রবিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০১৫

ভ্রমণ :: সিলেট ০২।

সিলেট শহর থেকে সামান্য দূরে নাজিমগড় রিসোর্ট । 


সিলেটের কথা উঠলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সবুজ চা বাগানের কার্পেট, মাধবকুণ্ডের জলপ্রপাত, জাফলংয়ে ভারত থেকে পাথর নিয়ে নেমে আসা নদী। দিনের বেলা এসব জায়গা ঘুরে এসে রাতটা যদি শহরের হইচইয়ের মধ্যে কোনো হোটেলে কাটাতে হয় তাহলে বেড়ানোর আমেজটাই নষ্ট হয়ে যায়। রাতটা হয়ে যায় আনন্দহীন শহুরে সময়।
তবে হইচইয়ের মধ্যেও সিলেট শহর থেকে সামান্য দূরে খাদিমনগরে এক নির্জন দ্বীপ গড়ে তুলেছে নাজিমগড় রিসোর্ট। তাদেরই ব্যবস্থাপনায় মেঘালয় সীমান্তে লালাখালে তৈরি হয়েছে পিকনিক স্পট। দিনের বেলা লালাখালে নৌকায় বেড়ানো কিংবা পাশের খাসিয়া পল্লী ঘুরে দেখা, হয়তোবা চা বাগানের সরু পথে হাঁটাহাঁটি করে বিকেল-সন্ধ্যায় নিরিবিলি সময় কাটানো। এক আদর্শ অবসর যাপন কেন্দ্র এ নাজিমগড় রিসোর্ট।


নাজিমগড় রিসোর্টে থাকার জন্য আছে তিন ধরনের ব্যবস্থা। আছে বিশাল টেরেস, ছোট ছোট বাংলো ও বড় ভিলা। একেকটির ভাড়া একেক রকম, তবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় পাঁচতারা হোটেলের সমান। আছে স্পা ও পুল, যেখানে দূর করতে পারেন শরীরের অবসাদ।
সবচেয়ে বড় কথা প্রতিটি স্থাপনাই গাছপালা-জঙ্গলে ছাওয়া টিলার ধারে। ভিলা, টেরেস বা বাংলোর বারান্দায় বসে হাত বাড়ালেই যেন পাওয়া যায় গাছগাছালির ছোঁয়া।
সাধারণ হোটেল-কটেজের চেয়ে নাজিমগড়ে থাকার খরচটা একটু বেশিই মনে হবে। এক রাতের জন্য সবচেয়ে কমদামি ‘প্রিমিয়ার’ কক্ষের ভাড়া পড়বে প্রায় ৭ হাজার টাকা, আর প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইটের ভাড়া প্রায় ১৫ হাজার। এক কক্ষে থাকতে পারবেন সর্বোচ্চ ৩ জন, তবে ৮ বছরের নিচের শিশুর জন্য ভাড়া লাগবে না। এ ভাড়ার মধ্যে পাবেন দুজনের সকালের নাশতা।


এ সিজনে নাজিমগড় রিসোর্ট দিচ্ছে ‘স্পেশাল অফার’। যুগলের জন্য মাথাপিছু ১৪ হাজার ৫০০ টাকায় ২ রাত ৩ দিন কাটিয়ে আসতে পারেন রিসোর্টে। এ খরচেই থাকবে প্রতিদিন তিন বেলার খাবার, লালাখালে নৌকা ভ্রমণসহ আশপাশের দর্শনীয় স্থানে বেড়ানো এবং সুইমিংপুল, জিমন্যাশিয়াম ও ডিভিডি লাইব্রেরি ব্যবহারের সুযোগ। যদি দল বেঁধে ৪ থেকে ৬ জন যান তাহলে মাথাপিছু খরচ নেমে আসবে ১২ হাজার টাকায়।


আর আশপাশে বেড়ানো ছাড়া এ প্যাকেজে মাথাপিছু খরচ পড়বে ৯ হাজার টাকা। শুক্র ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিন পাবেন ১০ শতাংশ ছাড়। 
নাজিমগড়ে আগেভাগে বুকিং দিয়ে যাওয়াই ভালো, বিশেষ করে প্যাকেজের বেলায়। এ জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ঢাকা ও সিলেটে; ফোন : ৮৮৫৩৮৫৭, (০৮২১) ২৮৭০৩৩৮, ২৮৭০৩৩৯, ০১৯২৬৬৬৭৪৪৪, ০১৭৩০৭১২৬০০, ০১৭২৯০৯৭৮৪৯, ০১৯১৬২৭১৯৩৫, ০১৭৪৭২০০১০০। ওয়েব ::  নাজিমগড় রিসোর্ট‍।     



আজ এ পর্য‍ন্তই। ঘুরে আসুন নাজিমগড় রিসোর্টে‍ । ধন্যবাদ সবাইকে।  

ভ্রমণ :: সিলেট ০১।

সবুজ অরণ্যের সমাহার খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান । 





সিলেট শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে তামাবিল-জাফলং রোডে খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান। বাম পাশের পিচঢালা রাস্তা দিয়ে খাদিম চা বাগানের পথে কিছু দূর এগুলে চা বাগান ও কারখানা। আমাদের উদ্দেশ্যে বনে গিয়ে  প্রকৃতির ভেতরে হেঁটে ভ্রমণ করার। তাই চা কারখানার পাশে না থেমে রওনা হোন উদ্যানের দিকে আঁকা-বাঁকা রাস্তায়। চারদিকে উঁচু-নিচু টিলা আর ছায়া বৃক্ষগুলোর নিচে সবুজ গালিচার মতো নয়নাভিরাম চা বাগান। চা বাগানের আঁকা-বাঁকা পথ পেরিয়ে বনে প্রবেশ করার সময় রাস্তার বাম পাশে গাড়ি থেকে দেখতে পাবেন দু’টি মথুরা। গাড়ি থামিয়ে  দূর হতে কিছুক্ষণ মথুরা দু’টি উপভোগ করেন ভালো লাগবে। যেতে যেতে কালীবাড়ির ডান পাশে ৪৫ মিনিটের এবং বন বিট কার্যালয়ের পাশে দুই ঘণ্টা হাঁটার পর সাইনবোর্ড মানচিত্র ও বর্ণনাসহ দেখতে পাবেন । নিবিড় প্রকৃতি তার সৌন্দর্যের মধ্যে আপনাদের সবাইকে মোহিত করবে। সহজেই  বানরের দেখা মিলল গাছের ডালে ডালে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। খাদিমনগর সংরক্ষিত বনকে সরকার ২০০৬ সালে সংরক্ষিত বন বা জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে। এর আয়তন  ৬৭৯ হেক্টর বা ১৬৭৭.১৩ একর। জাতীয় উদ্যানের চারপাশে চা বাগান যা এক মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করেছে অকল্পনীয় সবুজের সাহায্যে। এছাড়াও  এই অরণ্যে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে যা ভ্রমণপ্রিয় মানুষের আনন্দের যোগান দিতে পারে। যেসব উদ্ভিদ এই অরণ্যে রয়েছে তাহল চম্পা, চন্দন, সেগুন, জারুল, মেহগনি, চিকরাশি, আকাশমণি, চাপালিশ ইত্যাদি। বাঁশের  নাম : জাই, কালি, মিটিংগা, পেঁচা ইত্যাদি এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির বেত গাছ রয়েছে। এ উদ্যানটি একটি  ট্রোর্পিকেল রেইন ফরেস্ট বা মিশ্র চিরসবুজ ও  উষ্ণ মণ্ডলীয় বন। এ উদ্যানে বসবাসকারী বন্য প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে ২৬ প্রজাতির  স্তন্যপায়ী, ৯ প্রজাতির উভচর, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ২৫ প্রজাতির পাখি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বনমোরগ, মথুরা, শ্যামা, ময়না, বানর, মুখপোড়া হনুমান এবং অজগর ইত্যাদি। বনের হাইকিং ট্রেইলে প্রকৃতির  ভেতরে যেতে যেতে দেখা মিলবে অর্কিডসহ বিচিত্রময় নাম না জানা অচেনা বনফুল ও বনলতা। বনভ্রমণ করতে হলে সকালেই ভালো। তাই  সকালেই বনে হাজির হবেন। কারণ, বন্যপ্রাণীদের সকালে সহজেই দেখা যায়। পাখির বৈচিত্র্যময় কলরব আমাদের সবার মনকে উদ্ভবাসিত করে। আর আমাদের সঙ্গে খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ইকোট্যুর গাইড আছে, যার কারণে  সহজেই পথ ভুলে যাওয়ার কোন কারণ নেই। হাইকিংয়ের সময় নজরে পড়বে পাহাড়ি ছড়া। ছড়াগুলোর পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানি মনকে আনন্দে ভরে তুলবে। ছড়াগুলোর মাঝে মাঝে প্রাচীন ফসিল বা হাজারো বছর আগের গাছের টুকরা পাথরের খণ্ড হয়ে পড়ে আছে, যা এক অবাক বিস্ময়। বর্ষাকালে হাইকিং ট্রেইলে লাল কাঁকড়ার দেখা মিলে। বনের গহীন অরণ্যের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে সেগুন গাছের ডালে মুখপোড়া হনুমানের দেখা মেলে। পাহাড়ের উপরে ওঠা সহজ, কিন্তু নিচে নামা কঠিন তাই সাবধানে নামতে হয়েছে আমাদের। পাহাড়ের উপর হতে মনোরম প্রকৃতির ভরপুর অপূর্ব সৌন্দর্য যেন মনে হয় নীল আকাশ আর সবুজ অরণ্যের সমাহার। সারাদিন হাইকিং করে কষ্ট হলেও প্রকৃতির অভাবনীয় রূপবৈচিত্র্যের আবরণে  নিজেদের কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে ফেলবেন। দিনে দিনে হাইকিং শেষ করে ফিরে আসতে পারবেন সিলেট শহরে। এ যেন এক সবুজ স্বর্গের ভ্রমণ। যা আপনার চিত্মকে করবে প্রসারিত।