মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

খেলারামের কোঠা।

প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন : নবাবগঞ্জের খেলারামের কোঠা । 





প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার কলাকোপার খেলারামের কোঠাটি এখন কালের সাক্ষী। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো শৈল্পিক কারুকার্যে নির্মিত এ ভবনটি এক নজর দেখার জন্য প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অনেক দর্শনার্থী।
জানা গেছে, ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে বর্তমান ময়মনহিংস জেলার তৎকালীন জমিদার খেলারাম তার বংশীয় লোকজনের সাথে দেখা করতে নবাবগঞ্জের কলাকোপায় আসতেন।
আসা যাওয়ার মাঝে এ স্থানটি তার পছন্দ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে অস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য একটি দ্বিতল পাকা ভবন নির্মাণ করেন। যেটি খেলারামের কোঠা নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রসিদ্ধ রয়েছে, তিনি এ অঞ্চলের মানুষকে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করতেন, এ জন্য তার নামের সাথে দাতা শব্দটি যুক্ত হয়ে খেলারাম দাতা হিসেবে পরিচিতি পায়। বর্তমানে খেলারাম দাতার কোঠা বললে সবাই এক নামে চেনে-জানে। খেলারামের দ্বিতল এ বাড়িটির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ প্রায় সমান। ভবনের নিচতলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ২০টির মতো সুরম্য কক্ষ রয়েছে। দোতলায় মোট ৯টি গম্বুজ রয়েছে। মাঝখানের গম্বুজটি আকারে অনেক বড়। প্রতিটি গম্বুজের ভেতরের অংশে চীনামাটির কারুকার্যে তৈরি করা হয়েছে বলে সহজেই সবার দৃষ্টি কাড়ে। ভবনটির মাটির নিচে একটি গোপন কক্ষ রয়েছে বলে জানা যায়। স্থানীয় লোকজনের মুখে জানা যায়, ওই গোপন কক্ষটিতে জমিদার খেলারাম ও তার ভক্তবৃন্দরা আরাম আয়েশ ও আরাধনা করতেন। 


এই ভবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দেয়ালের পুরু অন্য যেকোনো দেয়ালের চেয়ে বেশি। এ জন্য দর্শনার্থীরা ভবনটি দেখার পর রীতিমতো অবাক হন। 
দীর্ঘ দিন অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকায় ভবনের দেয়ালজুড়ে ফাটল ও ওপরের আস্তরণ ধসে পড়ে ভবনটি হুমকির মুখে পড়ে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় গত বছর বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ খেলারামের কোঠাটি সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয়। এরপর পর মূল নকশা ঠিক রেখে সংস্কার করা হয় ভবনটির। বর্তমানে ভবনটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন লোক নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা রাখা হয় খেলারামের কোঠাটি।
ভবনের ভেতরে প্রবেশের জন্য কোনো ফি ধার্য করা হয়নি। তবে ভবনের সামনে কোনো নির্দেশনা বোর্ড না থাকায় দর্শনার্থীরা বিভ্রান্তিতে পড়েন।



স্থানীয় জনগণ ও দূর-দূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীরা ভবনের তথ্যাদি দিয়ে একটি নির্দেশনা টানানোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একটি নির্দেশনা বোর্ড টানানোর ব্যাপারে তাগিদ দেন। স্থানীয় একজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, খেলারামের এই কোঠাটি নিয়ে অনেকেই ভিন্নমত পোষণ করে থাকেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষ যদি সবার সাথে সমন্বয় করে একটি নির্দেশনা দিতেন, তাহলে সবাই ঐকমত্যে পৌঁছতে পারত, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে বর্তমানে খেলারামের কোনো আত্মীয়স্বজন বা বংশীয় লোকজন কলাকোপায় বসবাস না করার কারণে ভবনটি সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। তবুও দৃষ্টিনন্দন খেলারামের কোঠাটি দেখার জন্য ভ্রমণপিয়াসী মানুষ ভিড় করেন এই নবাবগঞ্জের কলাকোপায়।






আজ এ পর্য‍ন্তই। ধন্যবাদ সবাইকে। 



সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড় ।


সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়।




ভ্রমণ বলতেই আমরা কেবল কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত, সুন্দরবন, পার্বত্য জেলা আর সিলেটের চা বাগান বুঝি। কিন্তু যারা ভ্রমণপিপাসু তারা ঠিকই খুঁজে নেয় নয়নাভিরাম দৃশ্য। সেই অর্থে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে দেখার মতো কী কী আছে তা অনেকের কাছে অজানাই রয়ে গেছে। তবে এই পঞ্চগড়ে কিছু দিন আগেও ছিল না চা বাগান। অথচ এখন সমতল চা বাগানের সারি জেলাটিকে এনে দিয়েছে নতুন সৌন্দর্য। কিন্তু শুধু কি চা বাগানে থেমে আছে পঞ্চগড়? না, বরং বহু ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ পঞ্চগড়। তাই দর্শনীয় স্থানগুলো জেনে নেয়া যাক- 

ভিতরগড় দুর্গনগরী

উপজেলা সদর দফতর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত ভিতরগড় দুর্গনগরী প্রাচীন যুগের একটি বিরাট কীর্তি। প্রায় ১২ বর্গমাইলজুড়ে এই বিশাল গড় ও নগরীর অবস্থান। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর বর্তমান এ দুর্গনগরীর কিছু অংশ ভারতের মধ্যে পড়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে, ভিতরগড় পূর্ণ নির্মাণ করেন প্রাচীন কামরুনের শুদ্রবংশীয় রাজা দেবেশের বংশজাত পৃথু রাজা। সম্রাট হর্ষবর্ধনের সময় পৃথু রাজার অভ্যুদ্বয় ঘটে। তিনি কামরুপে পরাজিত হয়ে ভিতরগড় এলাকায় গমন করেন এবং নির্মাণ করেন এই গড়। ভিতরগড় দুর্গে একটি বড় দীঘি (মহারাজার দীঘি) ও কয়েকটি ছোট ছোট দীঘি আছে। ’মহারাজার দীঘি’ একটি বিশালায়তনের জলাশয়। পাড়সহ এর আয়তন প্রায় ৮০০দ্ধ৪০০ গজ। পাড়ের উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। জলভাগের আয়তন প্রায় ৪০০দ্ধ২০০ গজ। পানির গভীরতা প্রায় ৪০ ফুট বলে স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস। পানি অতি স্বচ্ছ। দীঘিতে রয়েছে ১০টি ঘাট। প্রতি বছর বাংলা নববর্ষে ওই দীঘির পাড়ে মেলা বসে। ওই মেলায় কোনো কোনো বার ভারতীয় লোকের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। 

বাংলাবান্ধা জিরো (০) পয়েন্ট

হিমালয়ের কোলঘেঁষে বাংলাদেশের সর্বোত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়া। এই উপজেলার ১ নম্বর বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে অবস্থিত বাংলাদেশ মানচিত্রের সর্বোত্তরের স্থান বাংলাবান্ধা জিরো (০) পয়েন্ট ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। এই স্থানে মহানন্দা নদীর তীর ও ভারতের সীমান্তসংলগ্ন প্রায় ১০ একর জমিতে ১৯৯৭ সালে নির্মিত হয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, নেপালের সাথে বাংলাদেশের পণ্য বিনিময়ও সম্পাদিত হয় বাংলাবান্ধা জিরো (০) পয়েন্টে। সম্প্রতি এ বন্দরের মাধ্যমে ভারতের সাথে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটানের সাথেও এ বন্দরের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের একমাত্র স্থলবন্দর, যার মাধ্যমে তিনটি দেশের সাথে সুদৃঢ় যোগাযোগ গড়ে ওঠার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এখানে শিগগিরই ভারতের সাথে ইমিগ্রেশন চালু হতে যাচ্ছে। এটি চালু হলে পঞ্চগড় জেলা পর্যটকদের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হবে। 






তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো

পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরে একটি ঐতিহাসিক ডাকবাংলো আছে। এর নির্মাণ কৌশল অনেকটা ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের। জানা যায় কুচবিহারের রাজা এটি নির্মাণ করেছিলেন। ডাকবাংলোটি জেলা পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত। এর পাশাপাশি তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ কর্তৃক নির্মিত একটি পিকনিক কর্তার রয়েছে। ওই স্থান দু’টি পাশাপাশি অবস্থিত হওয়ায় সৌন্দর্য বর্ধনের বেশি ভূমিকা পালন করছে। সৌন্দর্য বর্ধনে এ স্থান দু’টির সম্পর্ক যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। মহানন্দা নদীর তীরঘেঁষা ভারতের সীমান্তসংলগ্ন (অর্থাৎ নদী পার হলেই ভারত) সুউচ্চ গড়ের ওপর সাধারণ ভূমি হতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচুতে ডাকবাংলো এবং পিকনিক কর্তার অবস্থিত। ওই স্থান থেকে হেমন্ত ও শীতকালে কাঞ্চন জংঘার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বর্ষাকালে মহানন্দা নদীতে পানি থাকলে এর দৃশ্য আরও বেশি মনোরম হয়। শীতকালে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য অনেক দেশী-বিদেশী পর্যটকের আগমন ঘটে। 

বারো আউলিয়ার মাজার

উপজেলা সদর থেকে ৯ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে মির্জাপুর ইউনিয়নের বারো আউলিয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ ভূমিতে অবস্থিত বারো আউলিয়া মাজার শরিফ। বারো আউলিয়া ওলিদের আগমনের ইতিহাস বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেলেও ওলিদের ইতিহাস রহস্যাবৃত। এদের লিখিত কোনো ইতিহাস আজো পাওয়া যায়নি। ১২ জন ওলি-সুফি-সাধক চট্টগ্রামের শহর প্রান্তে প্রথমে এসে আস্তানা স্থাপন করেন। সেই জায়গাটি আজো বারো আউলিয়া নামে প্রসিদ্ধ। জানা গেছে, ১২ জন ওলি খাজাবাবার নির্দেশে চট্টগ্রামসহ পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে আস্তানা গড়ে তুলে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। পরে স্থল পথে রওনা হয়ে ইসলাম প্রচার করতে করতে উত্তরবঙ্গের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেন এবং পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বারো আউলিয়ায় আস্তানা গড়ে তুলে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। আটোয়ারীর মাটিকে পুণ্যভূমিতে পরিণত করে সময়ের বিবর্তনে ওলিদের এখানেই সমাহিত করা হয়। 

মির্জাপুর শাহী মসজিদ

মির্জাপুর শাহী মসজিদটি আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে অবস্থিত। ১৬৭৯ খ্রিষ্টাব্দে (সম্ভাব্য) নির্মিত ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত মসজিদের সাথে মির্জাপুর শাহী মসজিদের নির্মাণশৈলীর সাদৃশ্য রয়েছে। এ থেকে ধারণা করা হয় ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত মসজিদের সমসাময়িককালে এ মির্জাপুর শাহী মসজিদের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। দোস্ত মোহাম্মদ এটির নির্মাণকাজ শেষ করেন বলে জানা যায়। মসজিদের নির্মাণ সম্পর্কে পারস্য ভাষায় লিখিত মধ্যবর্তী দরজার উপরিভাগে একটি ফলক রয়েছে। ফলকের ভাষা ও লিপি অনুযায়ী ধারণা করা হয় মোগল সম্রাট শাহ আলমের রাজত্বকালে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। মসজিদটির দেয়ালের টেরাকোটা ফুল এবং লতাপাতার নকশা খোদাই করা রয়েছে। 

মহারাজার দীঘি

পঞ্চগড় শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে পঞ্চগড় সদর উপজেলাধীন অমরখানা ইউনিয়নে অবস্থিত একটি বড় পুকুর, বর্তমানে যা মহারাজার দীঘি নামে পরিচিতি। ‘মহারাজার দীঘি’ একটি বিশালায়তনের জলাশয়। পাড়সহ এর আয়তন প্রায় ৮০০দ্ধ৪০০ গজ। পানির গভীরতা প্রায় ৪০ ফুট বলে স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস। পানি অতি স্বচ্ছ। দীঘিতে রয়েছে ১০টি ঘাট। ধারণা করা হয়, পৃথু রাজা এ দীঘিটি খনন করেন। কথিত আছে, পৃথু রাজা পরিবার-পরিজন ও ধনরতœসহ ‘কীচক’ নামক এক নিম্নশ্রেণীর দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়ে তাদের সংস্পর্শে ধর্ম নাশের ভয়ে ওই দীঘিতে আত্মহনন করেন। প্রতি বছর বাংলা নববর্ষে ওই দীঘির পাড়ে মেলা বসে। ওই মেলায় কোনো কোনো বার ভারতীয় লোকের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এই বিশাল দীঘির চার পাশে রয়েছে অনেক গাছগাছালির সবুজের কারুকার্য, স্নিগ্ধ সমীরণ, সৌম্য শান্ত পরিবেশ, যা এখনো সবার কাছে বিরল মনে হয়।  

                    ============================


ধন্যবাদ সবাইকে। 








সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

হ্রদ পাহাড়ে মাতামাতি ।

হ্রদ পাহাড়ে মাতামাতি। 




সবুজ পাহাড়ের নিচে শান্ত হ্রদ। ঝরনার জলে স্নান, ফোয়ারার জলে কুলকুচি, ঢেউয়ের তালে নাচানাচি আবার রাইড নিয়ে মাতামাতি—সবই এক জায়গায়। হ্রদ ও পাহাড়ের কোলে গড়ে উঠেছে এমন বিনোদনকেন্দ্র। চট্টগ্রামের ফয়’স লেকের এ বিনোদনকেন্দ্র হাতছানি দেয় ভ্রমণপিয়াসীদের। নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত প্রকৃতির কাছে ছুটে যায় কর্মব্যস্ত মানুষ। এ বিনোদন পার্কে দিনে দিনে বেড়ানোর পাশাপাশি সুযোগ রয়েছে রাত্রিযাপনেরও।
অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও সি ওয়ার্ল্ড নিয়ে পুরো ফয়’স লেক বিনোদনকেন্দ্র। মোট ৩৩৬ একর পাহাড়ি জমির ওপর এই পার্ক। দুটি পার্কই হরেক রকম রাইডে ঠাসা। কনকর্ডের ব্যবস্থাপনায় ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৫ সালে। এখানে রয়েছে ২০টিরও বেশি বিভিন্ন ধরনের রাইড।

নৌকায় নৌকায় ঠোকাঠুকি, পানিতে দোল খাওয়া আর আরেক নৌকার সঙ্গে ইচ্ছামতো ধাক্কাধাক্কি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে শিশু-কিশোরেরা। বাম্পার বোট নামের এই রাইডটি বেশ জনপ্রিয়। বাম্পার কার দিয়ে টোকাটুকির প্রতিযোগিতা করা যায়।
পাশ দিয়ে সার্কাস ট্রেন ঝিকঝিক শব্দে চলে যায়। রংবেরঙের ঘোড়ার ওপর বসে শিশু-কিশোরেরা কী মজাতেই না ব্যস্ত থাকে সারাক্ষণ! এই রাইডের নাম বেবি কেরাওসাল। তাদের জন্য রয়েছে ভিডিও গেমসও। আর লাফালাফি দাপাদাপির জন্য বাগ বাউন্স ও হ্যাপি জাম্প বাচ্চাদের খুবই প্রিয়।
ছোট-বড় কারও যদি আকাশ ছোঁয়ার ইচ্ছা হয়, তাহলে উঠতে হবে ফেরিস হুইলে। এ ছাড়া রেড ড্রাই স্লাইড, পাইরেট শিপ, ইয়েলো ড্রাই স্লাইড ইত্যাদি রাইডে চড়া যাবে।
প্যাডেল বোট নামের একটি বৈঠাবিহীন নৌকা নিয়ে (দুজন) আঁকাবাঁকা হ্রদের ঝোপজঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া যায় অনায়াসে। পানির ওপর সাইকেল চালানোর অভিজ্ঞতাটা হলো। হ্রদে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘোরার জন্য রয়েছে ফ্যামিলি রোলার কোস্টার।
হ্রদের জলে নৌকাযোগে ভাসতে ভাসতে পাশের পাহাড় আর বন-জঙ্গলে দু-একটি হরিণ কিংবা বানরও দেখা যেতে পারে। আর পার্কের খাবার ছিটালে পার্কের কবুতরগুলো তো বসতে পারে আপনার গায়ে।
পার্কের রাইডগুলোর জন্য প্রতিজনকে খরচ করতে হবে ৩০ থেকে ৬০ টাকা। তবে ১০-১৫ জনের বড় ইঞ্জিন নৌকাগুলোর খরচ ২৫ মিনিটে ৭০০ টাকা। রাইড ছাড়া পার্কের প্রবেশমূল্য বড়দের জন্য ১৫০ টাকা। তিন ফুটের কম শিশুদের প্রবেশমূল্য না থাকলেও এর বেশি উচ্চতার শিশুদের জন্য ৭৫ টাকা।
এ ছাড়া পিকনিকের জন্যও নানা অফার। শিক্ষার্থীদের পিকনিকের ক্ষেত্রে প্রতিজনের প্রবেশমূল্য ১০০ টাকা ও করপোরেটের জন্য প্রতিজনের প্রবেশ ফি ১২০ টাকা। উভয় ক্ষেত্রে ১০০ টাকা দিয়ে পার্কের সব রাইড ব্যবহার করার সুযোগ পাবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত পার্ক খোলা থাকে।

সি ওয়ার্ল্ড
ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কের পাশে ২০০৭ সালে গড়ে ওঠে সি ওয়ার্ল্ড নামের ওয়াটার পার্ক। ক্রমেই এই ওয়াটার পার্কটি ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এখানে ওয়েব পুল, স্লাইড ওয়ার্ল্ড, টিউব স্লাইড, ফ্যামিলি পুল, ড্যান্সিং জোনসহ নয়টি রাইড রয়েছে।
কৃত্রিম ঢেউয়ের তালে তালে এখানে নেচে বেড়ায় তরুণ-তরুণীরা। ঝরনার পানিতে দাপাদাপি কে না করতে চায়। গরমের মৌসুমে ওয়াটার পার্কে লোকজনের ভিড় বেড়ে যায় বলে জানালেন কনকর্ডের সহকারী ব্যবস্থাপক (বিপণন) বিশ্বজিৎ ঘোষ। তিনি বলেন, একসঙ্গে দুই হাজারের বেশি লোক ওয়ার্টার পার্কে নামতে পারে।
ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কের ফটক দিয়ে ওয়াটার পার্কে যেতে চাইলে প্রতিজনের খরচ পড়ে ৩৯০ টাকা। এ ক্ষেত্রে ১০ মিনিটের ইঞ্জিন নৌকা ভ্রমণের সুযোগও থাকে। আবার কর্নেল হাট বিশ্ব কলোনি ফটক দিয়ে ওয়াটার পার্কে প্রবেশ ফি ২৭০ টাকা।
অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও ওয়াটার পার্কে বেড়াতে এসে দুপুরের খাবার সারতে চাইলে লাগবে ন্যূনতম ২০০ টাকা। এখানে রয়েছে লেকভিউ ও রিসোর্ট নামের দুটি রেস্তোরাঁ। এ ছাড়া পার্কে জুস কর্নার, ফাস্টফুড, চটপটি, ফুচকা ইত্যাদির দোকান তো রয়েছেই।
শুয়ে শুয়ে হ্রদ ও আকাশ দেখা
ফয়’স লেকে রাত্রিযাপনের সুবিধাও রয়েছে। হ্রদের পাড়ে রয়েছে আধুনিক সুযোগসংবলিত রিসোর্ট। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এ রিসোর্টের ঘর থেকে অনায়াসে দেখা মেলে পাহাড়, হ্রদ ও আকাশ। কাচঘেরা জানালার পর্দা সরিয়ে দিলেই রাতে চাঁদ দেখা যায়। এ ছাড়া রয়েছে রেস্টহাউস। রেস্টহাউস ও রিসোর্টের অতিথিরা অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও ওয়াটার পার্কের সব রাইড বিনা মূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন। এসব কক্ষের সর্বনিম্ন ভাড়া প্রতি রাত (দুজন) তিন হাজার ৭০৯ টাকা।
এই বর্ষায় ফয়’স লেকের রূপ খুলে যাবে আরও। এখানে বেড়ানোর তাই এই সময়।   

সময় করে বেড়িয়ে আসুন, ভালো লাগবে আশা করি।ধন্যবাদ সবাইকে।

নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ দুর্গ।

নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ দুর্গ। 



নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক হাজীগঞ্জ কেল্লার স্থানটির সামনে দাঁড়াতেই বুকটা কেমন যেন ধক করে উঠল। অদ্ভুত সুন্দর বিশাল এক কেল্লা। একটু একটু শিহরণও জাগল ভেতরে এই ভেবে, এ বিশাল কেল্লাটি তৈরি করা হয়েছিল যুদ্ধের জন্য। ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দে মোগল শাসক ঈশা খাঁ মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের কবল থেকে এ জনপদকে রক্ষা করার জন্য শীতলক্ষ্যা-ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা নদীর মিলন স্থলে কেল্লাটি নির্মাণ করেন। এখানে দিনের পর দিন না জানি কত যুদ্ধ হয়েছে। সুগঠিত এ কেল্লার নাম খিজিরপুর দুর্গ যা বর্তমান হাজীগঞ্জের দুর্গ বা কেল্লা নামে পরিচিত। ১৭০০ শতাব্দী বা তারও আগে নির্মিত এ দুর্গের সঠিক স্থপতির নাম তেমন পরিষ্কারভাবে কোথাও নেই। তবে ধারণা করা হয়, সম্ভবত সুবেদার ইসলাম খানের সঙ্গে সংঘর্ষকালীন ঈশা খাঁ এ দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর রাজধানী সোনারগাঁয়ের নিরাপত্তার জন্য মীর জুমলা অধিকাংশ সময় অবস্থান করতেন এ কেল্লায়। প্রায় দুই কিলোমিটার জায়গা নিয়ে বিস্তৃত এ খিজিরপুর (হাজীগঞ্জ) দুর্গ। চারপাশ আবদ্ধ এ কেল্লাটির দৈর্ঘ্য পূর্ব-পশ্চিমে ২৫০ ফুট এবং উত্তর-দক্ষিণে ২০০ ফুট। একটি সু-উচ্চ প্রধান ফটক রয়েছে দুর্গের পূর্বদিকে। রয়েছে কয়েকটি গোপন দরজা কেল্লার বিভিন্ন দিকে। দুর্গজুড়ে রয়েছে আÍরক্ষার জন্য মাটির উঁচু বাঁধ, যার মাঝে রয়েছে ছোট ছোট ফাঁকা জায়গা সেখানে অস্ত্র রেখে মোকাবিলা করা হতো শত্র“দের। দুর্গের মাঝে পুরোটাই ফাঁকা মাঠ। ধারণা করা হয়, এখানে অবস্থান নেয়া-সৈন্যরা এ মাঠে তাঁবু খাটিয়ে থাকত। সেই সময়ে যেহেতু নদীপথই ছিল যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম তাই নদীপথের আক্রমণ রুখতে নদীর তীরবর্তী জায়গাতেই নির্মাণ করা হয় এ দুর্গটি। এক সময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী মীর জুমলা খানও অধিকাংশ সময় এ দুর্গে কাটাতেন। বিশেষ করে বর্ষার সময় তিনি এ খিজিরপুর (হাজীগঞ্জ) দুর্গের ভার নিজ হাতে গ্রহণ করতেন। প্রতিহত করতেন নৌপথে অভিযানকারী জলদস্যুদের। সময়ের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন লোক ব্যবহার করতেন এ দুর্গ নিরাপত্তার জন্য। আবার কখনও এখান থেকে পরিচালনা করেছেন যুদ্ধ। এক সময় ঢাকার নবাবেরা এটিকে ঘিরে হাফেজ মঞ্জিল নামক একটি প্রাসাদ ও উদ্যান নির্মাণ করে ছিলেন এমন জনশ্রুতি ও আছে। সময়ের ব্যবধানে এক সময়ের রক্ত হিম করা নাম খিজিরপুর (হাজীগঞ্জ) দুর্গ এখন এক নীরব নিস্তব্ধ পুরাকীর্তি। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ক্রমেই ক্ষয়ে পড়া এ দুর্গের অভ্যন্তর এখন ব্যবহৃত হয় গৃহপালিত পশুর চারণভূমি অথবা শিশু-কিশোরদের খেলার নির্ভরযোগ্য স্থান হিসেবে। কেল্লার পথে খাসজমির ওপর পাট গুদামগুলো স্বাধীনতার পর থেকে অস্থায়ী লিজের কারণে সৌন্দর্য ক্ষুণ হতে থাকে। যদিও মাঝে মাঝে চলে প্রশাসনের লোক দেখানো সংস্কার যা উল্লেখ করার মতো কিছুই নয়। আর এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন পর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্প বলে প্রতীয়মান হবে।   

(সঠিক উপায়ে রক্ষণাবেক্ষণ করে তা আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরাই যেন আমাদের লক্ষ্য হয় সেদিকে মনোযোগ দেয়া আমাদের একান্ত কর্ত‍ব্য।)