মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

খেলারামের কোঠা।

প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন : নবাবগঞ্জের খেলারামের কোঠা । 





প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার কলাকোপার খেলারামের কোঠাটি এখন কালের সাক্ষী। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো শৈল্পিক কারুকার্যে নির্মিত এ ভবনটি এক নজর দেখার জন্য প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অনেক দর্শনার্থী।
জানা গেছে, ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে বর্তমান ময়মনহিংস জেলার তৎকালীন জমিদার খেলারাম তার বংশীয় লোকজনের সাথে দেখা করতে নবাবগঞ্জের কলাকোপায় আসতেন।
আসা যাওয়ার মাঝে এ স্থানটি তার পছন্দ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে অস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য একটি দ্বিতল পাকা ভবন নির্মাণ করেন। যেটি খেলারামের কোঠা নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রসিদ্ধ রয়েছে, তিনি এ অঞ্চলের মানুষকে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করতেন, এ জন্য তার নামের সাথে দাতা শব্দটি যুক্ত হয়ে খেলারাম দাতা হিসেবে পরিচিতি পায়। বর্তমানে খেলারাম দাতার কোঠা বললে সবাই এক নামে চেনে-জানে। খেলারামের দ্বিতল এ বাড়িটির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ প্রায় সমান। ভবনের নিচতলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ২০টির মতো সুরম্য কক্ষ রয়েছে। দোতলায় মোট ৯টি গম্বুজ রয়েছে। মাঝখানের গম্বুজটি আকারে অনেক বড়। প্রতিটি গম্বুজের ভেতরের অংশে চীনামাটির কারুকার্যে তৈরি করা হয়েছে বলে সহজেই সবার দৃষ্টি কাড়ে। ভবনটির মাটির নিচে একটি গোপন কক্ষ রয়েছে বলে জানা যায়। স্থানীয় লোকজনের মুখে জানা যায়, ওই গোপন কক্ষটিতে জমিদার খেলারাম ও তার ভক্তবৃন্দরা আরাম আয়েশ ও আরাধনা করতেন। 


এই ভবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দেয়ালের পুরু অন্য যেকোনো দেয়ালের চেয়ে বেশি। এ জন্য দর্শনার্থীরা ভবনটি দেখার পর রীতিমতো অবাক হন। 
দীর্ঘ দিন অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকায় ভবনের দেয়ালজুড়ে ফাটল ও ওপরের আস্তরণ ধসে পড়ে ভবনটি হুমকির মুখে পড়ে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় গত বছর বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ খেলারামের কোঠাটি সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয়। এরপর পর মূল নকশা ঠিক রেখে সংস্কার করা হয় ভবনটির। বর্তমানে ভবনটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন লোক নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা রাখা হয় খেলারামের কোঠাটি।
ভবনের ভেতরে প্রবেশের জন্য কোনো ফি ধার্য করা হয়নি। তবে ভবনের সামনে কোনো নির্দেশনা বোর্ড না থাকায় দর্শনার্থীরা বিভ্রান্তিতে পড়েন।



স্থানীয় জনগণ ও দূর-দূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীরা ভবনের তথ্যাদি দিয়ে একটি নির্দেশনা টানানোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একটি নির্দেশনা বোর্ড টানানোর ব্যাপারে তাগিদ দেন। স্থানীয় একজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, খেলারামের এই কোঠাটি নিয়ে অনেকেই ভিন্নমত পোষণ করে থাকেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষ যদি সবার সাথে সমন্বয় করে একটি নির্দেশনা দিতেন, তাহলে সবাই ঐকমত্যে পৌঁছতে পারত, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে বর্তমানে খেলারামের কোনো আত্মীয়স্বজন বা বংশীয় লোকজন কলাকোপায় বসবাস না করার কারণে ভবনটি সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। তবুও দৃষ্টিনন্দন খেলারামের কোঠাটি দেখার জন্য ভ্রমণপিয়াসী মানুষ ভিড় করেন এই নবাবগঞ্জের কলাকোপায়।






আজ এ পর্য‍ন্তই। ধন্যবাদ সবাইকে। 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন