মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬

বাংলাদেশের এক মাত্র প্রবাল দ্বীপ।

প্রবাল দ্বীপঃ সেন্ট মার্টি‍ন। 

















আকাশ আর সমুদ্রের নীল এখানে মিলেমিশে একাকার। তীরে বাঁধা নৌকা, সারি সারি নারকেলগাছ আর ঢেউয়ের ছন্দ, কখনো থেমে থেমে, কখনো আবার দমকা হাওয়ার স্পর্শ। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের সৌন্দর্য বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। বালু, পাথর, প্রবাল কিংবা জীববৈচিত্র্যের সমন্বয়ে জ্ঞান আর ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক অনুপম অবকাশ কেন্দ্র এই প্রবাল দ্বীপ। বছরজুড়ে পৃথিবীর নানা দেশের বহু মানুষের ভিড় লেগে থাকে এখানে। দ্বীপে মানুষের জীবনধারা, সমুদ্রের নীল পানির সঙ্গে অতুলনীয় মিতালি অন্য রকম ভালো লাগা তৈরি করে।
 
অবস্থান
সেন্ট মার্টিন, বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত দ্বীপ সীমান্ত। এটি কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে ও মিয়ানমারের উপকূল থেকে আট কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। এখানে প্রচুর নারকেল ফল পাওয়া যায় বলে একে নারকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়। কক্সবাজার জেলার কেন্দ্র থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এটি। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের আয়তন প্রায় আট বর্গকিলোমিটার। দ্বীপের তিন দিকের ভিত শিলা, যা জোয়ারের সময় তলিয়ে যায় আর ভাটার সময় জেগে ওঠে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের গড় উচ্চতা ৩ দশমিক ৬ মিটার।
 
আগের ও বর্তমান কথা
সেন্ট মার্টিনের প্রাচীন নাম ছিল জাজিরা। স্থানীয় ব্যক্তিরা নারকেল জিঞ্জিরা বলেন। ইংরেজরা এসে সেন্ট মার্টিন নামে অভিহিত করে। স্বচ্ছ পানিতে সামুদ্রিক বিভিন্ন ধরনের জীবের রহস্যময়ী জীবন্ত পাঠশালা হলো সেন্ট মার্টিন। প্রথমে দুজন অধিবাসী দিয়ে শুরু হলেও বর্তমানে দ্বীপটিতে প্রায় আট হাজারের বেশি লোকের বাস। প্রায় সবাই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। ইদানীং পর্যটনশিল্পের বিকাশের কারণে অনেকেই রেস্টুরেন্ট, আবাসিক হোটেল কিংবা গ্রোসারি শপের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন। অত্যন্ত সহজ-সরল তাদের জীবনযাপন। এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি সেন্ট মার্টিনে।
 
যা যা দেখতে পাবেন
সেন্ট মার্টিন একবার পৌঁছালে আপনার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। এর স্বচ্ছ আর নীল পানি দেখে স্থির থাকা কঠিন। ইচ্ছেমতো পানিতে সাঁতার কাটতে পারেন। তবে ভাটার সময় পানিতে না নামাই ভালো। দ্বীপের দক্ষিণ দিকে প্রচুর পরিমাণে কেওড়ার ঝোপঝাড় আছে। কিছু ম্যানগ্রোভ বন আছে। অন্যান্য উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে শেওলা, সাগরলতা, বাইনগাছ ইত্যাদি। সেন্ট মার্টিনে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল প্রচুর পাওয়া যায়। এর মধ্যে লাল অ্যালগি সবচেয়ে জনপ্রিয়। ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ রয়েছে অসংখ্য স্পঞ্জ, শিল কাঁকড়া। সেন্ট মার্টিন গেলে দেখতে পাবেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বহুল আলোচিত ‘সমুদ্র বিলাস’।
 
খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা
ছেড়া দ্বীপে খাওয়া ও থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই থাকা বা খাওয়ার জন্য ভরসা সেন্ট মার্টিন বা কক্সবাজার। যারা স্বল্প সময়ের জন্য সেন্ট মার্টিনে থাকবেন, তাদের অবশ্যই তিনটার আগে ফিরতি জাহাজে আরোহণ করতে হবে। ছোট এই দ্বীপ এলাকা ঘুরে দেখতে তিন ঘণ্টা সময়ই যথেষ্ট। তবে হাতে সময় নিয়ে যাওয়াই ভালো। এখানে পর্যটকদের খাবারের জন্য রয়েছে বেশ কিছু  হোটেল ও  রেস্তোরাঁ। যেমন বিচ পয়েন্ট, আসাম হোটেল, সি বিচ, সেন্ট মার্টিন, কুমিল্লা রেস্টুরেন্ট, হাজী সেলিম পার্ক, সেন্ট মার্টিন টুরিস্ট পার্ক, হোটেল সাদেক ইত্যাদি। হোটেলগুলোতে সব ধরনের খাবারই পাওয়া যায়। তবে সেন্ট মার্টিন গিয়ে নারকেল খাওয়া ভুলে যাওয়া যাবে না। এখানে খুব কম দামে নারকেল খাওয়ার সুযোগ পাবেন। আর আসার সময় সঙ্গে করে শুঁটকি মাছ কিনে আনা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারণ, কক্সবাজারের তুলনায় সেন্ট মার্টিনে এর দাম কম পড়বে।
 
থাকার ব্যবস্থা
সেন্ট মার্টিনে থাকার জন্য উন্নত মানের বেশ কয়েকটি হোটেল ও কটেজ রয়েছে। যেমন সীমানা পেরিয়ে, প্রিন্স হ্যাভেন, বিচ ক্যাম্প, হোটেল সাগরপাড়, রিয়াদ গেস্ট হাউস ইত্যাদি। হোটেলগুলোতে এক রাত থাকতে খরচ হবে ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। অনেকের বাড়িতেও আছে পর্যটকদের জন্য থাকার ব্যবস্থা। এখানে ভাড়া পড়বে ২০০-২৫০ টাকা। তবে শীত মৌসুমে চাপ বেশি থাকায় ইচ্ছেমতো ভাড়া নেন মালিকেরা।
 
প্রকৃতি দুহাত মেলে সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে এখানে। বালুকাময় সৈকত, প্রবালের প্রাচীর আর কেয়াগাছের সারি এই দ্বীপকে দিয়েছে আলাদা এক বৈশিষ্ট্য, যা আর কোথাও নেই। উত্তাল সাগরের নোনাজল যখন আছড়ে পরে কেয়াগাছের ফাঁকে, ঝিরিঝিরি বাতাসে তৈরি হয় সফেদ ফেনা, সে এক মাতাল করা দৃশ্য। রাতের জোছনা এসে যখন লুটোপুটি খায় চিকচিকে বালুর বুকে, নীল আকাশ তখন আরও নীলাভ হয়। সুনসান নীরব রাতে চারদিকে শুধু সাগরের হুংকার আর ঢেউয়ের আছড়ে পড়ার গর্জন। হাজারো জোছনা রাতের চেয়েও সুন্দর সেন্ট মার্টিনের একটি নির্ঘুম চাঁদনি রাত। এখানে সময়ের কাঁটা এগিয়ে চলে কিন্তু সৌন্দর্য পিপাসার তৃষ্ণা মেটে না।
 
যেভাবে যেতে হবে
বাংলাদেশের যেকোনো স্থান থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে কক্সবাজার যেতে হবে। কক্সবাজার থেকে বাস, মাইক্রো বা জিপে চড়ে যেতে হবে টেকনাফ। বাসে যেতে ভাড়া লাগবে ২৫-৩০ টাকা, ট্যাক্সিতে ৩০-৪০ টাকা, আর মাইক্রোবাস রিজার্ভ করলে ভাড়া লাগবে প্রায় দুই হাজার টাকা। এবার টেকনাফ থেকে সি-ট্রাক, জাহাজ কিংবা ট্রলারে চড়ে পৌঁছাবেন সেন্ট মার্টিনে। টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে প্রতিদিন সকাল থেকে যাওয়া-আসা করে করে সি-ট্রাক, কেয়ারি সিন্দাবাদ ও নাফসি জাহাজ। এর পাশাপাশি স্পিডবোটও চলাচল করে। যারা অ্যাডভেঞ্চার করতে চান, তারা স্পিডবোটেই যেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। জাহাজে চড়ে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন যেতে সময় লাগে তিন ঘণ্টা। প্রতিদিনই জাহাজগুলো সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টায় ছেড়ে দেয় আবার বিকেল ৩টায় সেন্ট মার্টিন ছাড়ে। শীত মৌসুমে সমুদ্র শান্ত থাকে। আর গ্রীষ্ম-বর্ষায় উত্তাল থাকে, তখন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ।
 
ছেঁড়া দ্বীপ
সেন্ট মার্টিন থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ছেঁড়া দ্বীপের অবস্থান। এর আয়তন তিন কিলোমিটার। সেন্ট মার্টিন থেকে ছেঁড়া দ্বীপে যেতে হবে নৌকায়। স্পিডবোটেও যেতে পারেন। সময় লাগবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। ভাড়া ১০০ টাকা। ছেঁড়া দ্বীপে দেখা যাবে অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য। সামুদ্রিক ঢেউ আর সারি সারি নারকেলগাছ। প্রবাল পাথর ও পাথরের তৈরি বিভিন্ন কারুকার্য চোখে পড়বে এখানে। জায়গাটি ঘুরতে এক ঘণ্টাই যথেষ্ট। তবে পূর্ণিমার রাতে অপূর্ব রূপে সাজে ছেঁড়া দ্বীপ। 



ধন্যবাদ সবাইকে।








বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৬

মহাকবি মধুসূদনের সাগরদাঁড়ি।




বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহাকাব্যটি লিখেছিলেন তিনি। প্রথম পত্রকাব্য ‘বীরাঙ্গনা’ এবং সনেটও প্রথম তাঁরই লেখা। বাংলায় অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবক্তাও তিনি। এই ভাষাতে তিনিই প্রথম চালু করেছিলেন প্রবহমান প্রথম পয়ার ছন্দ। এ রকম বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯২তম জন্মবার্ষিকী পালিত হলো। এই মহাপ্রতিভা যেখানে জন্মেছিলেন, বেড়ে উঠেছিলেন, সে স্থানটি ঘুরে দেখার বাসনা অনেকের মনেই রয়েছে। তবে সাগরদাঁড়ি নামে ছবির মতো গ্রামটিতে কীভাবে যাবেন, তা জানা না থাকায় অনেকেই সেখানে যাওয়া হয়ে ওঠে না। তাদের জন্য বলছি, এই শীতেই মহাকবির জন্মভিটা ঘুরে আসুন। কারণ, মহাকবির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে সেখানে সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিনই লাখো মানুষের সমাগম ঘটছে। প্রতিবছর এই সময়ে যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে মধুকবির জন্মভিটায় আয়োজন করা হয় জমজমাট গ্রামীণ মেলার। মধুমেলা নামের এই আয়োজন চলে সপ্তাহজুড়ে। সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় জেলা প্রশাসন এই মেলার আয়োজন করে। ঐতিহ্যবাহী দত্তবাড়ির বিশাল আঙিনাজুড়ে গ্রামীণ হাজারো পণ্যের সমাহার তো থাকেই, সেই সঙ্গে থাকে যাত্রা, সার্কাস, পুতুলনাচ, ভ্যারাইটি শো, নাগরদোলাসহ নানা আয়োজন। আর মেলা চলাকালীন প্রতিদিনই মেলা প্রাঙ্গণে কবির জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান তো থাকেই।সাধারণত কবির জন্মদিন থেকেই মেলা শুরু হয়ে থাকলেও এবার তিনদিন আগেই অর্থাত ২২ জানুয়ারি মেলা শুরু হয়েছে। মেলা চলাকালীন যদি আপনি সাগরদাঁড়িতে যান, তাহলে এসব আয়োজন উপভোগ করতে পারবেন বাড়তি পাওনা হিসেবে। আর মহাকবির জন্মভিটা ও তাঁর স্বজনদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র তো দেখবেনই। পল্লী কবি জসিমউদ্দীন, শামসুর রাহমান, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অনেক কবি-সাহিত্যিক এসেছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এই মেলায়। 



মেলা চলাকালে ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকেও আসেন অনেক কবিভক্ত।  ঢাকা থেকে আপনি যশোর পৌঁছাতে পারেন তিনভাবে। সকাল-বিকেল বেসরকারি বিমান চলাচল করে। যে কোনো একটিতে চেপে বসলে ৪০ মিনিটেই আপনি পৌঁছে যাবেন যশোর। যেতে পারেন সড়ক পরিবহনে। সারা দিন-রাতই আপনি ঢাকা-যশোর, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বেনাপোল, ঢাকা-সাতক্ষীরা রুটের গাড়ি পাবেন। সময় লাগবে পাঁচ ঘণ্টার মতো। আপনার হাতে যদি যথেষ্ট সময় থাকে এবং ট্রেন জার্নি যদি পছন্দ করেন, তাহলে যেতে পারেন ট্রেনেও।রাতযাপনের জন্য যশোরে বেশকিছু ভালো মানের হোটেল রয়েছে। দেখেশুনে সেগুলোর একটিতে উঠে পড়তে পারেন। ফ্রেশ হয়ে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ুন সাগরদাঁড়ির উদ্দেশে। যশোর শহর থেকে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে কেশবপুর উপজেলা সদরে। দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। বাস টার্মিনাল থেকে বাসে করে যেতে পারবেন। কেশবপুর থেকে সাগরদাঁড়ি যাওয়ার জন্য আপনি ভাড়ায় মোটরসাইকেল পাবেন। পাবেন স্থানীয় কায়দায় তৈরি যন্ত্রযানও।



তবে যদি কয়েকজন একসঙ্গে থাকেন, তাহলে যশোর শহর থেকেই ভাড়া করে নিতে পারবেন প্রাইভেট কার কিংবা মাইক্রো। এতে ফেরার বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন। ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে একটু রাত হলেও চিন্তা থাকবে না। 





ধন্যবাদ সবাইকে। 


ভ্রমণঃ রংপুর ।

ঘুরে আসুন ভিন্ন জগত,রংপুর।  



যান্ত্রিক জীবনের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে আমাদের মাঝেমধ্যেই মনে হয়, যদি পারতাম চেনা গণ্ডি ছেড়ে দূরে অন্য কোথাও চলে যেতে! অনেকেরই ইচ্ছে হয়, অন্তত একদিনের জন্য সব ব্যস্ততা ভুলে সুন্দর একটি দিন কাটাতে! আর মানুষের এই স্বভাবসুলভ ইচ্ছাকে পূরণ করতেই আজ আমরা আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব ‘ভিন্ন জগতের’ সঙ্গে। হ্যাঁ, ভিন্ন জগত। রংপুরের ভ্রমণ স্পটগুলোর একটি। এই জগতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মনোরম পরিবেশ আপনাকে মুক্তি দেবে যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততা থেকে। রংপুরের ভ্রমণ স্পটগুলোর মধ্যে ভিন্ন জগত অন্যতম। এটি রংপুরের সবচেয়ে বড় পিকনিক স্পট ও পর্যটনকেন্দ্র। রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার গঙ্গীপুরে এর অবস্থান। টিকেট কেটে পার্কে প্রবেশের পর লোহার ব্রিজ, তা পেরোলেই জগতটা ভিন্ন হয়ে যায়। ভিন্ন জগতের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম প্লানেটেরিয়াম। প্লানেটেরিয়ামে ঢোকার পর আপনি হারিয়ে যাবেন গ্রহ-নক্ষত্রের ভিড়ে। জানতে পারবেন ‘মহাবিস্ফোরণ বা বিগব্যাং’-এর মাধ্যমে পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস।  গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এবং আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা ভিন্ন জগতে দেখতে পাবেন পিকনিকের জন্য কটেজ, পাখিদের অভয়ারণ্য, শপিংমল, ৫০০ আসনবিশিষ্ট আধুনিক কনফারেন্স কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার, স্কিল টেস্ট রোবট জোন ও সুইমিংপুল। আরো রয়েছে শিশু-কিশোরদের জন্য শিশুকানন, মেরিগো রাউন্ড, হেলিকপ্টার ফ্লাইজোন, নাগরদোলা, ক্যাঙ্গারু মুভিং, স্পাইডার জোন, বাম্পার কার, রেসিং হর্স, সি-প্যারাডাইস, মকি ট্রেন, জলতরঙ্গ, আজব গুহা, থ্রিডি মুভি, বরফের দেশ, স্পেস জার্নি, শাপলা চত্বর, বীরশ্রেষ্ঠ ও ভাষাসৈনিকদের ভাস্কর্য এবং বিশাল আকৃতির নিজস্ব লেকে নৌ-ভ্রমণের ব্যবস্থা। বিভিন্ন উতসবকে কেন্দ্র করে ভিন্ন জগতে কনসার্টসহ নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে।  



পর্যটকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ভিন্ন জগতে রয়েছে একটি তথ্যকেন্দ্র, যা পর্যটকদের বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়ে ও হারানো জিনিস খুঁজে পেতে সাহায্য করে। ঢাকা থেকে রংপুর যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো পরিবহন হলো গ্রিনলাইন ও টি আর ট্রাভেলস। এ ছাড়া এ রুটে আগমনী পরিবহন, এসআর, শ্যামলী, হানিফ, কেয়া ইত্যাদি পরিবহনের সাধারণ বাস চলাচল করে। ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ছাড়ে এসব বাস। সড়কপথ ছাড়াও রেলপথে রংপুর যাওয়া-আসা সম্ভব। ঢাকা ছাড়া অন্যান্য শহর থেকেও রংপুর যাওয়ার জন্য ভালো পরিবহন ও যোগাযোগব্যবস্থা রয়েছে। রংপুর মেডিকেল মোড় থেকে খুব সহজেই বাস অথবা অটোতে করে যাওয়া যায় ভিন্ন জগতে। বাসে গেলে পাগলা পীর এলাকায় নেমে আবার অটো নিতে হবে ভিন্ন জগতের উদ্দেশে। রংপুরের পাগলা পীর থেকে ভিন্ন জগতের ফটক পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ মিনিটের রাস্তা। ভিন্ন জগতে গাড়ি পার্কিংয়েরও ব্যবস্থা রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের জন্য বিভিন্ন মূল্য পরিশোধ করে গাড়ি পার্ক করা যায়।ভিন্ন জগতে বছরজুড়েই সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে। পার্কে প্রবেশের মূল্য ৫০ টাকা। 



প্রতিটি রাইডের টিকেট মিলবে জনপ্রতি ৫ থেকে ৩০ টাকায়। আর থাকতে চাইলে ভিন্ন জগতের রিসোর্টে উঠতে পারেন। এ ছাড়া থাকার জন্য রংপুর শহরও উত্তম। এখানে অনেক ভালো মানের হোটেল রয়েছে। ভালো হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল শাহ আমানত (জাহাজ কোম্পানির মোড়), হোটেল গোল্ডেন টাওয়ার (জাহাজ কোম্পানির মোড়), হোটেল দি পার্ক (জাহাজ কোম্পানির মোড়), হোটেল তিলোত্তমা (থানা রোড), হোটেল বিজয় (জেল রোড), আরডিআরএস (জেল রোড)। এ ছাড়া আরো অনেক হোটেল রয়েছে রংপুরে। আপনি পছন্দমতো সেসবের একটিতে উঠতে পারেন। খরচ খুব বেশি নয়। সবুজ শ্যামল মায়াময় এ স্থানটিতে না গেলে বোঝা যায় না, কতটা আকর্ষণীয় এই ভিন্ন জগত। সব মিলিয়ে বিনোদনের এক অপূর্ব সমাহার ভিন্ন জগত, যা বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।   




(কাজেই দেরি না করে ঘুরে আসুন রংপুর, ধন্যবাদ সবাইকে।)

ঠাকুরগাঁওয়ে দেখে আসুন প্রত্ননিদর্শন।





ঠাকুরগাঁও জেলার ৫টি উপজেলায় ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য পুরাকীর্তি। তার মধ্যে হরিপুর রাজবাড়ি, রাজা টঙ্কনাথের বাড়ি, গোরক্ষনাথ মন্দির, দুই বিঘা আমগাছ, জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদসহ আরো অনেক মন্দির, মসজিদ, মঠ, রাজবাড়ির সমৃদ্ধ নির্মাণশৈলী ও অপূর্ব কারুকাজ সহজেই মুগ্ধ করে দর্শকদের। ঠাকুরগাঁও সদর থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাণীশংকৈল উপজেলা। সদর থেকে ৪০-৫০টাকা বাস ভাড়ায় চলে যাওয়া যায় রাণীশংকৈল উপজেলায়। সেখান থেকে মাত্র ১০ টাকা রিকশাভাড়ায় পৌঁছানো যায় এক কিলোমিটার দূরবর্তী রাজা টঙ্কনাথের রাজবাড়িতে। এটি নির্মাণ করেন ১৯৯৫ সালে রাজা টঙ্কনাথ। এই জনপদ ১১০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে মালদুয়া পরগণার অন্তর্গত ছিল বলে আগে এই রাজবাড়ি মালদুয়ার রাজবাড়ি হিসেবে পরিচিত ছিল। ব্রিটিশ সরকারের আস্থা লাভ করার জন্য রাজা বুদ্ধিনাথের ছেলে টঙ্কনাথ এখানে ‘মালদুয়ার কোট’ স্থাপন করেছিলেন। পরে রাজা টঙ্কনাথের স্ত্রী রাণী শংকরী দেবীর নামে এই এলাকার নাম হয় রাণীশংকৈল। রাজবাড়িতে ঢোকার প্রধান সড়কটির ওপর রয়েছে একটি সুন্দর ব্রিজ। পাশ দিয়ে কুল কুল ধারায় বয়ে চলেছে একটি ছোট্ট শীর্ণ নদী ‘কুলিখ’। নদীর পাশদিয়ে হাঁটা পথে একটু এগোলেই চোখে পড়ে রাজবাড়ির প্রধান ভবন। এককালে জাকজমকপূর্ণ কারুকাজে খচিত এই প্রাচীন রাজভবনটিতে এখনো অনেক কারুকাজ করা দেওয়াল অবশিষ্ট আছে। রাজবাড়িতে ঢোকার পথে দেখা যায় কারুকাজ করা বিশাল সিংহ দরজা। একসময় মার্বেল পাথরে আচ্ছাদিত ছিল এর মেঝে। ভবনের ভেতরের প্রাচীরে দেখা যায় মনোমুগ্ধকর কারুকাজ। অপূর্ব লাল ইটের এই রাজবাড়ি এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দণ্ডায়মান। মূল রাজবাড়ির উত্তর পূর্বকোণে রয়েছে কাছারি বাড়ি, পূর্ব দিকে দুটি পুকুর ও প্রায় ২০০ মিটার দূরে রামচন্দ্র জয়কালী মন্দির। 



চারপাশে অসংখ্য গাছপালা রাজবাড়িকে দান করেছে বাড়তি সৌন্দর্য। রাজা টঙ্কনাথকে নিয়ে অনেক লোককথা এখানে প্রচলিত। কথিত আছে রাজা টঙ্কনাথ ব্রিটিশ রাজ কর্মচারীকে টাকা পুড়িয়ে চা বানিয়ে খাইয়েছিলেন বলে ব্রিটিশরা তাকে ‘চৌধুরী’ উপাধি প্রদান করে। এই জমিদার বাড়িটিতে একসময় হাতিশালা ছিল। সবকিছু মিলিয়ে অপূর্ব এই প্রত্ননিদর্শন ভ্রমণের একটি অসাধারণ স্থান হিসেবে পরিচিত। হরিপুর উপজেলায় রয়েছে প্রায় দেড়শ বছর পুরনো একটি রাজবাড়ি। ১৮৯৩ সালে রাবেন্দ্র চৌধুরী ও তার ছেলে জগেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী এই রাজবাড়ি তৈরি করেন। ঠাকুরগাঁও সদর থেকে বাসে করে খুব সহজেই যাওয়া যায় এই রাজবাড়িটিতে। এর প্রধান আকর্ষণ দ্বিতীয় তলার দেওয়ালের অপূর্ব কারুকাজ, লতাপাতার নকশা আর রাজা জগেন্দ্র নারায়ণের চৌদ্দটি আবক্ষ মূর্তি। ভবনটির পূর্বপাশে রয়েছে একটি শিব মন্দির এবং এর সামনে একটি নাট মন্দির। অনেক আগে এই রাজবাড়ির মধ্যে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার ছিল। ১৯০৩ সালে এই রাজবাড়ির পাশে আরো একটি রাজবাড়ি নির্মিত হয়। সব মিলিয়ে অপূর্ব এই রাজবাড়ি একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। ঠাকুরগাঁও সদরের আর্টগ্যালারি মোড় থেকে গাড়িতে করে মাত্র ৩০-৪০ টাকায় যাওয়া যায় পীরগঞ্জ হাটে। সেখান থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার পশ্চিমে জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদ। মসজিদের প্রবেশমুখে রয়েছে একটি বড় তোড়ন। ১৮৬৭ সালে নির্মিত এই মসজিদের রয়েছে দৃষ্টিনন্দন শিল্পকলা। রয়েছে তিনটি বড় আকৃতির গম্বুজ যার শীর্ষদেশ অসাধারণ কাচ পাথরের কারুকাজ দিয়ে সজ্জিত। এই মসজিদের ছাদে রয়েছে ৮০টি মিনার যার প্রতিটির উচ্চতা ৩৫ ফুট এবং মিনারগুলোর গায়ে খচিত রয়েছে আশ্চর্য সুন্দর কারুকাজ আর নকশা। মসজিদের দেয়ালেও রয়েছে প্রচুর লতাপাতা আর ফুলের আর্কষণীয় নয়নাভিরাম নকশার শিল্পসুষমা। জানা যায় এই নকশার কারিগররা ছিলেন ভারতীয় খ্যাতনামা কারিগর। ভ্রমণের জন্য একটি চমৎকার প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি। পীরগঞ্জ উপজেলারই গোরকুই বা গোরকই গ্রামে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী সন্ন্যাসী গোরক্ষনাথের মন্দির। এর প্রধান আকর্ষণ হলো একটি শত বছরের অদ্ভূত কূপ। কূপের ভেতরে রয়েছে ছোট ছোট সিঁড়ি। কথিত আছে হাজার নর নারীর স্নানের পরও এই কূপের পানি এক ফোঁটাও কমে না।  আকর্ষণীয় এই কূপ ও মন্দির দেখতে প্রচুর দর্শনার্থী এখানে ভিড় জমায়। এই জেলার বালিয়াডাঙ্গি উপজেলায় রয়েছে পুরো দুই বিঘা জমি নিয়ে ছড়ানো একটি আমগাছ। ২০-২৫ কিলোমিটার দূরত্বে বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার হরিণমারি এলাকার মণ্ডুমালা গ্রামে এই সুবিশাল আম গাছটি অবস্থিত। 



আর্টগেলারি মোড় থেকে ৫০-৬০ টাকা গাড়ি ভাড়ায় এখানে যাওয়া যায়। গাছটির ডালপালা এমনভাবে ছড়ানো যা দূর থেকে দেখলে প্রশস্থ একটি পাহাড় বলে মনে হয়। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো এই সূর্যপুরী জাতের আমগাছটি ঠাকুরগাঁও জেলার একটি দর্শনীয় বস্তুতে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর অসংখ্য দর্শনার্থী এই আমগাছ দেখার জন্য এখানে ভিড় জমায়।  


(দেশের ভিতরেই অনেক অদেখা জায়গা রয়েছে, ঘুরে আসুন ভালো লাগবে,ধন্যবাদ সবাইকে।)