বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৬

সাগরকন্যা কুয়াকাটা ।






একই সৈকত থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার জন্য কুয়াকাটার মত জায়গা এদেশে আর দ্বিতীয়টি নেই।  বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্তে সাগরকন্যা খ্যাত অপরূপ সৌন্দর্যের জায়গা কুয়াকাটা। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপালী ইউনিয়নে অবস্থিত এ জায়গায় আছে বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত। অনিন্দ্য সুন্দর সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কুয়াকাটায় আছে বেড়ানোর মতো আরও নানান আকর্ষণ। আসুন জেনে নেই কুয়াকাটা সম্পর্কে কিছু তথ্য:
ক্রাব আইল্যান্ড
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পূর্বদিকে গঙ্গামতির জঙ্গল ছাড়িয়ে আরও সামনে গেল আছে ক্রাব আইল্যান্ড বা কাঁকড়ার দ্বীপ। এ জায়গায় আছে লাল কাঁকড়ার বসবাস। নির্জনতা পেলে এ জায়গার সৈকত লাল করে ঘুরে বেড়ায় কাঁকড়ার দল। ভ্রমণ মৌসুমে (অক্টোবর-মার্চ) কুয়াকাট সমুদ্র সৈকত থেকে স্পিড বোটে যাওয়া যায় ক্রাব আইল্যান্ডে।
অপূর্ব সমুদ্র সৈকত
কুয়াকাটার বেলাভূমি বেশ পরিচ্ছন্ন। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এ সৈকত থেকেই কেবল সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখা যায়। সৈকতের পূর্ব প্রান্তে গঙ্গামতির বাঁক থেকে সূর্যোদয় সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায়। আর সূর্যাস্ত দেখার উত্তম জায়গা হল কুয়াকাটার পশ্চিম সৈকত।
কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। সৈকত লাগোয়া পুরো জায়গাতেই আছে দীর্ঘ নারিকেল গাছের সারি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে এ বনেও। বিভিন্ন সময়ে সমুদ্রের জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ভাঙনের কবলে পড়েছে সুন্দর এই নারিকেল বাগান। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সারা বছরই দেখা মিলবে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য।
ফাতরার বন
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম পাশে নদী পার হলেই সুন্দরবনের শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল, নাম তার ফাতরার বন। সুন্দরবনের সব বৈশিষ্ট এ বনে থাকলেও নেই তেমন কোন হিংস্র প্রাণী। বন মোরগ, বানর আর নানান পাখি আছে এ বনে। কদাচিৎ এ বনে বুনো শুকরের দেখা মেলে। কুয়াকাটা থেকে ফাতরার বনে যেতে হবে ইঞ্জিন নৌকায়।
কুয়াকাটার কুয়া
কুয়াকাটা নামকরণের ইতিহাসের পেছনে যে কুয়া সেটি এখনও টিকে আছে। তবে কয়েক বছর আগে অদূরদর্শী ও কুরুচিকর সংস্কারের ফলে এর সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কাছে রাখাইনদের বাসস্থল কেরাণিপাড়ার শুরুতেই প্রাচীন কুয়ার অবস্থান।
জনশ্রুতি আছে ১৭৮৪ সালে বর্মী রাজা রাখাইনদের মাতৃভূমি আরাকান দখল করলে বহু রাখাইন জায়গাটি ছেড়ে নৌকাযোগে আশ্রয়ের খোঁজে বেড়িয়ে পড়েন। চলতি পথে তারা বঙ্গোপসাগরের তীরে রাঙ্গাবালি
দ্বীপের খোঁজ পেয়ে সেখানে বসতি স্থাপন করেন। সাগরের লোনা জল ব্যবহারের অনুপযোগী বলে মিষ্টি পানির জন্য তার এখানে একটি কূপ খণন করেন। এরপর থেকে জায়গাটি কুয়াকাটা নামে পরিচিতি পায়।সীমা বৌদ্ধ মন্দির কুয়াকাটার প্রাচীন কুয়ার সামনেই সীমা বৌদ্ধ মন্দির। কাঠের তৈরি এই মন্দির কয়েক বছর আগে ভেঙে দালান তৈরি করা হয়েছে। তবে মন্দিরের মধ্যে এখনও আছে প্রায় ৩৭ মন ওজনের প্রাচীন অষ্টধাতুর তৈরি বুদ্ধ মূর্তি।
শুঁটকি পল্লী
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে আছে জেলে পল্লী। এখানে প্রচুর জেলেদের বসবাস। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এখানে চলে মূলত শুঁটকি তৈরির কাজ। সমুদ্র থেকে মাছ ধরে এনে সৈকতেই শুঁটকি তৈরি করেন জেলেরা। কম দামে ভালো মানের শুঁটকিও কিনতে পাওয়া যায় এখানে।
গঙ্গামতির জঙ্গল
কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত শেষ হয়েছে পূর্ব দিকে গঙ্গামতির খালে। এখান থেকেই শুরু হয়েছে গঙ্গামতির জঙ্গল। অনেকে একে গজমতির জঙ্গলও বলে থাকেন। নানান রকম বৃক্ষরাজি ছাড়াও এ জঙ্গলে আছে বিভিন্ন রকম পাখি, বন মোরগ-মুরগি, বানর ইত্যাদি।
মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির
কুয়াকাটা সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সম্প্রদায় রাখাইনদের একটি গ্রামের নাম মিশ্রিপাড়া। এখানে আছে বড় একটি বৌদ্ধ মন্দির। কথিত আছে এ মন্দিরের ভেতরে আছে উপমাহাদেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তি। এছাড়া এখান থেকে সামান্য দূরে আমখোলা গ্রামে আছে এ অঞ্চলে রাখাইনদের সবচেয়ে বড় বসতি।
কেরানিপাড়া
সীমা বৌদ্ধ মন্দির থেকে সামনেই ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী রাখানদের আবাসস্থল কেরানিপাড়া। এখানকার রাখাইন নারীদের প্রধান কাজ কাপড় বুণন। রাখাইনদের তৈরি শীতের চাদর বেশ আকর্ষণীয়।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে নদী ও সড়ক পথে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। সবচেয়ে সহজ যাতায়াত ব্যবস্থা হল ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে পটুয়াখালী, সেখান থেকে বাসে কুয়াকাটা।
ঢাকার সদরঘাট থেকে পটুয়াখালী যায় এমভি পারাবত, এমভি সৈকত, এম ভি সুন্দরবন প্রভৃতি লঞ্চ। ভাড়া প্রথম শ্রেণীর একক কেবিন ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা, দ্বৈত কেবিন ১ হাজার ৮শ’ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।
কুয়াকাটা আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে কুয়াকাটার বাস সার্ভিস আছে। এছাড়া ঢাকার গাবতলী বাস স্টেশন থেকে সাকুরা পরিবহন, দ্রুতি পরিবহন, সুরভী পরিবহনের বাস যায় কুয়াকাটা। ভাড়া সাড়ে ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা। এছাড়া কমলাপুর বিআরটিসি ডিপো থেকেও প্রতিদিন সকাল ও রাতে কুয়াকাটার বাস ছাড়ে।  



ভ্রমণের আমন্ত্রণ রইলো। ধন্যবাদ সবাইকে। 

সাগরকন্যা কুয়াকাটা ।






একই সৈকত থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার জন্য কুয়াকাটার মত জায়গা এদেশে আর দ্বিতীয়টি নেই।  বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্তে সাগরকন্যা খ্যাত অপরূপ সৌন্দর্যের জায়গা কুয়াকাটা। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপালী ইউনিয়নে অবস্থিত এ জায়গায় আছে বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত। অনিন্দ্য সুন্দর সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কুয়াকাটায় আছে বেড়ানোর মতো আরও নানান আকর্ষণ। আসুন জেনে নেই কুয়াকাটা সম্পর্কে কিছু তথ্য:
ক্রাব আইল্যান্ড
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পূর্বদিকে গঙ্গামতির জঙ্গল ছাড়িয়ে আরও সামনে গেল আছে ক্রাব আইল্যান্ড বা কাঁকড়ার দ্বীপ। এ জায়গায় আছে লাল কাঁকড়ার বসবাস। নির্জনতা পেলে এ জায়গার সৈকত লাল করে ঘুরে বেড়ায় কাঁকড়ার দল। ভ্রমণ মৌসুমে (অক্টোবর-মার্চ) কুয়াকাট সমুদ্র সৈকত থেকে স্পিড বোটে যাওয়া যায় ক্রাব আইল্যান্ডে।
অপূর্ব সমুদ্র সৈকত
কুয়াকাটার বেলাভূমি বেশ পরিচ্ছন্ন। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এ সৈকত থেকেই কেবল সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখা যায়। সৈকতের পূর্ব প্রান্তে গঙ্গামতির বাঁক থেকে সূর্যোদয় সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায়। আর সূর্যাস্ত দেখার উত্তম জায়গা হল কুয়াকাটার পশ্চিম সৈকত।
কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। সৈকত লাগোয়া পুরো জায়গাতেই আছে দীর্ঘ নারিকেল গাছের সারি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে এ বনেও। বিভিন্ন সময়ে সমুদ্রের জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ভাঙনের কবলে পড়েছে সুন্দর এই নারিকেল বাগান। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সারা বছরই দেখা মিলবে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য।
ফাতরার বন
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম পাশে নদী পার হলেই সুন্দরবনের শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল, নাম তার ফাতরার বন। সুন্দরবনের সব বৈশিষ্ট এ বনে থাকলেও নেই তেমন কোন হিংস্র প্রাণী। বন মোরগ, বানর আর নানান পাখি আছে এ বনে। কদাচিৎ এ বনে বুনো শুকরের দেখা মেলে। কুয়াকাটা থেকে ফাতরার বনে যেতে হবে ইঞ্জিন নৌকায়।
কুয়াকাটার কুয়া
কুয়াকাটা নামকরণের ইতিহাসের পেছনে যে কুয়া সেটি এখনও টিকে আছে। তবে কয়েক বছর আগে অদূরদর্শী ও কুরুচিকর সংস্কারের ফলে এর সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কাছে রাখাইনদের বাসস্থল কেরাণিপাড়ার শুরুতেই প্রাচীন কুয়ার অবস্থান।
জনশ্রুতি আছে ১৭৮৪ সালে বর্মী রাজা রাখাইনদের মাতৃভূমি আরাকান দখল করলে বহু রাখাইন জায়গাটি ছেড়ে নৌকাযোগে আশ্রয়ের খোঁজে বেড়িয়ে পড়েন। চলতি পথে তারা বঙ্গোপসাগরের তীরে রাঙ্গাবালি
দ্বীপের খোঁজ পেয়ে সেখানে বসতি স্থাপন করেন। সাগরের লোনা জল ব্যবহারের অনুপযোগী বলে মিষ্টি পানির জন্য তার এখানে একটি কূপ খণন করেন। এরপর থেকে জায়গাটি কুয়াকাটা নামে পরিচিতি পায়।সীমা বৌদ্ধ মন্দির কুয়াকাটার প্রাচীন কুয়ার সামনেই সীমা বৌদ্ধ মন্দির। কাঠের তৈরি এই মন্দির কয়েক বছর আগে ভেঙে দালান তৈরি করা হয়েছে। তবে মন্দিরের মধ্যে এখনও আছে প্রায় ৩৭ মন ওজনের প্রাচীন অষ্টধাতুর তৈরি বুদ্ধ মূর্তি।
শুঁটকি পল্লী
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে আছে জেলে পল্লী। এখানে প্রচুর জেলেদের বসবাস। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এখানে চলে মূলত শুঁটকি তৈরির কাজ। সমুদ্র থেকে মাছ ধরে এনে সৈকতেই শুঁটকি তৈরি করেন জেলেরা। কম দামে ভালো মানের শুঁটকিও কিনতে পাওয়া যায় এখানে।
গঙ্গামতির জঙ্গল
কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত শেষ হয়েছে পূর্ব দিকে গঙ্গামতির খালে। এখান থেকেই শুরু হয়েছে গঙ্গামতির জঙ্গল। অনেকে একে গজমতির জঙ্গলও বলে থাকেন। নানান রকম বৃক্ষরাজি ছাড়াও এ জঙ্গলে আছে বিভিন্ন রকম পাখি, বন মোরগ-মুরগি, বানর ইত্যাদি।
মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির
কুয়াকাটা সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সম্প্রদায় রাখাইনদের একটি গ্রামের নাম মিশ্রিপাড়া। এখানে আছে বড় একটি বৌদ্ধ মন্দির। কথিত আছে এ মন্দিরের ভেতরে আছে উপমাহাদেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তি। এছাড়া এখান থেকে সামান্য দূরে আমখোলা গ্রামে আছে এ অঞ্চলে রাখাইনদের সবচেয়ে বড় বসতি।
কেরানিপাড়া
সীমা বৌদ্ধ মন্দির থেকে সামনেই ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী রাখানদের আবাসস্থল কেরানিপাড়া। এখানকার রাখাইন নারীদের প্রধান কাজ কাপড় বুণন। রাখাইনদের তৈরি শীতের চাদর বেশ আকর্ষণীয়।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে নদী ও সড়ক পথে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। সবচেয়ে সহজ যাতায়াত ব্যবস্থা হল ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে পটুয়াখালী, সেখান থেকে বাসে কুয়াকাটা।
ঢাকার সদরঘাট থেকে পটুয়াখালী যায় এমভি পারাবত, এমভি সৈকত, এম ভি সুন্দরবন প্রভৃতি লঞ্চ। ভাড়া প্রথম শ্রেণীর একক কেবিন ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা, দ্বৈত কেবিন ১ হাজার ৮শ’ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।
কুয়াকাটা আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে কুয়াকাটার বাস সার্ভিস আছে। এছাড়া ঢাকার গাবতলী বাস স্টেশন থেকে সাকুরা পরিবহন, দ্রুতি পরিবহন, সুরভী পরিবহনের বাস যায় কুয়াকাটা। ভাড়া সাড়ে ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা। এছাড়া কমলাপুর বিআরটিসি ডিপো থেকেও প্রতিদিন সকাল ও রাতে কুয়াকাটার বাস ছাড়ে।  



ভ্রমণের আমন্ত্রণ রইলো। ধন্যবাদ সবাইকে। 

প্রকৃতির লীলাভূমি পর্যটন নগরী ‘শ্রীমঙ্গল’।








মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা দেশের সবচেয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত পর্যটন এলাকা বলে অবিহিত,দেশী বিদেশীদের কাছে রয়েছে আলাদা কদর।
শ্রীমঙ্গলের আর্কষনীয় স্থান গুলোঃ
চা বাগানঃ- চা বাগান মানেই সবুজের অবারিত সৌন্দর্য। পূরো শ্রীমঙ্গল শহরটা ঘিরে রয়েছে শুধু চায়ের বাগান। শ্রীমঙ্গল নাম শুনলেই প্রথমেই স্বরন হবে চা বাগানের কথা। এ দেশে চায়ের রাজধানী’র কথা বললেই প্রথমে মনে পড়বে শ্রীমঙ্গলের নাম। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে যে কোন সড়ক ধরে হাটাপথ দুরত্বে পৌছা মাত্র চোখে পড়বে মাইলের পর মাইল পাহাড় ঘেরা চা বাগান। সবুজের মেলা চা বাগানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে অতি অবশ্যই বাগান কতৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। ইচ্ছে করলে কতৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে এসব চা বাগানের চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় প্রবেশ করে কাচাঁ চা পাতা থেকে চা তৈরীর প্রক্রিয়াও দেখা যেতে পারেন।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানঃ-  দৃষ্টিজুড়ে সবুজ, উটের পিঠের মতোন টিলা আর মনোরম চা বাগান-যে কোন স্থান ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে মেলে ধরবার জন্য যথেষ্ট। আরও যা রয়েছে তা হচ্ছে লাউয়াছড়া বন যা এক কথায় অনবদ্য। রেইন ফরেষ্ট হিসেবে খ্যাত এই বনে রয়েছে হরেক প্রজাতির বন্যপ্রাণী আর বৃক্ষাদি। রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির বৃক্ষরাজি। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান।
শ্রীমঙ্গল হতে মাত্র ১০ কিঃমিঃ আর ঢাকা থেকে ১৯৬ কিঃমিঃ। এর আয়তন ১২৫০ হেক্টর। মোট ১৬টি উল্লুক পরিবার হাজারো পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ভারত, চায়না, মায়ানমার এবং বাংলাদেশসহ ৪টি দেশে ওদের প্রজাতি সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গা ঘেষা রয়েছে ৩টি আদিবাসী পল্লী। ( মাগুরছড়াও লাউয়াছড়া) ও ১টি ত্রিপুরাদের পাড়া। আদিবাসীদের জীবনযাত্রা সাধারণত পাহাড়ী কৃষ্টি কালচারের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠে যা সাধারনের থেকে অনেক আলাদা। আদিবাসিদের জীবনযাত্রা, কৃষ্টি, ঐতিহ্য ইত্যাদি দেখাও পর্যটকদের জন্য বাড়তি পাওনা।
যেভাবে যাবেন ; ঢাকা / সিলেট থেকে বাস কিংবা ট্রেন এ করে আপনাকে প্রথমেই আসতে হবে শ্রীমঙ্গল শহরে । শ্রীমঙ্গল শহর থেকে সিএন জি চালিত অটো রিকসা অন্যান্য যানবাহন নিয়ে অতি সহজেই ৮/১২ মিনিটের মধ্যে পৌছে যেতে পারবেন লাউয়াছড়ায় । ভাড়া- ২০-৩০ টাকা।
বিটিআরআইঃ- বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিটিআরআই) পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষনীয় স্থান। দেশের চা শিল্পের উন্নয়নে কাজ করছে এ প্রতিষ্ঠানটি। বিটিআরআই কমপ্লেক্স-এর সামনে অপরূপ ফুলকুঞ্জ, শত বছরের চা গাছ, চা পরীক্ষাগার, চারদিকে চা বাগান, চা নার্সারী, চা ফ্যাক্টরী, অফিসার্স ক্লাব ভবনের পেছনে অবস্থিত চোখ ধাঁধানো লেক, রোবাস্টা কফি গাছ, নানা জাতের অর্কিডসহ ভেষজ বাগান আপনার মনকে চাঙ্গা করবেই। কতৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে আপনি ঘুরে দেখতে পারেন বিটিআরআই’র পুরো ক্যাম্পাস। প্রতিদিন বিকেলে ও সরকারি ছুটির দিনে পর্যটকদের ঢল নামে বিটিআরআই-তে।
যেভাবে যাবেন-ঢাকা / সিলেট থেকে বাস কিংবা ট্রেন এ করে আপনাকে প্রথমেই আসতে হবে শ্রীমঙ্গল শহরে। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে রিকসা যোগে আপনাকে যেতে হবে বিটিআরআই তে । ভাড়া-২০-৩০ টাকা ।
বধ্যভূমি ৭১:- শ্রীমঙ্গলের ‘বধ্যভূমি ৭১’ আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজরিত বধ্যভূমিতে ২০১০ সালে স্মৃতিস্তম্ব নির্মাণের পর দর্শনার্থীরা এখানেউপচে পড়ে। এছাড়াও প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা আসেন বধ্যভূমি দেখতে। শ্রীমঙ্গলে শহরের ভানুগাছ সড়কে বিজিবি’র সেক্টর হেড কোর্য়াটার সংলগ্ন বটকুঞ্জের নিচ দিয়ে প্রবাহিত ভুরভুরিয়া ছড়ার পাশে এর অবস্থান। সম্প্রতি এখানে পর্যটকদের সুবিধার্থে নির্মিত হয়েছে ‘সীমান্ত ৭১ ফ্রেশ কর্নার’সহ মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’। ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্ভোধনের পর দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ব ও একাত্তরের স্মৃতি বিজরিত বধ্যভূমিটি দেখতে মানুষ আসতে থাকেন এখানে। বর্তমানে এ স্থানটি এখন আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
কিভাবে যাবেনঃ শ্রীমঙ্গল থেকে ৫-৭ মিনিটের পথ। ইচ্ছে করলে প্রকৃতির হাওয়ার সাথে হেটে হেটে যেতেপারেন। এছাড়াও অটো রিক্সা বা প্রাইভেট গাড়িতে যেতে পাড়েন।
ডিনস্টন সিমেট্রি:-শ্রীমঙ্গলে আর্কশনীয় একটি স্থান হচ্ছে শতবছর পুরানো ডিনস্টন সিমেট্রি। এ সিমেট্রি দেখতে প্রচুর পর্যটক আসে এখানে। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ১৫ কিঃমিঃ দূরে রাজঘাট ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত খেজুরীছড়ায় ফিনলে টি কোম্পানির চা বাগানে এটি অবস্তিত। ১৮৮০ সালে ব্রিটিশরা শ্রীমঙ্গলে এসে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ আরম্ভ করে। এখানে কাজ করতে এসে বিভিন্ন সময় যেসব ব্রিটিশ নাগরিক মৃত্যুবরণ করেন তাদের সমাহিত করা হয় খেজুরীছড়ার এই ডিনস্টন সিমেট্রিতে। চা বাগানের মাঝে গড়ে তোলা অসাধারণ সাজানো-গোছানো এই সিমেট্রিতে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন ৪৬ জন বিদেশী নাগরিক। যাদের ৪১জনের নাম ও পদবী এখানে খোদাই করা আছে ।
মনিপুরী পাড়াঃ- শ্রীমঙ্গলের রামনগর মনিপুরী পাড়ায় এখনো ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রয়াসে বেশ কটি তাঁতে তৈরী হচ্ছে শাড়ি, থ্রি-পিস, ওড়না, ব্যাগসহ নানা ধরনের পণ্য। তাঁত শিল্প সম্পর্কে জানতে এবং তাঁতে কাপড় বুনার প্রক্রিয়া দেখতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন শ্রীমঙ্গলের রামনগর মনিপুরী পাড়ায়। মনিপুরীদের আতিথেয়তা গ্রহন করতে শ্রীমঙ্গল শহর থেকে রিক্সাযোগে সহজেই যেতে পারেন মনিপুরী পাড়াতে। তবে বাংলা সনের কার্তিক মাসের শেষ পূর্ণিমা তিথিতে মনিপুরীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব রাসোৎসব দেখতে চাইলে যেতে পারেন কমলগঞ্জের মাধবপুরস্থ জোড়ামন্ডপ অথবা আদমপুরস্থ মনিপুরী শিক্ষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্রে।
যেভাবে যাবেন- ঢাকা / সিলেট থেকে বাস কিংবা ট্রেন এ করে আপনাকে প্রথমেই আসতে হবে শ্রীমঙ্গল শহরে । সেখান থেকে সিএনজি কিংবা রিক্শা যোগে আপনাকে যেতে রামনগর মনিপুরি পাড়ায় । শহর থেকে মনিপুরি পল্লীতে যেতে ভাড়া লাগবে ২০-৩০ টাকা।  




শীতকাল ভ্রমণের সময়। ঘুরে আসুন শ্রীমঙ্গল। ভালো লাগবে আশা করি। ধন্যবাদ সবাইকে।