ্জিন নৌকা চারপাশের চৌহদ্দি ছাড়ানো সবুজ দেখে আপনি ভুল করে ভেবে বসতে পারেন যে নিউজিল্যান্ডের কোথাও আছেন। সুরমা নদীর ওপারেই মেঘালয়ের পাহাড় মেঘ কোলে নিয়ে অতিথির জন্য বসে আছে। চোখের সামনে ঠিক যেন নিউজিল্যান্ডের ডেইরি ফার্মের গরুগুলো ঘাস খাচ্ছে। তাদের পেছনে বাঁক খেয়ে উঠে গেছে পাহাড়ের দেয়াল। যত দূর চোখ যায়, সবুজের মখমল। নিচে নীলচে পানি, পানির নিচে শেওলার অস্তিত্ব পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। নলখাগড়ার ডগা ভেসে ভেসে ঢেউয়ের দোলায় নাচছে হাওরজুড়ে।

যাওয়ার পথে আনোয়ারপুর গ্রামে পড়ল পাথরের স্তূপ। এখানে পাথর ভাঙা হয়, হলদে বালির বিছানায় শুয়ে শুয়ে পাথরগুলো রোদ পোহাচ্ছে। যতই সময় যাচ্ছে, ধীরে ধীরে রং বদলাচ্ছে পানির। নীল থেকে কালো, কালো থেকে সবুজ, আবার গাঢ় নীল। এভাবে প্রায় ছয় ঘন্টা পর টাঙ্গুয়া হাওরে পৌঁছা যায়।

বর্ষা মৌসুমে গোটা টাঙ্গুয়াই পরিণত হয় ২০-২৫ ফুট জলের এক স্বচ্ছ অ্যাকুরিয়ামে। হঠাৎ করে কেউ দেখলে নির্দ্বিধায় বঙ্গোপসাগর ভেবে ভুল করবে। এই সেই টাঙ্গুয়া হাওর, যেখানে জল আকাশের রং চুরি করে নীলের ভুবন সাজিয়েছে। মেঘমালা অনেক নিচ দিয়ে উড়ে যায়, দূর থেকে দেখে মনে হবে পানিতে বুঝি তুলোর ভেলা ভাসছে। সীমাহীন এই হাওরে বর্ষাকালে চলে বিশাল ঢেউয়ের রাজত্ব। পানি এতই পরিষ্কার যে ২০ ফুট নিচের ঘাস, গাছ, লতাগুলো মনে হয় অ্যাকুরিয়ামে সাজানো। অচেনা এক পৃথিবী মনে হয় যখন দেখি কোনো রকম ভেলা বা জাহাজ ছাড়াই থইথই পানিতে পইপই ভাসছে ছোট ছোট গ্রাম।

পুরো হাওর গাছের সীমানা দিয়ে ঘেরা। সেই গাছও মাথাটুকু বাদে ডুবে আছে নীলের সমুদ্রে। এখানে বাতাস কখনো ক্লান্ত হয় না, এখানে আকাশের নিচে সাদা মেঘের বুক চিরে দাঁড়িয়ে আছে কচি পাহাড়, আর সেই পাহাড়ের কোলে নাচে উদ্দাম, উত্তাল, দুরন্ত সবুজ জ্যাকেট পরা নীল পানি, হাওরের পানি।

কীভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ - শ্যামলী পরিবহনে ৪০০ টাকা ভাড়া নেবে। শ্যামলী আর ইউনিক ছাড়া অন্য আরোও বাস যায়।তবে ভ্রমণ তেমন আরামদায়ক হবে না। সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে সাহেববাজার ঘাট পর্যন্ত রিকশায়। সেখান থেকে টাঙ্গুয়া হাওরের উদ্দেশ্যে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করবেন, প্রতিদিনের জন্য ভাড়া নেবে তিন হাজার টাকা। হাওরে যেতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। দু-তিন দিনের জন্য নৌকা ভাড়া করলে প্রয়োজনীয় বাজারসদাই করে নেবেন। হাওর ঘুরে রাতটা তাহিরপুর থানার ডাকবাংলোতে থাকতে পারেন।

তাহিরপুরে রাতে থেকে পরদিন ট্যাকেরহাট, বারিক্কাটিলাসহ(বারেকের টিলা) জাদুকাটা নদী ঘুরে সুনামগঞ্জ চলে আসতে পারেন। সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে সকাল , দুপুর ও রাতে বাস ছাড়ে।

সঙ্গে তেমন কিছুই নিতে হবে না, তবে লাইফ জ্যাকেট থাকলে নিয়ে নিতে পারেন। এটা বর্ষাকালে যাওয়ার রাস্তা। শীতকালে নৌকা চলবে না, সে ক্ষেত্রে আপনাকে সুরমা নদী পার হয়ে মণিপুরিঘাট থেকে মোটরসাইকেলে শ্রীপুর বাজারে অথবা ডাম্পের বাজারে গিয়ে টাঙ্গুয়া হাওরে যেতে হবে।

টেকনাফের গেম রিজার্ভ।



প্রধান সড়কের পাশ ঘেঁষে উঁচু-নিচু বিশাল পাহাড়। এই পাহাড়ের নিচে বিশাল গর্জনবাগান। সড়কের পূর্ব পাশে নাফ নদী। তারপর মিয়ানমার সীমান্ত। নীল জলের শান্ত নাফ নদীতে পালতোলা নৌকা আর জেলেদের মাছ ধরার প্রতিযোগিতা, পাহাড়ের পাশে নির্জন সবুজ বনে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। এ রকম আনন্দ উপভোগ করতে হলে আপনাকে যেতে হবে দেশের সর্বদক্ষিণ সীমান্ত শহর টেকনাফের গেম রিজার্ভে। সবাই টেকনাফে আসেন সমুদ্রের দৃশ্য উপভোগ করতে। তবে এখানকার বনানীর আকর্ষণও কম নয়। এখানে আছে হেঁটে ঘুরে দেখার মতো বেশ কিছু জায়গা।


কক্সবাজার শহর থেকে ৮৮ কিলোমিটার দক্ষিণে টেকনাফের দমদমিয়া এলাকায় মুছনী গ্রামে গেম রিজার্ভের অবস্থান। এটি দেশের একমাত্র গেম রিজার্ভ। সড়কপথে কক্সবাজার শহর থেকে সেখানে যেতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। বিশাল এই গেম রিজার্ভ ঘুরে আপনি প্রকৃতি, বন্য পশুপাখি, গাছপালা, ফল-ফুলসহ নানা দুর্লভ দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।

কুদুম গুহা
গেম রিজার্ভের অভ্যন্তরে রইক্ষ্যং এলাকায় কিংবদন্তির কুদুমগুহা অবস্থিত। দুর্গম পাহাড় অতিক্রম করে কুদুম গুহায় যেতে হলে অবশ্যই বনপ্রহরী সঙ্গে নিতে হবে।

পেঁচার দ্বীপ ।



কক্সবাজারের কলাতলী থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চেপে সোজা রেজুব্রিজের কাছেই মারমেইড ইকো রিসোর্ট। রাস্তার ওপর থেকে তাকালে গাছপালার আড়ালে চোখে পড়ে ছোট-বড় অনেক কুটির। বড় রাস্তার ঢাল বেয়ে নিচে নামতেই কানে আসে কলরব। দুই পাশের জলাধারে ঝিকমিক করে ভরদুপুরের রোদ্দুর। অভ্যর্থনা কক্ষে এগিয়ে গেলে কেউ একজন রংচঙে বুনোফুলের গুচ্ছ তুলে দেয় হাতে। তারপর আসে স্বাগত পানীয়, মানে ওয়েলকাম ড্রিংক সদ্য গাছ থেকে পেড়ে আনা ডাব। ডাবের পানি শেষ করতে করতে বাংলো বরাদ্দের কাজ শেষ। যে বাংলোয় থাকার ব্যবস্থা হয়েছে তার নাম একবার শুনে মনে রাখা শক্ত "রোড লাভার স্কুইড"। বাকি গোটা তিরিশেক ভিলা আর বাংলোর নামেরও একই হাল।

কিন্তু ঘরটা সত্যিই মন ভালো করে দেওয়ার মতো। বাইরে স্রেফ কুটিরের মতো দেখালেও ভেতরে মোটামুটি আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা মজুদ। স্নানঘরটায় ঢুকলে মুহূর্তেই মন ভালো হয়ে যায়। প্লাস্টিকের বোতলে ভর্তি বাজারি শ্যাম্পুর বদলে কাচের পাত্রে ভেষজ উপায়ে বানানো শ্যাম্পু। সেটা আবার সবুজ গাছের পাতা দিয়ে কায়দা করে ঢাকা। দুই পাশে দুটো কাঠগোলাপ ফুল গুঁজে দেওয়া। সাবান, শ্যাম্পু রাখা হয়েছে নারকেলের লম্বা একটা খোলের মধ্যে।

মারমেইড ইকো রিসোর্টে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন সব জিনিসপত্র যথাসম্ভব কম ব্যবহার করা হয়েছে। পেঁচার দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশ বহাল রেখেই সব বাংলো তৈরি করা হয়েছে। ইয়োগা সেন্টার, স্পা, নৌকা ভ্রমণ, সম্মেলন কক্ষ, প্রেক্ষাগৃহ সব কিছুরই এখন ব্যবস্থা আছে এই পরিবেশবান্ধব অবকাশ যাপন কেন্দ্রে। মারমেইড রিসোর্টের মূল নকশা করেছেন স্থপতি জিয়াউদ্দিন খান।

নাগরিক কোলাহল নেই। হাঁকডাক নেই। দুপুরের রোদ মরে এলে কুটিরের সামনের বাঁশের বেঞ্চে গা এলিয়ে দিয়ে বসতে ভারি আরাম। এ সময়টা নৌকা ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ার জন্যও অতি উত্তম। বাংলোর সারি আর নারকেল গাছ পেরিয়ে হেঁটে গেলে রেজু খালের পাড়। দেখবেন, নীলচে রং ধরতে শুরু করেছে সবে সাগরের শাখা রেজু খালের পানিতে। পাশ দিয়ে ভেসে যাবে বাহারি সাম্পান। দূরে আদিগন্ত বিছিয়ে থাকা সমুদ্র। নৌকা থামবে ওপারের কোনো এক অজানা চরে। বালুকাবেলায় পা রাখতেই হুটোপুটি করে ছুটে পালাবে লাল কাঁকড়ার দল। দখিনা বাতাসের দোলায় মাথা নেড়ে যেন অভিবাদন জানাবে ঝাউবন। তারপর ইচ্ছেমতো নির্জন সাগরতীরে ছুটোছুটি। কোন ফাঁকে বেলা পেরিয়ে যাবে! ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও ক্ষতি নেই।

যত তাড়াই থাকুক, বোট ক্লাবের পাটাতনে পেতে রাখা ঢাউস কেদারায় একবার বসে যেতে ভুলবেন না যেন। আকাশে পূর্ণচন্দ্র। সামনে সাগরের জল। আশ্চর্য মৌনতায় ডুবে আছে সমস্ত চরাচর। মন চাইলে গা এলিয়ে বসে থাকুন গভীর রাত অবধি। একদম কাকপক্ষীটিও জ্বালাতন করতে আসবে না আপনাকে।

যেভাবে যাবেনঃ
কক্সবাজারের কলাতলী থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চেপে যেতে পারেন পেঁচার দ্বীপে। ভাড়া ২০০ টাকার মতো। মারমেইড ইকো রিসোর্টে বাংলো আছে নানা রকম। এক রাতের ভাড়া ২৫০০-৫০০০ টাকার মধ্যে। বাংলো বুকিংয়ের ব্যবস্থা করে ফেলতে হবে যাওয়ার আগেই।

শনিবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১২

টেকনাফ নেচার পার্ক |



টেকনাফ শহর থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার উত্তরে, মুছনী বন বিটের আওতাধীন দমদমিয়ায় টেকনাফ নেচার পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়। কয়েক হাজার শতবর্ষী গর্জনগাছে ভরপুর বিশাল এই বনের ভেতর ভ্রমণের জন্য রয়েছে তিনটি হাঁটাপথ। এই পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে আপনি ক্লান্ত হলে ভাবনার কিছু নেই, মোড়ে মোড়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিশ্রামাগার। পাহাড়ে তৈরি করে রাখা হয়েছে একাধিক চৌকি। এখানে টাওয়ারে বসে নির্জন বনের হাতি, হরিণ, বানর, নানা পশুপাখির ডাক মনভরে অবলোকন করতে পারেন। দেখবেন পাহাড় থেকে নেমে আসা একাধিক ছড়া। ছড়ার ঠান্ডা ও শীতল জলে শরীর ভিজিয়ে নিতে মন আনচান করবে। নেচার পার্কের বাইরে গাড়ি পার্কিং ও থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। নেচার পার্কটি টেকনাফ গেম রিজার্ভের অন্তর্ভুক্ত।

গহিন বনের সরু কাঁচা পথ ধরে হাঁটলে নজরে পড়ে গাছে গাছে বন্য পশুপাখি এবং সেগুলোর হাঁকডাক। দূর থেকে শোনা যায় হাতির পালের গর্জন। পাহাড়ের চূড়ায় তৈরি করা চৌকিতে উঠে পুরো বনের চিত্র এবং নাফ নদী ও মিয়ানমারের আরাকান সীমান্ত প্রত্যক্ষ করা যায়। বনে হাঁটার সময় হিংস্র বা বন্য প্রাণী সামনে পড়ে গেলে অনেকে এই চৌকিতে উঠে রক্ষা করে। বলতে গেলে প্রায় আড়াই ঘণ্টায় গহিন অরণ্য ঘুরে আসা যায়। বনের ভেতর হাঁটার জন্য আঁকাবাঁকা তিন কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা রয়েছে। দল বেঁধে এই রাস্তায় হাঁটা গেলে আনন্দের মাত্রা বাড়ে।

এখানে ভ্রমণে গেলে আরামদায়ক কাপড় ও জুতা পরে নেওয়া ভালো। রোদ থেকে রক্ষার জন্য চশমা, টুপি ও সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করা যায়। বর্ষায় ছাতা ও পায়ে গামবুট থাকা দরকার। আর শীতকালে মোটা কাপড় থাকলেই যথেষ্ট। বাইনোকুলার অবশ্যই সঙ্গে নিয়ে যাবেন। নিতে হবে খাওয়ার পানি ও হালকা খাবার। কারণ পুরো পার্কের ভেতর এসবের কোনো ব্যবস্থা নেই।

নিসর্গ সহায়তা প্রকল্পের কর্মকর্তা বিশ্বজিত্ সেন জানান, বনের আশপাশে আদিবাসী গ্রামে প্রবেশের আগে অনুমতি নিতে হয়। বনে প্রবেশের সময় ইকো-ট্যুর গাইড সঙ্গে থাকলে কম সময়ে নিরাপদে পুরো বন ভ্রমণ করা যায়। বনের ভেতর যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা একেবারে নিষেধ। ছাড়া বন্য প্রাণীকে খাওয়ানো থেকেও বিরত থাকতে হবে। জোরে আওয়াজ করা যাবে না, যাতে বনের পশুপাখি ভয় পায়। বনের পশুপাখি লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়াও নিষেধ। বন ঘুরে নিয়ে যেতে হবে স্মৃতি; কোনো ফল, ফুল কিংবা লতাপাতা নয়। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে এই গেম রিজার্ভ বেড়ানোর উত্তম সময়।

প্রকৃতি ব্যাখ্যা কেন্দ্র
নেচার পার্কের ভেতর আধুনিক স্থাপত্যকলায় নির্মাণ করা হয় ঐরাবত প্রকৃতি ব্যাখ্যা কেন্দ্র। দ্বিতল এই কেন্দ্রে নানা বন্য পশুপাখি ও ঐতিহাসিক প্রাকৃতিক দৃশ্যপট সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কেন্দ্রের ওপর থেকে দূরে গহিন বনে পশুপাখির বিচরণও সহজে প্রত্যক্ষ করা যায়। এখানে অল্প খরচে রাত-দিন থেকে বনের অজানা তথ্য সংগ্রহ ও অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

চিম্বুক পাহাড়, বান্দরবান |



পাহাড়ের পর পাহাড়। মাঝখানে জেলা বান্দরবান। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতাসম্পন্ন পাহাড়গুলোর অবস্থান এই বান্দরবানে। এর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে বিজয় , তাজিংডন, কেওক্রাডাং, চিম্বুক , ইত্যাদি। পার্বত্য জেলার ১৩টি আদিবাসীর প্রায় সবগুলোর অবস্থান এই বান্দরবানে। আদিবাসীগুলো হচ্ছে চাকমা, মারমা, টিপরা, ম্রো, খুমি, লুসাই, বোম, উসুই, পাংখো, তঞ্চ্যঙ্গা, খ্যাং, ওচাক। তবে মারমা সমপ্রদায়ের লোকসংখ্যাই বেশি বান্দরবানে।

পুরো বান্দারবান জেলাই প্রাকৃতিক দৃশ্যে ভরপুর।বান্দরবান থেকে পুরো রাস্তা আকাবাঁকা উচুনিচু। চিম্বুকে যাওয়ার পথের পাশে রয়েছে অসংখ্য উপজাতির আবাসস্থল। ঘরগুলো মাচার মতো উঁচু করে তৈরি। চিম্বুকের চূড়া থেকে যেদিকে তাকাবেন সেদিকেই শুধু পাহাড় আর পাহাড়। সবুজ-শ্যামল পাহাড়ের দৃশ্য চোখ জুড়ানোর অবস্থা। পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে প্রবাহমান সাংগু নদী যা আপনাকে নিয়ে যাবে অনেক দূরে। স্থানীয় উপজাতীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, চিম্বুকের চূড়ায় দাঁড়িয়ে অনেক সময় মেঘও ধরা যায়।

ঢাকা থেকে বাস/ট্রেন/বিমানযোগে চট্রগ্রাম এসে সেখান থেকে বাসে বান্দরবান যাওয়া যায়। বান্দারবান থেকে চিম্বুকে যেতে হবে জিপ গাড়িতে। যাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় চান্দের গাড়ি। চান্দের গাড়িতে গেলে নামতে হবে বুলি বাজারে। ভাড়া করা জিপ নিয়ে সরাসরি চূড়ায় যাওয়া যায়। নিজস্ব জিপ নিয়েও যাওয়া যায়। বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৩৬৪ টি ছোট-বড় মোড় অতিক্রম করে ২৬ কিঃমিঃ দূরে চিম্বুকে যেতে হবে।

বান্দারবানে থাকার জন্য রয়েছে নানা রকম আবাসিক হোটেল। এছাড়া সরকারী রেস্টহাউসসহ জেলা পরিষদ, সড়ক ও জনপথ, বন বিভাগ, এলজিইডি ও পার্বত্য জেলা পরিষদের রেস্টহাউসও রয়েছে। এছাড়াও বান্দরবান জেলা থেকে ৪.২ কিঃমিঃ দূরে চিম্বুক সড়কের মিলনছড়িতে রয়েছে দি গাইড টু্রস লিঃ এর হিল সাইড রিসোর্ট। এখানে থাকার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি মনোরম কটেজ ঘর ও ডরমিটরি। কটেজগুলোর একক ভাড়া ৭৫০ টাকা দুজন ১০০০ টাকা। পুরো কটেজ ভাড়া নেওয়া যায়। বোম ঘরের ভাড়া একক ৪৫০ টাকা, দুজন ৭০০ টাকা, মারমা ঘরের ভাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা, দুজনের ৪০০ টাকা, ডরমিটরির ভাড়া প্রতি বেড ১৫০ টাকা । বেশি বেড নিলে ভাড়া কম।

চন্ডীমুড়া মন্দির, লালমাই |



কুমিল্লা সদর উপজেলার দক্ষিণ প্রান্তে শহর থেকে সড়ক পথে মাত্র ১৫ কি মি দূরে অবস্থিত প্রকৃতির লীলাভূমি লালমাই পাহাড়। লাল মাটির পাহাড়ের গায়ে শিশির সিক্ত সবুজ ঘাস, কোথাও কাঁশফুল, পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে পাহাড়ি কূলবধূদের কলসি কাঁখে পানি নিয়ে ঘরে ফেরা, ফলজ-বনজ গাছগাছালির সবুজ বনায়ন - এসব মিলিয়ে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নিদর্শন লালমাই পাহাড়। এ পাহাড়ের নামকরনের পেছনে একটি মজার পৌরাণিক কাহিনী চালু আছে। বলা হয় প্রাচীনকালে বিন্দাচল পর্বতে মহামায়া চন্ডী মহাসুর সতী রূপে স্বর্গ মর্ত পাতাল নিপীড়নকারী শন্ডু নিশন্ডু নামক এক মহাসুরকে নিধনকল্পে এক ঘোরতর যুদ্ধে নামেন। সে যুদ্ধে বেশ কিছু অসুর ঘন রথ জঙ্গলে আবৃত এ দুর্গম দ্বীপে পালিয়ে আসেন। মা মহামায়া তখন প্রবল ক্রোধান্বিত হয়ে বায়ুবেগে এ দুর্গম দ্বীপে পাহাড়ের কোলে আশ্রয় নেওয়া অসুরদের নিধন করেন। মায়ের দেহতাপে পাহাড়টির মাটি লাল হয়ে যায়। কিন্তু মাটি লাল হয়ে যাওয়ায় এর নাম পরিবর্তন হয়ে লালমাই পাহাড় নামে পরিচিতি পায়। এ স্থানে যেতে সড়কপথের যোগাযোগই ভালো।

ঢাকা-চট্টগ্রাম-নোয়াখালী-চাঁদপুর রেলপথে লালমাই স্টেশন থাকলেও এখানে আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনের কোন বিরতি নেই। আর তাই ঢাকা-চট্রগ্রাম, ঢাকা-চাঁদপুর বাসযোগে এসে লালমাই বাজারে নামতে হবে। লালমাই বাজার থেকে পশ্চিম দিকে একটু হেঁটে গেলেই দেখতে পাবেন সবুজ গাছ-গাছালি ঘেরা লালমাই আঞ্চলিক স্বাউট প্রশিক্ষন কেন্দ্র। এবার উত্তর দিকে ইটের সলিং করা সড়ক ধরে হাটুন টাঙ্কু টিলা এলাকায় প্রায় দেড় কি.মি পথ। দু�পাশে সারি সারি কাছগাছ আর লালমাটির তৈরি করা সড়কটির উঁচু নিচু স্থান অতিক্রম করার আনন্দটাই আলাদা। টাঙ্কু টিলাটি সমতল ভূমি থেকে প্রায় ২০০ ফুট উপরে। এ টিলার উপর সম্প্রতি পাওয়া গেছে গ্যাসক্ষেত্র। আর এর নামকরন করা হয়েছে লালমাই গ্যাস। এটি এখনো চালু করা হয়নি, না করা হলেও উত্তোলন করে জ্বালিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। পাহাড়ের মাথা কেটে সমান করে কূপের এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা বেষ্টণী দেওয়া হয়েছে। আপনি ভেতরে ঢুকতে পারবে না । তবে চারিদিক ঘুরে দেখতে পারেন। ছবি তুলতে পারেন।

পাহাড়ের উপর গ্যাসফিল্ড কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য চায়ের স্টল রয়েছে। ইচ্ছা করলে চা পানের সঙ্গে একটু বিশ্রাম নিতে পারেন । তবে বেশী দেরি করবেন না। গ্যাসক্ষেত্রের টিলার ১০০ ফুট দক্ষিণে সমতল ভূমিতে রয়েছে কেরোসিন তেলের খনি।

অবশ্য এখন আর এখান থেকে তেল উত্তোলিত হয় না। স্বাধীনতার আগে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তেলের মূল কূপের মুখে সীসা ও অন্যান্য ধাতব পদার্থের মাধ্যমে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে এখনো রয়েছে কূপের অবস্থান, রিজর্ভ টাংকি ইত্যাদি। এবার ঝটপট চলে আসুন আবার বালুপথ মাড়িয়ে গেলেই হাতের ডানপাশে নজরে আসবে ক্ষতবিক্ষত একটি পাহাড়। এটি হচ্ছে লালমাই ফায়ারিং স্পট। এখানে বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার,ভিডিপি সদস্যদের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষন দেওয়া হয়। আপনি ঘুরে দেখতে পাবেন পাহাড়ের গায়ে বিধে আছে অজস্র গুলির অংশ। পাহাড়টির ওপরে উঠলে দেখতে পাবেন ছোট বড় অসখ্য টিলা আর দানব অসুরের হাড়ের বিরাট বিরাট অংশ মাটির সঙ্গে মিশে আছে। ইচ্ছে করলে পাহাড়ি পথ ধরে হাঁটতে পারেন। তবে বেশিদূর যাবেন না। লোকলয়ের বাইরে ছিনতাইকারীর ভয় রয়েছে। পাহাড়ের পাশে বাড়িগুলোতে অসংখ্য বাঁশঝাড়। এ বাঁশঝাড়ে চড়ুই পাখির কিছির মিচির শব্দে আপনি মোহিত হবেন। পাহাড়ে উঠানামা করতে সাবধানতা অবলম্বন করবেন। নতুবা পা ফসকে পড়তে পারেন। এবার ফায়ারিং স্পট থেকে দক্ষিনে দিকে পাহাড় কাটা রাস্তা হয়ে ১ হাজার ফুট অতিক্রম করে এলেই দেখতে পবেন সামনে চাঁদপুর মহাসড়ক। বাম পাশে লালমাই বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্র এবং ডান পাশে লোটাস কামাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। আপনি চাঁদপুর মহাসড়ক ধরে ১ হাজার ৫০০ ফুট পশ্চিমে বরুড়া সড়ক ধরে গেলে দেখতৈ পাবেন লালমাই পাহাড়ের প্রায় ৩০০ ফুট উপরে হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান চন্ডীমুড়া মন্দির।