সাজেক ভ্যালি : হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
প্রকৃতির সাথে মিতালি করতে এসে পর্যটকেরা যাতে আরো স্বাচ্ছন্দ্যে সময় কাটাতে পারেন, সে বিষয়টি মাথায় রেখে সম্প্রতি সেনাবাহিনী পর্যটনের নানা অবকাঠামো গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। সুদৃশ্য সড়ক, কটেজ, বিশ্রামাগার, সড়কবাতি, ক্লাবঘর, শিবমন্দির, পাবলিক টয়লেট, বিদেশী ঘরের আদলে তৈরি রিসোর্ট ‘রুম্ময়’ ও থ্রিস্টার মানের হোটেলও এ পাহাড়ে তৈরি করা হয়েছে। সাজেকের বাসিন্দাদের বেশির ভাগই ভারতে মিজো এবং বাংলাদেশের লুসাই বা পাংখোয়া নামে পরিচিত।
সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত সাজেক। এ পাহাড়ের চূড়া থেকে মিজোরামের লুসাই পাহাড়ের অপূর্ব দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়বে যেকোনো আগন্তুক। নাগরিক জীবনের সব ক্লান্তির অবসানে চলে আসুন সাজেক ভ্যালিতে।
দার্জিলিংয়ের প্রতিচ্ছবি রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালি। বাংলাদেশ ও ভারতের মিজোরাম সীমান্তের কূলঘেঁষা অপার সম্ভাবনার জনপদ সাজেক ভ্যালিতে বসে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে প্রকৃতির খুব কাছাকাছি থেকে একখণ্ড সময় কাটায় প্রকৃতিপ্রেমীরা। তাদের হৃদয় ও মন ছুঁয়ে যায় নৈসর্গিক এ স্থানটির রূপ-লাবণ্যে। মেঘাচ্ছন্ন দিনে সাজেক আরো বেশি দৃষ্টিনন্দন ও অপরূপ হয়ে ওঠে। সাজেকের সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসু যে কাউকেই মুগ্ধ করবে অনায়াসে।
এক সময় সাজেক যাওয়া স্বপ্ন ছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সুবাদে কয়েক বছর আগে সাজেক পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে করে বদলে যেতে শুরু করেছে সাজেকবাসীর জীবনচিত্র। সৌন্দর্যের টানে বহু পর্যটক এখন সাজেক আসছেন। দেশের সর্ববৃহৎ ইউনিয়ন সাজেক।
আয়তন ৬০৭ বর্গমাইল, যা দেশের কোনো কোনো জেলার চেয়েও বড়। এখানকার লোকসংখ্যা মাত্র হাজার দশেক। দীঘিনালা থেকে সাজেক যেতে সময় লাগে মাত্র দেড়-দুই ঘণ্টা।
পথিমধ্যে চোখে পড়বে ঢেউ খেলানো অসংখ্য উঁচু-নিচু ঢেউ তোলা সবুজ পাহাড়। পাহাড়ের বুক চিরে আপন মনে বয়ে চলেছে কাচালং ও মাচালংসহ নাম না-জানা অসংখ্য নদনদী। নদীতে ভাসছে বাঁশের চালি, যা কাপ্তাই লেক হয়ে কর্ণফুলী পেপার মিলে যাবে।
যেভাবে আসবেন
সাজেক যেতে হলে সর্বপ্রথম আসতে হবে খাগড়াছড়িতে। সাজেক রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্ভুক্ত হলেও খাগড়াছড়ি দিয়ে যাওয়াই সবচেয়ে সহজ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনুমতি নিয়ে সহজেই এখানে পৌঁছে যাওয়া যায়। তাই প্রথমে ঢাকার কমলাপুর, সায়েদাবাদ, কলাবাগান ও ফকিরাপুল থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশে বাসে চলে আসুন। আবার ট্রেনে চট্টগ্রাম এসে চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় থেকে খাগড়াছড়ির বাস পাওয়া যায়। খাগড়াছড়ি থেকে চাঁদের গাড়ি (জিপ গাড়ি), মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে চড়ে যেতে পারেন সাজেক। তবে এ ক্ষেত্রে চাঁদের গাড়িই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। কারণ স্থানীয় ড্রাইভার এসব চাঁদের গাড়ি চালায়। এ কারণে দুর্ঘটনার ভয় কম থাকে।
যেথায় থাকবেন
একসময় সাজেকে গিয়ে রাত যাপন করা অসম্ভব ব্যাপার হলেও এখন সাজেকে রয়েছে একাধিক কটেজ ও রিসোর্ট। তবে এই সুবিধা চালু হয়েছে মাত্র কয়েক বছর হলো। এর আগে এখানে ঘুরে আসার কথা চিন্তা করাটাই কষ্টকর ছিল।
পর্যটকদের সুবিধার্থে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সাজেকে চলছে নানান অবকাঠামো তৈরির কাজ। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে আসছেন মায়াভরা সাজেকের সৌন্দর্য অবলোকনে। দার্জিলিংয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় পর্যটকেরা সাজেকের নাম দিয়েছেন বাংলার দার্জিলিং।
সময় করে ঘুরে আসুন, বাংলার দার্জিলিং হতে। নিঃসন্দেহে ভালো লাগবে আপনাদের। ধন্যবাদ সবাইকে।
মা-শা আল্লাহ! অসাধারণ ভাই। এখানে হারিয়ে যেতে মন চায়।
উত্তরমুছুন