শুক্রবার, ৬ মার্চ, ২০১৫

ব্রহ্মপুত্রঘেঁষা মনোহরিণী নিঝুম দ্বীপ ।

ব্রহ্মপুত্রঘেঁষা মনোহরিণী নিঝুম দ্বীপ ।  

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কৃষিবিদ্যার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। 

সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক নৈসর্গের বিশাল‍ায়তনের এ বিশ্ববিদ্যালয় ‌এখানকার শিক্ষার্থীদের কাছে তো বটেই, এখানে আসা নতুন-পুরাতন ও দর্শনার্থীদের কাছেও অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি।

এই ক্যাম্পাসের ‍অনতিদূরেই ব্রহ্মপুত্রের তীর ঘেঁষে এক দ্বীপ। স্বচ্ছ নীলাভ জলধারা আর অপূর্ব প্রাকৃতিক নৈসর্গ ও জল-সবুজের মিতালী এ দ্বীপকে করে তুলেছে অনন্য।

তাই বাকৃবিতে আসা দর্শনার্থী ও প্রকৃতিপ্রেমীরা নিদেনপক্ষে হলেও একবার ঢুঁ মেরে যেতে ভোলেন না এই দ্বীপে। ফলে অল্পসময়ের মধ্যেই এ দ্বীপ হয়ে উঠেছে অঘোষিত এক পর্যটন স্পট। 

দেশের আরো অনেক নৈসর্গিক জায়গায় মতো প্রচার না পাওয়া এ দ্বীপটিরও কোনো নাম ছিলনা। তবে স্থানীয় লোকমুখে ও বাকৃবি শিক্ষার্থীদের দেওয়া নাম ধারণ করে এখন দেশময় এই দ্বীপ ‘নিঝুম দ্বীপ’ নামেই পরিচিত।

প্রচারের আলোয় আসার পর থেকেই বাকৃবি শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক পদচারণা ছাড়াও আশপাশ ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের কাছে এই নিঝুম দ্বীপ এখন যেন পুরোদন্তুর এক পর্যটন স্পট। 

মনোহারিণী এ দ্বীপে দাঁড়িয়ে আকাশ-আর নদীর নীলের মিলন দেখে, কিংবা পায়ের নিচে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্রের জলে শিহরিত প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসু মাত্রই বিমোহিত হবেন।  



বাকৃবি ক্যম্পাস থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ব্রহ্মপুত্র নদের পাঁড় ঘেঁষা নিঝুম দ্বীপ। সবুজের সমারোহ আর  নিরিবিলি পরিবেশের এক অনবদ্য সৃষ্টি ওই দ্বীপ। দ্বীপের চারপাশজুড়ে সুনসান নীরবতা। নেই তেমন জনবসতি।    

হাতে গোনো কয়েকটি বাড়িঘর ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়বে না। যতদূর চোখ যায় সরু ব্রহ্মপুত্রের জলরাশির খেলা ও আর দ্বীপে সারি সারি গাছ। অবশ্য দিনের বেলায় প্রায়ই নদীতে চোখে পড়ে জেলেদের ব্যস্ততা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ মোড় সংলগ্ন মেঠো পথ ধরে যেতে হয় মনোমুগ্ধকর নিঝুম দ্বীপে। বন্ধু-পরিজনদের কাছে রসিয়ে-রসিয়ে এ নিঝুম দ্বীপের কাব্য করতে চাইলে তার জন্য রয়েছে নৌকা করেও নিঝুম দ্বীপে যাওয়ার সুযোগ।

এ জন্য রয়েছে বাকৃবি থেকে যাওয়া নৌপথ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রহ্মপুত্র নদের ঘাট থেকে অল্প খরচে মাত্র আধাঘণ্টা খরচায় নৌকা ‍আপনাকে পৌঁছে দেবে মন হরণ করে নেওয়া নিঝুম দ্বীপে।

বাকৃবির একাধিক শিক্ষার্থীরা জানান, সকাল থেকে টানা বিকেল পর্যন্ত ক্লাস শেষে মাঝে-মধ্যেই তারা দলবেঁধে আসেন নিঝুম দ্বীপে।

শিক্ষার্থীরা শুধু ঘুরতে এলেও এখন দূর-দূরান্ত থেকে আসা অনেকেই এখানে পিকনিক করতে আসেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিভিন্ন সংগঠন এখানে বনভোজনে আসে।

এই দ্বীপে রয়েছে মেহগনি, আকাশমনি, ইউক্যালিপটসসহ বিরুৎ ও গুল্ম জাতীয় বেশ কয়েক ধরনের গাছ। স্থানীয়রা এই দ্বীপকে ব্যবহার করেন গোচারণ ভূমি হিসেবে। গাছের সারি পেরিয়ে দ্বীপের ভেতরে গেলে দেখা মেলে বিস্তৃর্ণ সমতলভূমির।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগে শুধু ঘোরাঘুরি বা বনভোজনেই লোকজন এখানে আসতেন। তবে বর্তমানে  শ্যুটিং স্পট হিসেবেও এর কদর বাড়ছে।

তাই ভ্রমণপিপাসু যে কেউ দলদলসহ ঘুরে যেতে প‍ারেন নিঝুম দ্বীপ। সঙ্গে দর্শন তালিকায় যোগ হবে দেশের কৃষি শিক্ষার তীর্থ বাকৃবির সৌন্দর্য।



আজ এ পর্য‍ন্তই। ভালো থাকবেন সবাই। ধন্যবাদ।
  

ঘুরে আসুন পতেঙ্গা সৈকতে...

ঘুরে আসুন পতেঙ্গা সৈকতে 


চলছে ফাল্গুন মাস। ভ্রমণের জন্য শীতকালেই উপযুক্ত সময় বলা হয়ে থাকে। শীতের মাঝামাঝি সময় এখন নয় তাই চট্টগ্রামে শীতের প্রকোপ তেমন পড়েনি।    
তাই এই মৌসুমে ঘুরে আসতে পারেন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের নয়নাভিরাম দৃশ্য। 



চট্টগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত পতেঙ্গা। এটি বন্দরনগরীর একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, যা কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। 

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এর ব্যাপক ক্ষতি হয়। বর্তমানে বাঁধ দিয়ে রক্ষাণাবেক্ষণ করায় সৈকতের সৌন্দর্য অনেকটা বেড়েছে। জোয়ারের সময় ঢেউয়ের আঁচড় যেন নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা করে। 



যা দেখবেনঃ
শাহ আমানত (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বিএনএস ঈশাঁ খা (বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাটি) ও দেখবেন চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি। সবগুলো কাছাকাছি হওয়ায় আলাদা করে যাওয়ার ঝামেলা নেই। 

সৈকতে আছে বার্মিজ মার্কেট। সেখানেও ঘুরে ফিরে পছন্দের কেনাকাটা সেরে নিতে পারেন। 



এখানে সন্ধ্যার দিকে সূর্যাস্তের দৃশ্য মনকে আরো বেশি পুলকিত করবে। সবচেয়ে ভালো লাগবে সন্ধ্যার পরিবেশ। সুতরাং থাকতে পারেন সন্ধ্যা পর্যন্ত। 
প্রচুর লোকের সমাগম হবে সেখানে। বিকেলের দিকে মন চাইলে পানিতে নেমে আনন্দের মাত্রা আরও বাড়াতে পারবেন। পাবেন ২০ টাকায় ঘোড়ার পিঠে চড়ার সুযোগ। 

সেই সাথে আছে স্পিডবোড কিংবা কাঠের তৈরি নৌকা ওঠার সুযোগও। জাহাজের চলাচল কিংবা মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া প্লেনও দেখবেন।
সাধারণত বিকেল গড়াতে থাকলে জোয়ার আসতে শুরু করে। জোয়ার শুরুর আগে বাঁধ অনেকটা তলিয়ে যাবে। তীরে এসে পড়বে ঢেউ।  

সমুদ্র সৈকত দেখে আপনার ফিরতে ইচ্ছে করবে না হয়তো। কিন্তু শাহ আমানত (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগামী রাস্তার মুখে অবস্থিত বাটার ফ্লাই পার্ক দর্শন করতে ভুলবেন না। 

বিভিন্ন ধরনের প্রজাপতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন সেখানে। পার্কটিতে ৭০ প্রজাতির প্রায় ১০০০ এর বেশি প্রজাপতি রয়েছে। 

প্রজাপতির সঙ্গে খেলা করতে চাইলে দেখতে চাইলে সকাল সকাল যাওয়াই ভালো হবে। কেননা বিকেলের পর থেকে প্রজাপতিরা ঝোঁপের আড়ালে চলে যাবে।



কীভাবে যাবেন 
চট্টগ্রাম শহরের এ কে খান কিংবা জিইসি থেকে খুব সহজে যেতে পারেন সৈকতে! চট্টগ্রামে বসবাসকারীদের নতুন করে যাবার উপায় বলার দরকার নেই। সড়ক পথে যেতে চাইলে-অলংকার মোড়- এ কে খান হয়ে সরাসরি চলে যেতে পারবেন সৈকতে। 

সি-বিচ লেখা বাসগুলোতে চেপে বসলেই হবে শুধু। আর যদি নগরীর জিইসি মোড় থেকে যেতে চান তবে ১৮০-২০০ টাকায় সিএনজি অটোরিকশা নিয়েও যেতে পারবেন।  



সৈকতে ঘুরতে গিয়ে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি এড়াতে দল বেধে যাওয়াই ভালো। কোনো বিপদ কিংবা অভিযোগ থাকলে সৈকতের ভ্রাম্যমাণ পুলিশ ফাঁড়িতে জানাতে পারেন। 

তবে অধিক লোকের সমাগম আছে ওই দিকটায় থাকাই শ্রেয়। সৈকতে বেড়াতে গেলে নিজস্ব ক্যামেরা নিয়ে যেতে পারেন। কেননা একাকী ভ্রমণে গেলে সৈকতে থাকা ভ্রাম্যমাণ ফটোওয়ালাদের কাছে ছবি তুলতে না যাওয়াই ভালো। 

স্পিডবোড, নৌকা, ঘোড়া যেখানেই চড়ুন! আগে দেখে শুনে ভাড়া শুনে নিলে ভালো হয়। 

সাগর, নদী আর পাহাড় বেষ্টিত বন্দরনগরীতে এলে অতি অল্প সময়েই ঘুরে আসতে পারবেন সৈকতটি। কাজ কিংবা বেড়ানোর মধ্যে কিছুটা সময় নিয়ে ঘরে আসতে পারেন অনাবিল সৌন্দর্যের পতেঙ্গা সৈকতে!





আজ এ পর্য‍ন্তই। ভালো থাকবেন। সবাইকে ধন্যবাদ।

ছোট সোনা মসজিদ।

ছোট সোনা মসজিদ




- প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড় নগরীর উপকন্ঠে ফিরোজপুর গ্রামে এ স্থাপনাটি নির্মিত হয়েছিলো, যা বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার অধীনে পড়েছে।

- বিশ টাকার নোটের উপর ছাপানো মসজিদটিই ছোট সোনা মসজিদ, যা বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ। 





- সুলতানি আমলের অনন্য স্থাপনা ছোট সোনামসজিদ। 

- ১৪৯৩ থেকে ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে এটি নির্মিত হয়। 

- এ মসজিদে চৌচালা ঘরের চালের মতো তিনটি গম্বুজ এবং চার সারিতে তিনটি করে আরো ১২টি গোলাকৃতি গম্বুজ। 

- গম্বুজের তলদেশ ফুল, ফল ও লতাপাতার নকশা।

- বিশাল এক দীঘির দক্ষিণ পাড়ের পশ্চিম অংশজুড়ে এর অবস্থান। 

- মসজিদের উত্তর-পশ্চিম কোণে মহিলাদের নামাজ পড়ার আলাদা জায়গা। কারুকার্যখচিত মিহরাব আছে একটি। 

- মসজিদের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা যথাক্রমে ৮২, ৫২ ও ২০ ফুট। ইটের ইমারত হলেও এর বহির্গাত্র পাথর দিয়ে ঘেরা। 

- মসজিদগাত্রের লতাপাতার কারুকাজও পাথরে খোদাই করা। একে গৌড়ের বড় সোনামসজিদের সঙ্গে তুলনা করে ছোট সোনামসজিদ বলা হয়।

- মসজিদের কিছু দূর পশ্চিমে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিপ্তর কর্তৃক কয়েক বছর পূর্বে নির্মিত একটি আধুনিক দ্বিতল গেস্টহাউস রয়েছে। গেস্টহাউস ও মসজিদের মধ্য দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে একটি আধুনিক রাস্তা চলে গেছে। 

- মসজিদের দরজাগুলোর প্রান্তদেশ বলিষ্ঠ শোভাবর্ধক রেখা দিয়ে ঘেরা। কিন্তু খোদাই কাজটি অগভীর এবং অট্টালিকাটির খুব কাছে না পৌঁছলে এ খোদাই কাজ চোখে পড়ে না। 

-দরজাগুলোর মধ্যবর্তী কুলঙ্গীগুলোতেও রয়েছে একই অগভীর খোদাই মসজিদটি ইট ও পাথরে নির্মিত।

- মসজিদের মাঝের দরজার উপর উপর প্রাপ্ত এক শিলালিপি থেকে এ তথ্য জানা যায়। তবে লিপির তারিখের অংশটুকু ভেঙ্গে যাওয়ায় নির্মাণকাল জানা যায়নি। 


কিভাবে যাবেনঃ ঢাকার কল্যাণপুর থেকে হানিফ, মডার্নসহ আরো কিছু পরিবহনের বাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও শিবগঞ্জ যাওয়া যায়। সময় লাগে সাত ঘণ্টা, ভাড়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। তারপর লোকাল বাসে ছোট সোনামসজিদ যেতে আরো এক ঘণ্টা লাগবে।  



ঢাকার প্রথম মসজিদ।

ঢাকার প্রথম মসজিদ। 




মানুষের জীবনে ব্যস্ততার কোনো শেষ নেই। শহর কিংবা গ্রাম সব জায়গাতে একই অবস্থা। মানুষ ছুটছে তো ছুটছেই। বেঁচে থাকার এই ইঁদুর দৌড়ে টিকতে হবে, সেটাই হয়তো মুখ্য বিষয়। তবে মাঝে মধ্যে ক্লান্ত হয়ে মনটা একটু বিশ্রাম চাইতেই পারে। হয়তো ব্যাকুল হয়ে ওঠে লোকালয় ছেড়ে অনেক দূরে কোথাও ছুটে যেতে। তাই তো ভ্রমণ শব্দটি শুনলেই চেহারায় ফুটে ওঠে চওড়া হাসি, চকচক করে ওঠে ওই চোখজোড়া। সচরাচর আমরা ভ্রমণ বলতে দূরে কোথাও যাওয়া কিংবা ঘুরে বেড়ানোকে বুঝি। তবে মানুষ নিজেদের মনের টানে ভ্রমণকে করেছে বৈচিত্র্যময়। সেটা হতে পারে কাছে কিংবা দূরে, নিরিবিলি অথবা রোমাঞ্চকর। অনেক ক্ষেত্রে এমনও হয় যে, বাড়ির কাছে দেখার মতো বা জানার মতো এমন অনেক কিছুই রয়েছে। তবু আমরা ছুটে যাই দূর অজানায়। তাই কাছের জায়গাগুলো দেখতে বা সেটা সম্পর্কে জানতে, কেবল ইচ্ছা থাকলেই হল। আর কিছুর প্রয়োজন নেই। অনেকে আবার ঘুরে ঘুরে দেখে থাকে বিভিন্ন মসজিদ। 

তবে ভ্রমণপিপাসু মন, যদি ঢাকার ইতিহাসের প্রথম মসজিদটি একটু ঘুরে দেখতে চায় তাহলে বোধহয় মন্দ হয় না। তাই সোজা চলে যাওয়া যাক পুরনো ঢাকার নারিন্দা এলাকায়। কারণ, সেখানে প্রায় ৫৫৫ বছরের ইতিহাস নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিনত্ বিবির মসজিদ, যাকে ঢাকার প্রথম মসজিদ বলা হয়। ১৪৫৬ সালে, অর্থা  বাংলার সুলতান নাসির উদ্দিন মাহমুদের আমলে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। সে সময় ধোলাইখাল বয়ে গিয়ে বুড়িগঙ্গায় মিশত। আর বুড়িগঙ্গা মিশত শীতলক্ষ্যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল নদীনির্ভর। তাই পারস্য উপমহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য সওদাগরের মতো আরাকান আলীও এই অঞ্চলে বাণিজ্য করতে আসেন। মেয়ে বিনত্ বিবিকে নিয়ে বসবাস করতে লাগলেন স্থায়ীভাবে। এ সময় নামাজ পড়তে অসুবিধা হয় বলে তিনি এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। তার কিছুদিন পরই বিনত্ বিবি আকস্মিক মারা যান। ফলে তাকে মসজিদের পাশেই দাফন করা হয়। ঠিক তার ছয় মাস পরে আরাকান আলীও মারা যান। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকেও একই জায়গায়, অর্থাত্ মেয়ের কবরের পাশেই সমাধিস্থ করা হয়। সেই থেকে এই মসজিদটি সবার কাছে বিনত্ বিবির মসজিদ নামেই পরিচিতি পায়।
  


এখন কালের বিবর্তনে সবই বদলেছে। নারিন্দা এলাকাটিও এর ব্যতিক্রম নয়। চারপাশের দালানগলো চোখের দৃষ্টিকে করেছে সীমাবদ্ধ। মসজিদের চারপাশে কিছু লেদ মেশিনের কারখানা গড়ে উঠেছে। ভোজনবিলাসীদের জন্য রয়েছে বেশকিছু নামিদামি রেস্তোরাঁ। তবে মসজিদের পুরনো দালানটি এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দেয়ালের কালো পাথরটিতে, ফার্সি ভাষায় লেখা রয়েছে মসজিদটির ইতিহাস। বিনত্ বিবির মাজারটিও ঠিক তেমনি আছে। তবে আরও বড় করে মসজিদটি নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এলাকাবাসী। ইতোমধ্যে অনেক কাজ শেষও হয়ে গিয়েছে।
তবে যাই হোক, অনেক প্রশ্ন কিন্তু রয়েই গেল। এই যেমন, বিনত্ বিবির সমাধিস্থলে মাজার কবে তৈরি করা হল? কে পুরনো দালানটি রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্বে আছেন? নতুন দালানগুলোই বা কতটা সুন্দর করা হয়েছে? সব মিলিয়ে বর্তমানে কী অবস্থায় আছে ঢাকার সর্বপ্রথম মসজিদটি? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না হয় একবার নিজ চোখে দেখেই জানা যাক। প্রতিদিন বিদেশি পর্যটক এখানে এসে ভিড় জমায়। ঢাকার প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে আমরা কতটুকুই বা জানি, তাই এবার ভ্রমণ করা যাক একটু ভিন্নভাবে। ঘুরে বেড়ানো যাক আনাচে কানাচে। নতুন করে আরও একবার দেখা যাক নিজের চারপাশটাকে। কী জানি, চলতে ফিরতে দেখা চিরচেনা জায়গাটিই হয়তো সাক্ষ্য দিচ্ছে অজানা কোনো ইতিহাসের!  








মসজিদের শহর ঢাকার ইতিহাস জানুন।সময় করে ঘুরে আসুন, ভালো লাগবে আশা করি।