শুক্রবার, ১৮ মার্চ, ২০১৬

সেন্টমার্টিনের পথে যেতে যেতে......

ভ্রমণঃ সেন্টমার্টি‍ন। 





বাংলাদেশের দক্ষিণের শেষপ্রান্তে টেকনাফ উপজেলা। তার শেষে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। স্থানীয় ভাষায় ‘নারিকেল জিনজিরা’।আমাদের দারুচিনি বা স্বপ্নের দ্বীপ। প্রায় দশ হাজার অধিবাসী নিয়ে এ দ্বীপ যা একটি ইউনিয়ন, সেন্টমার্টিন। স্বপ্নের এ প্রবাল দ্বীপে যেতে যেতে অপুর্ব দৃশ্য উপভোগ করা যায়।

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন এ যেতে আপনাকে অবশ্যই জাহাজে বা লঞ্চে ভ্রমণ করতেই হবে। সকাল ৯-৩০ টায় টেকনাফ জেটি ঘাট থেকে বেসরকারী শিপে চেপে প্রমত্তা নাফ নদী ও নীল জলরাশির সাগর পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ খুবই রোমাঞ্চকর-সাথে উপভোগ্যও। জাহাজে সময় লাগে প্রায় ৩ ঘন্টা আর লঞ্চে যেতে সময় লাগে প্রায় ৪ ঘন্টা। জাহাজগূলো বিকাল ৩ টায় সেন্টমার্টিন উপকুল ছেড়ে আসে টেকনাফের উদ্দেশ্যে। 

বাংলাদেশ-মিয়ানমার বিভক্তকারী নাফ নদীতে কিছুক্ষন ভ্রমন করতে হবে। যেতে যেতে বাংলাদেশের লেজ দেখতে খুবই মনোরম। পাহাড় সমৃদ্ধ এ লেজ দেখলে বাংলাদেশের মানচিত্রের দক্ষিনের লম্বা লেজের কথা মনে পড়বে।জাহাজ থেকে ছবির মতো, রুপকথার মতো, চমতকার অনুভূতি। তারপর সাগর চ্যানেলে প্রবেশ। জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, গাংচিল বা বালিহাঁসের উড়াউড়ি  আর নীল জলরাশি আপনাকে বিমোহিত করবেই।যাওয়ার পথে বামদিকের বা পুর্ব পাশের মিয়ানমারের পাহাড় বিশিষ্ট স্থলভাগ আর কাঁটাতারের বেড়া অন্যরকম দৃষ্টিসুখ দেবে।নাফ’র ঘোলা পানি পেরিয়ে সাগরের নীলজলরাশি আপনাকে স্বপ্নের জগতে নিয়ে যাবে। 

মাঝে মাঝে সাগরজলে ডলফিনের খেলার সাথে জাহাজযাত্রীর হাততালি ভ্রমনক্লান্তি আর খরচের কথা ভুলিয়ে দেবে বলে আমার বিস্বাস। দু’ঘন্টা জাহাজ ভ্রমনের পর আবছা আবছা দ্বীপের ছবি ভেসে আসবে-রোমাঞ্চ বাড়িয়ে দিবে। এ বুঝি স্বপ্নের দ্বীপের ছবি।হ্যাঁ এটাই সেন্টমার্টিন-স্বপ্নের দ্বীপ।

জাহাজে ধাক্কা লাগা বড় বড় ঢেউ আর প্রোপালারের ফেনিল সাদা ঢেউ দেখতে দেখতে(সকাল ৯ঃ০০ হতে ১০ঃ০০টা নাগাদ রওয়ানা হলে) অবশেষে দুঃ ১২-১৫ টায় পৌঁছাতে হবে ‘নারিকেল জিনজিরা’ দ্বীপে। অন্যান্য সৈ্কতে পানির ঘোলা স্রোত হলেও এ দ্বীপের চারিদিকে নীল স্বচ্ছ জলরাশি। লবনাক্ত সাগরের এ পানিতে পা ভিজাতে ভালোই লাগবে। দারুচিনি দ্বীপে হুমায়ুন আহমদের ‘সমুদ্র বিলাস’ কটেজ রয়েছে- যা  সংরক্ষিত। এ দ্বীপে প্রচুর পরিমানে আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে, ভিন্ন মান,ভিন্ন ভাড়ায়। প্রচুর নারিকেল গাছ এ দ্বীপকে বিশিষ্ট করে তুলেছে-করেছে মোহনীয়।স্কুল,উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে এখানে। পর্যটকদের জন্য প্রচুর আবাসিক হোটেল ছাড়াও কেনাকাটার প্রায় সব রকমের দোকান রয়েছে।তবে বাজার মুল্য তুলনামুলকভাবে অনেক বেশি। রিক্সা/ভ্যানে চড়ে ছোট্ট এ দ্বীপটাকে ঘুরে দেখা যায় অনায়সে। সাথে রাত যাপন আনন্দকে দ্বিগুন করবে। সেন্টমার্টিন থেকে স্পিড বোট বা লঞ্চে ছেড়াঁ দ্বীপ বা শাহপরীর দ্বীপ ভ্রমন চিত্তাকর্ষক হবে। মৎস্য আহরণ/বিক্রি এ দ্বীপের অধিবাসীদের বেশির ভাগই পেশা। 

এ দ্বীপে বা টেকনাফ অথবা পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বিভিন্ন মান/দামের আবাসিক হোটেল রয়েছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম/কক্সবাজার পরিবহন গাড়ীতে তারপর টেকনাফ।অথবা ঢাকা-টেকনাফ সরাসরি বাসে।তারপর জাহাজে সাগর পেরিয়ে  সেন্টমার্টিন। শ্যামলি,সৌদিয়া,হানিফ,এস আলম প্রভৃতি পরিবহনে যেতে পারেন ভাড়া লাগবে এসি ১৫০০/= আর নন এসি ১০০০/=। ট্রেনেও চিটাগং যেতে পারেন তারপর বাসে। 

বারেকটিলা / যাদুকাটা, সুনামগঞ্জ।

বারেকটিলা / যাদুকাটা, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ।  



সুনামগঞ্জ শহর থেকে ২০ কিলোমিটার এবং তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড় ঘেঁষে অবস্থিত বারিক টিলা ও তার পাশ দিয়ে প্রবাহিত পাহাড়ি নদী যাদুকাটা যেন নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। প্রাচীন বাংলার প্রথম রাজধানী লাউড়ের তীরে অবস্থিত সুনামগঞ্জের সীমান্তনদী যাদুকাটাকে বলা হয় রূপের নদী। 


বর্ষায় পাহাড়ি নদী যাদুকাটার বুকে স্রোতধারা আর হেমন্তে শুকিয়ে যাওয়া যাদুকাটার বুক জুড়ে ধু-ধু বালুচর এবং পার্শ্বস্থ ভারতের সারি-সারি উচু-নিচু মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড় ও বাংলাদেশের বারিকটিলার সবুজ বনায়ন মাটিয়া পাহাড় এখানে আসা লোকজনের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। বারিকটিলার উপর দাঁড়ালে একদিকে চোখে পড়ে হাওর ও অন্যদিকে সারি সারি পাহাড়। এ মনোরম দৃশ্য যে কারোরই মন কেড়ে নেয় সহজেই। যাদুকাটা ও বারেকটিলার নয়নাভিরাম দৃশ্যকে নিয়ে রয়েছে পর্যটন শিল্পের এক উজ্জ্বল সম্ভাবনার হাতছানি। যাদুকাটা যেমনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়ে শোভামণ্ডিত করেছে এলাকার নান্দনিকতা তেমনি যাদুকাটার বালি ও পাথর উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক। 


বছরের নির্দি‍ষ্ঠ দিনে এখানে পালিত হয় "শারপিন শাহ" এর ওরস মোবারক। বিভিন্ন স্থান হতে দর্শনার্থীরা ওরসে আসেন। যাদুকাটা নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয় বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মেলা ‘বারুণি মেলা’। এই সময় সনাতন ধর্মের লোকজন তীর্থরূপি যাদুকাটায় স্নান করার আশায় এসে জড়ো হন নদীতীরের অদ্বৈত মহাপ্রভু চৈতন্যের নবগ্রামে। তাছাড়াও বছরের বারো মাস এখানে দর্শনার্থীদের আনাগোনা লক্ষণীয়। 


যেভাবে যেতে হবে

ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ – শ্যামলী আর ইউনিক মামুন এনা ছাড়াও অন্য বিভিন্ন ধরনের বাস যায়।তাছাড়া ট্রেন এ গেলে সিলেট নেমে যে-কোন ধরনের পরিবহনে সড়ক পথে  সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর যেতে হবে। তাহিরপুর থেকে মাত্র ১০ কিমি দুরে অবস্থিত যাদুকাটা ও বারেকটিলা। তাহিরপুরে হোটেল ও ডাকবাংলো আছে। রাতটা তাহিরপুর থানার ডাকবাংলোতে থাকতে পারেন। অথবা সুনামগঞ্জের হোটেলেও রাত্রিযাপন করতে পারেন। সুনামগঞ্জ থেকে যাদুকাটার দুরত্ব ২০ কি.মি.। সুতরাং সুনামগঞ্জ থেকে অনায়েশেই যাতায়াত করতে পারবেন।   




সুনামগঞ্জ(বারেকটিলা) ভ্রমণের আমন্ত্রণ রইলো।  ধন্যবাদ সবাইকে।