বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০১৪

মাছের রাজার দেশে।

ইলিশ রাজ্য চাঁদপুর ।








ঢাকার সদরঘাট থেকে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বেশ কিছু লঞ্চ চাঁদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সুবিধামতো যে কোনো একটিতে চড়ে বসতে পারেন। তাছাড়া বাসেও যেতে পারেন।
বুড়িগঙ্গার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে একসময়ে শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরীকে পাশ কাটিয়ে লঞ্চ এসে পড়বে মেঘনায়। এখান থেকে নদীর দৃশ্যটাও বদলাতে শুরু করে।
বিস্তীর্ণ মেঘনার বুকে ছোট ছোট জেলে নৌকা। ঢেউয়ের তালে দুলে দুলে কেউ জাল টানছে, কেউ আবার টানার জন্য অপেক্ষায়। কেউ আবার শক্ত হাতে ধরে আছেন হাল। রুপালি ইলিশ জালে আটকাতে পেরে কারও কারও মুখে আনন্দের হাসি। কোনো একটি নৌকার দিকে একটু সময় নিয়ে তাকিয়ে থাকলে সদ্য পানি থেকে তোলা জীবন্ত ইলিশের ছটফটানিও চোখে পড়বে।
ঢাকা থেকে লঞ্চে চাঁদপুর পৌঁছাতে সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। সদরঘাট থেকে ছেড়ে মেঘনা নদী পৌঁছুতে সময় লাগে ঘণ্টা দুইয়ের মতো। এখান থেকে চাঁদপুর পৌঁছানো পর্যন্ত বাকি ২ ঘণ্টা সময়ের পুরোটাই দেখা যাবে ইলিশ ধরার দৃশ্য। রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরির মধ্যে চলতে থাকে জেলেদের ইলিশ ধরা।
পদ্মা, মেঘনা আর ডাকাতিয়ার মোহনায় এখন প্রবল স্রোত। চাঁদপুর-লঞ্চঘাট তাই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে শহরের মাদ্রাসা ঘাটে। এই জায়গায় নেমে প্রথমেই বড় স্টেশনে যেতে পারেন। চাঁদপুরে সবচেয়ে বড় ইলিশের মোকাম এটি। এছাড়াও বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে জেলেরা ইলিশ নিয়ে আসেন এখানে।
বাজার ঘুরে ইচ্ছে হলে পছন্দের ইলিশ কিনেও নিতে পারেন। সঙ্গে নিয়ে আসার জন্য বরফ দিয়ে ইলিশ প্যাকেট করারও ব্যবস্থা আছে এ বাজারে।
আশপাশে ছোট ছোট কিছু রেস্তোরাঁ আছে। এখানে খেয়ে নিতে পারেন তাজা ইলিশ ভাজা।
খাওয়া শেষ করে যেতে পারেন হরিণা ফেরিঘাটে। শহর থেকে জায়গাটির দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। হরিণায় পদ্মার ওপারে শরীয়তপুর। এখানে আছে ইলিশের আরেকটি মোকাম। আকারে একটু ছোট। এখানে সব ইলিশই আসে পদ্মা থেকে। এখানেও খুব কাছ থেকে পদ্মায় জেলেদের ইলিশ ধরা দেখতে পাবেন।
হরিণা থেকে ফিরে পড়ন্ত বিকেলে আসতে পারেন শহরের পশ্চিমপাশে। বড় স্টেশন মোলহেড এলাকায় দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় পদ্মা, মেঘনা আর ডাকাতিয়ার সৌন্দর্য। এখানকার শহর রক্ষা বাঁধে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় সন্ধ্যা নামার মনোরম দৃশ্য। সম্প্রতি এখানে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য ‘রক্তধারা’।
চাঁদপুরের সবজায়গায় বেড়াতে হলে ফিরতে হবে রাতের লঞ্চে। যেগুলো ছাড়তে শুরু করে রাত ৯টা থেকে। আর শুধু বাজার বেড়িয়ে ফিরতে চাইলে বিকেলের লঞ্চেই উঠতে পারেন।
প্রয়োজনীয় তথ্য
চাঁদপুর বড় স্টেশন মোকামের বেশিরভাগ ইলিশই চাঁদপুরের নয়। এখানে বরিশাল, ভোলা কিংবা সামুদ্রিক ইলিশই বেশি। চাঁদপুরের ইলিশ চেনার সবচেয়ে সহজ একটি উপায় আছে। এখানকার ইলিশ একেবারে রুপালি রং। আর অন্যান্য জায়গার ইলিশে রুপালি রংয়ের সঙ্গে লালচে আভা আছে। চিনতে না পারলে এখানকার ব্যবসায়ীরা সব ইলিশই চাঁদপুরের বলে চালিয়ে দিতে চেষ্টা করে।
নোনাপানির ইলিশে রুপালি রংয়ের সঙ্গে লালচে আভা থাকে। মিষ্টিপানি বা নদীর ইলিশের রং চকচকে রুপালি হয়।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা-চাঁদপুর রুটে প্রতিদিন চলাচল করে এমভি তাকওয়া, এমভি সোনারতরী, এমভি মেঘনা রাণী, এমভি বোগদাদীয়া, এমভি ঈগল, এমভি আল বোরাক, এমভি তুতুল, এমভি রফরফ প্রভৃতি।
এসব লঞ্চে ঢাকা-চাঁদপুর অথবা চাঁদপুর-ঢাকার ভাড়া প্রথম শ্রেণির একক কেবিন ৩০০-৫৫০ টাকা। প্রথম শ্রেণির দ্বৈত কেবিন ৬শ’-১ হাজার টাকা। তৃতীয় শ্রেণির ভাড়া জনপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা। 

শনিবার, ২৪ মে, ২০১৪

সুন্দরবন ভ্রমণ।



সুন্দরবন ভ্রমনের প্রয়োজনীয় তথ্য

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিশ্বের সেরা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট প্রকৃতির রহস্যঘেরা সুন্দরবন সারি সারি সুন্দরী, পশুর, কেওড়া, গেওয়া এবং গোলপাতা গাছ দৃষ্টিযতদূর যায় সব খানেই যেন কোন শিল্পী সবুজ অরণ্য তৈরি করে রেখেছেন অপরূপ চিত্রল হরিণের দল, বন মোরগের ডাক, বানরের 
চেঁচামেচি, মৌমাছির গুঞ্জন ওবিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের গর্জন 
টেলিভিশনের পর্দায় নয়, ভ্রমণপ্রিয় মানুষ এখন ইচ্ছা করলে যে কোন সময় নিরাপদে ঘুরে আসতে পারেন সুন্দরবন তবেপ্রতিবছর অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে এপ্রিল পর্যন্ত সুন্দরবন ভ্রমণের উত্তম সময় 

বনভূমি  বন্য প্রাণী দেখতে প্রতিনিয়ত সুন্দরবনে ভিড় করছে পর্যটকরা 
প্রকৃতির অপরূপ অনাবিল সৌন্দর্যমন্ডিত রহস্যঘেরা  বনভূমি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়হলেও সেখানে নেই পর্যাপ্ত পর্যটন সুবিধা সুন্দরবন বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার  চিত্রল হরিণের জন্য কিন্তু 
বর্তমানে সেখানে বানর, কুমির,হাঙ্গর, ডলফিন, অজগর  বন মোরগ ছাড়াও রয়েছে ৩৩০ প্রজাতির গাছ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২ প্রজাতির বন্য প্রাণী  ৩২ প্রজাতিরচিংড়িসহ ২১০ প্রজাতির মাছ এসব বন্য প্রাণী  সুন্দরবনের 
নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা প্রতিনিয়ত সেখানে ছুটে যাচ্ছেন 



ঢাকা থেকে কিভাবে যাবেন :
সুন্দরবন যেতে চাইলে ঢাকা থেকে আপনি সরাসরি চেয়ার কোচে মংলা 
বন্দরের পর্যটন ঘাটে পৌছাতে পারেন সেখান থেকে চেয়ার কোচট্রেনে 
খুলনা গিয়ে কোনআবাসিক হোটেলে রাত যাপন করে পরের দিন খুলনা জেলখানাঘাট থেকে লঞ্চে সুন্দরবনে যেতে পারেন
যেভাবে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে হয়
খুলনা কিংবা মংলা থেকে নৌ পথে সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে প্রবেশ করা যায় মংলার অদূরেই ঢাইনমারীতে রয়েছে বন বিভাগের কার্যালয় সেখান থেকে সুন্দরবনেপ্রবেশের আনুষাঙ্গিকতা সারতে হয় পর্যটকদের জনপ্রতি ৫০ 
টাকাবিদেশী পর্যটকদের জন্য ৭০০ টাকাপ্রতি লঞ্চ ২৫শ‘ টাকা  ছোট লঞ্চের জন্য প্রবেশ ফি কমরয়েছে পর্যটকদের সাথে ভিডিও ক্যামেরা থাকলে অতিরিক্ত একশ‘ টাকা বন বিভাগকে দিতে হয় এসব ঝামেলা 
পর্যটকদের পোহাতে হয় না ট্যুরিজম লিমিটেডেরলোকজনই আনুষঙ্গিকতা সেরে নেবে ট্যুরিজম কর্তৃপক্ষকে শুধুমাত্র নির্ধারিত / হাজার টাকা 
পরিশোধ করলেই তিন রাত দুদিন সুন্দরবনে ভ্রমণ  থাকা-খাওয়ারব্যবস্থা করে দিবে তারা



সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানসমূহ :
সুন্দরবনের কিছু মনোমুগ্ধকর স্থান রয়েছে যেখানে না গেলে আপনার 
সুন্দরবন যাওয়া স্বার্থক হবে না যেমন হিরণ পয়েন্টদুবলার চর
শরণখোলাছালকাটা,টাইগার পয়েন্ট টাওয়ারটাইগার পয়েন্ট সি বিচ
জামতলা সি বিচসাত নদীর মুখকালীরচর উলেস্নখযোগ্য
ভ্রমণকালে যা সঙ্গে রাখতে হবে :
ভ্রমণকালে সুপেয় পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখা জরুরি এছাড়া প্রাথমিক 
চিকিসার বাক্স  অভিজ্ঞ টুর অপারেটর বন কর্মকর্তার অনুমতি প্রাপ্তির পর ভ্রমণকালেসময়ে সুদৰ  সশস্ত্র বন প্রহরী
সুন্দরবন ভ্রমণে কি কি সঙ্গে নিবেন :
-প্রয়োজনীয় ব্যবহারের কাপড়
-এক জোড়া কেডস্
-শীতবস্ত্রের সঙ্গে একটি করে বস্নাঙ্কেট
-রেডিও
-ক্যামেরা
নাগরিক জীবনের শত ব্যাস্ততায় আপনি যখন ক্লান্ত তখনই ঘুরে দেখে 

আসতে পারেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি সুন্দরবন