
টেকনাফ শহর থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার উত্তরে, মুছনী বন বিটের আওতাধীন দমদমিয়ায় টেকনাফ নেচার পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়। কয়েক হাজার শতবর্ষী গর্জনগাছে ভরপুর বিশাল এই বনের ভেতর ভ্রমণের জন্য রয়েছে তিনটি হাঁটাপথ। এই পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে আপনি ক্লান্ত হলে ভাবনার কিছু নেই, মোড়ে মোড়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিশ্রামাগার। পাহাড়ে তৈরি করে রাখা হয়েছে একাধিক চৌকি। এখানে টাওয়ারে বসে নির্জন বনের হাতি, হরিণ, বানর, নানা পশুপাখির ডাক মনভরে অবলোকন করতে পারেন। দেখবেন পাহাড় থেকে নেমে আসা একাধিক ছড়া। ছড়ার ঠান্ডা ও শীতল জলে শরীর ভিজিয়ে নিতে মন আনচান করবে। নেচার পার্কের বাইরে গাড়ি পার্কিং ও থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। নেচার পার্কটি টেকনাফ গেম রিজার্ভের অন্তর্ভুক্ত।
গহিন বনের সরু কাঁচা পথ ধরে হাঁটলে নজরে পড়ে গাছে গাছে বন্য পশুপাখি এবং সেগুলোর হাঁকডাক। দূর থেকে শোনা যায় হাতির পালের গর্জন। পাহাড়ের চূড়ায় তৈরি করা চৌকিতে উঠে পুরো বনের চিত্র এবং নাফ নদী ও মিয়ানমারের আরাকান সীমান্ত প্রত্যক্ষ করা যায়। বনে হাঁটার সময় হিংস্র বা বন্য প্রাণী সামনে পড়ে গেলে অনেকে এই চৌকিতে উঠে রক্ষা করে। বলতে গেলে প্রায় আড়াই ঘণ্টায় গহিন অরণ্য ঘুরে আসা যায়। বনের ভেতর হাঁটার জন্য আঁকাবাঁকা তিন কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা রয়েছে। দল বেঁধে এই রাস্তায় হাঁটা গেলে আনন্দের মাত্রা বাড়ে।
এখানে ভ্রমণে গেলে আরামদায়ক কাপড় ও জুতা পরে নেওয়া ভালো। রোদ থেকে রক্ষার জন্য চশমা, টুপি ও সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করা যায়। বর্ষায় ছাতা ও পায়ে গামবুট থাকা দরকার। আর শীতকালে মোটা কাপড় থাকলেই যথেষ্ট। বাইনোকুলার অবশ্যই সঙ্গে নিয়ে যাবেন। নিতে হবে খাওয়ার পানি ও হালকা খাবার। কারণ পুরো পার্কের ভেতর এসবের কোনো ব্যবস্থা নেই।
নিসর্গ সহায়তা প্রকল্পের কর্মকর্তা বিশ্বজিত্ সেন জানান, বনের আশপাশে আদিবাসী গ্রামে প্রবেশের আগে অনুমতি নিতে হয়। বনে প্রবেশের সময় ইকো-ট্যুর গাইড সঙ্গে থাকলে কম সময়ে নিরাপদে পুরো বন ভ্রমণ করা যায়। বনের ভেতর যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা একেবারে নিষেধ। ছাড়া বন্য প্রাণীকে খাওয়ানো থেকেও বিরত থাকতে হবে। জোরে আওয়াজ করা যাবে না, যাতে বনের পশুপাখি ভয় পায়। বনের পশুপাখি লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়াও নিষেধ। বন ঘুরে নিয়ে যেতে হবে স্মৃতি; কোনো ফল, ফুল কিংবা লতাপাতা নয়। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে এই গেম রিজার্ভ বেড়ানোর উত্তম সময়।
প্রকৃতি ব্যাখ্যা কেন্দ্র
নেচার পার্কের ভেতর আধুনিক স্থাপত্যকলায় নির্মাণ করা হয় ঐরাবত প্রকৃতি ব্যাখ্যা কেন্দ্র। দ্বিতল এই কেন্দ্রে নানা বন্য পশুপাখি ও ঐতিহাসিক প্রাকৃতিক দৃশ্যপট সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কেন্দ্রের ওপর থেকে দূরে গহিন বনে পশুপাখির বিচরণও সহজে প্রত্যক্ষ করা যায়। এখানে অল্প খরচে রাত-দিন থেকে বনের অজানা তথ্য সংগ্রহ ও অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।