শনিবার, ২৮ মে, ২০১৬

ফয়’স লেকে ভ্রমণ।






বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকার খুলশীতে মনোরম একটি পর্যটন কেন্দ্র ঐতিহাসিক ফয়’স লেক। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিনশ ফুট উঁচু এ হ্রদে সারা বছরই পানি থাকে। ছোট ছোট পাহাড়ের বাঁকে বিস্তৃত এই পর্যটন কেন্দ্রটি প্রকৃতির মাঝে যেন একখণ্ড স্বর্গ রচনা করেছে। চট্টগ্রাম শহরের পানি সমস্যার সমাধানে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ১৯২৪ সালে প্রায় ৩৩৬ একর জায়গায় কৃত্রিম এ হ্রদটি খনন করেছিল। দীর্ঘ সময় অযত্নে পড়ে থাকায় একসময় জৌলুশ হারাতে বসে প্রাচীন এই লেক। তবে এটি আবার প্রাণ ফিরে পায় ২০০৫ সালে। ফয়’স লেকের প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সে বছর কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি সেখানে গড়ে তোলে আধুনিক এমিউজমেন্ট পার্ক ও রিসোর্ট।

চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর খুলশী এলাকার প্রধান সড়কের পাশে ফয়’স লেকের তোরণ। সেখান থেকে কিছুটা ভিতরে এর মূল প্রবেশ পথ। শুরুতেই ফয়’স লেকের এমিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ড। বেশ কিছু আধুনিক রাইড আছে এখানে। সার্কাস সুইং, বাম্পার কার, বাম্পার বোট, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, জায়ান্ট ফেরিস হুইল, ড্রাই স্লাইড, ফ্যামিলি ট্রেইন, প্যাডেল বোট, ফ্লোটিং ওয়াটার প্লে, পাইরেট শিপের মতো মজাদার সব রাইড আছে এখানে। এখান থেকে উপরে টিলায় আছে বনভোজন কেন্দ্র। সেখান থেকে আরেকটি টিলার উপরে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। চট্টগ্রাম শহরের বার্ডস আই ভিউ দেখা যায় জায়গাটি থেকে।

অ্যামিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ডের উত্তরে টিলার ওপরে মূল ফয়’স লেক। লেকের দু পাশে সবুজে ঘেরা উঁচু উঁচু পাহাড়। পাহাড়গুলোর নাম রাখা হয়েছে আসমানী, গগনদ্বীপ, জলটুঙ্গি ইত্যাদি। এসব পাহাড়ে আছে সংরক্ষিত বন, সে বনে খেলা করে চিত্রা হরিণ, খরগোশসহ আরও কিছু বন্যপ্রাণী। ফয়’স লেকে ভ্রমণেরও ব্যবস্থা আছে। বিভিন্ন আকারের ইঞ্জিন চালিত নৌকা, স্পিড বোট আর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পানও আছে লেকে।

ফয়’স লেকের ভিন্ন এক জগত্ সি ওয়ার্ল্ড। লেকের শেষপ্রান্তে গড়ে তোলা হয়েছে পানির রাজ্যে রোমাঞ্চকর জায়গা। শহরের সিটি গেট সংলগ্ন সড়ক দিয়ে গেলে সরাসরি প্রবেশ করা যাবে সি-ওয়ার্ল্ডে। তবে মূল প্রবেশ পথে গেলে নৌকায় চড়ে পৌঁছুতে হয় সি-ওয়ার্ল্ডে। আধুনিক ওয়াটার পার্কের বিভিন্ন রাইড আছে জায়গাটিতে।

প্রকৃতির মাঝে নির্জনতায় অবকাশ যাপনের জন্য ফয়’স লেকে আছে বেশ কিছু রিসোর্ট। সি-ওয়ার্ল্ডের পাশেই এর অবস্থান। রিসোর্টেও যেতে হয় নৌকায় চড়ে। নির্জনতায় সময় কাটানোর জন্য আদর্শ জায়গা এসব রিসোর্ট। লেক ও পাহাড়মুখী দু ধরনের ঘরই আছে এখানকার রিসোর্টে। বারান্দায় বসে লেক আর পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগের ব্যবস্থা আছে এখানে। মধুচন্দ্রিমার জন্যও এখানকার রিসোর্ট আকর্ষণীয় জায়গা।

খরচপাতি

ফয়’স লেকের অ্যামিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ডের বিপণন বিভাগের সহযোগী ব্যবস্থাপক বিশ্বজিত্ ঘোষ জানান, সাধারণ প্রবেশমূল্য ২৫০ টাকা। ৩ ফুটের চেয়ে কম উচ্চতার শিশুদের প্রবেশ মূল্য লাগে না। এখানকার বিভিন্ন রাইডে চড়ার আলাদা আলাদা মূল্য রয়েছে। তবে প্রবেশ ও সব রাইডের বিশেষ প্যাকেজও আছে। বনভোজন দলের জন্য খাবারের আয়োজনসহ বিশেষ মূল্যও আছে ফয়’স লেকে। ফয়’স লেকের রিসোর্টের কক্ষ ভাড়া ৪৯৩৫-১০৫০৮ টাকা, এছাড়া বাংলোর কক্ষ ভাড়া ৫৫৬৩ টাকা ৯৮৯০ টাকা। যোগাযোগ :০৩১-২৫৬৬০৮০।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশ পথে যেতে পারেন চট্টগ্রাম শহরে। ঢাকার বাসগুলো সাধারণত শহরে প্রবেশ করে ফয়’স লেকের সামনের সড়ক থেকেই। এছাড়া শহরের যেকোনো জায়গা থেকে খুব সহজেই ফয়’স লেক আসা যায়। ঢাকা থেকে সড়কপথে টি আর ট্র্যাভেলস, দেশ ট্র্যাভেলস, গ্রিনলাইন পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজের এসি বাস যায় চট্টগ্রামে। ভাড়া ৯৫০-১২৫০ টাকা। এছাড়া এস আলম, সৌদিয়া, ইউনিক, শ্যামলী, হানিফ, ঈগল প্রভৃতি পরিবহনের সাধারণ মানের নন-এসি বাসও চলে এ পথে। ভাড়া ৪৫০-৫০০ টাকা। চট্টগ্রামের উদ্দেশে মহানগর প্রভাতী ঢাকা ছাড়ে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে, চট্টলা এক্সপ্রেস সকাল ৯টা বিশ মিনিটে, মহানগর গোধূলি ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৩টায়, সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে, তূর্ণা ছাড়ে রাত এগারোটায়। শ্রেণিভেদে ভাড়া ১৩৫-১০৯৩ টাকা। এছাড়া ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স, নভো এয়ার, রিজেন্ট এয়ার ও ইউনাইটেড এয়ারের বিমান যায় চট্টগ্রামে।    



ভ্রমণ করে আসুন ফয়'স লেকে, ভালো লাগবে আশা করি। ধন্যবাদ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন