সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৫

বগুড়ায় ভ্রমণ।

বগুড়ায় ভ্রমণ।   




বাংলাদেশের প্রাচীন একটি জনপদের নাম বগুড়া। প্রাচীন পুন্ড্র রাজ্যের রাজধানী পুন্ড্রবর্ধনই হচ্ছে এখনকার বগুড়া জেলা। মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন প্রভৃতি আমলের বিভিন্ন নিদর্শন এখনও বিদ্যমান আছে এ জেলার বিভিন্ন জায়গায়। ইতিহাস থেকে জানা যায় ১২৭৯-১২৮২ পর্যন্ত এ অঞ্চলের শাসনকর্তা সুলতান গিয়াস উদ্দীন বলবনের পুত্র সুলতান নাসির উদ্দীন বগরা খানের নামানুসারেই এখানকার নামকরণ হয়েছে বগড়া বা বগুড়া। 

মহাস্থানগড় 

বগুড়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হলো মহাস্থানগড়। বগুড়া শহর থেকে প্রায় তের কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত এ জায়গাটি। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের এক দুর্গ নগরী এই মহাস্থানগড়। এককালে, মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন রাজাদের রাজধানী ছিল এখানে। এখন শুধু সেগুলোর ধ্বংসাবশেষ নিরবে দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে। এখানে এখনও আছে ৫০০০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৪৫০০ ফুট প্রস্থের সেই প্রাচীন নগরীর দেয়াল। দেয়ালের ভেতরে রয়েছে জীয়ত্কুণ্ড, প্রাচীন মসজিদসহ নানান নির্দশন। 

হযরত শাহ সুলতান বলখীর (র) মাজার

মহাস্থান গড়ের ঠিক আগেই রয়েছে হযরত শাহ সুলতান বলখীর (র) মাজার। এ অঞ্চলের জনগণকে রাজা পরশুরামের অত্যাচার থেকে মুক্ত করতে আফগানিস্তানের অন্তর্গত বলখ প্রদেশ থেকে শাহ সুলতান বলখীর (র) এ এলাকায় আগমন করেন। ১২০৫-১২২০ খ্রিস্টাব্দে পরশুরামের সঙ্গে তার যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত এবং নিহত হন। 

গোকুল মেধ
বগুড়া শহর থেকে দশ কিলোমিটার উত্তরে এবং মহাস্থানগড় থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণে গোকুল গ্রামে অবস্থিত এ প্রত্নস্থলটি অনেকেই জানেন বেহুলার বাসরঘর নামে। ঐতিহাসিকগণের মতে এটি আনুমানিক সপ্তম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত। ইট নির্মিত এ স্তূপটি পূর্ব পশ্চিমে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ এবং তিনকোণ বিশিষ্ট। খননের ফলে এ স্থাপনাটিতে ১৭২টি কক্ষ আবিষ্কৃত হয়েছে। 

মহাস্থানগড় জাদুঘর

মহাস্থানগড় থেকে সামান্য উত্তরে গোবিন্দ ভিটার ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থিত মহাস্থান জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৬৭ সালে। এ অঞ্চলে প্রাপ্ত নানান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষিত আছে এ জাদুঘরটিতে। এ জাদুঘরের গ্রীষ্মকালীন সময়সূচি হলো বেলা ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। দুপুর ১টা থেকে ত্রিশ মিনিট মধ্যাহ্ন বিরতি। আর শীত কালীন সময়সূচি হলো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা। দুপুর ১টা থেকে ত্রিশ মিনিট মধ্যাহ্ন বিরতি। মহাস্থান জাদুঘর সপ্তাহের রোববার পূর্ণ দিবস, সোমবার অর্ধ দিবস এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বন্ধ থাকে। 

গোবিন্দ ভিটা

মহাস্থানগড় থেকে সামান্য উত্তরে করতোয়া নদীর বাঁকে অবস্থিত একটি প্রত্নস্থল এটি। এটি মূলত একটি প্রাচীন মন্দির। খ্রিস্টীয় ১২শ-১৩শ শতকে রচিত সংস্কৃতি গ্রন্থ 'করতোয়া মহাত্ম'-তে এ মন্দিরটির কথা উল্লেখ আছে। এখানে সর্বপ্রথম ১৯২৮-২৯ সালে এবং পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে প্রত্নতাত্তিক খননের ফলে খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতক থেকে শুরু করে বিভিন্ন যুগের নানান নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। 

শীলা দেবীর ঘাট

মহাস্থানগড়ের পূর্ব দিকে করতোয়া নদীর তীরে রয়েছে শীলা দেবীর ঘাট। শীলা দেবী ছিলেন পরশুরামের ভগ্নি। যুদ্ধের সময় আত্মশুদ্ধির জন্য এখানেই তিনি আত্মহুতি দিয়েছিলেন। 

ভাসুবিহার

বগুড়া শহর থেকে প্রায় আঠারো কিলোমিটার দূরে শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এ প্রত্নস্থলটির আরেক নাম নরপতির ধাপ। খননের ফলে এখানে দুটি মধ্যম আকৃতির সংঘারাম ও একটি মন্দিরসহ আরও অনেক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়। অপেক্ষাকৃত ছোট সংঘারামটির আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ৪৯ মিটার এবং পূর্বে-পশ্চিমে ৪৬ মিটার। এর চার বাহুতে ভিক্ষুদের বসবাসের জন্য ২৬টি কক্ষ এবং কক্ষগুলোর সামনে চারপাশে ঘোরানো বারান্দা এবং পূর্ব বাহুর কেন্দ্রস্থলে প্রবেশপথ রয়েছে। বড়টিতে ৩০টি ভিক্ষু কক্ষ এবং দক্ষিণ বাহুর কেন্দ্রস্থলে প্রবেশ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে খননের ফলে এখান থেকে প্রায় ৮০০টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। 

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো সার্ভিস হলো গ্রীন লাইন, টি আর ট্রাভেলস এবং এস আর পরিবহনের এসি বাস। ভাড়া ২৫০-৩৫০ টাকা। আর এ পথে সাধারণ মানের নন-এসি বাস চলে শ্যামলী, হানিফ, এসআর, কেয়া, টিআর, বিআরটিসি, শাহ সুলতান ইত্যাদি পরিবহনের বাস চলে। ভাড়া জনপ্রতি ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা। ঢাকা থেকে বগুড়ার বাস সাধারণত ছাড়ে গাবতলী, কলেজ গেট থেকে। আর বগুড়া থেকে ঢাকার বাস ছাড়ে শহরের সাতমাথা এবং ঠনঠনিয়া থেকে। বগুড়া শহর থেকে অটো রিকশা কিংবা টেম্পুতে চড়ে আসতে পারেন মহাস্থানে। 

কোথায় থাকবেন?

বগুড়া শহরে থাকার জন্য আছে বেশ কয়েকটি ভালো মানের হোটেল। বগুড়ার সবচেয়ে আধুনিক হোটেল হলো শহরের ছিলিমপুরের নাজ গার্ডেন, ফোন :০৫১-৬২৪৬৮, ৬৩২৭২। এ ছাড়া শহরের বনানী এলাকায় পর্যটন মোটেল, ফোন ০৫১-৬৭০২৪-২৭। চার মাথার মোড়ে হোটেল সেফ ওয়ে, ফোন ০৫১-৬২৬৯০, ৬৬০৮৭। বনানী ফুলদিঘীতে হোটেল সিস্তা, ফোন :০৫১-৬৬৯৬৫, ৬৬৩১০। এসব হোটেলে ৫০০ থেকে ৯০০০ টাকা ভাড়া মানের বিভিন্ন রকম কক্ষ রয়েছে। 


আজ এ পর্য‍ন্তই। ধন্যবাদ সবাইকে।

                                        ===========

লালাখাল, সিলেট।

নীল পানির ‘লালাখাল’ সিলেটের নীল নদ!   




সিলেট শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে জৈন্তাপুর উপজেলায় স্বচ্ছ নীল পানির নদী ‘লালাখাল’। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি। প্রকৃতিকে একান্তে অনুভব করার জন্য স্থানটি বেশ উপযোগী। পাহাড়ে ঘন সবুজ বন, নদী, চা-বাগান ও নানা জাতের বৃক্ষের সমাহার লালাখালজুড়ে। পানি আর প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়া এখানকার মানুষের জীবনযাত্রাও আপনাকে দেবে নতুন করে বাঁচার প্রেরণা। লালাখালে গেলে আদিবাসীদের সঙ্গে আপনার সখ্যের সুযোগও থাকছে! সবকিছু মিলিয়ে এলাকাটি পর্যটকদের কাছে বেশ প্রিয়, কাঙ্ক্ষিত ও প্রতীক্ষিত একটি স্থান। সড়কপথ, নৌপথ দুভাবেই যাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও নৌ ভ্রমণটা বেশি উপভোগ্য বলে এটাকেই বেছে নেয় অধিকাংশ পর্যটক। নৌপথে যেতে যেতে যেদিকে চোখ যায়, মুগ্ধতায় নেমে আসে মগ্নতা! নিশ্চিতভাবে কিছুক্ষণের জন্য আপনি কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যেতে চলছেন, এ খেয়াল হবেই না! ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেই লালাখালের অবস্থান। চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন এই নদী বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। লালাখাল ভ্রমণের জন্য শীতের প্রথম ভাগটাই উপযুক্ত সময়। চাইলে বৃষ্টির দিনে ভ্রমণ করা যেতে পারে। তবে শীতের সময়টা বেশ নিরাপদ।
বলে নেওয়া ভালো, চাইলে সারা দিন লালাখালে কাটাতে পারেন, আবার দিনের শেষ ভাগটা কাটিয়ে আসতে পারেন। সারা দিনের জন্য গেলে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যায় ফিরলে দুই ধরনের আনন্দ পাওয়া যায়। লালাখালের চারপাশে সন্ধ্যার আগমুহূর্তটা আরো অবিস্মরণীয়। ওপরে আলোকিত আকাশ। ক্লান্ত সূর্য ঢলে পড়ছে পশ্চিম আকাশে। চারপাশে গাছপালার মধ্যে পাখির কিচিরমিচির। এসব দেখলে মনে হয়, পাহাড় থেকে তিরতির সন্ধ্যা নেমে আসছে। ধীরে ধীরে গোধূলিকেও আঁধার ঢেকে দেয়। ক্রমে চারপাশে নেমে আসে আঁধার। সন্ধ্যার আঁধার নেমে আসে লালাখালের স্বচ্ছ নীল জলে। সঙ্গে জ্যোৎস্না রাতে নৌকায় লালাখাল পাড়ি দেওয়ার মজাই আলাদা। তবে সতর্ক থাকতে হবে। আপনি চাইলে আগেভাগে বুকিং দিয়ে রাত কাটাতে পারবেন লালাখালের পাশে সদ্য গড়ে ওঠা একমাত্র রিসোর্টে। রিসোর্টের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাও আছে। স্পিডবোটে লালাখালের নীল জল চিরে এগিয়ে যাওয়াটা আপনার আনন্দ বাড়িয়ে দেবে।
সিলেট থেকে সড়কপথে সিলেট-তামাবিল সড়কে সারিঘাট এসে তার পর এক থেকে দেড় ঘণ্টার নৌ ভ্রমণ। ইঞ্জিনচালিত নৌযানের গতির ওপরে সেটা নির্ভর করে। সিলেট থেকে এলে সারিঘাট থেকে নৌকা ভাসাতে হয়। সারিঘাটে নামলেই যে কারোর মনটা হালকা হয়ে আসবে। পাথরের ঢাল আর খালের স্বচ্ছ নীল জল দেখতে যে কারো ভালো লাগবে। 


সারিঘাট থেকে প্রতি ঘণ্টায় নৌকা ছেড়ে যায়। স্থানীয়রা নৌকায় যাতায়াত করেন। খালের যেখানে শুরু, সেখানেই রয়েছে সুন্দর এক চা বাগানসহ ফ্যাক্টরি। বাগানটিও খুব পরিচ্ছন্ন এবং সুন্দর। পাশে পাড়ার ছেলেদের খেলার ফুটবল মাঠে চাইলে জমিয়ে ফুটবল খেলে নিতে পারেন, যদি প্রস্তুতি থাকে। ওখানেই চাইলে ঘুরে আসা যাবে আদিবাসীদের পল্লী। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ আপনাকে নিয়ে যাবে অচেনা এক দেশে। একটু এগোলেই ওপারে ভারতের সীমান্ত আপনাকে জানিয়ে দেবে, আর এগোনোর পথ নেই।
লালাখালের দুই পাড়ে তেমন কোনো বাড়িঘর নেই; কিন্তু আছে হরেক রকমের গাছপালা। যেন চারপাশে সবুজের হাতছানি। মাঝেমধ্যে কাশবনের ঝোপ চোখে পড়ে। তবে নদীতে অসংখ্য বাঁকের দেখা মেলে। প্রতিটি বাঁকই দেখার মতো সুন্দর। নদী থেকে দূরে পাহাড় দেখা যায়। দেখলে যতটা কাছে মনে হয়, আসলে তত কাছে না। পাহাড়গুলোকে দেখলে মনে হয়, কেউ যেন নিজ হাতে থরেথরে একের পর একটি করে সাজিয়ে রেখেছে। এখানে পাহাড়ের গায়ে মেঘ জমা হয়। একটু কাছ থেকে দেখা যায়, মেঘেরা দল বেঁধে পাহাড়ের গায়ে ঠেস লাগিয়ে থেমে থাকে। আবার কখনো দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে সবার অলক্ষ্যে হারিয়ে যায়। কখনো মেঘ বেশি জমা হলে এখানে বৃষ্টিপাত বেড়ে যায়। নদী আর পাহাড় মেলবন্ধনে নদীর টলটলে স্রোতস্বিনী জল আর পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণাধারা, এ যেন প্রকৃতির এক মায়াময়ী রূপের বাহানা। নদীর জলে নৌকার ওপর বসে পাহাড় দেখার সৌর্ন্দযই আলাদা। দল বেঁধে এখানে এলে সুবিধা বেশি, কারণ নৌকা ভাড়াটা কমে যায়। ভ্রমণে আনন্দও উপভোগ করা যায় এবং সবাই মিলে হৈচৈ করে আনন্দ ভাগাভাগি করা যায়।
জায়গাটার নামের সঙ্গে ‘খাল’ শব্দ যুক্ত হলেও এটা মূলত একটা নদীরই অংশ। নদীর নাম সারি। পানি স্থির নয়, সব সময় চলমান। কেননা, চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে বেয়ে আসা পানি গড়িয়ে চলেছে লালাখাল দিয়ে। নদীতে স্রোত থাকায় যাওয়ার পথে সময় বেশি লাগে, তেমনি ফিরতি পথে পাওয়া যায় বাড়তি সুবিধা। 

এ নদীর পানি নীল, কিন্তু নাম কেন লালাখাল হলো? এমন প্রশ্ন অনেকের। লালাখালকে কেন লালাখাল বলা হয়, তা জানা যায়নি। স্থানীয়দের কাছ থেকেও এর কোনো ব্যাখ্যা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। নদীর পানি নীল কেন, বলা মুশকিল। প্রকৃতিতেই এ নদীর পানি নীল। তাই নদীর পানি নিয়ে যে কারো মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। হতে পারত নীলাখাল। মিসরের নীল নদ দেখা সবার ভাগ্যে নাও জুটতে পারে। তবে দেশের এ খাল দেখে নীল জলারাশি দেখার আক্ষেপ মিটতে পারে। কেউ বা আবার নীল নদ দেখতে উদগ্রীবও হতে পারেন। ভ্রমণ শেষে আপনার মনে হতে পারে, এটা সিলেটের নীল নদ বা বাংলার নীল নদ।
থাকার জায়গা
এতক্ষণে আপনার মন চাইছে ঘুরতে আসতে লালাখাল। সঙ্গে যদি অনুসঙ্গ যোগ হয়? আপনি চাইলে পারবেন লালাখালের পাড়ে রাত কাটাতে। আগে সুবিধাটা ছিল না। এখনো যে খুব বেশি, তা বলা যাবে না। একটা মাত্র রিসোর্ট। আগে থেকে বুকিং দিয়েই আসতে হয়। না হলে জায়গা পাওয়া কষ্ট। নর্দার্ন রিসোর্ট নামে রিসোর্টটির নিজেদের পরিবহন ব্যবস্থাও আছে। এ ছাড়া সিলেট শহরে রাত যাপন করে একদিনে মাত্র লালাখাল ঘুরতে পারেন। অথবা বিছনাকান্দি ও জাফলং যেকোনো একটার সঙ্গে মিলিয়ে বিকেলের ভ্রমণটা লালাখালে হতে পারে। সিলেট শহর থেকে বেশ দূর হওয়ায় সন্ধ্যার দিকে নদীতে কোনো নৌকা থাকে না। তাই ভ্রমণ বা ঘোরাঘুরি সন্ধ্যার মধ্যেই শেষ করতে হয়। সবচেয়ে ভালো হয় নৌকা ভাড়া নিয়ে যাতায়াত করলে।
যেতে চাইলে যে পথ ধরবেন
লালাখালে যেতে হলে সিলেটের শিশু পার্কের সামনে থেকে লেগুনা অথবা জাফলংয়ের বাসে চেপে সিলেট-তামাবিল সড়ক ধরে যেতে হবে সারিঘাট। সিলেট আর জাফলং মাঝামাঝি এ স্থানটির নাম সারিঘাট। আগেই বলা হয়েছে, যাওয়ার জন্য পথ দুটি সড়কপথ ও নৌপথ। সড়ক পথে যেতে চাইলে মাইক্রোবাস বা কার ভাড়া নিলে ভালো হয়। তা ছাড়া সিলেট শহর থেকে বাস, লেগুনায় সারিঘাট গিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া নিতে পারেন। নৌপথে যেতে চাইলে আগে সারিঘাট পর্যন্ত একই নিয়মে বাস, লেগুনায় গিয়ে নৌযান ভাড়া নিতে হবে। ফেরার পথে এখান থেকে বাসে কিংবা লেগুনায় আসতে পারবেন। রাত ৮টা নাগাদ যানবাহন পাওয়া যাবে।
খরচাপাতি
সড়কপথে যেতে বেশি লোক হলে মাইক্রো ভাড়া নিলে ভালো। খরচটা কম হবে। সিলেট শহর থেকে শুধু লালাখালের জন্য মাইক্রোর ভাড়া দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে হবে, কার নিলে ভাড়া এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে। সারা দিনের প্ল্যান হলে ভোরে সিলেট থেকে রওনা দিতে হবে। তা ছাড়া বাস কিংবা লেগুনায় ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে সারিঘাট যেতে পারবেন। সেখানে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া ৮০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা আর স্পিডবোটে যেতে চাইলে ভাড়া এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা কম হতে পারে। নৌযানে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জনের বসার ব্যবস্থা আছে, ভাড়া একই।
সাবধানতা!
যেকোনো ভ্রমণে নিরবচ্ছিন্ন আনন্দ উপভোগের জন্য প্রয়োজন দুর্ঘটনা এড়ানো। অদ্ভুত নীল পানি আর ঘন জঙ্গলে বেষ্টিত লালাখালে গেলে তাই চাই বাড়তি সতর্কতা। পানিতে নামার সময় খেয়াল রাখবেন, পানির গভীরতা কতটুকু? প্রয়োজনে গাইড কিংবা সঙ্গে যাওয়া কারো সঙ্গে পরামর্শ করা যেতে পারে। আর ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা! সন্ধ্যার আগে-পরে তাদের পানিতে না নামাই ভালো। স্থানীদের মুখে প্রচলিত আছে, অনেক শিশুকেই নাকি বাকপ্রতিবন্ধী হতে হয়েছে। মাঝেমধ্যে নানা অসুখও হয়ে থাকে সতর্কতা অবলম্বন না করার ফলে। নদীপথে সন্ধ্যায় নির্জন এলাকা পাড়ি দেওয়াটা সব সময় নিরাপদ নাও হতে পারে। এ জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
ভ্রমণবিলাসী পর্যটকদের জন্য এই স্থান আরো আকর্ষণীয় হতে পারে।     


লালাখাল ঘুরে আসার আমন্ত্রণ রইলো। ধন্যবাদ সবাইকে।

জৈনসারের ঐতিহ্য প্রাচীন লোহার পুল।

জৈনসারের ঐতিহ্য প্রাচীন লোহার পুল। 





পশ্চিম বিক্রমপুরের একটি গ্রামের নাম জৈনসার। গ্রামের নাম জৈনসার কেন হলো তা নিয়ে নানা মতবাদ চালু রয়েছে। অনেকের মতে, একসময় এ গাঁয়ে জৈন সম্প্রদায় বাস করত। এ সম্প্রদায় দ্বারা এ গাঁয়ের গোড়াপত্তন ঘটে বলে গ্রামের নাম হয় জৈনসার। জৈনসার গ্রাম নানা কারণে প্রাচীনকাল থেকেই বেশ পরিচিত। এ গ্রামের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পোড়াগঙ্গা নদী। একসময় এ নদী দিয়ে বারো মাস লঞ্চ চলাচল করত। এ গ্রামে ছিল লঞ্চঘাট; লোকজন শ্রীনগর, লৌহজং, নাগেরহাট, নওপাড়া থেকে জৈনসার কাঁঠালতলী হয়ে ইছাপুরা, তালতলা, সিরাজদিখান যাতায়াত করত। ব্রিটিশ আমলে ঢাকা জজকোর্টের জজ শ্রীযুত বাবু অভয়কুমার দত্তের বাড়ি এ গ্রামে। তিনি লোকজনের সহজ যাতায়াতের জন্য ইছাপুরা জৈনসার সড়কপথ নির্মাণ করেন এবং সড়কপথের পাশে নৌপথেও সহজ যাতায়াতের জন্য পোড়াগঙ্গা থেকে জৈনসার খাল খনন করেন, জৈনসারের এ খাল কাঁঠালতলী হয়ে তালতলা-শ্রীনগর খালের সাথে সংযুক্ত হয়। জৈনসার তখন বেশ জাঁকজমকপূর্ণ ছিল। কোম্পানির আমলে বিক্রমপুরের বিভিন্ন স্থানে লোহার প্লেটে কনক্রিট ঢালাই একধরনের অদ্ভুত দৃষ্টিনন্দন পুল নির্মিত হয়, ইছাপুরা-জৈনসার গ্রামে এমন তিনটি পুল চোখে পড়ত, পুলগুলো বেশ সরু এবং নিচ থেকে ওপরের দিকে ক্রমেই খাড়া; যা দিয়ে লোকজন হেঁটে পারাপার ছাড়া কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারত না। ইছাপুরা বাজার রাস্তায় প্রাচীন সে পুলগুলো এখন আর নেই, নব্বই দশকে তা ভেঙে পরে সেখানে বিকল্প ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে জৈনসার ইউনিয়ন পরিষদের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে এখনো সে সময়কার নির্মিত একটি পুল চোখে পড়ে। ধারণা করা হয় কোম্পানি আমলে নির্মিত পুলটি বিক্রমপুরে অবস্থিত শেষ নিদর্শন হিসেবে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। পুলটি জৈনসার গ্রামের জমিদার অভয় দত্ত কিংবা তার পূর্বপুরুষেরা নির্মাণ করেন। প্রমত্তা পদ্মার করালগ্রাসে কাউলিপাড়া যখন ভেঙে যায়, তখন সে এলাকার জমিদারেরা জৈনসার, পশ্চিম পাড়া ও ইছাপুরায় এসে বসত করেন। পশ্চিম পাড়া, ভবানীপুর, জৈনসার- তিন গ্রামের ১০ হাজার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে দত্ত পরিবার জৈনসার খালের ওপর পুলটি নির্মাণ করেন। এ গ্রামে মানুষের সুবিধার জন্য দত্ত পরিবার ডাকঘর ও দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন ইংরেজ আমল থেকেই। ১৮৬৮ সালে এ গ্রাম থেকে প্রকাশিত হতো মাসিক ‘পল্লীবিজ্ঞান’ নামে এক পত্রিকা, ১৮৬৮-১৮৭০ সাল পর্যন্ত অভয়বাবু স্বয়ং পত্রিকার ব্যয়ভার বহন করে ‘পল্লীবিজ্ঞান’ প্রকাশ করতেন। এটি বিনামূল্যে পাঠকদের মাঝে বিলি করা হতো, ব্যাপক পাঠককুল থাকা সত্ত্বেও এক সময় পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। আঠারো শ’ শতকে জৈনসার গ্রাম থেকে পত্রিকা প্রকাশিত হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় কতটা আধুনিক আর শিক্ষায় পূর্ণতা থাকলে সে আমলে জৈনসারের মতো একটি গ্রাম থেকে পত্রিকা প্রকাশিত হতে পারে! পরবর্তীকালে জৈনসারের পাশের গ্রাম পশ্চিম পাড়া থেকে উনিশ শতকের শুরুর দিকে কাশিকান্ত চট্টোপাধ্যায় হিন্দুরক্ষণী সভার মুখপত্র হিসেবে ‘হিন্দুহিতৈশিনী’ নামে পত্রিকা বের করতেন। 
অভয় দত্তের সে জৈনসার গ্রামের জৌলুশ আর নেই। গ্রামের পাশ দিয়ে বহমান পোড়াগঙ্গা নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। সেখানে এখন আর বড় মোকাম বসে না। বিপুলসংখ্যক মানুষের আনাগোনা নেই। নেই আগের সেই লঞ্চঘাট আর ডাকঘর। এখন এখানে দেখার মতো বলতে কোম্পানি আমলে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন পুল আর জজ অভয় দত্তের বিশাল বাড়ি আর বাড়ির সামনে ছায়াঘেরা বড় বড় দীঘি। হয়তো আগামীতে হারিয়ে যেতে পারে যান্ত্রিক সভ্যতার এ যুগে প্রাচীন নির্দশন এ পুল আর বাড়ি।সকলেরই উচিত মিলেমিশে এই প্রাচীন নির্দ‍শন গুলোকে ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা। 




ধন্যবাদ সবাইকে।   












সাজেক ভ্যালি : হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

সাজেক ভ্যালি : হাতছানি দিয়ে ডাকছে।  




সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত সাজেক। এ পাহাড়ের চূড়া থেকে মিজোরামের লুসাই পাহাড়ের অপূর্ব দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়বে যেকোনো আগন্তুক। নাগরিক জীবনের সব ক্লান্তির অবসানে চলে আসুন সাজেক ভ্যালিতে। 

দার্জিলিংয়ের প্রতিচ্ছবি রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালি। বাংলাদেশ ও ভারতের মিজোরাম সীমান্তের কূলঘেঁষা অপার সম্ভাবনার জনপদ সাজেক ভ্যালিতে বসে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে প্রকৃতির খুব কাছাকাছি থেকে একখণ্ড সময় কাটায় প্রকৃতিপ্রেমীরা। তাদের হৃদয় ও মন ছুঁয়ে যায় নৈসর্গিক এ স্থানটির রূপ-লাবণ্যে। মেঘাচ্ছন্ন দিনে সাজেক আরো বেশি দৃষ্টিনন্দন ও অপরূপ হয়ে ওঠে। সাজেকের সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসু যে কাউকেই মুগ্ধ করবে অনায়াসে।
এক সময় সাজেক যাওয়া স্বপ্ন ছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সুবাদে কয়েক বছর আগে সাজেক পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে করে বদলে যেতে শুরু করেছে সাজেকবাসীর জীবনচিত্র। সৌন্দর্যের টানে বহু পর্যটক এখন সাজেক আসছেন। দেশের সর্ববৃহৎ ইউনিয়ন সাজেক। 
আয়তন ৬০৭ বর্গমাইল, যা দেশের কোনো কোনো জেলার চেয়েও বড়। এখানকার লোকসংখ্যা মাত্র হাজার দশেক। দীঘিনালা থেকে সাজেক যেতে সময় লাগে মাত্র দেড়-দুই ঘণ্টা। 
পথিমধ্যে চোখে পড়বে ঢেউ খেলানো অসংখ্য উঁচু-নিচু ঢেউ তোলা সবুজ পাহাড়। পাহাড়ের বুক চিরে আপন মনে বয়ে চলেছে কাচালং ও মাচালংসহ নাম না-জানা অসংখ্য নদনদী। নদীতে ভাসছে বাঁশের চালি, যা কাপ্তাই লেক হয়ে কর্ণফুলী পেপার মিলে যাবে।



প্রকৃতির সাথে মিতালি করতে এসে পর্যটকেরা যাতে আরো স্বাচ্ছন্দ্যে সময় কাটাতে পারেন, সে বিষয়টি মাথায় রেখে সম্প্রতি সেনাবাহিনী পর্যটনের নানা অবকাঠামো গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। সুদৃশ্য সড়ক, কটেজ, বিশ্রামাগার, সড়কবাতি, ক্লাবঘর, শিবমন্দির, পাবলিক টয়লেট, বিদেশী ঘরের আদলে তৈরি রিসোর্ট ‘রুম্ময়’ ও থ্রিস্টার মানের হোটেলও এ পাহাড়ে তৈরি করা হয়েছে। সাজেকের বাসিন্দাদের বেশির ভাগই ভারতে মিজো এবং বাংলাদেশের লুসাই বা পাংখোয়া নামে পরিচিত।
যেভাবে আসবেন 
সাজেক যেতে হলে সর্বপ্রথম আসতে হবে খাগড়াছড়িতে। সাজেক রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্ভুক্ত হলেও খাগড়াছড়ি দিয়ে যাওয়াই সবচেয়ে সহজ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনুমতি নিয়ে সহজেই এখানে পৌঁছে যাওয়া যায়। তাই প্রথমে ঢাকার কমলাপুর, সায়েদাবাদ, কলাবাগান ও ফকিরাপুল থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশে বাসে চলে আসুন। আবার ট্রেনে চট্টগ্রাম এসে চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় থেকে খাগড়াছড়ির বাস পাওয়া যায়। খাগড়াছড়ি থেকে চাঁদের গাড়ি (জিপ গাড়ি), মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে চড়ে যেতে পারেন সাজেক। তবে এ ক্ষেত্রে চাঁদের গাড়িই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। কারণ স্থানীয় ড্রাইভার এসব চাঁদের গাড়ি চালায়। এ কারণে দুর্ঘটনার ভয় কম থাকে। 
যেথায় থাকবেন
একসময় সাজেকে গিয়ে রাত যাপন করা অসম্ভব ব্যাপার হলেও এখন সাজেকে রয়েছে একাধিক কটেজ ও রিসোর্ট। তবে এই সুবিধা চালু হয়েছে মাত্র কয়েক বছর হলো। এর আগে এখানে ঘুরে আসার কথা চিন্তা করাটাই কষ্টকর ছিল। 
পর্যটকদের সুবিধার্থে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সাজেকে চলছে নানান অবকাঠামো তৈরির কাজ। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে আসছেন মায়াভরা সাজেকের সৌন্দর্য অবলোকনে। দার্জিলিংয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় পর্যটকেরা সাজেকের নাম দিয়েছেন বাংলার দার্জিলিং।    





সময় করে ঘুরে আসুন, বাংলার দার্জি‍লিং হতে। নিঃসন্দেহে ভালো লাগবে আপনাদের। ধন্যবাদ সবাইকে।






সাদা পাহাড়ের রাজ্যে।

সাদা পাহাড়ের রাজ্যে  । 





অপার সৌন্দর্যের আমাদের এই বাংলাদেশ। দেখার মতো কী নেই আমাদের? শুধু বেরিয়ে পড়ার অপেক্ষা। প্রকৃতি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। 
শীতের শুরুতেই তাই ঘুরে আসা যেতে পারে সীমান্তের কাছাকাছি সাদা মাটির পাহাড়ে। এই সাদা মাটির পাহাড় বিরিশিরিতে অবস্থিত। 
বিরিশিরি নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত। রিকশা করে যেতে পারেন বিরিশিরির অপার সৌন্দর্য দেখার জন্য। পথিমধ্যে পাবেন সোমেশ্বরী নদী। সমস্যা একটাই, সাদা মাটির পাহাড়ে যেতে হলে সোমেশ্বরী নদীর দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। তবে দল বেঁধে গেলে দীর্ঘ পথ একেবারেই ছোট মনে হবে। কারণ খনিজসম্পদ আহরণের জন্য স্থানীয়রা সারাক্ষণ নদীর বুকে দাপিয়ে বেড়ায়। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য আপনাকে আকৃষ্ট করবেই। 
সোমেশ্বরী নদীকে বিরিশিরির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যমণি বলা যায়। চার পাশে পাহাড়ে ঘেরা সোমেশ্বরীর উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে পানির রঙও পাল্টায়। আমরা এই নদী নৌকায় পার হলাম। গ্রীষ্ম মওসুমে এ নদী হেঁটে পার হওয়া যায়। সোমেশ্বরী নদীর কোল ঘেঁষেই রানীখং মিশনটি একটি উঁচু পাহাড়ে অবস্থিত। 
১৯১০ সালে এ রানীখং মিশন স্থাপিত হয়, যেখান থেকে প্রকৃতিকে আরো নিবিড়ভাবে উপভোগ 
করা যায়। মিশনের পাশেই সোমেশ্বরী নদী। কিছুক্ষণ বসে শরীর জুড়িয়ে নেয়া যেতে পারে এখানে। কিংবা চাঁদের আলোর অপার সৌন্দর্যও কম নয়। 
নদী পার হয়েই গেলাম বিজয়পুরে অবস্থিত চীনামাটির পাহাড়। বিরিশিরির মূল আকর্ষণ হচ্ছে এই চীনামাটির পাহাড়, যার বুক চিরে জেগে উঠেছে নীলচে-সবুজ পানির হ্রদ। 
ছোট-বড় টিলা-পাহাড় ও সমতল ভূমিজুড়ে প্রায় ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০০ মিটার প্রস্থ এই খনিজ অঞ্চল। 
খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, ১৯৫৭ সালে এ অঞ্চলে সাদা মাটির পরিমাণ ধরা হয় ২৪ লাখ ৭০ হাজার মেট্র্রিক টন, যা বাংলাদেশের ৩০০ বছরের চাহিদা পূরণ করতে পারে। 
খনিগুলো থেকে মাটি খনন করায় এসব হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে। সাদা মাটি পানির রঙ যেন আরো বেশি গাঢ় করে দিয়েছে।  হ্রদের পানি এক জায়গায় সবুজ তো অন্য জায়গায় নীল। গোসল করার কোনো প্রস্তুতি নিয়ে যেতে পারলে খুবই ভালো হবে। পাহাড় থেকে নেমে যেতে পারেন পাহাড়ি কালচারাল একাডেমি। এখানকার আদিবাসীদের ৬০ শতাংশই গারো, হাজং ইত্যাদি নৃগোষ্ঠীর। এখানে আছে টুঙ্কা বিপ্লবের কয়েকটি স্মৃতিস্তম্ভ। 
গারো ও হাজং ছাড়া প্রায় সব ক’টি গোষ্ঠীই বাংলা ভাষাভাষী। সেখান থেকে গেলাম সেন্ট যোসেফের গির্জায়। গির্জাটা বেশ সাজানো-গোছানো, নীরব আর খুব সুন্দর। গির্জার সামনেই রয়েছে যিশুর মূর্তি। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯১২ সালে। এখানে কর্তব্যরত সিস্টাররা জানালেন প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাস। বিভিন্ন স্থাপনার মধ্যে এখানে রয়েছে যিশু খ্রিষ্টের মূর্তি, শিশুদের বিদ্যাপাঠের স্থান ও বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন। সেখান থেকে গেলাম বিজয়পুর ক্যাম্প, যেখানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। সেখান থেকে ফিরে গেলাম রামকৃষ্ণ মন্দির এবং সবশেষে লোকনাথ মন্দির। পথিমধ্যে আবার দেখা হবে সোমেশ্বরী নদীর সাথে। শেষ বিকেলের আলোয় নদীর সৌন্দর্য আপনাদের মনকে গ্রাস করে নিবে। নয়নাভিরাম পানির ঢেউয়ের টান ছিল বারবার।  অতঃপর সাদা মাটির দেশকে বিদায় জানিয়ে ফিরে আসতে পারেন।  




ধন্যবাদ সবাইকে।