শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৪

ভ্রমণ :: বর্ষায় বান্দরবন।

 বর্ষায় মেঘেদের দেশে। 




বৃষ্টির সময় প্রকৃতি যেন তার সবটুকু রূপ ঢেলে দিয়েছে বান্দরবানে। এই সময় পাহাড়ের এই সবুজ গালিচার ওপর আপনার আগমনে যোগ হবে ভিন্ন মাত্রা। বান্দরবানের রিসোর্টগুলোর কোনো একটায় বসে দূর পাহাড়ে ঝুম বৃষ্টি দেখে মনে ঘোর লেগে যাবে সত্যি। আর তাই মেঘের ছোঁয়া পাওয়ার আশায় এই বর্ষা মৌসুমেও বান্দরবানের পাহাড়ে পর্যটকের ঢল নামে।

বর্ষা এলেই বান্দরবানের উঁচু পাহাড়গুলোকে সারা ক্ষণই ছুঁয়ে যায় জমাট বাঁধা মেঘের সারি। দেখে মনে হয় মেঘ আর পাহাড় একে অপরের সঙ্গে নিজ ভাষায় সুখ-দুঃখের যেন গল্প করছে। বান্দরবানের নীলাচল, নীলগিরি, চিম্বুক, বগা লেক, দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং, তাজিংডংসহ বিভিন্ন স্পটে দাঁড়িয়ে বর্ষায় মেঘের স্পর্শ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও বান্দরবান থেকে থানচি পর্যন্ত সড়ক দিয়ে চলাচল করলেও মেঘের দেখা মেলে। নীলগিরি কিংবা চিম্বুকে দাঁড়ালে মেঘ যে-কাউকে আপনা থেকেই ছুঁয়ে যাবে।
এই বর্ষায় এক ভিন্ন রূপেই দেখা যায় এ পর্যটন শহরকে। আমাদের দেশের ভ্রমণ পিয়াসুরা ভ্রমণের জন্য শীত মৌসুমকে বেছে নিলেও হয়তো অনেকেই জানেন না বৃষ্টির সময় পাহাড়ঘেরা জেলাটি যেন একটি সবুজ কার্পেটের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। যেদিকে দুচোখ যাবে সবুজে সবুজে বর্ণিল এক নতুন সাজ ধরা দেবে আপনার কাছে।
পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে রয়েছে অসংখ্য পর্যটন স্পট। ভরা মৌসুমে এখানে বেড়াতে এলে অনেক কিছুর স্বাদ অপূর্ণ থেকে যায়। বর্ষায় কোলাহলমুক্ত পরিবেশে বান্দরবানের সৌন্দর্য উপভোগ করা অনেকটা সহজ।
শহরের অদূরে মেঘলায় রয়েছে ঝুলন্ত সেতু, মিনি সাফারি পার্ক, শিশু পার্ক, প্রাকৃতিক লেক, চিড়িয়াখানা, চা বাগানসহ পর্যটকদের মন ভোলানো সব আয়োজন। এ ছাড়া শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে নীলাচল, যেখানে পাহাড়ের সঙ্গে আকাশ মিতালি গড়েছে। দেশি-বিদেশি যে কোনো পর্যটক স্পটটিতে গিয়ে মুগ্ধ হতে বাধ্য। বান্দরবানের আরেকটি দর্শনীয় স্থান নীলগিরি। বান্দরবান শহর থেকে নীলগিরির দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার। এর ২ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতায় না উঠলে বান্দরবান ভ্রমণের মূল আনন্দই অধরা থেকে যাবে। বর্ষা মৌসুমে এর পাশ দিয়ে ভেসে যাওয়া মেঘ দেখে মনে হয় মেঘের স্বর্গরাজ্য। মেঘের হালকা হিম ছোঁয়া মেঘ ছোঁয়ার অনুভূতি এনে দেয় মনে।  ভূমি থেকে নীলগিরির উচ্চতা ৩ হাজার ফুট। উচ্চতার কারণে বর্ষায় বান্দরবান বেড়ানোর সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা এই নীলগিরি। এর চারপাশে মেঘেরা খেলা করে। যারা প্রকৃতির এই খেলা খুব কাছে থেকে দেখতে চান তারা একটা রাত থেকে যেতে পারেন সেনাবাহিনী পরিচালিত কটেজে। এর পাশে খাবারের জন্য রয়েছে ভালো মানের রেস্টুরেন্ট। এখানে বসে পেট পুরে খেতে খেতে ডানে-বাঁয়ে চোখ বোলালে দূর-বহু দূরে দেখতে পাবেন কেওক্রাডং পাহাড়, পাহাড় চূড়ার বগা লেক ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর। দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বিজয়, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডংসহ অসংখ্য পাহাড় রুমা উপজেলা অবস্থিত। আরও রয়েছে বাংলার দার্জিলিংখ্যাত চিম্বুক পাহাড়, যেখানে অনায়াসে মেঘের ছোঁয়া পাওয়া যায়। রিজুক ঝরনা নিজস্ব গতিতে সব মৌসুমেই থাকে সচল। শহরের অদূরে শৈলপ্রপাতের স্বচ্ছ পানি বয়ে চলছে অবিরাম ধারায়। এ ছাড়াও শহরের ৪ কিলোমিটার দূরে বালাঘটা এলাকায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের স্বর্ণমন্দির জেলার পর্যটনের ক্ষেত্রে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। এই জেলায় মারমা, ত্রিপুরা, মুরং, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমি, খেয়াং, পাঙ্খো, চাকমা, চাক, লুসাইসহ ১৩টি আদিবাসী সম্প্রদায় বসবাস করে। দেশের অন্য কোনো জেলায় এত আদিবাসীর বসত নেই। আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় জীবনচিত্র যে কারও মনকে উৎফুল্ল করে। 
২৬ কিলোমিটার দূরে রয়েছে বাংলার দার্জিলিংখ্যাত চিম্বুক পাহাড়। ৩ হাজার ৫০০ ফুট উঁচু এ পাহাড়টিতে না উঠলে বান্দরবান ভ্রমণের মূল আনন্দই অধরা থেকে যাবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা ভারতের দার্জিলিংয়ে বেড়াতে যান। অথচ পর্যাপ্ত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এবং জেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো আরও উন্নত করা গেলে আমাদের বান্দরবানের সৌন্দর্য ভারতের দার্জিলিংকেও হার মানাবে। এবার নিশ্চয় মন চাইছে মেঘের সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে। তবে আর দেরি কেন, জীবনের ছক থেকে বেরিয়ে হারিয়ে যেতে পারেন নীলাচলের মেঘে ঢাকা পাহাড়ে, মেঘলা লেকের স্বচ্ছ জলে, ভাসাতে পারেন ডিঙি নৌকা অথবা ঘুরে আসতে পারেন চিম্বুক পাহাড়ের আদিবাসীদের গ্রামে।
যাতায়াত এবং পথখরচা ::
ঢাকা থেকে বান্দরবান চলে যাবেন রাতের বাসে, ভাড়া ৪৫০ টাকা। বান্দরবানের পথে ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে শ্যামলী, সৌদিয়া, ডলফিন পরিবহনের কয়েকটি গাড়ি রাতে ছেড়ে যায়।
বেবিস্ট্যান্ড থেকে মেঘলার যাওয়া-আসার ভাড়া ২০০ টাকা।
রাজবাড়ি হয়ে উপজাতি জাদুঘর থেকে কেয়াংঘর পর্যন্ত রিকশা ভাড়া ২৫ টাকা।
কেয়াংঘর থেকে হাসপাতালের সামনের ব্রিজ রিকশা ভাড়া ১০-১৫  টাকা।
বেবিস্ট্যান্ড থেকে স্বর্ণমন্দিরে যাওয়া-আসার ভাড়া ১৫০-২০০টাকা। হোটেল ভাড়া ৪০০-৫০০ টাকা।

ভ্রমণ সংস্থায় যোগাযোগ
রিভার অ্যান্ড গ্রিন : ফোন- ৮৮২৬৭৫৯।
পেট্রো অ্যান্ড এভিয়েশন : ফোন- ০১৭৩০০৪৩৬১৯।
বেঙ্গল ট্যুর : ফোন- ৮৮৫৭৪২৪।
জার্নি প্লাস : ফোন- ৯৬৬০২৩৪


শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৪

ভ্রমণ :: ময়মনসিংহ,শেরপুর।

ঘুরে আসুন শেরপুরের গজনী অবকাশ কেন্দ্র |




প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপূর্ব লীলাভূমি শেরপুর জেলার সীমন্তবর্তী উপজেলা ঝিনাইগাতীর ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড়। গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত সীমান্তবর্তী গজনী অবকাশ কেন্দ্র । সারি সারি শাল, গজারী, সেগুন,ছোট-বড় মাঝারি ঢিলা, লতাপাতার বিন্যাস প্রকৃতি প্রেমিদের নিশ্চিত দোলা দিয়ে যাবে । শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমন পিপাসুরা দল বেধেঁ ভিড় করে ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ের গাজনী অবকাশ কেন্দ্রে । নৈস্বর্গীক সৌর্ন্দযের লীলা ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ গারো পাহাড়। এখানকার সবুজ প্রকৃতি আপন করে নেয় ভ্রমন পিপাসুদের। শ্যামল বৃক্ষরাজীর মাঝ দিয়ে আকাঁ-বাকাঁ পাকা সড়ক পথ যেন সুড়ঙ্গের দিকে ঢুকে যাচ্ছে।  ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ের গাজনীর সৌর্ন্দযের মুদ্ধ হয়ে ভ্রমন পিপাসুরা বার বার এখানে ছুটে আসেন  ।এখান কার পাহাড়ী ঝর্ণা, খাল,ঢিলা, ছড়ার স্বচ্ছ জল আর ঘন সবুজ বন-বনানী অতি সহজেই আগন্তুকদের হাত ছানি দিয়ে ডাকে। পাহাড়, বন-বনানী, ঝর্ণা –এতসব প্রাকৃতিক সৌন্দযের মধ্যে কৃত্রিম অনেক সৌর্ন্দযের সংযোজন রয়েছে এখানে । দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে গাজনীর আদি নাম পরিবর্তন হয়ে গজনী হয়েছে।এখানে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার প্রকৃতি প্রেমিক মানুষ ছুটে আসেন। কাজের ফাকে কিংবা অবসরে পরিবারের লোকজন কিংবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে চলে আসুন প্রকৃতির সান্নিধ্যে।  পাহাড়ী ঝর্ণার ঝিরঝির শব্দ আর পাখির কলকাকলি গারো পাহাড়ের বিশেষ আর্কষন । এখানে এসে সবাই আনন্দ ধারায় হারিয়ে যান। পুরোদিনের জন্য স্মৃতি পটে আকাঁ হয়ে যায় একটি সোনালী সুন্দর রঙ্গিন দিন। মিতালী হয়ে যায়, পাহাড়ী গাছ-গাছালী ও পশু পাখির সঙ্গে। পরন্ত বিকেলে গজনী অবকাশ কেন্দ্র থেকে উত্তরে তাকালে তুরা পাহাড় স্পট দেখা যায়। মনে হবে তুরা পাহাড় যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। মনের মাঝে জাল বুনবে হায়, জন্ম যদি হতো এ গারো পাহাড়ে? তাই আবারও মন ব্যাকুল হবে গারো পাহাড়ে আসার জন্যে । 


অবস্থান যেথায় : 
শেরপুর জেলার বিশাল অংশ জুড়ে গারো পাহাড়ের বিস্তৃতি । ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাদদেশে ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ের গজনী অবকাশ। লালমাটির উচু-নিচু পাহাড়, টিলা, পাহাড়ী টিলার মাঝে সমতল ভূমি। দুই পাহাড়ের মাঝে পাহাড়ী ঝর্ণা একে বেঁকে  এগিয়ে চলছে। ঝর্ণার পানি এসে ফুলেফেপে উঠছে। সেখানে বাধ দিয়ে কৃত্রিম লেক তৈরি করা হয়েছে । লেকের মাঝে কৃত্রিম পাহাড় এবং পাহাড়ের উপর “লেক ভিউপেন্টাগন”। সেখানে যাতায়াতের জন্য রয়েছে দোদ্দুল্যমান ব্রীজ।  পাহাড়ের চুড়ায় রয়েছে ৬ কক্ষ বিশিষ্ট বৈদ্যুতিক সুবিধাসহ আধুনিক “দু তলা রেষ্ট হাউজ”।  রেষ্ট হাউজ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে নামার জন্য আঁকা-বাকা “পদ্মাসিড়ি” রয়েছে। অবকাশের পাদদেশে সান বাঁধানো বেদীসহ বট চত্বর। সেখানে সুপরিশর গাড়ী পার্কিংয়ের সু-ব্যবস্থাসহ পিকনিক দলগুলোর আড্ডায় মেতে উঠা এবং খেলা-ধূলারও প্রচুর জায়গা রয়েছে। বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের জন্য বেশ কটি নলকূপ এবং নামাজের জন্য মসজিদ, পর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধা ও রান্না-বান্নার ব্যবস্থাও রয়েছে। 











যেভাবে যাবেন :
এখানে আসার জন্য সড়ক পথে যাতায়ত খুব সহজ। গজনী অবকাশ পর্যন্ত রয়েছে মসৃণ পিচঢালা পথ। রাজধানী ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে যাতায়াতই সবচেয়ে উত্তম। উত্তরবঙ্গ থেকে টাঙ্গাইল –জামালপুর হয়েও আসতে পারেন সড়ক পথে কিংবা রেল পথে জামালপুুর পর্যন্ত তারপর জামালপুর থেকে সড়ক পথে আসতে পারেন।  শেরপুর শহর থেকে গজনীর দুরত্ব মাত্র ৩০ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে সরাসরি মাইক্রো বাস অথবা প্রাইভেটকারে গজনী অবকাশ যেতে পারেন। ঢাকা থেকে নিজস্ব বাহনে মাত্র সাড়ে তিন থেকে চার ঘন্টায় ঝিনাইগাতীর গজনী আসা যায়। এ ছাড়া ঢাকার মহাখালি থেকে ড্রিমল্যান্ড বাসে শেরপুর আসা যায়। ভাড়া মাত্র ১শ ৯০ টাকা। ভূলকরে আনন্দ গেটলক ও লোকাল ড্রিমল্যান্ডে উঠবেন না। কারণ এসব গাড়ী সারা রাস্তায় থেমে থেমে যাত্রী উঠানামা করে এবং সময়ও লাগে অনেক বেশী। ড্রিমল্যান্ড স্পেশাল গাড়ীতে উঠবেন এসব গাড়ী গেইট লক। আবার মহাখালী থেকে দুপুর ২টায় ছাড়ে এসিবাস। ভাড়া ২শ ১০টাকা। শেরপুর নেমে  ভাড়ায় ১হাজার টাকায় মাইক্রোবাস নিয়ে সোজা গজনী যাতায়াত করা যায়। এ ছাড়া শেরপুর থেকে লোকাল বাসে ঝিনাইগাতী আবার ঝিনাইগাতী থেকে বাসে, টেম্পু, সিএনজি অথবা রিক্সায় গজনী অবকাশ কেন্দ্রে যাওয়া যায়। শেরপুর শহরে রাতযাপনের জন্য ৫০ থেকে ৫শ টাকায় গেষ্ট হাউজে রুম ভাড়া পাওয়া যায়। শহরের রঘুনাথ বাজারে হোটেল সম্পদ, বুলবুল সড়কে কাকলী ও বর্ণালী গেষ্ট হাউজ, নয়ানী বাজারে ভবানী প্লাজা, বটতলায় আধুনিক মানের থাকার হোটেল রয়েছে।  অনুমতি সাপেক্ষে থাকতে পারেন সার্কিট হাউজ, সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি, পল¬ী বিদ্যুৎ কিংবা এটিআই রেষ্ট হাউজে।  ঝিনাইগাতী ডাকবাংলো অথবা বন-বিভাগ ডাকবাংলোও থাকতে পারবেন। তবে থাকা-খাওয়ার জন্য ঝিনাইগাতী সদর অথবা শেরপুর শহরে চলে আসাই উত্তম। আর ভাল মানের খাবার পাবেন ঝিনাইগাতীর হোটেল সাইদে, হোটেল জোসনা, শেরপুর শহরের নিউ মার্কেটে হোটেল শাহজাহান, হোটেল আহার কিংবা কাকলী মার্কেটের হোটেল প্রিন্সে। এসব হোটেল অগ্রীম বুকিং ও অর্ডার সরবরাহ করা হয়।


যা যা দেখবেন :
ভ্রমন পিপাসুদের জন্য গজনী অবকাশ কেন্দ্রে রয়েছে ক্রিন্সেন্ট লেক, লেকের ওপর রংধনু ব্রীজ, কৃত্রিম জলপ্রপাত, পানসিতরী নৌকা, প্যান্ডেল বোড , মুক্তিযুদ্ধ স্মুতিসৌধ, শিশু পার্ক, কবি নজরুল ইসলাম ও কবি রবিন্দ্র নাথ ঠাকুরের স্মৃতিফলক, মাটির নিচে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাতায়তের জন্য ড্রাগন ট্যানেল মুখের ভিতর দিয়ে পাতালপুরি, লাভলেইন, মৎস্য কুমারী, কবিতাবাগ, হাতি, বাঘ, জিরাফ, হরিণ, ডাইনোসরের প্রতিকৃতি। অবকাশ কেন্দ্রে অন্যতম আকর্ষণ সাইট ভিউ টাওয়ার। ৮০বর্গফুট উচ্চ এ টাওয়ারে উঠলে দেখা যাবে পাহাড়ী ঢিলার অপরূপ বৈচিত্রময় দৃশ্য।  বন বিভাগ প্রকৃতির  সঙ্গে  মানুষের সখ্য গড়ে তুলতে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে একটি ক্যাকটাস পল্ল¬¬ী এবং মিনি চিড়িয়াখানাও গড়ে তুলেছে।  বর্তমানে শেরপুর জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে গজনীতে শিশু পার্কের শিশু কিশোরদের বিনোদনের জন্য পুতুল নাচসহ নাগরদোলা ও বিভিন্ন ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদ আর সৌন্দর্য্যে ভরপুর গারো পাহাড়ের গজনীতে পর্যটক বা ভ্রমন পিপাসুদের বারতি পাওনা হলো আদিবাসী সম্প্রদায় গারো, কোচ, হাজং, বানাই, হদীসহ বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর চাষাবাদ, জীবন প্রবাহ, কৃষ্টি, শিল্প এবং ভাষা ও সংস্কৃতি, এ জন্যই প্রতিদিন পর্যটক ও ভ্রমন পিপাসুদের ঢল নামে গজনীতে । গজনী অবকাশ কেন্দ্রে রেষ্ট হাউজে প্রতিকক্ষ ব্যবহার করতে চাইলে (কেবল দিনের বেলার জন্য ) জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত শাখা থেকে অনুমতি ও বুকিং নিতে হয়। প্রতি কক্ষের জন্য ভাড়া ৫শ টাকা। নতুন করে সংযোজন করা হচ্ছে “ পবিত্র গজনী কুন্ড”। মাধবকুন্ডের আদলে তৈরি হচ্ছে এটি।

প্রবেশ ফি:
গজনী অবকাশ কেন্দ্রে  গাড়ী প্রবেশের জন্য উপজেলা পরিষদ চেকপোষ্ট থেকে বাস-কোচ, ট্রাক-৩ শ টাকা। মাইক্রোবাস,পিকআপ, মেক্সি-১শ ৫০টাকা। জিপ,কার,টেম্পু-১শ টাকা এবং সিএনজি-৫০টাকা দিয়ে গেটপাস নিতে হবে।  অন্যথায় গজনী অবকাশ কেন্দ্রে গাড়ী ঢুকাতে পারবেন না। তাছাড়া সীমান্ত পথে বিজিবি নকশী ক্যাম্পে সে পাস দেখাতে হবে। আর অবকাশ কেন্দ্রে টাওয়ারের জন্য জনপ্রতি ৫ টাকা, শিশু পার্কের জন্য ১০টাক, প্যাডেল বোড ২০মিনিটে  ৬০টাকা, পানসিতরী নৌকায় জনপ্রতি-১০টাকা এবং পাতালপুরি ড্রাগন ট্যানেলে জন প্রতি ৫টাকা প্রদর্শনী ফি রয়েছে।

যেথায় যোগাযোগ করবেন : 
একটি কথা ভূলবেন না, গজনী অবকাশ ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন। সীমান্তের দিকে না যাওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।  অন্যথায় বিপদ ঘাড়ে চেপে বসতে পারে। শেরপুর জেলা প্রশাসকের নেজারত শাখা “(ফোন) ০৯৩১-৬১২৮৩/০৯৩১-৬১৯৫৪/০৯৩১-৬১৯০০, সার্কিট হাউজ -০৯৩১-৬১২৪৫, হোটেল সম্পদ-০১৭১২৪২২১৪৫,হোটেল সাইদ-০৯৩১-৬১৭৭৬, কাকলী গেষ্ট হাউজ- ০১৯১৪৮৫৪৪৫০ 





ভ্রমণ :: ময়মনসিংহ ০১।

সুনিপুণ কারুকার্যের অনন্তসাগর পাড় |



ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বীরাঙ্গনা সখিনার সমাধিস্থল আর বারো জমিদারের সুনিপুণ কারুকার্যে নির্মিত প্রাচীন ভবন, গোলপুকুর, বৃত্তাকার দ্বীপ, অনন্তসাগর, চিমুরানীর দীঘি, খাজা উসমান খাঁর কেল্লা, নিজাম উদ্দিন আউলিয়া (রহ.) মাজার, দৃষ্টিনন্দন গৌরীপুর রাজেন্দ্র  কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি কলেজ, পামবীথি সড়ক, ঐতিহাসিক রামগোপালপুর জমিদারের সিংহ দরজা, যুগলবাড়ী, শান বাঁধানো ঘাট, বোকাইনগরের শাহী মসজিদসহ সবুজ-শ্যামল ছায়া ঘেরা বিলুপ্ত প্রজাতির বৃক্ষরাজিকে এক নজর দেখতে ঘুরে আসুন গৌরীপুর।
ময়মনসিংহ ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে গৌরীপুর লজ থেকেই দেখতে শুরু করতে পারেন গৌরীপুরকে। এরপর ময়মনসিংহ থেকে গৌরীপুরের উদ্দেশে বাসযোগে রওনা হতে ময়মনসিংহ ব্রিজ থেকে বাসে চড়–ন বা ময়মনসিংহ  রেলস্টেশন থেকে ট্রেনেও আসতে পারেন। রামগোপালপুর পাওয়ারী জগেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর রঙিন কাচের প্রাসাদ, কৃষ্ণমন্দির ও প্রাসাদের সুড়ঙ্গপথ আপনাকে মুগ্ধ করবে। একটু এগিয়েই দেখতে পাবেন ঐতিহাসিক সিংহ দরজা। তখন ডানে-বামে, সামনে-পেছনে শান বাঁধানো পুকুর ঘাট আর শতবর্ষী দুটি গাছ দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে।
এরপরেই ভবানীপুরের জমিদার জ্যোতিষ চন্দীর পুকুরের উপরে রানী øান করতেন। রহস্যজনক পুকুরটি আজ বিলীন। তবে এর চিহ্নটুকু দেখে এগিয়ে চলুন বোকাইনগর খাজা উসমান খাঁর কেল্লা, সম্রাট আলমগীরের আমলে নির্মিত শাহী মসজিদ আর হজরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়া (রহ.) মাজার দেখতে। শাহ মারুফ (রহ.) মাজার ও কালীবাড়ির প্রাচীন মঠ আপনাকে আকৃষ্ট করবে। এরপরেই চলে যেতে পারেন বীরাঙ্গনা সখিনার সমাধিস্থল মাওহা ইউনিয়নের কুমড়ি গ্রামে। সখিনার সমাধিস্থলে যেখানে কুন্দকুসুম গাছগুলো এখনো ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে টিকে আছে। এগাছগুলো বীরাঙ্গনা সখিনার স্বামী ফিরোজ খাঁর হাতে রোপিত বলে অনেকের মতবাদ। বীরাঙ্গনা সখিনার সমাধিস্থলে তোরণের পূর্বপাশে সংক্ষিপ্ত ইতিহাসটুকুতে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। একটু এগিয়েই দেখুন তাজপুরের কেল্লা, চিমুরানীর দীঘিÑ যার অস্তিত্ব শুধু এখন বিশালাকার সবুজ ধান ক্ষেত। কালের আবর্তে এটিও চলে গেছে ব্যক্তিমালিকানায়।
আবারও পথচলা গৌরীপুরের শহরের ঐতিহ্যবাহী সরকারি কলেজ যেখানে দেখতে পাবেন কৃষ্টপুরের জমিদার সুরেন্দ্র  প্রাসাদ লাহিড়ীর দৃষ্টিনন্দন বাড়ির ভবন, পূজা মন্দির। একটু এগিয়েই দেখতে পাবেন ফরাসি স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত জমিদার ধীরেন্দ্র কান্ত লাহিড়ীর এক গম্বুজের সুদৃশ্য টিনের গোলঘরটি যা প্রাচীন ইতিহাসকে মনে করিয়ে দেবে। আর এ ঘরের সামনেই সুবিশাল পুকুরের স্বচ্ছ পানি সুবজ ছায়া ঘেরা আর দক্ষিণা বাতাস আপনাকে হয়তো বসতে বলবে। তবে এখানে বর্তমানে পুলিশের এএসপি সার্কেল ও সহকারী কমিশনারের কার্যালয় থাকায় আপনার নিরাপত্তায় ত্র“টি হবে না। এর একটু সামনেই বাগানবাড়ি দুর্গা মন্দিরের সঙ্গে কৃষ্ণমন্দির ঘুরে আসতে পারেন। এরপরেই চলে যেতে পারেন গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের  পেছনের অংশে। বিশাল আকৃতির এক গম্বুজের জোড়া ভগ্ন শিব মন্দির ও কালী মন্দিরের ঐতিহাসিক কাঠামো দেখার জন্য। পাশেই গৌরীপুর থানা যেখানে রয়েছে বিরল প্রজাতির বৃক্ষরাজি। চলে যেতে পারেন সুউচ্চ পামগাছের সারি, জোড়াপুকুরের ঘাট, গোলপুকুর, বৃত্তাকার দ্বীপ ও জোড়া আমগাছ। একনজর দেখতে পারেন উপজেলা পরিষদের ভেতরে দেয়াল ঘেঁষে একটি পরগাছা বট কিভাবে একটি পাম গাছকে গলা টিপে হত্যা করেছে। যা আপনাকে ভাবিয়ে তুলতে পারে। দ্বীপ ঘেঁষা একটি গাছ যাকে বৃক্ষপ্রেমিক বা গবেষণাবিদরা এখনও নাম বলতে পারে, সেই অচিন বৃক্ষটি দেখুন।
জমিদার ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর নিজ বাড়িতে বর্তমানে মহিলা ডিগ্রি কলেজ, গৌরীপুর প্রেস ক্লাব, নাট্য মন্দিরের সঙ্গে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন প্রাচীন দুর্গামন্দিরটিকে। তবে প্রেস ক্লাবের ভবনের সামনে ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা প্রস্তুত রাখুন। কেন না প্রেস ক্লাবের ভবনটি জমিদারের শাসন আমলের রঙে আবারও সেজেছে।
সুউচ্চ পামগাছের সারির শেষ প্রান্তে দেখে যেতে পারেন জমিদারের নাট্যমঞ্চটি। যা বর্তমানে ঝলমল সিনেমা হল। জমিদার ব্রজেন্দ্র  কিশোর রায় চৌধুরী তার পিতা রাজেন্দ্র  কিশোর রায় চৌধুরীর নামে প্রতিষ্ঠা করেন রাজেন্দ্র  কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়। ইংরেজি ই-আকৃতির লাল রঙের সুনিপুণ কারুকার্যে নির্মিত ভবনের সামনে ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর স্ত্রীর প্রেম স্মৃতিকে অমর করে রাখতে অনন্তসাগর নামে একটি বৃহৎ পুকুর খনন করেন। এছাড়াও গৌরীপুর পৌর শহরের প্রথম মসজিদ পূর্বদাপুনিয়া জামে মসজিদ ও গুজিখাঁ গ্রামে অবস্থিত কেরামতিয়া মসজিদটিও দেখে যেতে পারেন।
কিভাবে আসবেন : ঢাকা থেকে সরাসরি গৌরীপুরের উদ্দেশে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস ছাড়ে সকাল ১১টায়, দুপুর ২টা ও বিকাল ৫টায়। এছাড়াও আপনি ময়মনসিংহ পর্যন্ত যেকোন যানবাহনে এসে ব্রহ্মপুত্র ব্রিজের সন্নিকটে বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস যোগে গৌরীপুর আসতে পারেন। গেট লক ভাড়া ২০ টাকা, লোকাল বাসের ভাড়া ১৮ টাকা। ময়মনসিংহ  রেলস্টেশন থেকে ট্রেনেও আসতে পারেন। ভাড়া মাত্র ৬ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে নাসিরাবাদ ট্রেন ছাড়ে বিকাল ৪টায়।

কোথায় থাকবেন : উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঙ্গে যোগাযোগ করলে ডাকবাংলো, পৌর মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পৌর অতিথিশালায় থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। মধ্যবাজারস্থ হোটেল রাজগৌরীপুর, রেলওয়ে স্টেশনে হোটেল সানি বর্ডিংয়েও থাকতে পারেন। 

শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৪

প্রাচীন সমৃদ্ধ নগর মহাস্থানগড়,বগুড়া।

প্রাচীন সমৃদ্ধ নগর মহাস্থানগড়।

arif1976.blogspot.com

মাথার উপর বিশাল আকাশ। ঘন সবুজ গাছপালার ছায়ায় ঘুমিয়ে আছে প্রাচীন সমৃদ্ধ নগর মহাস্থানগড়। এখানে রাত জেগে চাঁদ ঘুমায়। চাঁদের অপরূপ সুষমায় পাল, সেন রাজারা গল্প করে। হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধার করার গল্প। বিলুপ্ত সভ্যতাকে পুনরুজ্জীবিত করার গল্প। আপনি কান পাতলে নিশ্চয় সেবস গল্প শুনতে পাবেন। ভগ্নপ্রায় পাকা বাড়ির প্রতিটি ইট আপনাকে গল্প বলে শুনাবে। কোথাও পড়ে থাকা এক টুকরা পাথর আপনাকে সেসব গল্প বলবে। আর ধ্বংশের শেষ সীমায় পৌছায় পুকুর -ইন্দারা-পাতকুয়ার কথা শুনে আপনার চোখ টলমল করবে। ভ্রমন প্রেমীদের জন্য এ সময়টা খুবই মনোরম। শিউলী ফোটা শরৎ সকালের প্রকৃতির স্নিগ্ধ  পরশ। ঘাসের বুকে জমে থাকা শিশির কোণা আপনার পা ধুয়ে দেবে। অদূরে চরজাগা করতোয়ার বুকে পাল তোলা সারি সারি নৌকা। দূরের মেঠো পথ থেকে ভেসে আসে ভাওয়াইয়া গানে আপনি মোহাবিষ্ট হবেন। এখানে খেটে খাওয়া মানুষের সুন্দর আচরণ বিলুপ্ত সভ্যতার সুন্দর পরিচয়ই বহণ করে। তার আগে অবশ্য আপনার চোখ কিছুটা পরিতৃপ্ত হবে বিশ্বের ১১তম দীর্ঘতম সেতুর গায়ে হাত বুলিয়ে। এতবড় যমুনা নদীর ওপর দিয়ে প্রতিদিন যে হাজার হাজার যন্ত্রদানব ওপারে যাচ্ছে তা না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। মহাস্থান খননের ফলে যে সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায় তা হলো হিন্দু-বৌদ্ধ সভ্যতা। এখনও হিন্দু ধর্মের হিন্দু তীর্থস্থান মহাস্থানের আশপাশে রয়েছে। করতোয়ার পশ্চিম পাশে জাহ্নবী নামক দেবী স্থানে স্নান  করলে তীর্থ লাভ হয় বলে অনেকে মনে করে। এছাড়া কালীদহে পদ্মার বাড়ী বানাইয়া পদ্মপুরাণ ও মথুরার শ্রী কৃষ্ণের কংসবধ লীলা, গোকুলে নন্দ ঘোষের বাড়ি, কুটিশ্বরী কালীঞ্চুরী দেবী, ভূতিকেশ্বর, উগ্রমাধব, শিব, সূর্য-মন্ডপ,কু প্রভৃতি কল্পিত তীর্থস্থান ও দেব-দেবীবেষ্টিত মহাত্মযুক্ত স্থান এ মহাস্থানগড়। জনশ্র“তি আছে ভগবানের ষষ্ঠ অবতার পরশুরামের গড় এই মহাস্থান। তিনি পালরাজ রাম বা কৈবত্ত নায়ক ভীম। চৈনিক পরিব্রাজক যুয়ান চুং ৬৩৯-৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত ভ্রমণ করেন। তার সি-মু-কি নামক গ্রন্থে পন্ডুবর্ধন নগরের কথা উল্লেখ আছে। পুন্ডুবর্ধনই হলো আজকের এই মহাস্থান।

রাজধানীর আশপাশে শহর থাকে। মহাস্থান গড় ছিল রাজধানী। এর আশপাশে প্রায় ১১ মাইল পর্যন্ত সুরক্ষিত ছিল যার প্রমাণ প্রত্মতাত্ত্বিকদের খুঁড়াখুঁড়ির ফলে বেরিয়ে এসেছে। এই মহাস্থানগড় প্রাচীন কালে কোন রাজা কর্তৃক প্রথম প্রতিষ্ঠিত তার কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।

বগুড়া শহর থেকে মাত্র ৭ মাইল উত্তরে রংপুর সড়কের বাম পাশে সমতল ভূমি থেকে ২০-২৫ ফুট উঁচুতে উত্তর-দক্ষিণে ৩ হাজার ফুট দীর্ঘ এবং পূর্ব-পশ্চিমে ২ হাজার ফুট প্রস্থ বালি-পাথরে সংমিশ্রিত, গুল্ম আচ্ছাদিত হয়ে হাজার বছরের ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন সভ্যতার রাজধানী মহাস্থান।ইতিহাসে একে মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন রাজাদের প্রাদেশিক রাজধানী বলে উল্লেখ করেছে। ইতিহাস এবং প্রত্মতাত্ত্বিকদের পাওয়া দুর্মূল্য অলঙ্কারাদি, অস্ত্র-শস্ত্র, মুদ্রা ও বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি, দালানের ভগ্নাবশেষে এটাই প্রমানিত হয় যে- এখানে বিলুপ্ত সভ্যতা ছিল একটি সমৃদ্ধ সভ্যতা। মহাস্থানে বহু দর্শনীয় স্থান পুরনো সভ্যতার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো বলখী (র :) মাজার, বেহুলার বাসরঘর, গোবিন্দ ভিটা, জাদুঘর, খোজার ভিটা, মানখালী, পূজারবাড়ি, জিউৎকুন্ড, শিলাদেবীর ঘাট, গোকুল, বৈরাগীর বাড়ি, ওঝা ধন্ধন্তরীর বাড়ি, নেতাই ধোপানী, কাসী তলা, ঘাঘট দুয়ার, গুপ্ত বারানসী ইত্যাদি।

সুলতান বলখীর (র :) মাজার : মহাস্থানে যাওয়ার সময় প্রথমেই হাতের বাম পাশে সুউচ্চ টিলার মতো গাছঘেরা যে জায়গা পড়বে সেটাই সুলতান বলখীর (র :) মাজার। রাজা পরশুরামের আমলে বলখী (র :) পীর মহাস্থানে আগমন করেন এবং ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে রাজদরবারে দূত পাঠান। এতে দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধহয়। পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হয়। তখনই পরশুরাম সভ্যতার অবসান হয়। প্রতি জুমারাত বা বৃহস্পতিবার রাতে মাজার শরীফে জুমারাতের জন্য অনেক যাত্রী আসে। মহররম, শবেবরাত ও দুই ঈদে প্রচুর ধূমধাম হয়। কোরবানি হয়। চৈত্র মাসে ওরস ও বারুনীর মেলা হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসেও বারুনী মেলায় প্রচুর লোক সমাগম হয়। হিন্দু-মুসলমান সবাই ভক্তি, সেলাম ও শিরনী মানত করে।

বেহুলার বাসরঘর : মহাস্থান থেকে ২ কিমি দূরে ১৫০ কুঠুরীসমৃদ্ধ উঁচু টিলার নাম বেহুলার বাসরঘর। প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের সাইনবোর্ডে বাংলা-ইংরেজি দু’রকমেই এ সম্পর্কিত তথ্য লিপিবদ্ধ আছে। লক্ষ্মীন্দরের পিতা চাঁদ পূজা না দিয়ে পদ্মার কোপে পতিত হয়। সর্পাঘাতে ৬ পুত্রের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ পুত্র লক্ষ্মীন্দরকে রক্ষার জন্য লোহার বাসরঘর তৈরি করেন। কিন্তু পদ্মার আদেশে কালনাগের দংশনে লক্ষ্মীন্দরের মৃত্যু হয়।পদ্মপুরাণের এ কথাগুলো ঠোঁটস্থ করে ১০ বছর বয়সী বালক টিলার ওপরে বগলে একগাদা চটিবই নিয়ে পাখির সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে তার কাহিনী বর্ণনা করে যাচ্ছে। আপনি গেলে অবিভূত হয়ে একটি চটিবই ১০ টাকা দিয়ে না কিনে পারবেন না।

গোবিন্দ ভিটা : একেবারে  মহাস্থানের দোরগোড়ায় জাদুঘরের বিপরীতে গোবিন্দভিটা। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে করতোয়া। করতোয়ার পূর্বকোণে এক গ্রাম বাঘপাড়া। সেখানে আরেক মন্দিরে দু’জন মুণি তপস্যায় ছিলেন বলে জায়গাটির নাম মুণিতলা বলেও পরিচিত।

জাদুঘর : মহাস্থানগড়ের এক পাশে গোবিন্দ ভিটা এবঙ অন্য পাশে বগুড়া প্রত্মতত্ত্ব জাদুঘর অবস্থিত। বেশ সুপরিসর। টিকিট কেটে জাদুঘরে সংরক্ষিত ৪৪টি শোকেসে কালের গর্ভে বিলীন হওয়া লুপ্তপ্রায় অলঙ্কারাদি, অস্ত্র-শস্ত্র, ছোট-বড় বিভিন্ন প্রকার মুদ্রা, হরেক রকমের দেব-দেবীর মূর্তি, দর্শনীয় ইট-পাথরসহ অসংখ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন। যেগুলো দেখে সহজেই অনুমান করা যায় মহানস্থানের মাটির নিচে কত অমূল্য সম্পদ এখনও পড়ে আছে।

খোজার ভিটা : মহাস্থানের প্রাচীর সংলগ্ন একটি ফুলবাগান আছে। পূজা-পার্বণে ফুল দরকার হতো বলে ফুলের বাগানের প্রয়োজন। আজ আর ফুল বাগানের চিহ্নমাত্রও নেই। ফুল বাগানের পাশেই বড় একটি পাথর বা শিবলিঙ্গ পড়ে আছে। এই জায়গাটির নাম খোজার ভিটা।

মানখালি : খোজার ভিটার উত্তর পাশে সুউচ্চ বাড়ির যে ভগ্নাবশেষ আছে তাই মানখালি। এ সম্পর্কে মানরাজার এক কাহিনী প্রচলিত আছে। এখন আর মানরাজা নেই বাড়িও খালি।তাই এ জায়গাটির নাম হয়েছে মানখালি।

পূজার বাড়ি : মানখালি থেকে কিছুদূর অগ্রসর হলে ১৭টি উঠান নিয়ে প্রকা বাড়ির যে ভগ্নস্তুপ চোখে পড়বে তাই পূজার বাড়ি। অসংখ্য ঘর এবং সেগুলোতে ৩৬০টি কক্ষ ছিল। প্রত্যেক কক্ষে এক একটি দেবতা ছিল বলে অনুমান করা হয়। প্রতিদিন নিত্যনতুন উপচারে পূজা দেয়া হতো। বাড়ির সামনেই জিউৎকু। এই কূপের জলে মরা মানুষ বাঁচিয়ে উঠত বলে ধারণা করা হয়। পূজার বাড়ি খননকরার সময় মস্তবড় দুটি কুঠুরী মেঝে পাকাসহ পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় এই দু’কুঠুরীতে বড় কোন মূর্তি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। আর বাকি কুঠুরীগুলো ছিল ক্ষুদ্রাকার।

জিউৎকুন্ড : পূজাবাড়ির পূর্ব পাশে বড় ইন্দারার নাম জিউৎকুন্ড। জাদুমন্ত্র বলে কূপের জলে মরা মানুষ বাঁচানোর শক্তি জন্মেছিল বলেই এই কূপের নাম জিউৎকুন্ড। কূপটির ব্যস ১৬ ফুট, গভীরতা ৪৫ ফুট। কূপের গায়ে দুই সারি পাথর, যেগুলো সিঁড়ির কাজ করত। কূপের এক পাশে বড় একটি পাথর করুকাজ করা। মনে হয় পাথরের উপরে উঠে জল তোলা হতো।

গোকুল : তোমাকে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে। হিন্দু ধর্মের মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয় পশ্চিম ভারতের মথুরার রাজা কংসকে বধ করার জন্য। শ্রীকৃষ্ণ গোকুলে নন্দঘোষের ঘরে প্রতিপালিত হন। পরশুরাম পশ্চিম ভারতের দুটি তীর্থস্থানের অনুকরণে  এই কৃত্রিম গোকুল ও মথুরার নামাকরণ করে বলে শোনা যায়। মহাস্থান থেকে এক মাইল দক্ষিণে গোকুল গ্রাম অবস্থিত।

বৈরাগীর বাড়ি : এই বাড়িতে পরশুরাম সুলতান (র:) কাছে ধরা পড়েছিলেন। বাড়িটি রাজবাড়ি ছিল বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু কি জন্য একে বৈরাগীর বাড়ি বলা হয় তা অনুমেয় নয়। সম্ভবত রাজা কর্তৃক মুনি, ঋষির বা বৈরাগীর সেবা  এই বাড়িতে চলত বলেই এই বাড়ির নাম হয় বৈরাগীর বাড়ি।

ওঝা ধন্মন্তরীর বাড়ি : মহাস্থানগড় থেকে দূরে হরিপুর, হাজরা দীঘি ও রামশহর গ্রামের মিলনস্থানে উঁচু ভিটার উপর পাকা বাড়ি। বিশাল বাড়ির উঠান। বাড়ির দক্ষিণে পুকুর। পুকুর পাড়ে হাট। পুকুরের জলে ওঝার রথের শালকাঠের তক্তা আজও চোখে পড়ে। স্বাস্থ্যকর স্থান। ওঝা ধন্ম্ন্তরী মহারাজের রাজ চিকিৎসক ছিলেন বলেই এতবড় এবং সুন্দর বাড়ি। বাড়িতে দারুঘরা নামক ঔষধালয় ছিল।

ফাঁসিতলা : বহুদিনের পুরনো এক বটগাছ কালীদহের পশ্চিমে খালাস দীঘির পাড়ে। এখানে রাজ আমলের গুরতর অপরাধীকে ফাঁসিতে ঝুলানো হতো বলে এই জায়গার নাম ফাঁসিতলা।
এ রকম অনেক দর্শনীয় স্থান মহাস্থানের আশপাশে। হিন্দু সভ্যতার রাজধানী হলেও আজ আর প্রাচীর কীর্তির কোন মন্দিরের চিহ্নমাত্রও নেই ধ্বংসস্তুপ ছাড়া। হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে সেই ইট-পাথরেই মসজিদ, মাজার তৈরি হয়েছে। মহাস্থানগড়ের অসাধারণ নির্মাণ নৈপুণ্য দেখে মনে হয় সেকালে এমন সুরক্ষিত, সুদৃঢ় দুর্গ ভারতে কমই ছিল। ৭ দিনের সফর শেষে মহাস্থান থেকে ঘর সাজানোর জন্য নানা রকম কাঠের তৈরী জিনিস যেমন, ফ্লাওয়ার ভাজ, কলম, খেলনা, পুতুল মালাসহ অনেক দৃষ্টিনন্দন জিনিস কেনা যাবে এখান থেকে। 






সময় করে ঘুরে আসুন,অবশ্যই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ সবাইকে।