শুক্রবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

পল্লীরাজ বানিয়াচং ।

পল্লীরাজ বানিয়াচং । 





১। সাধারণত কিছু গ্রাম একসাথে হয়ে গঠিত হয় একটি ইউনিয়ন। কিন্তু এই নিয়মের বাত্যয় ঘটেছে ঐতিহাসিক বানিয়াচং গ্রামে। কারণ এটাই একমাত্র গ্রাম যার মধ্যেই রয়েছে চারটি ইউনিয়ন।  


২। গ্রামটি দৈঘ্যে ৭ কিলোমিটার আর প্রস্থে ৪ কিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা প্রায় এক লাখ।বানিয়াচং গ্রামে শিক্ষার হার শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ। গ্রামে ছয় থেকে দশ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। 

৩। হবিগঞ্জ জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এই গ্রামটিকে দূর থেকে দেখতে সমতলের মধ্যে সবুজে পরিবেষ্টিত পাহাড় বলে ভ্রম হয়। বানিয়াচং গ্রামটি কত প্রাচীন তা হয়ত ঠিক করে বলা যাবে না, আইনি আকবরীসহ কিছু প্রাচীন গ্রন্থে লাউড় রাজ্যের উল্লেখ রয়েছে। কাজেই গ্রামটি যে অন্তত হাজার বছরের পুরনো তাতে কোন সন্দেহ নেই। 

৪। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিশাল এই গ্রামকে পশ্চিমারা কেউ কেউ বলে ‘গ্রিন সিটি’ আবার ময়মনসিংহ গীতিকায় বানিয়াচং গ্রামকে শহর হিসেবে বর্ণনা করা হলেও এখানকার মানুষ একে গ্রাম হিসেবে পরিচয় দিতেই গৌরববোধ করে। এজন্য বানিয়াচংকে ‘পল্লীরাজ’ হিসেবে নামকরণ করা যেতে পারে। বানিয়াচং গ্রামের কমলা রাণীর দীঘিসহ (যা বর্তমানে সগরদীঘি নামে পরিচিত) অনেক ইতিহাসখ্যাত নিদর্শন রযেছে, যা দেশের মধ্যকার ভ্রমনকারীদের কাছে খুব আকর্ষণীয়। 

৫।এই গ্রামের নামকরণ কিভাবে বানিয়াচং হল তা নিয়ে অবশ্য মতভেদ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
ক) কোন এক সময় এক বানিয়া (বণিক) চাং তৈরি করে এখানে পাখি শিকার করত যা দিয়ে সে ব্যবসা করত। বানিয়ার সেই চাং থেকে নাম হয়েছে বানিয়াচং। খ) আবার এমনও অনেকে বলেন যে, ১২শ’ শতকে কেশব মিশ্র নামে এক রাজা যুদ্ধ করে এই গ্রামের গোড়াপত্তন করেন। সেই যুদ্ধটি বিনায়ে জং নামে পরিচিত ছিল। কালক্রমে বিনায়ে জং থেকে হয়েছে বানিয়াচং নামের উৎপত্তি। 

৬। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় এক সময় লাউড়, গৌড় ও জৈন্তা নামের তিনটি রাজ্য নিয়ে গঠিত ছিল সমগ্র সিলেট বিভাগ। গোবিন্দ সিংহ নিজকে হবিব খাঁ ঘোষণা করে বানিয়াচংয়ে লাউড় রাজ্যের রাজধানী স্থাপন করেন। লাউড় রাজ্যের রাজারা বানিয়াচং থেকে এক সময় ২৮টি পরগনা শাসন করতেন। 

৭। বানিয়াচং গ্রামের ভেতরের পাড়াগুলো মহল্লা নামে পরিচিত। মোট মহল্লার সংখ্যা প্রায় একশ’। বৈচিত্র্যের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি মহল্লা কিছু কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দেশের অপরাপর গ্রাম, পাড়া, মহল্লার নাম থেকে বানিয়াচংয়ের মহল্লাগুলোর নামে বেশ ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। মহল্লাগুলোর কিছু কিছু নাম হচ্ছে এ রকম- আমিরখানি, শরীফখানি, আদমখানী, মধুখানী, যাত্রাপাশা, বাসিয়াপাড়া, পাড়াগাঁও, প্রথমরেখ, চান্দের মহল্লা, জাতুকর্ণপাড়া, ঠাকুরপাড়া ইত্যাদি। এসব মহল্লার রয়েছে নিজস্ব পঞ্চায়েত। 

৮। গাছপালা ঘেরা বিশাল গ্রাম বানিয়াচং। বাংলার ছয়টি ঋতুর পালা বদলই এখানে সুষ্পষ্টভাবে টের পাওয়া যায়। বানিয়াচংয়ে গ্রীষ্ম ঋতুর প্রখরতা কম। এর কারণ হচ্ছে গাছপালার সমারোহ। সারা বছর এখানে পাখির কলকাকলি শোনা যায়। কাক, কোকিল, বৌ কথা কও, বুলবুলি, দোযেল বাবুই, চড়ুই, কাঠঠোকরো, মাছরাঙা, ফিঙে সহ বাংলাদেশের সব পাখিই এখানে স্বাধীনভাবে নিজেদের অস্তিত্বের ঘোষণা দেয়। প্রচুর গাছ-গাছালির জন্য পাখিরা নির্ভয়ে এ গ্রামে বসবাস করতে পারে।    






কাজেই সময় করে ঘুরে আসুন, ভালো লাগবে আশা রাখি। আজ এ পর্য‍ন্তই। ধন্যবাদ সবাইকে। 

শুক্রবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

ঘুরে আসুন ধানমন্ডি লেকে ।


দিনটি কাটাতে পারেন ধানমন্ডি লেকে। 





নগর জীবনের প্রতিটি দিন কাটে ব্যস্ততায়। অবসর বলতে সপ্তাহান্তে একটি ছুটির দিন। সেখানেও নেই খুব শান্তি। রয়েছে হরেক রকম পারিবারিক- সামাজিক ব্যস্ততা। এভাবেই একসময় মন হয়ে ওঠে বিষণ্ন। সময় স্বল্পতার কারণে যাওয়া হয়ে ওঠে না দূরে কোথাও। 

তবে ইচ্ছে আর একখণ্ড সময় বের করতে পারলে শহরে মধ্যেও কিন্তু কাটাতে পারেন অবসন্নতা। ছেড়ে আসতে পারেন স্বস্তির নিশ্বাস। 
ছুটির দিনে পরিবার-পরিজন নিয়ে নির্মল বাতাসে, সবুজের স্পর্শে ঘুরে আসতে পারেন ধানমন্ডি লেক থেকে। 


লেক এলাকায় পা রাখ‍া মাত্রই সবুজ মনোরোম পরিবেশ অনেকটা স্বস্তি দেবে আপনাকে, যেখানে পাবেন স্নিগ্ধ বাতাসের সঙ্গে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের উদ্বেলিত মিশ্রণ। 

লেকটি ঘিরে রয়েছে অনেকগুলো বসার স্থান। প্রত্যেকটির আবার রয়েছে ভিন্ন নাম। যেমন ব্যাচেলর পয়েন্ট, জিয়া চত্বর, শুটিং পয়েন্ট, জাহাজবাড়ি পয়েন্ট, দ্বীপ চত্বর, লেক ভিউ সাইড, রবীন্দ্র সরোবর, ডিঙ্গি চত্বর, সুরধনী চত্বর, শতায়ু অঙ্গন ইত্যাদি। সবগুলো স্থানই লেকটির তীর ঘেঁষে তৈরি। যেখানে বসে খোলা হাওয়ায় মিশে পরিবার, বন্ধু কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠতে পারেন আপনিও।



ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর ১৯৫৬ সালে উপযুক্ত পরিবেশ ও আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে লেকসহ ২৪০.৭৪ হেক্টর জমিতে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়। সমগ্র ধানমন্ডি এলাকার প্রায় ১৬ শতাশং জুড়ে রয়েছে এই লেকটি। এর বর্তমান দৈর্ঘ্য ৩ কি.মি, প্রস্থ ৩৫ থেকে ১০০ মিটার, গভীরতা ৪.৭৭ মিটার, জলাশয়ের মোট আয়তন ৩৭.৩৭ হেক্টর। এই লেকটি ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়ক থেকে শুরু করে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে এসে শেষ হয়েছে।  


বিশাল এই জলধারে সৌখিন মাছ শিকারিরা এখানে অর্থের বিনিময়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মাছ শিকার করতে পারেন। নৌকা ভ্রমণের শখটাও মেটাতে পারেন এই লেকের পানিতে। তাই আপনাকে চলে যেতে হবে ডিঙি চত্বরে। গেলেই পেয়ে যাবেন নৌকা।



নৌকাভ্রমণের প্রথম ৩০ মিনিটের জন্য আপনাকে ১০০ টাকা ভাড়া গুণতে হবে, পরবর্তী ১৫ মিনিটের জন্য ভাড়া হবে ৫০ টাকা। নৌকায় চড়তে হলে আপনাকে মেনে চলতে হবে কিছু নির্দেশনা। যেমন প্রতি নৌকায় শিশুসহ সর্বোচ্চ তিনজন, শিশু ছাড়া দু’জন চড়তে পারবেন। তবে অভিভাবক ছাড়া ১০ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের নৌকাভ্রমণ নিষিদ্ধ।  




লেক এলাকার অন্যতম আকর্ষণ রবীন্দ্র সরোবর। এখানের খোলা মঞ্চে সারা বছরই থাকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছুটির দিনগুলোতে নাটক, গান, আবৃত্তিসহ হয় নানা ধরনের অনুষ্ঠান। সরোবরের পাশে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দেওয়াও অনেকের পছন্দ। এটুকুর জন্যও অনেকে ছুটে যান রবীন্দ্র সরোবর।

জল‍াধার ঘেরা সবুজের সমারোহ এ জায়গাটিতে পাখির কিচিরমিচির শব্দে মাঝে মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে পারেন অজানায়। এখানে রয়েছে কৃষচূড়া, বটগাছ, রেইনট্রি, আমগাছ, কাঁঠালগাছ, বকুলগাছ, কদমগাছসহ নানা প্রজাতির গাছ। তাই পাখিদের আনাগোনাও এখানে অনেকটা বেশি।  

অবকাশ অথবা আড্ডা শেষে খাবারের প্রয়োজন হলে লেকের ভেতরেই অনেক খাবারের দোকান পেয়ে যাবেন। 

লেকে রয়েছে কয়েকটি ব্রিজ। এগুলো আপনার ভ্রমণে আনবে ভিন্নতা। লেকের জলে নিজের ছায়াটুকু দেখার খুব বেশি মেলে না শহুরে মানুষের। সুযোগটি হাতছাড়া করবেন না!

লেকের পাড়ে রয়েছে একটি সুরম্য বাড়ি। জাহাজ বাড়ি নামেই পরিচিতি এর বেশি। লেকের পাড়ে বসে জলে লাল বাড়িটির প্রতিচ্ছবি দেখতে পছন্দ করেন সবাই। 
শিশুদের জন্যও জায়গাটি বেশ খোলামেলা। এখানে এসে প্রাণভরে খেলতে পারে শিশুরা। চাইলে ঘাস আর মাটিতে এক শান্তির পরশও নিতে পারেন।  


কাজেই সময় করে ঘুরে আসুন। আজ এ পর্য‍ন্তই। ধন্যবাদ সবাইকে।