দিনটি কাটাতে পারেন ধানমন্ডি লেকে।
নগর জীবনের প্রতিটি দিন কাটে ব্যস্ততায়। অবসর বলতে সপ্তাহান্তে একটি ছুটির দিন। সেখানেও নেই খুব শান্তি। রয়েছে হরেক রকম পারিবারিক- সামাজিক ব্যস্ততা। এভাবেই একসময় মন হয়ে ওঠে বিষণ্ন। সময় স্বল্পতার কারণে যাওয়া হয়ে ওঠে না দূরে কোথাও।
তবে ইচ্ছে আর একখণ্ড সময় বের করতে পারলে শহরে মধ্যেও কিন্তু কাটাতে পারেন অবসন্নতা। ছেড়ে আসতে পারেন স্বস্তির নিশ্বাস।
ছুটির দিনে পরিবার-পরিজন নিয়ে নির্মল বাতাসে, সবুজের স্পর্শে ঘুরে আসতে পারেন ধানমন্ডি লেক থেকে।
লেক এলাকায় পা রাখা মাত্রই সবুজ মনোরোম পরিবেশ অনেকটা স্বস্তি দেবে আপনাকে, যেখানে পাবেন স্নিগ্ধ বাতাসের সঙ্গে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের উদ্বেলিত মিশ্রণ।
লেকটি ঘিরে রয়েছে অনেকগুলো বসার স্থান। প্রত্যেকটির আবার রয়েছে ভিন্ন নাম। যেমন ব্যাচেলর পয়েন্ট, জিয়া চত্বর, শুটিং পয়েন্ট, জাহাজবাড়ি পয়েন্ট, দ্বীপ চত্বর, লেক ভিউ সাইড, রবীন্দ্র সরোবর, ডিঙ্গি চত্বর, সুরধনী চত্বর, শতায়ু অঙ্গন ইত্যাদি। সবগুলো স্থানই লেকটির তীর ঘেঁষে তৈরি। যেখানে বসে খোলা হাওয়ায় মিশে পরিবার, বন্ধু কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠতে পারেন আপনিও।
ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর ১৯৫৬ সালে উপযুক্ত পরিবেশ ও আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে লেকসহ ২৪০.৭৪ হেক্টর জমিতে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়। সমগ্র ধানমন্ডি এলাকার প্রায় ১৬ শতাশং জুড়ে রয়েছে এই লেকটি। এর বর্তমান দৈর্ঘ্য ৩ কি.মি, প্রস্থ ৩৫ থেকে ১০০ মিটার, গভীরতা ৪.৭৭ মিটার, জলাশয়ের মোট আয়তন ৩৭.৩৭ হেক্টর। এই লেকটি ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়ক থেকে শুরু করে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে এসে শেষ হয়েছে।
বিশাল এই জলধারে সৌখিন মাছ শিকারিরা এখানে অর্থের বিনিময়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মাছ শিকার করতে পারেন। নৌকা ভ্রমণের শখটাও মেটাতে পারেন এই লেকের পানিতে। তাই আপনাকে চলে যেতে হবে ডিঙি চত্বরে। গেলেই পেয়ে যাবেন নৌকা।
নৌকাভ্রমণের প্রথম ৩০ মিনিটের জন্য আপনাকে ১০০ টাকা ভাড়া গুণতে হবে, পরবর্তী ১৫ মিনিটের জন্য ভাড়া হবে ৫০ টাকা। নৌকায় চড়তে হলে আপনাকে মেনে চলতে হবে কিছু নির্দেশনা। যেমন প্রতি নৌকায় শিশুসহ সর্বোচ্চ তিনজন, শিশু ছাড়া দু’জন চড়তে পারবেন। তবে অভিভাবক ছাড়া ১০ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের নৌকাভ্রমণ নিষিদ্ধ।
লেক এলাকার অন্যতম আকর্ষণ রবীন্দ্র সরোবর। এখানের খোলা মঞ্চে সারা বছরই থাকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছুটির দিনগুলোতে নাটক, গান, আবৃত্তিসহ হয় নানা ধরনের অনুষ্ঠান। সরোবরের পাশে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দেওয়াও অনেকের পছন্দ। এটুকুর জন্যও অনেকে ছুটে যান রবীন্দ্র সরোবর।
জলাধার ঘেরা সবুজের সমারোহ এ জায়গাটিতে পাখির কিচিরমিচির শব্দে মাঝে মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে পারেন অজানায়। এখানে রয়েছে কৃষচূড়া, বটগাছ, রেইনট্রি, আমগাছ, কাঁঠালগাছ, বকুলগাছ, কদমগাছসহ নানা প্রজাতির গাছ। তাই পাখিদের আনাগোনাও এখানে অনেকটা বেশি।
অবকাশ অথবা আড্ডা শেষে খাবারের প্রয়োজন হলে লেকের ভেতরেই অনেক খাবারের দোকান পেয়ে যাবেন।
লেকে রয়েছে কয়েকটি ব্রিজ। এগুলো আপনার ভ্রমণে আনবে ভিন্নতা। লেকের জলে নিজের ছায়াটুকু দেখার খুব বেশি মেলে না শহুরে মানুষের। সুযোগটি হাতছাড়া করবেন না!
লেকের পাড়ে রয়েছে একটি সুরম্য বাড়ি। জাহাজ বাড়ি নামেই পরিচিতি এর বেশি। লেকের পাড়ে বসে জলে লাল বাড়িটির প্রতিচ্ছবি দেখতে পছন্দ করেন সবাই।
শিশুদের জন্যও জায়গাটি বেশ খোলামেলা। এখানে এসে প্রাণভরে খেলতে পারে শিশুরা। চাইলে ঘাস আর মাটিতে এক শান্তির পরশও নিতে পারেন।
কাজেই সময় করে ঘুরে আসুন। আজ এ পর্যন্তই। ধন্যবাদ সবাইকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন