মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

ভ্রমণ :: অসময়ে কক্সবাজারে।





নীলাকাশে সাদা মেঘের ভেলা, দরিয়ায় বড় বড় ঢেউ আর প্রায় পর্যটকশূণ্য সৈকত কেবল এ সময়টাতেই দেখা যায় কক্সবাজারে।
তাই নির্জনে বেড়াতে যাদের পছন্দ, নিরবতার মাঝে প্রকৃতির রূপ খুঁজতে ভালোবাসেন যারা, একটু সময় বের করে বেড়িয়ে পড়ুন দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে।
ভ্রমণের মৌসুম নয় বলে এ সময়টাতে কক্সবাজার ভ্রমণে বাড়তি কিছু সুবিধা আছে। অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন ভ্রমণ খরচ অনেকটাই কম। সেপ্টেম্বরের শেষ অবধি এখানকার সব হোটেলেই আছে শতকরা ৪০ থেকে ৬০ ভাগ পর্যন্ত মূল্য ছাড়। এছাড়া পর্যটকের সমাগম কম বলে কক্সবাজারের আশপাশের জায়গায় যেতে বিভিন্ন পরিবহনের অতিরিক্ত ভাড়াও গুণতে হবে না। 
কক্সবাজার ভ্রমণে আকর্ষণীয় জায়গা হল সমুদ্র সৈকত। বালুকাবেলায় বসে উপভোগ করতে পারেন নীল সমুদ্রের সৌন্দর্য। ত্রিশ টাকা ঘন্টায় ব্যবহার করতে পারবেন সৈকতের আরাম চেয়ারগুলো। সমুদ্র স্নানও করতে পারেন। তবে এ সময়ে খুব সাবধানতার সঙ্গে সমুদ্রে নামুন। সৈকতে লাল পতাকা নির্দেশিত সময়ে অবশ্যই সমুদ্র স্নানে নামবেন না। অন্যান্য সময়ে নামলেও বেশ সাবধানতার সঙ্গে খুব কাছাকাছি থাকতে চেষ্টা করে স্নান শেষ করে ফেলুন। সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তের সময় সমুদ্র ‘মিস’ করবেন না।
কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের প্রধান তিনটি জায়গা হল লাবনী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট এবং কলাতলী পয়েন্ট। পশ্চিম দিক থেকে যথাক্রমে পূর্ব দিকে এ তিনটি সৈকতের অবস্থান। এগুলো ছাড়া কোথাও সমুদ্র স্নানে নামা নিরাপদ নয়। তবে একটু পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকের সৈকত নির্জনতায় ঘেরা। এ জায়গাগুলোতে হেঁটে বেড়াতে ভালো লাগবে সবার। 
সৈকত বেড়ানোর ফাঁকে যেতে পারেন পারেন হিমছড়ি কিংবা ইনানী। হিমছড়িতে আছে পাহাড় আর সমুদ্রের মিতালি। আরও আছে ছোট ছোট পাহাড়ি ঝরনা, স্থানীয় নাম ছড়া। বর্ষায় এ ছড়াগুলো কিছুটা প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
কক্সবাজার সৈকত থেকে প্রায় বারো কিলোমিটার দূরে ইনানীর সমুদ্র সৈকত একটু ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। অনেকটা মিল আছে সেন্টমার্টিনের প্রবালপূর্ণ সৈকতের সঙ্গে। হিমছড়ি থেকে আরও প্রায় আট কিলোমিটার দূরে এ সৈকত।

দলের আকার অনুযায়ী জায়গা দুটি ভ্রমণের জন্য ব্যবহার করতে পারেন ব্যাটারি চালিত রিকশা, অটো রিকশা কিংবা খোলা জিপ। ৬শ’ থেকে আড়াই হাজার টাকায় অর্ধেক দিনের জন্য ভাড়ায় পাওয়া যাবে এ বাহনগুলো। 
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যেতে পারেন সড়ক ও আকাশপথে। ঢাকা কক্সবাজার যায় সোহাগ পরিবহন, টি আর ট্রাভেলস, গ্রীন লাইন পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সেন্টমার্টিন পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহনের এসি বাস। ভাড়া ১ হাজার ৭শ’ থেকে আড়াই হাজার টাকা।
এছাড়া এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী, ইউনিক, ঈগল ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসে ভাড়া সাড়ে ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকা।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ার, রিজেন্ট এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান নিয়মিত চলাচল করে কক্সবাজারের পথে।
কোথায় থাকবেন
কক্সবাজারে পর্যটকদের  জন্য বেশ কিছু হোটেল আছে। ধরণ অনুযায়ী এসব হোটেলের প্রতি দিনের রুম ভাড়া ১ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা।
কক্সবাজারের সর্বাধুনিক হোটেলগুলো হল কলাতলী সড়কে ওশেন প্যারাডাইস (০৩৪১৫২৩৭০, ৫২৩৭৯) ও লং বিচ (০৩৪১৫১৮৪৩-৬), সৈকত সড়কে কক্স টুডে (০৩৪১৫২৪১০-২২) ও সি-গাল (০৩৪১৬২৪৮০-৯১)।
এছাড়া কক্সবাজার সৈকতের কাছাকাছি অন্যান্য ভালো মানের হোটেল হল: কলাতলী সৈকতে হোটেল সি ক্রাউন (০৩৪১৬৪৭৯৫), সুগন্ধা সৈকতে হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইস(০১৫৫৬৩৪৭৭১১), লাবনী সৈকতে হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল (০৩৪১৬২৮৮১-৫), হোটেল মিশুক (০৩৪১৬৪৩২০) ইত্যাদি।

প্রয়োজনীয় তথ্য
সমুদ্র স্নানে নামার আগে জোয়ার ভাটার তথ্য জেনে নিন। সৈকতে টাঙানো সবুজ পতাকা জোয়ারের নির্দেশ করে। এসময়ে সমুদ্রে নামা নিরাপদ। ভাটার সময় লাল পতাকা থাকে। এ সময়ে সমুদ্র স্নানে নামা যাবে না। 
একই সঙ্গে একটু উপর নিচ করে দুটি লাল পতাকা উড়ানো জায়গা বরাবর চোরাবালি কিংবা চোরা খাল নির্দেশ করে।
সাঁতার জানা থাকলেও সমুদ্রে নামার সময় লাইফ জ্যাকেট কিংবা টিউব নিয়ে নিন। সমুদ্রে নামতে ট্রাউজার কিংবা হালকা পোশাক পরুন। লুঙ্গি ও শাড়িজাতীয় কাপড় পরে সৈকতে নামবেন না।
কোনও রকম ময়লা আবর্জনা সৈকতে ফেলবেন না।  




ভ্রমণ :: শরতে কাশবনে ..




শরতের শুভ্র কাশবনে বেড়ানোর সময় এখনই। দেশের বিভিন্ন জায়গার নদীতীর, খোলা প্রান্তর ছেয়ে গেছে কাশফুলে। ঢাকা শহর এবং আশপাশে এমন অনেক জায়গা আছে। চলুন সেসব কাশবন থেকে ঘুরে আসি 
আফতাবনগর
ঢাকা শহরের মধ্যেই আফতাবনগর আবাসিক এলাকার পেছনের দিকটায় ছেয়ে গেছে কাশফুলে। বিটিভি ভবন পেছনে ফেলে রামপুরা সেতু পেরিয়ে ওপার থেকে হাতের ডানে গেলে দেখা মিলবে শুভ্রতায় ঘেরা ভিন্ন এ জগতের।

ওয়াশপুর
ঢাকার কাছেই কাশবনের এই রাজ্য। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ পেরিয়ে বসিলা সেতুর আগে হাতের বাঁয়ে গেলে বিস্তীর্ণ এ কাশবনের দেখা মিলবে। এখানে বিভিন্ন হাউজিংয়ের জায়গাগুলোই মূলত এখন পরিণত হয়েছে কাশফুলের বাগানে।
ঢাকা উদ্যান
মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ ধরে গাবতলী যেতে হাতের বায়ে ঢাকা উদ্যান হাউজিং। এখান থেকে একটি সড়ক চলে গেছে বুড়িগঙ্গা নদীর দিকে। এ হাউজিংয়ের বালু ভরাট করা প্লটগুলো এখন কাশবনে পরিপূর্ণ। এখানেও বেড়িয়ে আসতে পারেন কোনো এক বিকেলে। 
আশুলিয়া
ঢাকার মিরপুর থেকে বেড়িবাঁধ যেতে আশুলিয়ার আগেই পাওয়া যাবে বিশাল কাশবন। মূলত রাজধানীর উত্তরা আবাসিক এলাকার পেছনের দিক এটি। উত্তরার মাসকট প্লাজার সামনের রাস্তা ধরেও এসব কাশবনে যাওয়া যায়।
ঝিলমিল আবাসিক এলাকা
বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু পেরিয়ে মাওয়া সড়কে যাওয়ার পথে চোখে পড়বে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সাদা কাশবন। এটিই রাজউকের ঝিলমিল আবাসিক এলাকা। এখানকার বালু ভরাটকরা খালি প্লটগুলোই ভরে গেছে কাশফুলে। 

লৌহজং
মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে লৌহজং সদরের ওপারের চরগুলো এখন কাশবনে পরিপূর্ণ। লৌহজং থানার ওপারের নদীর চরে পদ্মা রিসোর্টের আশপাশের পুরো এলাকাই শুভ্র কাশফুলে ছেয়ে আছে। এছাড়া মাওয়া ঘাট থেকে ওপারের চরগুলোও কাশফুলে ভরা এখন। ঢাকার ফুলবাড়িয়া কিংবা বাবুবাজার সেতু, লৌহজং যাওয়ার বাস সার্ভিস আছে। এছাড়া বাসে মাওয়া যেয়ে সেখান থেকেও সহজেই লৌহজংয়ে যাওয়া যায়। ভাড়া ৬০-৭০ টাকা। 
যমুনার চর
আরিচা লঞ্চ ঘাটের আশপাশের এলাকার চরগুলোতেও এখন বিস্তর কাশবন। লঞ্চঘাট থেকে হাতের বাঁয়ে যমুনার তীর ঘেঁষে গ্রামের দিকে গেলে বিস্তীর্ণ কাশবনের দেখা মিলবে।

ঢাকার গাবতলী থেকে শুভযাত্রা ও লাক্সারি বাস সার্ভিসে যেতে পারেন অরিচা। ভাড়া ৮০ থেকে ১শ' টাকা জনপ্রতি। সেখান থেকে ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করে যেতে হবে চরে।
প্রয়োজনীয় তথ্য
যে কোনো ছুটির দিনে কিংবা অফিস শেষে একটু সময় বের করেই বেড়িয়ে আসতে পারেন কাশবন থেকে। তবে এসব জায়গায় একাকী বেড়াতে না যাওয়াই ভালো। জায়গাগুলোর বেশিরভাগই নির্জন ও জনমানবহীন। ভ্রমণে যাওয়ার সময় সঙ্গে হালকা খাবার ও পানীয় নিয়ে নিন। 


ধন্যবাদ। 

ভ্রমণ :: বিছনাকান্দি।




বর্তমানে সিলেটের সব থেকে বেশি জনপ্রিয় এই জায়গায় বেড়াতে যাওয়া সময় এখনই। সিলেট শহর থেকে বিছানাকান্দির দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার।
সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলার গোয়াইনঘাটের রস্তুমপুর ইউনিয়নে বিছানাকান্দি। এর পরেই ভারতের মেঘালয় রাজ্য। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়গুলো একটু বেশিই সবুজ, পাহাড়ের গায়ে ঝরণাগুলোও প্রাণবন্ত। তবে এসব ঝরণার কাছে গিয়ে পানি ছোঁয়ার কোনও সুযোগ নেই। শুধুই দুই চোখ ভরে উপভোগ করা। কারণ সবগুলোই ভারতে। সিলেট শহর থেকে হাদারপাড় হয়ে গেলে পিয়াইনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে যাওয়া যাবে। আর যাওয়ার পথে ঢুঁ মারতে পারেন মালনিছড়া চা-বাগান। এ সময়ে বিছনাকান্দিতে প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্যের সবটুকুই ঢেলে দিয়েছেন নিরলসভাবে। চারিদিকে শুধুই সবুজ আর সবুজ। উপরে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। বিছনাকান্দির বিছানায় পৌঁছুতে পৌঁছুতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবেন ভ্রমণপ্রেমী যে কোন মানুষ।
কীভাবে যাবেন
বিছনাকান্দি যেতে প্রথমে যেতে হবে বিভাগীয় শহর সিলেটে। সড়ক, রেল ও আকাশ পথে ঢাকা থেকে সরাসরি সিলেট যেতে পারেন।
চট্টগ্রাম থেকেও সিলেটে যাওয়া যায়।
ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সিলেটের বাসগুলো ছাড়ে। এ পথে গ্রীন লাইন পরিবহন, সৌদিয়া এস আলম পরিবহন, শ্যামলি পরিবহন ও এনা পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ৮শ’ থেকে ১১শ’ টাকা।
এছাড়া শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক সার্ভিস, এনা পরিবহনের নন এসি বাস সিলেটে যায়। ভাড়া ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা। এনা পরিবহনের বাসগুলো মহাখালী থেকে ছেড়ে টঙ্গী ঘোড়াশাল হয়ে সিলেট যায়।  
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৪টায় ছাড়ে কালনী এক্সপ্রেস। ভাড়া দেড়শ থেকে ১ হাজার ১৮ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১৪৫ ১ হাজার ১শ’ ৯১ টাকা।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ার, রিজেন্ট এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান প্রতিদিন উড়াল দেয় সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে।
বিভিন্ন পথে যাওয়া যায় বিছনাকান্দি। তবে হাদারপাড় থেকে সবচেয়ে সহজ ও ভালো যাতায়াত ব্যবস্থা রয়েছে।
সিলেট শহরের আম্বরখানা থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় প্রথমে যেতে হবে হাদারপাড়। জনপ্রতি লোকাল ভাড়া ৭০ থেকে ৮০ টাকা। রিজার্ভ নিলে ভাড়া পড়বে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা। সেখান থেকে ইঞ্জিন নৌকায় যেতে হবে বিছনাকান্দি।
কয়েকজন মিলে রিজার্ভ নেওয়াই ভালো। সারাদিনের জন্য ভালো মানের একটি ইঞ্জিন নৌকার ভাড়া পড়বে ১২শ’ থেকে ২ হাজার টাকা। তবে দলে লোক কম হলে লোকাল ইঞ্জিন নৌকাও পাওয়া যাবে।
এছাড়া বিছনাকান্দি যাওয়ার অন্য পথটি হল সিলেট শহর থেকে বাস কিংবা যে কোন বাহনে চড়ে আগে যেতে হবে জাফলংয়ের পথে সারিঘাট। সেখান থেকে অটোরিকশায় গোয়াইনঘাট হয়ে বিছানাকান্দি।
কোথায় থাকবেন
ব্যস্ত মানুষেরা ঢাকা থেকে রাতের বাসে যাত্রা করে সারাদিন ঘুরে আবার পরের রাতে ফিরতে পারেন।
তবে এই জায়গায় সময় নিয়ে বেড়াতে ভালো লাগবে। সারাদিন বেড়ানো শেষে রাতে এসে থাকতে হবে সিলেটে।
সিলেট শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল আছে। শহরের নাইওরপুল এলাকায় হোটেল ফরচুন গার্ডেন ০৮২১-৭১৫৫৯০। জেল সড়কে হোটেল ডালাস ০৮২১-৭২০৯৪৫। ভিআইপি সড়কে হোটেল হিলটাউন ০৮২১-৭১৮২৬৩। লিঙ্ক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন ০৮২১-৮১৪৫০৭। আম্বরখানায় হোটেল পলাশ ০৮২১-৭১৮৩০৯। দরগা এলাকায় হোটেল দরগাগেইট ০৮২১-৭১৭০৬৬। হোটেল উর্মি ০৮২১-৭১৪৫৬৩। জিন্দাবাজারে হোটেল মুন লাইট ০৮২১-৭১৪৮৫০। তালতলায় গুলশান সেন্টার ০৮২১-৭১০০১৮, ইত্যাদি। এসব হোটেলে ৫শ’ থেকে ৪ হাজার টাকায় রাত যাপনের ব্যবস্থা আছে।
সাবধানতা 
বর্ষায় পাহাড়ি ঢল থাকে বলে পিয়াইন নদীতে এ সময়ে স্রোত খুব বেশি। তাই বিছনাকান্দি যাওয়ার পথে ছোট নৌকা পরিহার করা উচিত। ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে বেড়াতে চেষ্টা করুন। এছাড়া এখানকার নৌকাগুলোতে লাইফ জ্যাকেট থাকে না। যারা সাঁতার জানেন না, সঙ্গে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট নিবেন।
এছাড়া বিছনাকান্দি জায়গাটি আসলে নো ম্যানস ল্যান্ড ঘেঁষা। সীমান্তে চলাচলের সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। সীমান্ত যাতে অতিক্রম না করেন সেদিকে খেয়াল রাখুন। 

ধন্যবাদ সবাইকে। 


সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান।





রাজধানী থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত জাতীয় এ উদ্যান থেকে দিনে দিনেই বেড়িয়ে আসা সম্ভব।সাতছড়ি’র অর্থ সাতটি ছড়া। পাহাড়ে ছড়ার অর্থ ঝরনা। এসব পানির ধারার কিছু কিছু এখনও দেখা মেলে। প্রায় ২৪৩ হেক্টর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত সাতছড়ি জঙ্গল রঘুনন্দন পার্বত্য বনভূমির অংশ।
বনের প্রাচীন ইতিহাস হচ্ছে, জুম চাষ করতে করতে এক সময় রঘুনন্দন পাহাড়ের বনভূমি শেষ হয়ে যায়। পরে ১৯০০ সালের দিকে কাঠ উৎপাদনের জন্য প্রচুর গাছ লাগান হয়। ১৯১৪ সালে সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে খাতায় নাম লেখায় এই পাহাড়ি এলাকা।
২০০৫ সালে নির্দিষ্ট কিছু জায়গা নিয়ে জাতীয় এ উদ্যান প্রতিষ্ঠিত হয়।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান যেন পাখির রাজ্য। প্রায় ১৯৭ প্রজাতির জীবের বসবাস। এর মধ্যে ১৪৯ প্রজাতিই পাখি। এছাড়া ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৬ প্রজাতির উভচর প্রাণীর সন্ধান মিলেছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে।

বনের উল্লেখযোগ্য পাখি হল ফিঙ্গে, কাঠ ঠোকরা, মথুরা, বন মোরগ, ধনেশ, লাল ট্রগন, পেঁচা, সুই চোরা ইত্যাদি। প্রাণীদের মধ্যে আছে মুখপোড়া হনুমান, চশমা হনুমান, উল্লুক, লজ্জ্বাবতী বানর, কুলু বানর, মায়া হরিণ, খিদির শুকর, বন্য শুকর, বেজি, গন্ধ গোকুল, বনবিড়াল, মেছো বাঘ, কটকটি ব্যাঙ, গেছো ব্যাঙ, গিরগিটি, বিভিন্ন রকম সাপ, গুইসাপ প্রভৃতি।
পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ৩টি হাঁটা পথ আছে। একটি আধা ঘন্টার, আরেকটি এক ঘন্টার এবং অন্যটি তিন ঘন্টার পথ।
আধা ঘন্টা হাঁটা পথের শুরু সাতছড়ি রেঞ্জ কার্যালয়ের প্রবেশ মুখে। প্রধান রাস্তার পাশে ‘ওয়াইল্ডারনেস এরিয়া’ চিহ্নিত সড়কের দক্ষিণ দিক থেকে এ পথের শুরু। চক্রাকারে ঘুরে আবার একই জায়গায় এসে পথের শেষ হয়েছে।
প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথে একটি মরা শুকনা নদী অতিক্রম করা ছাড়া বাকি পথ ঘাসে ঢাকা।
এ পথেই রয়েছে সাতছড়ি উদ্যানের ভেতরে একমাত্র ত্রিপুরা বা টিপরা আদিবাসীপাড়া।
এই আধা ঘন্টার পথের শুরুতে ডান দিকের প্রথম বাঁক ঘুরলেই চলে যাওয়া যায় টিপরা পাড়ায়। আর বাঁক না ঘুরে আরও কিছুটা পথ এগিয়ে দ্বিতীয় বাঁক ঘুরলেই এক ঘন্টার পথের শুরু।

একটু সকালের দিকে গেলে এ পথে দেখা মিলতে পারে উল্লুকের মতো বিপন্ন প্রাণী। তবে সেজন্য থাকতে হবে চুপচাপ।
তিন ঘন্টার হাঁটা পথটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬ কিলোমিটার। অন্য দু’পথের পাশ থেকেই এর শুরু। আর পূর্ব দিকের চাকলাপুঞ্জি চা বাগানের কাছাকাছি প্রধান সড়কে এসে শেষ হয়েছে।
শুকিয়ে যাওয়া পানির ধারা থেকে তৈরি হয়েছে বেশিরভাগ পথ। উল্লুক, চশমা হনুমান, মুখপোড়া হনুমানসহ নানান রকম পাখির দেখা মিলতে পারে এ পথে।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে যে টিপরা পাড়াটি আছে সেখানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ২৪টি পরিবারের বসবাস। বনে ঘুরতে ঘুরতে বেড়িয়ে আসতে পারেন টিপরা পাড়া থেকে।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে প্রবেশের জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক জনপ্রতি ২০ টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও ছাত্র জনপ্রতি ১০ টাকা। বিদেশীদের জন্য ৫ আমেরিকান ডলারের সমমূল্যের টাকা।

উদ্যানের বনভোজন কেন্দ্র ব্যবহার করতে চাইলে জনপ্রতি খরচ ১০ টাকা। এছাড়া গাড়ি, জিপ ও মাইক্রোবাস পার্কিং ২৫ টাকা।
উদ্যানের নির্ধারিত গাইড সেবার খরচ প্রতি ঘন্টায় ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হল সিলেটগামী যে কোনও বাসে মাধবপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে নেমে সেখান থেকে বাস কিংবা ম্যাক্সিতে সাতছড়ি।  

এছাড়া ঢাকা থেকে রেল ও সড়কপথে হবিগঞ্জ গিয়ে সেখান থেকেও সাতছড়ি যাওয়া যায়।
ট্রেনে হবিগঞ্জ যেতে হলে নামতে হবে সায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন। এখান থেকে শহরের দূরত্ব প্রায় ১৪  কিলোমিটার।
ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। দুপুর ২টায় প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস। বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০টায় ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস।

সিলেট শহরের আশপাশে।




একদিনেই বেড়ানো যায় এসব জায়গাগুলোতে। শহর সিলেট আর আশপাশের কিছু দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ বৃত্তান্ত নিয়েই এবারের বেড়ানোর আয়োজন।
হযরত শাহজালাল (র) এর মাজার
সিলেট শহর ভ্রমণে সর্বপ্রথম ঢুঁ দিতে পারেন হযরত শাহজালাল (র) এর মাজারে। শহরের প্রাণ কেন্দ্রেই অবস্থিত এটি। প্রধান রাস্তা থেকে কিছুটা পথ ভেতরে গেলে মূল মাজার কমপ্লেক্স। শুরুতেই সামনে দেখা যাবে দরগাহ মসজিদ।
বিভিন্ন সময়ে সংস্কারের ফলে মসজিদটি বর্তমানে আধুনিক রূপ নিলেও, প্রথম এটি তৈরি হয়েছিল ১৪০০ খ্রীস্টাব্দে।
মসজিদের পাশেই রয়েছে মাজারে উঠার সিঁড়ি। গম্বুজ বিশিষ্ট একটি হল ঘরের মধ্য দিয়ে মাজারে প্রবেশ করতে হয়। এই হল ঘরের ঠিক পশ্চিমের ভবনটি ঘড়ি ঘর। ঘড়ি ঘরের আঙিনার পূর্ব দিকে যে তিনটি কবর রয়েছে তা হযরত শাহজালের ঘনিষ্ট তিনজন সঙ্গীর। এর দক্ষিণপাশে ছোট ঘরটি হযরত শাহজালালের চিল্লাখানা। কথিত আছে দুই ফুট চওড়া এ জায়গাতে তিনি জীবনের তেইশটি বছর ধ্যানমগ্ন কাটিয়েছেন। 
উত্তরের প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়বে উঁচু ইটে বাঁধানো হযরত শাহজালাল (র) এর সমাধি। এটি নির্মাণ করা হয় ১৬৫৯ খ্রীষ্টাব্দে। এর পাশেই আছে ইয়েমেনের রাজা শাহজাদ আলীর কবর এবং ১৪১০ খ্রীস্টাব্দে সিলেটের শাসনকর্তা মুক্তালিব খান উজিরের কবর।
এখান থেকে পাওয়া একটি শিলালিপি অনুযায়ী জানা যায়, সুলতান শামসুদ্দীন ফিরোজশাহের শাসনকালে ১৩০৩ সালে হযরত শাহজালালের হাতে এ অঞ্চল বিজিত হয়। হিন্দু রাজা গৌর গোবিন্দকে পরাজিত করে এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার শুরু করেন তিনি। সে সময়ে তুরষ্কের কুনিয়া শহর থেকে তিনি ৩১৩ জন শিষ্যসহ এদেশে আসেন। বহু যুদ্ধে বিজয়ের পর এখানেই তিনি থেকে যান। ১৩৪০ খ্রীস্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মাজার কমপ্লেক্সের ভেতরে পূর্ব পাশের পুকুরে আছে বহুকালের ঐতিহ্য গজার মাছ। শত শত জালালী-কবুতরও রয়েছে এখানে। মাজার কমপ্লেক্সের পশ্চিম পাশের একটি ঘরে এখনও রক্ষিত আছে হযরত শাহ জালালের ব্যবহৃত তলোয়ার, খাবার বাসন, বাটি ইত্যাদি।
লাক্কাতুরা চা-বাগান
সিলেট শহর থেকে বিমানবন্দর সড়ক ধরে কিছুদূর এগুলেই লাক্কাতুরা চা-বাগান। ন্যাশনাল টি কোম্পানির মালিকানাধীন এ বাগান ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগবে। সড়কের পাশেই প্রবেশ পথ। অনুমতি নিয়ে ভেতরে ঢুকতে হবে।
মালনিছড়া চা-বাগান
লাক্কাতুরা চা বাগান ছেড়ে বিমানবন্দরের দিকে একটু যেতেই চোখে পড়বে সুন্দর এই চা বাগান। বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরানো এই চা-বাগান ১৮৫৪ সালে ইংরেজ সাহেব হার্ডসনের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে। টিলা ঘেরা চা-বাগানের ভেতরে ঘুরে ঘুরে উপভোগ করা যাবে সবুজের সৌন্দর্য। এছাড়া বানরও দেখেতে পাবেন। 
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশাববিদ্যালয়
সিলেট শহরের পাশে কুমারগাঁও এলাকায় অবস্থিত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও ঘুরতে যেতে পারেন। ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলামেলা ক্যাম্পাস ভালো লাগবে সবার।
ক্বিন ব্রিজ
সিলেট শহরের অন্যতম প্রাচীন স্থাপনা ক্বিন ব্রিজ। সুরমা সেতু নামেও এটি বেশ পরিচিত। ১৯৩৬ সালে নির্মাণ করা হয় লোহার তৈরি এ সেতু। ইংরেজ গভর্নর মাইকেল ক্বিনের নামেই এর নামকরণ করা হয়। ১১৫০ ফুট লম্বা এবং ১৮ ফুট প্রস্থ এ সেতুটি দেখতে ধনুকের মতো বাঁকানো। ১৯৭১ সালে পাক হানাদাররা ব্রিজটির একাংশ উড়িয়ে দেয়। পরে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের অর্থায়নে বিধ্বস্ত অংশটি পুনঃনির্মাণ করা হয়।
আলী আমজাদের ঘড়িঘর
ক্বিন ব্রিজের উত্তর পাড়ে আছে পুরান একটি ঘড়িঘর। সেতুর পাশের এ জায়গাটির নাম চাঁদনীঘাট। কাঁটা থেমে থাকলেও নানান ইতিহাসের সঙ্গী এ ঘড়িঘরটি আজও দাঁড়িয়ে আছে।
জানা যায় পৃথ্বিমপাশার বিখ্যাত জমিদার আলী আমজাদ খাঁ দিল্লীর চাঁদনীচকের শাহজাদী জাহানারার একটি ঘড়িঘর দেখে মুগ্ধ হন। তাই তিনি সুরমা নদীর তীরে চাঁদনীঘাটের কাছে অনুরূপ একটি ঘড়িঘর নির্মাণ করেন। এজন্যই সবাই একে জানেন আলী আমজাদের ঘড়ি নামে।
মনিপুরী জাদুঘর
শহরের সুবিদবাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এ জাদুঘর। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসী সম্প্রদায় মনিপুরীদের শত বছরের কৃষ্টি আর ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে এ জাদুঘরের মাধ্যমে। দেখা মিলবে কয়েকশ বছরের পুরানো ঘন্টা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত নানান দ্রব্যসামগ্রী, যুদ্ধে ব্যবহৃত সরঞ্জাম, মনিপুরীদের ঐতিহ্যবাহি হস্তশিল্প সামগ্রীসহ আরও অনেক কিছু।
এমসি কলেজ
সিলেট শহরে অবস্থিত প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুরারীচাঁদ কলেজ বা সিলেট এমসি কলেজ। ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশাল জায়গাজুড়ে এ কলেজের ক্যাম্পাসে এখনও আছে অনেক পুরানো স্থাপনা।
ওসমানী স্মৃতি জাদুঘর
সিলেট শহরের কোর্ট পয়েন্টের কাছে নাইওরপুলে আছে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর বাস ভবন ‘নূর মঞ্জিল’। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের পরিচালনায় এ ঘরে বসেছে ওসমানী স্মৃতি জাদুঘর। খোলা থাকে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। আর অক্টোবর থেকে মার্চ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। শুক্রবার খোলা থাকে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার এবং অন্যান্য সরকারী ছুটির দিনে জাতীয় জাদুঘর বন্ধ থাকে।
হযরত শাহ পরানের (র) মাজার
হযরত শাহ পরান ছিলেন হযরত শাহ জালালের ভাগ্নে। তিনিও ছিলেন একজন সাধক পুরুষ। শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে দক্ষিণগাছের খাদিমপাড়ায় এই মাজার। বিশাল বটগাছের ছায়াতলে এ মাজারে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়। প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্তের পদচারণায় মুখরিত থাকে পুরো মাজার এলাকা।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশ পথে সরাসরি সিলেট যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সিলেটের বাসগুলো ছাড়ে।
এ পথে গ্রীন লাইন পরিবহন, সৌদিয়া এস আলম পরিবহন, শ্যামলি পরিবহন ও এনা পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ৮শ' থেকে ১ হাজার ১শ' টাকা। এছাড়া শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক সার্ভিস এনা পরিবহনের পরিবহনের নন এসি বাস সিলেটে যায়। ভাড়া ৪শ' থেকে সাড়ে ৪শ' টাকা।
এনা পরিবহনের বাসগুলো মহাখালী থেকে ছেড়ে টঙ্গী ঘোড়াশাল হয়ে সিলেট যায়।
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৪ টায় ছাড়ে কালনী এক্সপ্রেস। ভাড়া দেড়শ থেকে ১ হাজার ১৮ টাকা।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ার, রিজেন্ট এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান যায় সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে।
কোথায় থাকবেন
সিলেট শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল আছে। শহরের নাইওরপুল এলাকায় হোটেল ফরচুন গার্ডেন (০৮২১-৭১৫৫৯০)। জেল সড়কে হোটেল ডালাস (০৮২১-৭২০৯৪৫)। ভিআইপি সড়কে হোটেল হিলটাউন (০৮২১-৭১৮২৬৩)। লিঙ্ক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন (০৮২১-৮১৪৫০৭)। আম্বরখানায় হোটেল পলাশ (০৮২১-৭১৮৩০৯)। দরগা এলাকায় হোটেল দরগাগেইট (০৮২১-৭১৭০৬৬)। হোটেল উর্মি (০৮২১-৭১৪৫৬৩)। জিন্দাবাজারে হোটেল মুন লাইট (০৮২১-৭১৪৮৫০)। তালতলায় গুলশান সেন্টার (০৮২১-৭১০০১৮) ইত্যাদি।
এসব হোটেলে ৫শ' থেকে ৪ হাজার টাকায় রাত যাপনের ব্যবস্থা আছে। 

ধন্যবাদ সবাইকে। 

জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে।

  সিলেট , জৈন্তা। 




পার্শ্ববর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের আকাশ ছোঁয়া খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়গুলো এ সময়ে সবুজে ভরে ওঠে। পাহাড়ের গায়ের ঝরনাগুলোও কেবল প্রাণ ফিরে পায় এই বর্ষাতেই।
সিলেট থেকে জাফলং যেতে প্রথমেই দেখে নিতে পারেন জৈন্তা রাজবাড়ি। শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে এ রাজবাড়ির অবস্থান। তবে বেশিরভাগ স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেলেও সিলেট তামাবিল মহাসড়কের মাঝখানে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জৈন্তা রাজাদের পান্থশালা। সিলেট শহর থেকে তামাবিল সড়কে যেতে দরবস্ত বাজার ছেড়ে সামনে সারিঘাট। সেখান থেকে সামান্য সামনেই জৈন্তা রাজবাড়ি।
জৈন্তা রাজবাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার সামনে জৈন্তা হিল রিসোর্ট। জাফলংয়ের পাঁচ কিলোমিটার আগে নলজুড়ি এলাকায় বিশাল টিলার উপরে গড়ে তোলা হয়েছে পাহাড়ি এ অবকাশ কেন্দ্র। পাশেই ভারতের মেঘালয় রাজ্য। ওখানকার পাহাড়ের সৌন্দর্য এখান থেকে উপভোগ করা যায় ভালোভাবেই। এছাড়া পাহাড়মুখী বেশ কয়েকটি কটেজও আছে এ অবকাশ কেন্দ্রে। জৈন্তা রিসোর্ট থেকে উপভোগ করা যায় মেঘালয় পাহাড়ি ঝরনার সৌন্দর্য।
জৈন্তা রিসোর্ট থেকে এক কিলোমিটার সামনে তামাবিল স্থল বন্দর। এখান থেকে মূলত কয়লা আমদানী হয় বাংলাদেশে। তামাবিল থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সামনে জাফলং। সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫৫ কিলোমিটার।
ভারতের সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়ের কোলে মনোরম পর্যটন কেন্দ্র এটি। এ জায়গা থেকে মানুষের পাথর উত্তোলনের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হবেন যে কেউ। স্বচ্ছ পানির নিচ থেকে ঝুড়ি ভরে এখানে পাথর তুলে আনেন শ্রমিকরা।
খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে স্বচ্ছ পানির নদী পিয়াইন। খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে জন্ম নিয়ে এ নদী মিশেছে সুরমার সঙ্গে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিচ্ছেদ রচনাও করেছে এ নদী। ইচ্ছে হলে পিয়াইন নদীতে নৌ ভ্রমণও করতে পারবেন।
এখানে পাথর শ্রমিকদের খোলা নৌকায় ঘুরে বেড়ানো যায় পাথর তোলার ফাঁকে এরকম অনেক নৌকাই পর্যটকদের ঘুড়িয়ে থাকে। ইঞ্জিন ছাড়া নৌকা ঘন্টায় ১শ’ থেকে আড়াইশ’ টাকায় পাওয়া যায়। এছাড়া এখানে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য বিশেষ কিছু ইঞ্জিন নৌকাও আছে। এগুলোর ভাড়া ঘন্টা প্রতি ৩শ’ থেকে ৬শ’ টাকা।
জাফলংয়ের ওপারেই দেখা যায় ভারতের ডাউকি বন্দর। ডাউকি থেকে শিলং খুবই কাছে। মাত্র ৪০ কিলোমিটার। ডাউকি বন্দরের পাশেই রয়েছে উঁচু দুই পাহাড়ের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী ডাউকি ঝুলন্ত সেতু।
কয়েক বছর আগে পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর ব্রিজটি আরও পেছনে নিয়ে যাওয়ায় জাফলংয়ে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের সঙ্গে ঝুলন্ত ব্রিজের আগেকার দৃশ্য এখন ভালোভাবে দেখা যায় না। তবে নদী পেরিয়ে সামনে গেলে ব্রিজ আর ডাউকি বন্দর দেখা যায় ভালোভাবে।
জাফলংয়ের ওপারে দেখে আসতে পারেন খাসিয়াদের বৈচিত্র্যময় জীবনচিত্র। জাফলং মূল পর্যটন কেন্দ্র থেকে নদী পার হয়ে পশ্চিম পারে গেলেই পাওয়া যাবে খাসিয়াদের গ্রাম ‘সংগ্রাম পুঞ্জি’। এ পুঞ্জির শেষ প্রান্তে আছে জাফলং চা বাগান।
সিলেটে থেকে খুব সকালে বের হলে সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসা যায় জায়গাগুলো বেড়িয়ে। তবে পাহাড়ের সৌন্দর্য আর নির্জনতা উপভোগ করতে চাইলে থাকতে পারেন জৈন্তা হিল রিসোর্টে।
কীভাবে যাবেন
জায়গাগুলোতে বেড়াতে সর্বপ্রথম যেতে হবে বিভাগীয় শহর সিলেটে। সড়ক, রেল ও আকাশ পথে ঢাকা থেকে সরাসরি সিলেট যেতে পারেন।
চট্টগ্রাম থেকেও সিলেটে যাওয়া যায়।
ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সিলেটের বাসগুলো ছাড়ে। এ পথে গ্রীন লাইন পরিবহন, সৌদিয়া এস আলম পরিবহন, শ্যামলি পরিবহন ও এনা পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ৮শ’ থেকে ১১শ’ টাকা।
এছাড়া শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক সার্ভিস, এনা পরিবহনের নন এসি বাস সিলেটে যায়। ভাড়া ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা। এনা পরিবহনের বাসগুলো মহাখালী থেকে ছেড়ে টঙ্গী ঘোড়াশাল হয়ে সিলেট যায়।
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৪টায় ছাড়ে কালনী এক্সপ্রেস। ভাড়া দেড়শ থেকে ১ হাজার ১৮ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১৪৫ ১ হাজার ১শ’ ৯১ টাকা।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ার, রিজেন্ট এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান প্রতিদিন উড়াল দেয় সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে।
সিলেট শহর থেকেজাফলং যাওয়ার জন্য কয়েকটি লোকাল বাস আছে। তবে উপরের সবগুলো জায়গা বেড়ানোর জন্য মাইক্রোবাস কিংবা অটো রিকশা রিজার্ভ নিতে হবে।
সিলেটের স্থানীয় ভাষায় মাইক্রোবাসকে বলা হয় লাইটেস। শহরের আম্বরখানা এলাকায় লাইটেস ভাড়া পাবেন সাড়ে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায়।
এছাড়া সিএনজি চালিত অটো রিকশা ভাড়া পাবেন দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকায়।
কোথায় থাকবেন
জাফলংয়ের এর কাছাকাছি থাকার জন্য ভালো যায়গা জৈন্তা হিল রিসোর্ট। এখানে ২ হাজার ৩শ’ থেকে ৪ হাজার ২৫ টাকায় কক্ষ আছে। যোগাযোগ ০১১৯৩২১৮৯৯৯। 
এছাড়া সারাদিন বেড়িয়ে রাতে এসে সিলেটেও থাকতে পারেন। সিলেট শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল আছে। শহরের নাইওরপুল এলাকায় হোটেল ফরচুন গার্ডেন (০৮২১-৭১৫৫৯০)। জেল সড়কে হোটেল ডালাস (০৮২১-৭২০৯৪৫)। ভিআইপি সড়কে হোটেল হিলটাউন (০৮২১-৭১৮২৬৩)। লিঙ্ক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন (০৮২১-৮১৪৫০৭)। আম্বরখানায় হোটেল পলাশ (০৮২১-৭১৮৩০৯)। দরগা এলাকায় হোটেল দরগাগেইট (০৮২১-৭১৭০৬৬)। হোটেল উর্মি (০৮২১-৭১৪৫৬৩)। জিন্দাবাজারে হোটেল মুন লাইট (০৮২১-৭১৪৮৫০)। তালতলায় গুলশান সেন্টার (০৮২১-৭১০০১৮) ইত্যাদি।
এসব হোটেলে ৫শ’ থেকে ৪ হাজার টাকায় রাত যাপনের ব্যবস্থা আছে।
:: সাবধানতা ::
বর্ষায় পাহাড়ি ঢল থাকে বলে পিয়াইন নদীতে স্রোত থাকে খুব বেশি। তাই জাফলংয়ে খুব ছোট নৌকা নিয়ে নৌ ভ্রমণ করবেন না। চেষ্টা করুন ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে বেড়াতে। এছাড়া এখানকার নৌকাগুলোতে লাইফ জ্যাকেট থাকে না। ভ্রমণে গেলে সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট নিয়ে যাবেন।  

আজ এ পর্য‍ন্তই, ধন্যবাদ সবাইকে।