শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৪

ভ্রমণ :: বর্ষায় বান্দরবন।

 বর্ষায় মেঘেদের দেশে। 




বৃষ্টির সময় প্রকৃতি যেন তার সবটুকু রূপ ঢেলে দিয়েছে বান্দরবানে। এই সময় পাহাড়ের এই সবুজ গালিচার ওপর আপনার আগমনে যোগ হবে ভিন্ন মাত্রা। বান্দরবানের রিসোর্টগুলোর কোনো একটায় বসে দূর পাহাড়ে ঝুম বৃষ্টি দেখে মনে ঘোর লেগে যাবে সত্যি। আর তাই মেঘের ছোঁয়া পাওয়ার আশায় এই বর্ষা মৌসুমেও বান্দরবানের পাহাড়ে পর্যটকের ঢল নামে।

বর্ষা এলেই বান্দরবানের উঁচু পাহাড়গুলোকে সারা ক্ষণই ছুঁয়ে যায় জমাট বাঁধা মেঘের সারি। দেখে মনে হয় মেঘ আর পাহাড় একে অপরের সঙ্গে নিজ ভাষায় সুখ-দুঃখের যেন গল্প করছে। বান্দরবানের নীলাচল, নীলগিরি, চিম্বুক, বগা লেক, দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং, তাজিংডংসহ বিভিন্ন স্পটে দাঁড়িয়ে বর্ষায় মেঘের স্পর্শ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও বান্দরবান থেকে থানচি পর্যন্ত সড়ক দিয়ে চলাচল করলেও মেঘের দেখা মেলে। নীলগিরি কিংবা চিম্বুকে দাঁড়ালে মেঘ যে-কাউকে আপনা থেকেই ছুঁয়ে যাবে।
এই বর্ষায় এক ভিন্ন রূপেই দেখা যায় এ পর্যটন শহরকে। আমাদের দেশের ভ্রমণ পিয়াসুরা ভ্রমণের জন্য শীত মৌসুমকে বেছে নিলেও হয়তো অনেকেই জানেন না বৃষ্টির সময় পাহাড়ঘেরা জেলাটি যেন একটি সবুজ কার্পেটের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। যেদিকে দুচোখ যাবে সবুজে সবুজে বর্ণিল এক নতুন সাজ ধরা দেবে আপনার কাছে।
পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে রয়েছে অসংখ্য পর্যটন স্পট। ভরা মৌসুমে এখানে বেড়াতে এলে অনেক কিছুর স্বাদ অপূর্ণ থেকে যায়। বর্ষায় কোলাহলমুক্ত পরিবেশে বান্দরবানের সৌন্দর্য উপভোগ করা অনেকটা সহজ।
শহরের অদূরে মেঘলায় রয়েছে ঝুলন্ত সেতু, মিনি সাফারি পার্ক, শিশু পার্ক, প্রাকৃতিক লেক, চিড়িয়াখানা, চা বাগানসহ পর্যটকদের মন ভোলানো সব আয়োজন। এ ছাড়া শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে নীলাচল, যেখানে পাহাড়ের সঙ্গে আকাশ মিতালি গড়েছে। দেশি-বিদেশি যে কোনো পর্যটক স্পটটিতে গিয়ে মুগ্ধ হতে বাধ্য। বান্দরবানের আরেকটি দর্শনীয় স্থান নীলগিরি। বান্দরবান শহর থেকে নীলগিরির দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার। এর ২ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতায় না উঠলে বান্দরবান ভ্রমণের মূল আনন্দই অধরা থেকে যাবে। বর্ষা মৌসুমে এর পাশ দিয়ে ভেসে যাওয়া মেঘ দেখে মনে হয় মেঘের স্বর্গরাজ্য। মেঘের হালকা হিম ছোঁয়া মেঘ ছোঁয়ার অনুভূতি এনে দেয় মনে।  ভূমি থেকে নীলগিরির উচ্চতা ৩ হাজার ফুট। উচ্চতার কারণে বর্ষায় বান্দরবান বেড়ানোর সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা এই নীলগিরি। এর চারপাশে মেঘেরা খেলা করে। যারা প্রকৃতির এই খেলা খুব কাছে থেকে দেখতে চান তারা একটা রাত থেকে যেতে পারেন সেনাবাহিনী পরিচালিত কটেজে। এর পাশে খাবারের জন্য রয়েছে ভালো মানের রেস্টুরেন্ট। এখানে বসে পেট পুরে খেতে খেতে ডানে-বাঁয়ে চোখ বোলালে দূর-বহু দূরে দেখতে পাবেন কেওক্রাডং পাহাড়, পাহাড় চূড়ার বগা লেক ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর। দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বিজয়, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডংসহ অসংখ্য পাহাড় রুমা উপজেলা অবস্থিত। আরও রয়েছে বাংলার দার্জিলিংখ্যাত চিম্বুক পাহাড়, যেখানে অনায়াসে মেঘের ছোঁয়া পাওয়া যায়। রিজুক ঝরনা নিজস্ব গতিতে সব মৌসুমেই থাকে সচল। শহরের অদূরে শৈলপ্রপাতের স্বচ্ছ পানি বয়ে চলছে অবিরাম ধারায়। এ ছাড়াও শহরের ৪ কিলোমিটার দূরে বালাঘটা এলাকায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের স্বর্ণমন্দির জেলার পর্যটনের ক্ষেত্রে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। এই জেলায় মারমা, ত্রিপুরা, মুরং, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমি, খেয়াং, পাঙ্খো, চাকমা, চাক, লুসাইসহ ১৩টি আদিবাসী সম্প্রদায় বসবাস করে। দেশের অন্য কোনো জেলায় এত আদিবাসীর বসত নেই। আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় জীবনচিত্র যে কারও মনকে উৎফুল্ল করে। 
২৬ কিলোমিটার দূরে রয়েছে বাংলার দার্জিলিংখ্যাত চিম্বুক পাহাড়। ৩ হাজার ৫০০ ফুট উঁচু এ পাহাড়টিতে না উঠলে বান্দরবান ভ্রমণের মূল আনন্দই অধরা থেকে যাবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা ভারতের দার্জিলিংয়ে বেড়াতে যান। অথচ পর্যাপ্ত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এবং জেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো আরও উন্নত করা গেলে আমাদের বান্দরবানের সৌন্দর্য ভারতের দার্জিলিংকেও হার মানাবে। এবার নিশ্চয় মন চাইছে মেঘের সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে। তবে আর দেরি কেন, জীবনের ছক থেকে বেরিয়ে হারিয়ে যেতে পারেন নীলাচলের মেঘে ঢাকা পাহাড়ে, মেঘলা লেকের স্বচ্ছ জলে, ভাসাতে পারেন ডিঙি নৌকা অথবা ঘুরে আসতে পারেন চিম্বুক পাহাড়ের আদিবাসীদের গ্রামে।
যাতায়াত এবং পথখরচা ::
ঢাকা থেকে বান্দরবান চলে যাবেন রাতের বাসে, ভাড়া ৪৫০ টাকা। বান্দরবানের পথে ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে শ্যামলী, সৌদিয়া, ডলফিন পরিবহনের কয়েকটি গাড়ি রাতে ছেড়ে যায়।
বেবিস্ট্যান্ড থেকে মেঘলার যাওয়া-আসার ভাড়া ২০০ টাকা।
রাজবাড়ি হয়ে উপজাতি জাদুঘর থেকে কেয়াংঘর পর্যন্ত রিকশা ভাড়া ২৫ টাকা।
কেয়াংঘর থেকে হাসপাতালের সামনের ব্রিজ রিকশা ভাড়া ১০-১৫  টাকা।
বেবিস্ট্যান্ড থেকে স্বর্ণমন্দিরে যাওয়া-আসার ভাড়া ১৫০-২০০টাকা। হোটেল ভাড়া ৪০০-৫০০ টাকা।

ভ্রমণ সংস্থায় যোগাযোগ
রিভার অ্যান্ড গ্রিন : ফোন- ৮৮২৬৭৫৯।
পেট্রো অ্যান্ড এভিয়েশন : ফোন- ০১৭৩০০৪৩৬১৯।
বেঙ্গল ট্যুর : ফোন- ৮৮৫৭৪২৪।
জার্নি প্লাস : ফোন- ৯৬৬০২৩৪


শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৪

ভ্রমণ :: ময়মনসিংহ,শেরপুর।

ঘুরে আসুন শেরপুরের গজনী অবকাশ কেন্দ্র |




প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপূর্ব লীলাভূমি শেরপুর জেলার সীমন্তবর্তী উপজেলা ঝিনাইগাতীর ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড়। গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত সীমান্তবর্তী গজনী অবকাশ কেন্দ্র । সারি সারি শাল, গজারী, সেগুন,ছোট-বড় মাঝারি ঢিলা, লতাপাতার বিন্যাস প্রকৃতি প্রেমিদের নিশ্চিত দোলা দিয়ে যাবে । শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমন পিপাসুরা দল বেধেঁ ভিড় করে ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ের গাজনী অবকাশ কেন্দ্রে । নৈস্বর্গীক সৌর্ন্দযের লীলা ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ গারো পাহাড়। এখানকার সবুজ প্রকৃতি আপন করে নেয় ভ্রমন পিপাসুদের। শ্যামল বৃক্ষরাজীর মাঝ দিয়ে আকাঁ-বাকাঁ পাকা সড়ক পথ যেন সুড়ঙ্গের দিকে ঢুকে যাচ্ছে।  ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ের গাজনীর সৌর্ন্দযের মুদ্ধ হয়ে ভ্রমন পিপাসুরা বার বার এখানে ছুটে আসেন  ।এখান কার পাহাড়ী ঝর্ণা, খাল,ঢিলা, ছড়ার স্বচ্ছ জল আর ঘন সবুজ বন-বনানী অতি সহজেই আগন্তুকদের হাত ছানি দিয়ে ডাকে। পাহাড়, বন-বনানী, ঝর্ণা –এতসব প্রাকৃতিক সৌন্দযের মধ্যে কৃত্রিম অনেক সৌর্ন্দযের সংযোজন রয়েছে এখানে । দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে গাজনীর আদি নাম পরিবর্তন হয়ে গজনী হয়েছে।এখানে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার প্রকৃতি প্রেমিক মানুষ ছুটে আসেন। কাজের ফাকে কিংবা অবসরে পরিবারের লোকজন কিংবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে চলে আসুন প্রকৃতির সান্নিধ্যে।  পাহাড়ী ঝর্ণার ঝিরঝির শব্দ আর পাখির কলকাকলি গারো পাহাড়ের বিশেষ আর্কষন । এখানে এসে সবাই আনন্দ ধারায় হারিয়ে যান। পুরোদিনের জন্য স্মৃতি পটে আকাঁ হয়ে যায় একটি সোনালী সুন্দর রঙ্গিন দিন। মিতালী হয়ে যায়, পাহাড়ী গাছ-গাছালী ও পশু পাখির সঙ্গে। পরন্ত বিকেলে গজনী অবকাশ কেন্দ্র থেকে উত্তরে তাকালে তুরা পাহাড় স্পট দেখা যায়। মনে হবে তুরা পাহাড় যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। মনের মাঝে জাল বুনবে হায়, জন্ম যদি হতো এ গারো পাহাড়ে? তাই আবারও মন ব্যাকুল হবে গারো পাহাড়ে আসার জন্যে । 


অবস্থান যেথায় : 
শেরপুর জেলার বিশাল অংশ জুড়ে গারো পাহাড়ের বিস্তৃতি । ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাদদেশে ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ের গজনী অবকাশ। লালমাটির উচু-নিচু পাহাড়, টিলা, পাহাড়ী টিলার মাঝে সমতল ভূমি। দুই পাহাড়ের মাঝে পাহাড়ী ঝর্ণা একে বেঁকে  এগিয়ে চলছে। ঝর্ণার পানি এসে ফুলেফেপে উঠছে। সেখানে বাধ দিয়ে কৃত্রিম লেক তৈরি করা হয়েছে । লেকের মাঝে কৃত্রিম পাহাড় এবং পাহাড়ের উপর “লেক ভিউপেন্টাগন”। সেখানে যাতায়াতের জন্য রয়েছে দোদ্দুল্যমান ব্রীজ।  পাহাড়ের চুড়ায় রয়েছে ৬ কক্ষ বিশিষ্ট বৈদ্যুতিক সুবিধাসহ আধুনিক “দু তলা রেষ্ট হাউজ”।  রেষ্ট হাউজ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে নামার জন্য আঁকা-বাকা “পদ্মাসিড়ি” রয়েছে। অবকাশের পাদদেশে সান বাঁধানো বেদীসহ বট চত্বর। সেখানে সুপরিশর গাড়ী পার্কিংয়ের সু-ব্যবস্থাসহ পিকনিক দলগুলোর আড্ডায় মেতে উঠা এবং খেলা-ধূলারও প্রচুর জায়গা রয়েছে। বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের জন্য বেশ কটি নলকূপ এবং নামাজের জন্য মসজিদ, পর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধা ও রান্না-বান্নার ব্যবস্থাও রয়েছে। 











যেভাবে যাবেন :
এখানে আসার জন্য সড়ক পথে যাতায়ত খুব সহজ। গজনী অবকাশ পর্যন্ত রয়েছে মসৃণ পিচঢালা পথ। রাজধানী ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে যাতায়াতই সবচেয়ে উত্তম। উত্তরবঙ্গ থেকে টাঙ্গাইল –জামালপুর হয়েও আসতে পারেন সড়ক পথে কিংবা রেল পথে জামালপুুর পর্যন্ত তারপর জামালপুর থেকে সড়ক পথে আসতে পারেন।  শেরপুর শহর থেকে গজনীর দুরত্ব মাত্র ৩০ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে সরাসরি মাইক্রো বাস অথবা প্রাইভেটকারে গজনী অবকাশ যেতে পারেন। ঢাকা থেকে নিজস্ব বাহনে মাত্র সাড়ে তিন থেকে চার ঘন্টায় ঝিনাইগাতীর গজনী আসা যায়। এ ছাড়া ঢাকার মহাখালি থেকে ড্রিমল্যান্ড বাসে শেরপুর আসা যায়। ভাড়া মাত্র ১শ ৯০ টাকা। ভূলকরে আনন্দ গেটলক ও লোকাল ড্রিমল্যান্ডে উঠবেন না। কারণ এসব গাড়ী সারা রাস্তায় থেমে থেমে যাত্রী উঠানামা করে এবং সময়ও লাগে অনেক বেশী। ড্রিমল্যান্ড স্পেশাল গাড়ীতে উঠবেন এসব গাড়ী গেইট লক। আবার মহাখালী থেকে দুপুর ২টায় ছাড়ে এসিবাস। ভাড়া ২শ ১০টাকা। শেরপুর নেমে  ভাড়ায় ১হাজার টাকায় মাইক্রোবাস নিয়ে সোজা গজনী যাতায়াত করা যায়। এ ছাড়া শেরপুর থেকে লোকাল বাসে ঝিনাইগাতী আবার ঝিনাইগাতী থেকে বাসে, টেম্পু, সিএনজি অথবা রিক্সায় গজনী অবকাশ কেন্দ্রে যাওয়া যায়। শেরপুর শহরে রাতযাপনের জন্য ৫০ থেকে ৫শ টাকায় গেষ্ট হাউজে রুম ভাড়া পাওয়া যায়। শহরের রঘুনাথ বাজারে হোটেল সম্পদ, বুলবুল সড়কে কাকলী ও বর্ণালী গেষ্ট হাউজ, নয়ানী বাজারে ভবানী প্লাজা, বটতলায় আধুনিক মানের থাকার হোটেল রয়েছে।  অনুমতি সাপেক্ষে থাকতে পারেন সার্কিট হাউজ, সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি, পল¬ী বিদ্যুৎ কিংবা এটিআই রেষ্ট হাউজে।  ঝিনাইগাতী ডাকবাংলো অথবা বন-বিভাগ ডাকবাংলোও থাকতে পারবেন। তবে থাকা-খাওয়ার জন্য ঝিনাইগাতী সদর অথবা শেরপুর শহরে চলে আসাই উত্তম। আর ভাল মানের খাবার পাবেন ঝিনাইগাতীর হোটেল সাইদে, হোটেল জোসনা, শেরপুর শহরের নিউ মার্কেটে হোটেল শাহজাহান, হোটেল আহার কিংবা কাকলী মার্কেটের হোটেল প্রিন্সে। এসব হোটেল অগ্রীম বুকিং ও অর্ডার সরবরাহ করা হয়।


যা যা দেখবেন :
ভ্রমন পিপাসুদের জন্য গজনী অবকাশ কেন্দ্রে রয়েছে ক্রিন্সেন্ট লেক, লেকের ওপর রংধনু ব্রীজ, কৃত্রিম জলপ্রপাত, পানসিতরী নৌকা, প্যান্ডেল বোড , মুক্তিযুদ্ধ স্মুতিসৌধ, শিশু পার্ক, কবি নজরুল ইসলাম ও কবি রবিন্দ্র নাথ ঠাকুরের স্মৃতিফলক, মাটির নিচে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাতায়তের জন্য ড্রাগন ট্যানেল মুখের ভিতর দিয়ে পাতালপুরি, লাভলেইন, মৎস্য কুমারী, কবিতাবাগ, হাতি, বাঘ, জিরাফ, হরিণ, ডাইনোসরের প্রতিকৃতি। অবকাশ কেন্দ্রে অন্যতম আকর্ষণ সাইট ভিউ টাওয়ার। ৮০বর্গফুট উচ্চ এ টাওয়ারে উঠলে দেখা যাবে পাহাড়ী ঢিলার অপরূপ বৈচিত্রময় দৃশ্য।  বন বিভাগ প্রকৃতির  সঙ্গে  মানুষের সখ্য গড়ে তুলতে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে একটি ক্যাকটাস পল্ল¬¬ী এবং মিনি চিড়িয়াখানাও গড়ে তুলেছে।  বর্তমানে শেরপুর জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে গজনীতে শিশু পার্কের শিশু কিশোরদের বিনোদনের জন্য পুতুল নাচসহ নাগরদোলা ও বিভিন্ন ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদ আর সৌন্দর্য্যে ভরপুর গারো পাহাড়ের গজনীতে পর্যটক বা ভ্রমন পিপাসুদের বারতি পাওনা হলো আদিবাসী সম্প্রদায় গারো, কোচ, হাজং, বানাই, হদীসহ বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর চাষাবাদ, জীবন প্রবাহ, কৃষ্টি, শিল্প এবং ভাষা ও সংস্কৃতি, এ জন্যই প্রতিদিন পর্যটক ও ভ্রমন পিপাসুদের ঢল নামে গজনীতে । গজনী অবকাশ কেন্দ্রে রেষ্ট হাউজে প্রতিকক্ষ ব্যবহার করতে চাইলে (কেবল দিনের বেলার জন্য ) জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত শাখা থেকে অনুমতি ও বুকিং নিতে হয়। প্রতি কক্ষের জন্য ভাড়া ৫শ টাকা। নতুন করে সংযোজন করা হচ্ছে “ পবিত্র গজনী কুন্ড”। মাধবকুন্ডের আদলে তৈরি হচ্ছে এটি।

প্রবেশ ফি:
গজনী অবকাশ কেন্দ্রে  গাড়ী প্রবেশের জন্য উপজেলা পরিষদ চেকপোষ্ট থেকে বাস-কোচ, ট্রাক-৩ শ টাকা। মাইক্রোবাস,পিকআপ, মেক্সি-১শ ৫০টাকা। জিপ,কার,টেম্পু-১শ টাকা এবং সিএনজি-৫০টাকা দিয়ে গেটপাস নিতে হবে।  অন্যথায় গজনী অবকাশ কেন্দ্রে গাড়ী ঢুকাতে পারবেন না। তাছাড়া সীমান্ত পথে বিজিবি নকশী ক্যাম্পে সে পাস দেখাতে হবে। আর অবকাশ কেন্দ্রে টাওয়ারের জন্য জনপ্রতি ৫ টাকা, শিশু পার্কের জন্য ১০টাক, প্যাডেল বোড ২০মিনিটে  ৬০টাকা, পানসিতরী নৌকায় জনপ্রতি-১০টাকা এবং পাতালপুরি ড্রাগন ট্যানেলে জন প্রতি ৫টাকা প্রদর্শনী ফি রয়েছে।

যেথায় যোগাযোগ করবেন : 
একটি কথা ভূলবেন না, গজনী অবকাশ ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন। সীমান্তের দিকে না যাওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।  অন্যথায় বিপদ ঘাড়ে চেপে বসতে পারে। শেরপুর জেলা প্রশাসকের নেজারত শাখা “(ফোন) ০৯৩১-৬১২৮৩/০৯৩১-৬১৯৫৪/০৯৩১-৬১৯০০, সার্কিট হাউজ -০৯৩১-৬১২৪৫, হোটেল সম্পদ-০১৭১২৪২২১৪৫,হোটেল সাইদ-০৯৩১-৬১৭৭৬, কাকলী গেষ্ট হাউজ- ০১৯১৪৮৫৪৪৫০ 





ভ্রমণ :: ময়মনসিংহ ০১।

সুনিপুণ কারুকার্যের অনন্তসাগর পাড় |



ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বীরাঙ্গনা সখিনার সমাধিস্থল আর বারো জমিদারের সুনিপুণ কারুকার্যে নির্মিত প্রাচীন ভবন, গোলপুকুর, বৃত্তাকার দ্বীপ, অনন্তসাগর, চিমুরানীর দীঘি, খাজা উসমান খাঁর কেল্লা, নিজাম উদ্দিন আউলিয়া (রহ.) মাজার, দৃষ্টিনন্দন গৌরীপুর রাজেন্দ্র  কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি কলেজ, পামবীথি সড়ক, ঐতিহাসিক রামগোপালপুর জমিদারের সিংহ দরজা, যুগলবাড়ী, শান বাঁধানো ঘাট, বোকাইনগরের শাহী মসজিদসহ সবুজ-শ্যামল ছায়া ঘেরা বিলুপ্ত প্রজাতির বৃক্ষরাজিকে এক নজর দেখতে ঘুরে আসুন গৌরীপুর।
ময়মনসিংহ ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে গৌরীপুর লজ থেকেই দেখতে শুরু করতে পারেন গৌরীপুরকে। এরপর ময়মনসিংহ থেকে গৌরীপুরের উদ্দেশে বাসযোগে রওনা হতে ময়মনসিংহ ব্রিজ থেকে বাসে চড়–ন বা ময়মনসিংহ  রেলস্টেশন থেকে ট্রেনেও আসতে পারেন। রামগোপালপুর পাওয়ারী জগেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর রঙিন কাচের প্রাসাদ, কৃষ্ণমন্দির ও প্রাসাদের সুড়ঙ্গপথ আপনাকে মুগ্ধ করবে। একটু এগিয়েই দেখতে পাবেন ঐতিহাসিক সিংহ দরজা। তখন ডানে-বামে, সামনে-পেছনে শান বাঁধানো পুকুর ঘাট আর শতবর্ষী দুটি গাছ দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে।
এরপরেই ভবানীপুরের জমিদার জ্যোতিষ চন্দীর পুকুরের উপরে রানী øান করতেন। রহস্যজনক পুকুরটি আজ বিলীন। তবে এর চিহ্নটুকু দেখে এগিয়ে চলুন বোকাইনগর খাজা উসমান খাঁর কেল্লা, সম্রাট আলমগীরের আমলে নির্মিত শাহী মসজিদ আর হজরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়া (রহ.) মাজার দেখতে। শাহ মারুফ (রহ.) মাজার ও কালীবাড়ির প্রাচীন মঠ আপনাকে আকৃষ্ট করবে। এরপরেই চলে যেতে পারেন বীরাঙ্গনা সখিনার সমাধিস্থল মাওহা ইউনিয়নের কুমড়ি গ্রামে। সখিনার সমাধিস্থলে যেখানে কুন্দকুসুম গাছগুলো এখনো ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে টিকে আছে। এগাছগুলো বীরাঙ্গনা সখিনার স্বামী ফিরোজ খাঁর হাতে রোপিত বলে অনেকের মতবাদ। বীরাঙ্গনা সখিনার সমাধিস্থলে তোরণের পূর্বপাশে সংক্ষিপ্ত ইতিহাসটুকুতে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। একটু এগিয়েই দেখুন তাজপুরের কেল্লা, চিমুরানীর দীঘিÑ যার অস্তিত্ব শুধু এখন বিশালাকার সবুজ ধান ক্ষেত। কালের আবর্তে এটিও চলে গেছে ব্যক্তিমালিকানায়।
আবারও পথচলা গৌরীপুরের শহরের ঐতিহ্যবাহী সরকারি কলেজ যেখানে দেখতে পাবেন কৃষ্টপুরের জমিদার সুরেন্দ্র  প্রাসাদ লাহিড়ীর দৃষ্টিনন্দন বাড়ির ভবন, পূজা মন্দির। একটু এগিয়েই দেখতে পাবেন ফরাসি স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত জমিদার ধীরেন্দ্র কান্ত লাহিড়ীর এক গম্বুজের সুদৃশ্য টিনের গোলঘরটি যা প্রাচীন ইতিহাসকে মনে করিয়ে দেবে। আর এ ঘরের সামনেই সুবিশাল পুকুরের স্বচ্ছ পানি সুবজ ছায়া ঘেরা আর দক্ষিণা বাতাস আপনাকে হয়তো বসতে বলবে। তবে এখানে বর্তমানে পুলিশের এএসপি সার্কেল ও সহকারী কমিশনারের কার্যালয় থাকায় আপনার নিরাপত্তায় ত্র“টি হবে না। এর একটু সামনেই বাগানবাড়ি দুর্গা মন্দিরের সঙ্গে কৃষ্ণমন্দির ঘুরে আসতে পারেন। এরপরেই চলে যেতে পারেন গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের  পেছনের অংশে। বিশাল আকৃতির এক গম্বুজের জোড়া ভগ্ন শিব মন্দির ও কালী মন্দিরের ঐতিহাসিক কাঠামো দেখার জন্য। পাশেই গৌরীপুর থানা যেখানে রয়েছে বিরল প্রজাতির বৃক্ষরাজি। চলে যেতে পারেন সুউচ্চ পামগাছের সারি, জোড়াপুকুরের ঘাট, গোলপুকুর, বৃত্তাকার দ্বীপ ও জোড়া আমগাছ। একনজর দেখতে পারেন উপজেলা পরিষদের ভেতরে দেয়াল ঘেঁষে একটি পরগাছা বট কিভাবে একটি পাম গাছকে গলা টিপে হত্যা করেছে। যা আপনাকে ভাবিয়ে তুলতে পারে। দ্বীপ ঘেঁষা একটি গাছ যাকে বৃক্ষপ্রেমিক বা গবেষণাবিদরা এখনও নাম বলতে পারে, সেই অচিন বৃক্ষটি দেখুন।
জমিদার ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর নিজ বাড়িতে বর্তমানে মহিলা ডিগ্রি কলেজ, গৌরীপুর প্রেস ক্লাব, নাট্য মন্দিরের সঙ্গে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন প্রাচীন দুর্গামন্দিরটিকে। তবে প্রেস ক্লাবের ভবনের সামনে ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা প্রস্তুত রাখুন। কেন না প্রেস ক্লাবের ভবনটি জমিদারের শাসন আমলের রঙে আবারও সেজেছে।
সুউচ্চ পামগাছের সারির শেষ প্রান্তে দেখে যেতে পারেন জমিদারের নাট্যমঞ্চটি। যা বর্তমানে ঝলমল সিনেমা হল। জমিদার ব্রজেন্দ্র  কিশোর রায় চৌধুরী তার পিতা রাজেন্দ্র  কিশোর রায় চৌধুরীর নামে প্রতিষ্ঠা করেন রাজেন্দ্র  কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়। ইংরেজি ই-আকৃতির লাল রঙের সুনিপুণ কারুকার্যে নির্মিত ভবনের সামনে ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর স্ত্রীর প্রেম স্মৃতিকে অমর করে রাখতে অনন্তসাগর নামে একটি বৃহৎ পুকুর খনন করেন। এছাড়াও গৌরীপুর পৌর শহরের প্রথম মসজিদ পূর্বদাপুনিয়া জামে মসজিদ ও গুজিখাঁ গ্রামে অবস্থিত কেরামতিয়া মসজিদটিও দেখে যেতে পারেন।
কিভাবে আসবেন : ঢাকা থেকে সরাসরি গৌরীপুরের উদ্দেশে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস ছাড়ে সকাল ১১টায়, দুপুর ২টা ও বিকাল ৫টায়। এছাড়াও আপনি ময়মনসিংহ পর্যন্ত যেকোন যানবাহনে এসে ব্রহ্মপুত্র ব্রিজের সন্নিকটে বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস যোগে গৌরীপুর আসতে পারেন। গেট লক ভাড়া ২০ টাকা, লোকাল বাসের ভাড়া ১৮ টাকা। ময়মনসিংহ  রেলস্টেশন থেকে ট্রেনেও আসতে পারেন। ভাড়া মাত্র ৬ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে নাসিরাবাদ ট্রেন ছাড়ে বিকাল ৪টায়।

কোথায় থাকবেন : উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঙ্গে যোগাযোগ করলে ডাকবাংলো, পৌর মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পৌর অতিথিশালায় থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। মধ্যবাজারস্থ হোটেল রাজগৌরীপুর, রেলওয়ে স্টেশনে হোটেল সানি বর্ডিংয়েও থাকতে পারেন। 

শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৪

প্রাচীন সমৃদ্ধ নগর মহাস্থানগড়,বগুড়া।

প্রাচীন সমৃদ্ধ নগর মহাস্থানগড়।

arif1976.blogspot.com

মাথার উপর বিশাল আকাশ। ঘন সবুজ গাছপালার ছায়ায় ঘুমিয়ে আছে প্রাচীন সমৃদ্ধ নগর মহাস্থানগড়। এখানে রাত জেগে চাঁদ ঘুমায়। চাঁদের অপরূপ সুষমায় পাল, সেন রাজারা গল্প করে। হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধার করার গল্প। বিলুপ্ত সভ্যতাকে পুনরুজ্জীবিত করার গল্প। আপনি কান পাতলে নিশ্চয় সেবস গল্প শুনতে পাবেন। ভগ্নপ্রায় পাকা বাড়ির প্রতিটি ইট আপনাকে গল্প বলে শুনাবে। কোথাও পড়ে থাকা এক টুকরা পাথর আপনাকে সেসব গল্প বলবে। আর ধ্বংশের শেষ সীমায় পৌছায় পুকুর -ইন্দারা-পাতকুয়ার কথা শুনে আপনার চোখ টলমল করবে। ভ্রমন প্রেমীদের জন্য এ সময়টা খুবই মনোরম। শিউলী ফোটা শরৎ সকালের প্রকৃতির স্নিগ্ধ  পরশ। ঘাসের বুকে জমে থাকা শিশির কোণা আপনার পা ধুয়ে দেবে। অদূরে চরজাগা করতোয়ার বুকে পাল তোলা সারি সারি নৌকা। দূরের মেঠো পথ থেকে ভেসে আসে ভাওয়াইয়া গানে আপনি মোহাবিষ্ট হবেন। এখানে খেটে খাওয়া মানুষের সুন্দর আচরণ বিলুপ্ত সভ্যতার সুন্দর পরিচয়ই বহণ করে। তার আগে অবশ্য আপনার চোখ কিছুটা পরিতৃপ্ত হবে বিশ্বের ১১তম দীর্ঘতম সেতুর গায়ে হাত বুলিয়ে। এতবড় যমুনা নদীর ওপর দিয়ে প্রতিদিন যে হাজার হাজার যন্ত্রদানব ওপারে যাচ্ছে তা না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। মহাস্থান খননের ফলে যে সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায় তা হলো হিন্দু-বৌদ্ধ সভ্যতা। এখনও হিন্দু ধর্মের হিন্দু তীর্থস্থান মহাস্থানের আশপাশে রয়েছে। করতোয়ার পশ্চিম পাশে জাহ্নবী নামক দেবী স্থানে স্নান  করলে তীর্থ লাভ হয় বলে অনেকে মনে করে। এছাড়া কালীদহে পদ্মার বাড়ী বানাইয়া পদ্মপুরাণ ও মথুরার শ্রী কৃষ্ণের কংসবধ লীলা, গোকুলে নন্দ ঘোষের বাড়ি, কুটিশ্বরী কালীঞ্চুরী দেবী, ভূতিকেশ্বর, উগ্রমাধব, শিব, সূর্য-মন্ডপ,কু প্রভৃতি কল্পিত তীর্থস্থান ও দেব-দেবীবেষ্টিত মহাত্মযুক্ত স্থান এ মহাস্থানগড়। জনশ্র“তি আছে ভগবানের ষষ্ঠ অবতার পরশুরামের গড় এই মহাস্থান। তিনি পালরাজ রাম বা কৈবত্ত নায়ক ভীম। চৈনিক পরিব্রাজক যুয়ান চুং ৬৩৯-৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত ভ্রমণ করেন। তার সি-মু-কি নামক গ্রন্থে পন্ডুবর্ধন নগরের কথা উল্লেখ আছে। পুন্ডুবর্ধনই হলো আজকের এই মহাস্থান।

রাজধানীর আশপাশে শহর থাকে। মহাস্থান গড় ছিল রাজধানী। এর আশপাশে প্রায় ১১ মাইল পর্যন্ত সুরক্ষিত ছিল যার প্রমাণ প্রত্মতাত্ত্বিকদের খুঁড়াখুঁড়ির ফলে বেরিয়ে এসেছে। এই মহাস্থানগড় প্রাচীন কালে কোন রাজা কর্তৃক প্রথম প্রতিষ্ঠিত তার কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।

বগুড়া শহর থেকে মাত্র ৭ মাইল উত্তরে রংপুর সড়কের বাম পাশে সমতল ভূমি থেকে ২০-২৫ ফুট উঁচুতে উত্তর-দক্ষিণে ৩ হাজার ফুট দীর্ঘ এবং পূর্ব-পশ্চিমে ২ হাজার ফুট প্রস্থ বালি-পাথরে সংমিশ্রিত, গুল্ম আচ্ছাদিত হয়ে হাজার বছরের ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন সভ্যতার রাজধানী মহাস্থান।ইতিহাসে একে মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন রাজাদের প্রাদেশিক রাজধানী বলে উল্লেখ করেছে। ইতিহাস এবং প্রত্মতাত্ত্বিকদের পাওয়া দুর্মূল্য অলঙ্কারাদি, অস্ত্র-শস্ত্র, মুদ্রা ও বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি, দালানের ভগ্নাবশেষে এটাই প্রমানিত হয় যে- এখানে বিলুপ্ত সভ্যতা ছিল একটি সমৃদ্ধ সভ্যতা। মহাস্থানে বহু দর্শনীয় স্থান পুরনো সভ্যতার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো বলখী (র :) মাজার, বেহুলার বাসরঘর, গোবিন্দ ভিটা, জাদুঘর, খোজার ভিটা, মানখালী, পূজারবাড়ি, জিউৎকুন্ড, শিলাদেবীর ঘাট, গোকুল, বৈরাগীর বাড়ি, ওঝা ধন্ধন্তরীর বাড়ি, নেতাই ধোপানী, কাসী তলা, ঘাঘট দুয়ার, গুপ্ত বারানসী ইত্যাদি।

সুলতান বলখীর (র :) মাজার : মহাস্থানে যাওয়ার সময় প্রথমেই হাতের বাম পাশে সুউচ্চ টিলার মতো গাছঘেরা যে জায়গা পড়বে সেটাই সুলতান বলখীর (র :) মাজার। রাজা পরশুরামের আমলে বলখী (র :) পীর মহাস্থানে আগমন করেন এবং ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে রাজদরবারে দূত পাঠান। এতে দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধহয়। পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হয়। তখনই পরশুরাম সভ্যতার অবসান হয়। প্রতি জুমারাত বা বৃহস্পতিবার রাতে মাজার শরীফে জুমারাতের জন্য অনেক যাত্রী আসে। মহররম, শবেবরাত ও দুই ঈদে প্রচুর ধূমধাম হয়। কোরবানি হয়। চৈত্র মাসে ওরস ও বারুনীর মেলা হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসেও বারুনী মেলায় প্রচুর লোক সমাগম হয়। হিন্দু-মুসলমান সবাই ভক্তি, সেলাম ও শিরনী মানত করে।

বেহুলার বাসরঘর : মহাস্থান থেকে ২ কিমি দূরে ১৫০ কুঠুরীসমৃদ্ধ উঁচু টিলার নাম বেহুলার বাসরঘর। প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের সাইনবোর্ডে বাংলা-ইংরেজি দু’রকমেই এ সম্পর্কিত তথ্য লিপিবদ্ধ আছে। লক্ষ্মীন্দরের পিতা চাঁদ পূজা না দিয়ে পদ্মার কোপে পতিত হয়। সর্পাঘাতে ৬ পুত্রের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ পুত্র লক্ষ্মীন্দরকে রক্ষার জন্য লোহার বাসরঘর তৈরি করেন। কিন্তু পদ্মার আদেশে কালনাগের দংশনে লক্ষ্মীন্দরের মৃত্যু হয়।পদ্মপুরাণের এ কথাগুলো ঠোঁটস্থ করে ১০ বছর বয়সী বালক টিলার ওপরে বগলে একগাদা চটিবই নিয়ে পাখির সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে তার কাহিনী বর্ণনা করে যাচ্ছে। আপনি গেলে অবিভূত হয়ে একটি চটিবই ১০ টাকা দিয়ে না কিনে পারবেন না।

গোবিন্দ ভিটা : একেবারে  মহাস্থানের দোরগোড়ায় জাদুঘরের বিপরীতে গোবিন্দভিটা। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে করতোয়া। করতোয়ার পূর্বকোণে এক গ্রাম বাঘপাড়া। সেখানে আরেক মন্দিরে দু’জন মুণি তপস্যায় ছিলেন বলে জায়গাটির নাম মুণিতলা বলেও পরিচিত।

জাদুঘর : মহাস্থানগড়ের এক পাশে গোবিন্দ ভিটা এবঙ অন্য পাশে বগুড়া প্রত্মতত্ত্ব জাদুঘর অবস্থিত। বেশ সুপরিসর। টিকিট কেটে জাদুঘরে সংরক্ষিত ৪৪টি শোকেসে কালের গর্ভে বিলীন হওয়া লুপ্তপ্রায় অলঙ্কারাদি, অস্ত্র-শস্ত্র, ছোট-বড় বিভিন্ন প্রকার মুদ্রা, হরেক রকমের দেব-দেবীর মূর্তি, দর্শনীয় ইট-পাথরসহ অসংখ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন। যেগুলো দেখে সহজেই অনুমান করা যায় মহানস্থানের মাটির নিচে কত অমূল্য সম্পদ এখনও পড়ে আছে।

খোজার ভিটা : মহাস্থানের প্রাচীর সংলগ্ন একটি ফুলবাগান আছে। পূজা-পার্বণে ফুল দরকার হতো বলে ফুলের বাগানের প্রয়োজন। আজ আর ফুল বাগানের চিহ্নমাত্রও নেই। ফুল বাগানের পাশেই বড় একটি পাথর বা শিবলিঙ্গ পড়ে আছে। এই জায়গাটির নাম খোজার ভিটা।

মানখালি : খোজার ভিটার উত্তর পাশে সুউচ্চ বাড়ির যে ভগ্নাবশেষ আছে তাই মানখালি। এ সম্পর্কে মানরাজার এক কাহিনী প্রচলিত আছে। এখন আর মানরাজা নেই বাড়িও খালি।তাই এ জায়গাটির নাম হয়েছে মানখালি।

পূজার বাড়ি : মানখালি থেকে কিছুদূর অগ্রসর হলে ১৭টি উঠান নিয়ে প্রকা বাড়ির যে ভগ্নস্তুপ চোখে পড়বে তাই পূজার বাড়ি। অসংখ্য ঘর এবং সেগুলোতে ৩৬০টি কক্ষ ছিল। প্রত্যেক কক্ষে এক একটি দেবতা ছিল বলে অনুমান করা হয়। প্রতিদিন নিত্যনতুন উপচারে পূজা দেয়া হতো। বাড়ির সামনেই জিউৎকু। এই কূপের জলে মরা মানুষ বাঁচিয়ে উঠত বলে ধারণা করা হয়। পূজার বাড়ি খননকরার সময় মস্তবড় দুটি কুঠুরী মেঝে পাকাসহ পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় এই দু’কুঠুরীতে বড় কোন মূর্তি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। আর বাকি কুঠুরীগুলো ছিল ক্ষুদ্রাকার।

জিউৎকুন্ড : পূজাবাড়ির পূর্ব পাশে বড় ইন্দারার নাম জিউৎকুন্ড। জাদুমন্ত্র বলে কূপের জলে মরা মানুষ বাঁচানোর শক্তি জন্মেছিল বলেই এই কূপের নাম জিউৎকুন্ড। কূপটির ব্যস ১৬ ফুট, গভীরতা ৪৫ ফুট। কূপের গায়ে দুই সারি পাথর, যেগুলো সিঁড়ির কাজ করত। কূপের এক পাশে বড় একটি পাথর করুকাজ করা। মনে হয় পাথরের উপরে উঠে জল তোলা হতো।

গোকুল : তোমাকে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে। হিন্দু ধর্মের মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয় পশ্চিম ভারতের মথুরার রাজা কংসকে বধ করার জন্য। শ্রীকৃষ্ণ গোকুলে নন্দঘোষের ঘরে প্রতিপালিত হন। পরশুরাম পশ্চিম ভারতের দুটি তীর্থস্থানের অনুকরণে  এই কৃত্রিম গোকুল ও মথুরার নামাকরণ করে বলে শোনা যায়। মহাস্থান থেকে এক মাইল দক্ষিণে গোকুল গ্রাম অবস্থিত।

বৈরাগীর বাড়ি : এই বাড়িতে পরশুরাম সুলতান (র:) কাছে ধরা পড়েছিলেন। বাড়িটি রাজবাড়ি ছিল বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু কি জন্য একে বৈরাগীর বাড়ি বলা হয় তা অনুমেয় নয়। সম্ভবত রাজা কর্তৃক মুনি, ঋষির বা বৈরাগীর সেবা  এই বাড়িতে চলত বলেই এই বাড়ির নাম হয় বৈরাগীর বাড়ি।

ওঝা ধন্মন্তরীর বাড়ি : মহাস্থানগড় থেকে দূরে হরিপুর, হাজরা দীঘি ও রামশহর গ্রামের মিলনস্থানে উঁচু ভিটার উপর পাকা বাড়ি। বিশাল বাড়ির উঠান। বাড়ির দক্ষিণে পুকুর। পুকুর পাড়ে হাট। পুকুরের জলে ওঝার রথের শালকাঠের তক্তা আজও চোখে পড়ে। স্বাস্থ্যকর স্থান। ওঝা ধন্ম্ন্তরী মহারাজের রাজ চিকিৎসক ছিলেন বলেই এতবড় এবং সুন্দর বাড়ি। বাড়িতে দারুঘরা নামক ঔষধালয় ছিল।

ফাঁসিতলা : বহুদিনের পুরনো এক বটগাছ কালীদহের পশ্চিমে খালাস দীঘির পাড়ে। এখানে রাজ আমলের গুরতর অপরাধীকে ফাঁসিতে ঝুলানো হতো বলে এই জায়গার নাম ফাঁসিতলা।
এ রকম অনেক দর্শনীয় স্থান মহাস্থানের আশপাশে। হিন্দু সভ্যতার রাজধানী হলেও আজ আর প্রাচীর কীর্তির কোন মন্দিরের চিহ্নমাত্রও নেই ধ্বংসস্তুপ ছাড়া। হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে সেই ইট-পাথরেই মসজিদ, মাজার তৈরি হয়েছে। মহাস্থানগড়ের অসাধারণ নির্মাণ নৈপুণ্য দেখে মনে হয় সেকালে এমন সুরক্ষিত, সুদৃঢ় দুর্গ ভারতে কমই ছিল। ৭ দিনের সফর শেষে মহাস্থান থেকে ঘর সাজানোর জন্য নানা রকম কাঠের তৈরী জিনিস যেমন, ফ্লাওয়ার ভাজ, কলম, খেলনা, পুতুল মালাসহ অনেক দৃষ্টিনন্দন জিনিস কেনা যাবে এখান থেকে। 






সময় করে ঘুরে আসুন,অবশ্যই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ সবাইকে। 

শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৪

ভ্রমণ:: বর্ষাতে রাঙ্গামাটির পথে পথে।

বর্ষায় রাঙ্গামাটির পথে। 


বর্ষায় অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়ে ওঠে পাহাড়িয়া শহর রাঙ্গামাটি। চারদিকে হ্রদ, এরই মাঝখানে পাহাড়ের গায়ে রাঙ্গামাটি শহর। বর্ষায় এখানের হ্রদ ও কর্ণফুলী নদীপথে জলে থই থই করে। মনে হয়, রাঙ্গামাটি হ্রদের শহর। বর্ষায় এখানে হ্রদ দেখায় আনন্দ আছে। নীল নব ঘনে আষাঢ় গগনে... আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে... বর্ষায় রাঙ্গামাটিতে গেলে কবিগুরুর কথা কেউ মানতে চায় না। যতই বর্ষা হোক না কেন, ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে হ্রদ হয়ে দূরে বহুদূরে হারিয়ে যেতে মন চায়। বর্ষায় রাঙ্গামাটির যেদিকে যাবেন সেদিকেই হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হবে। এমন নয়নলোভা জায়গা পাহাড়িয়া রাঙ্গামাটি। বাংলার সব সৌন্দর্য এখানে এসে উছলে পড়েছে...। যেদিকে চোখ যায় তখন মনে হয়, আমরা আসব বলেই কি রাঙ্গামাটি বুঝি রঙিন হয়ে সেজে বসে আছে। রাঙ্গামাটি হয়ে শুভলং কিংবা বরকলের দিকে গেলে দেখবেন নদীর দুই পাশে পাহাড়, অরণ্য আর ঝরনা। নৌকায় বসে ঝরনার সৌন্দর্য উপভোগ করা জীবনের স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকতে পারে। ঝুমুর ঝুমুর নূপুর বাজে ঐ পাহাড়ে... এরকম মনে হবে কখনও কখনও। হ্রদের পর হ্রদ দেখে দূরে বহুদূরে চলে যেতে ইচ্ছে হবে।

যেভাবে যাবেন : 

ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি যাওয়ার জন্য রয়েছে ডলফিন পরিবহন। ইচ্ছে করলে হানিফ পরিবহন, টোকিও লাইন, গ্রিন লাইনের যে কোনও একটি পরিবহনে চট্টগ্রাম গিয়ে এরপর রাঙ্গামাটির বাস ধরে রাঙ্গামাটিতে। চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি পৌঁছতে ১ ঘণ্টা সময় লাগে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে হানিফ পরিবহনে যেতে চাইলে আগেভাগে টিকিট বুকিং দিন। এজন্য যোগাযোগ করুন ম্যানেজার আবদুস সামাদ মণ্ডলের সঙ্গে। ফোন-০১৭১১-৮৮৩৬৮৯। 



হোটেলের খোঁজখবর : 

রাঙ্গামাটিতে রাত যাপন করার জন্য পর্যটনের মোটেল, হোটেল সুফিয়া, হোটেল জেরিন, মধুমতি, গোল্ডেন হিল, বনফুল, ডিগনেটি, শাপলা, সৈকত প্রভৃতি রয়েছে। যেখানে পছন্দ হয় সেখানে উঠুন। তবে পর্যটন মোটেলে ভাড়াটা একটু বেশি।

যা যা দেখবেন : 

বাস থেকে রাঙ্গামাটি নেমে এক স্বপ্নের ভুবনে হারিয়ে যাবেন। এখানে দেখার জায়গা অনেক। দু-তিন দিন কাটিয়েও মন ভরে না। ইচ্ছে হবে আরও কয়েকদিন থাকার। এখানকার মতো এদেশে আর কোথাও এমন পাহাড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দর্শন কিন্তু আর কোথাও সহজে মেলে না। এখানের চারদিকে রয়েছে সোনালি আর রুপালি খেলা। রাঙ্গামাটির হ্রদে বেড়ানোর জন্য নৌকা, স্পিডবোট রয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে নৌকা নিয়ে হ্রদে বেড়াতে ইচ্ছে হবে। তাহলে বুঝতে পারবেন হ্রদ কত যে সুন্দর, কত যে বিচিত্র এর রূপ। ঝরনা রয়েছে এখানে অনেক। পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরছে ঝরনা। এখানে গিয়ে পানি স্পর্শ করুন বেশ ভালোই লাগবে। ঝুলন্ত সেতু দেখবেন পর্যটন কমপ্লেক্স এলাকায়। এটি পেরিয়ে এপার থেকে ওপারে কয়েকবার গিয়েও মন ভরবে না। তাই এখানে বারবার ছুটে আসতে মন চাইবে। ঝুলন্ত পুল পেরিয়ে একটু দক্ষিণে এলেই দেখবেন বসবার জন্য বেঞ্চ রয়েছে। একটি বিকেল না হয় এখানে কাটিয়ে দিন। তখন চারদিকের নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে আপনিও হয়তো কোনও না কোনও গানের কথা ভাববেন। কুচ বরণ কন্যারে তোর মেঘ বরণ কেশ/ আমায় লয়ে যাওরে নদী সেই যে কন্যার দেশ/পরনে তার মেঘ ডম্বুর উদয় তারার শাড়ি... গানের এ কথাগুলো বারবার হদয়ে দোল খেয়ে যাবে।
রাঙ্গামাটির একটি সুন্দর দর্শনীয় স্থান রাজবন বিহার। এটি রাঙ্গামাটি শহরে ঢুকতেই খাগড়াতে অবস্থিত। এখানে চারদিকেই টিলা-পাহাড়। দূরের টিলা পাহাড়গুলো অবশ্য জঙ্গলে ঢাকা। বর্ষাকালে রাঙ্গামাটির হ্রদে যৌবনের ঢল নামে। রাজবন বৌদ্ধবিহার ঘুরে দেখতে পারেন।
এখানে চারদিকে আরণ্যক পরিবেশে বিহার আর মন্দির দুটি অপরিসীম শান্তির জয়গা মনে হবে। ডিঙ্গিতে চেপে কর্ণফুলী নদী পেরিয়ে আরেকটি টিলায় এসে এবার চাকমা রাজার বাড়ি দেখুন। রাঙ্গামাটির উপজাতি সংস্কৃতি জাদুঘরটি দেখে নিতে পারেন। উপজাতীয়দের আর্থ-সামাজিক জীবনের সুন্দর প্রতিফলন উঠেছে এই জাদুঘরে। দূরের পাহাড় অরণ্যাঞ্চলে যাওয়ার সময় কিছুটা ভয় ভয় লাগবে; তবুও আনন্দ আছে এখানের সৌন্দর্য উপভোগ করে, বার বার এই রাঙ্গামাটিতে উদার সম্ভারে গরিয়সী মনে হবে।

যা যা জানবেন : 

এখানে বেড়াতে গিয়ে জানবেন, চট্টগ্রামের ৪৮ মাইল পূর্বে এবং কাপ্তাইয়ের ২০ মাইল উত্তরে রাঙ্গামাটির অবস্থান। বনাঞ্চল কেটে ১৯৬০ সালে তৈরি করা হয় রাঙ্গামাটি শহর। এই শহরে ও আশপাশের পাহাড়িয়া এলাকায় বাস করে চাকমা, মগ, টিপরা, খুমি, মুরংসহ অন্যান্য উপজাতি।  









ধন্যবাদ সবাইকে। 


ভ্রমণ :: মৌলভীবাজার, সিলেট -৪।

বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি । 




বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত। এ হাওরের আয়তন প্রায় ২০,৪০০ হেক্টর। বর্ষাকালে বিস্তৃত জলরাশি এ হাওরের রূপ ঠিক যেন ভাসমান সাগর। আদিগন্তু বিস্তৃত জলরাশি। জলের মাঝে মাঝে দুই-একটি বর্ষীয়ান হিজল, তমাল বৃক্ষ। অথচ শীতকালে বিস্তৃত এই হাওর ধু-ধু সবুজপ্রান্তর, কোথাও বা ধান ক্ষেত এবং খানাখন্দ নিচু ভূমিতে প্রায় ২৩৬টি বিলের সমষ্টি। হাকালুকি হাওর মাছের জন্য প্রসিদ্ধ। হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের সংরক্ষিত জলাভূমি। শীত মৌসুমে এশিয়ার উত্তরাংশের সাইবেরিয়া থেকে প্রায় ২৫ প্রজাতির হাঁস এবং জলচর নানা পাখি পরিযায়ী হয়ে আসে। এছাড়া স্থানীয় প্রায় ১০০ প্রজাতির পাখি সারাবছর এখানে দেখা মেলে। এই হাওর অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। মৎস সম্পদ এবং জলজ প্রাণী-উদ্ভিদের জীববৈচিত্র্য এককথায়  আসাধারণ। ধু-ধু প্রান্তরের এই চারণভূমি ও বিলগুলো মানুষের জীবন-জীবিকা এবং পরিযায়ী পাখির কলকাকলি অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটককে দুর্বার আকর্ষণে রোমাঞ্চের হাতছানি দেয়। হাকালুকি হাওরে পরিযায়ী হাঁসের মধ্যে চখাচখী, রাজসরালী, গরাদমাথা রাজহাঁস, ধলাবেলে হাঁস, গাডওয়াল, ইউরেসীয় সিথীহাঁস, টিকিহাঁস, পাতিহাঁস ম্যার্গেঞ্জার প্রভৃতির দেখা মেলে। দেশি প্রজাতির মধ্যে বেগুনি কালেম, পানমুরসী, পাতিকুট, ডাহুক, ইউরেশীয় মুরগি চ্যাগা, ল্যাঞ্জা চ্যাগা, রাঙ্গাচ্যাগা, জলাপিপি, ময়ূরলেজা পিপি, পাতি জিরিয়া,  হাট্টিটি, ভূবনচিল, শঙ্খচিল, বিলুপ্ত প্রায় কুড়াল ঈগল, বড়খোঁপা ডুবুরি, ছোট পানকৌড়ি, খয়রা বক, ধূসর বক, শামুক খোল প্রভৃতি পাখি অন্যতম। হাকালুকি হাওরে অনেক প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। চিতল, আইড়, বাউশ, পাবদা, মাগুর, শিং, কৈ প্রভৃতি মাছ এখানে রয়েছে। জলজ উদ্ভিদের মধ্যে বিলুপ্ত প্রায় মাকনা হাওর অঞ্চলের পুটি, হিঙ্গাজুর, হাওয়া প্রভৃতি বিলে যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান। এছাড়া শাপলা, শালুক, পদ্ম প্রভৃতি জলজ উদ্ভিদ ও আশাব্যঞ্জকহারে এখানে রয়েছে। এ হাওর সংরক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও প্রতিটি বিল ৩ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়ে থাকে। ফলে মৎস সম্পদ আহরণের জন্য পানি সেচে ফেলার কারণে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ দারুণভাবে বিপন্ন হয়ে পড়ে। পালাক্রমে বিলগুলোতে মাছ ধরা হয়। যেসব বিলে মাছ ধরা হয় না সেসব বিল পাখি ও জলজ উদ্ভিদের জন্য মনোরম আবাসস্থলে পরিণত হয়। ২০০৬ সালের জানুয়ারি-ফেব্র“য়ারি মাসে এ হাওরের পুট বিল, হাওয়া বিল, হিঙ্গাজুর, জল্লার বিল, মালাম প্রভৃতি বিলে মাছধরা বন্ধ থাকায় চমৎকার জীববৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়েছে। 


হাকালুকি হাওর ভ্রমণের সেরা সময় : 

নভেম্বর থেকে ফেব্র“য়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় হাওর ভ্রমণের জন্য সেরা। এসময় এখানে প্রচুর সংখ্যায় পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে চারদিক মুখর থাকে। জলজ উদ্ভিদ, মাছপ্রেমীদের জন্য এটা সেরা মৌসুম।

আবাসন : 


হাওর এলাকায় বিল ইজারাদারদের দোচালা কুটিরগুলোয় দু‘চারজন পর্যটক থাকার জন্য চমৎকার। তবে অবশ্যই বিলমালিকের অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। সবচেয়ে ভালো হয় বিল এলাকায় তাঁবু ফেলে রাত্রি যাপন। জোছনা রাতে তাঁবুতে যাপন, পাখি পর্যবেক্ষণ যে কোনও অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটককে বিমোহিত করবে।

আহার : 


সঙ্গে আনা চাল-জলের রেশন হাওর এলাকার শ্রমজীবী মানুষকে সামান্য কিছু টাকা দিলে পছন্দ মতো টাটকা মাছের ঝোলের তরকারি দিয়ে তা পরিবেশন করবে অথবা ওদের সঙ্গেও সুস্বাদু খাবার শেয়ার করা যাবে অনায়াসে। এখানকার বাথানে গরু-মহিষের দুধও খুব সস্তায় পাওয়া যায়। সঙ্গে হালকা চা, নাশতা, বিস্কুট, পাউরুটি নিলে খুব ভালো হয়।

যাতায়াত : 


ঢাকা থেকে ট্রেনে অথবা বাসে কুলাউড়া শহর থেকে রিকশা যোগে পছন্দমতো বিলের নিকটমতো গ্রাম অতঃপর ট্রেকিং। ঢাকা থেকে কুলাউড়া ট্রেনভ্রমণে খরচ শ্রেণীভেদে ১৩০ থেকে ৪৫০ টাকা। এসি বাস নেপচুন (ফোন ৭১০১৯৫১, ৯১২৩০৯২), শ্যামলী পরিবহণ (ফোন ৭১০১৭২৫) ভাড়া যথাক্রমে ৩৫০ টাকা এবং ৩০০ টাকা। কুলাউড়া শহর থেকে অটোরিকশা ভাড়া ১০০ থেকে ১৫০ টাকা এবং রিকশা ভাড়া ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকার মধ্যে।

সঙ্গে যা নিতে হবে : 


ভালো বড় ব্যাকপ্যাক, তাঁবু, ম্যাট, এয়ার পিলো, রেইন কোট, শীতের উপযোগী জ্যাকেট, গামছা, কাদা-পানিতে চলন উপযোগী রাবারের নাগরা জুতা, পাখি পর্যবেক্ষণের জন্য বাইনোকুলার, ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যাটারি, মেমরিকার্ড, শুকনো খাবার, চা, চিনি দুই-একদিনের জন্য রেশন, প্রাথমিক ওষুধ-চিকিৎসা সরঞ্জাম ইত্যাদি।  









ধন্যবাদ সবাইকে। 

ভ্রমণ:: পাহাড়ী জেলায় , রাঙ্গামাটিতে।


পাহাড়ের গায়ে পাহাড়ি জনপদ।  



পাহাড়, নদী হৃদ উপত্যকার নৈসগিক রূপের রানী বাংলাদেশের এই পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি। উজার প্রকৃতির নিপাট আলিঙ্গন যেন আগলে রেখেছে এই জেলাটকে রঙ্গিন হাওয়া আর প্রকৃতির অনুভাব করার জন্য এখানে আছে বৈচিত্র্য। দেশ বিদেশের দর্শনার্থীদের কাছে রাঙ্গমাটি আকর্ষন অফুরন্ত। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে ৭৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাসে সময় নেবে প্রায় দুই ঘন্টা। রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে কয়েক কিলোমিটার অগ্রসর হলেই দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। পার্বত্য স্কুল রাস্তা সাপের মতো এগিয়ে গেছে। রাঙ্গামাটি যাওয়ার বাকে বাকে অনুভাব করা যাবে দারুন রোমাঞ্চ। ছবির মতো পাহাড়ের পর পাহাড়। পাহাড়ের পুরোটাই গহিন অরন্যে ঢাকা, কোন পাহাড়ে জংলা পরিস্কার কওে ঢালু জমিতে জুম চাষ করা হয়েছে। পথে পথে দেখা হবে চাকমা, মগ, মুরং প্রভৃতি অদিবাসী সম্প্রদায়ের প্ররিশ্রমী মানুসের সঙ্গে। ঢাকা থেকে রাত দশটায় বাসে উঠলে খুব ভোরেই পৌছায় রাঙ্গামাটি শহরে। শহরে নেমে হোটেলে একটু বিশ্রাম নিয়ে বেড়িয়ে পড়তে পারবেন। প্রথম দিনে শহর ও এর আশ পাশের দর্শনীয় জায়গাগুলোতে বেড়ানো যেতে পারে। রাঙ্গামাটি শহরের শুরুর দিকটায় রয়েছে উপজাতীয় জাদুঘর অটোওয়ালাকে বললে আপনাকে নিয়ে যাবে জাদুঘরের সামনেই। এখানে রয়েছে রাঙ্গামাটিসহ পার্বত্য অঞ্চলের বসবাসরত নানান অদিবাসীদের নানা সরঞ্জামাদী পোশাক, জিবনাচরন এবং বিভিন্ন ধরনের তথ্য। ছোট অথচ অত্যন্ত সমৃদ্ধ এ জাদুঘরটি। খোলা থাকে সোম থেকে শুক্রবার সকাল ৯.৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৫.৩০ মিনিট পর্যন্ত। শনি - রবিবার ও অন্ন্যান্য সরকারী ছুটির দিন গুলোতে জাদুঘরটি বন্ধ থাকে। জাদুঘরে প্রবেশে বড়দের জন্য পাঁচ টাকা ও ছোটদের জন্য দুই টাকা লাগবে। উপজাতীয় জাদুঘরটি দেখে চলে আসতে পারেন পাশ্ববর্তী রাজবন বিহারে এ অঞ্চলের বৌদ্ধ ধর্মাম্বীদের একটি তীর্থস্থান এই রাজবন বিহার। এখানে আছে একটি প্রার্থনালয়, একটি প্যাগোডা, বনভান্তের (বৌদ্ধভিক্ষ) আবাস্থল ও বনভান্তের ভোজনালয় প্রতি শুক্রবার ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপলক্ষে এখানে চলে প্রার্থনা। রাজবন বিহার দাড়িয়ে উপভোগ করতে পারেন কাপ্তাই লেকের নয়নাভিরামের সৌন্দর্য। রাজবন বিহারের পাশেই কাপ্তাই লেকের ছোট্র একটি দ্বীপজুড়ে রয়েছে চাকমা রাজার বাড়ী। নৌকায় পার হয়ে খুব সহজেই যাওয়া যায় এই রাজারটিতে। আঁকাবাকা সিড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠে ছাদের ছায়ায় ইট বাধানো পথের মাথায় এ সুন্দর বাড়ীটি। এবার লেক পার হয়ে বেবিটেক্সিতে করে চলে আসুন রিজার্ভ বাজারে। রিজাভ বাজারের পর্যটন গুরুতের ছেয়ে বানিজ্যিক গুরুত্বের বেশি। রাঙ্গমাটির বিভিন্ন এলাকার উৎপাদিত বিভিন্ন রকম পন্য এনে জমা করা হয় এ বাজারে। ব্যস্থ এ জায়গা দিন দিন রাঙ্গমাটির অন্যতম বানিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। বাজারে দ্রব্য সামগ্রী পাইকারী দরে কিনতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ফল, মসলা, করতারী কিনে নিয়ে যায়। রির্জাভ বাজার থেকে এবার চলুন পর্যটন কমপ্লেক্স। রাঙ্গমাটি শহর থেকে এখানকার দৃরত্ব দুই কিলোমিটার। রাস্তার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে এই অল্প পথ নিমিষেই ফুরিয়ে যাবে। পর্যটন কমপ্লেক্স ও ভেতরেই রয়েছে সবার চেনা সুন্দর ঝুলন্ত সেতুটি। দশটাকার টিকেট কিনে একানে ঢুকে পড়ুন। 


ঝুলন্ত সেতু ধরে যতই এগোবেন ততই ছবির মতো দৃশ্য আপনার দু চোখকে হাতচানি দিবে। ঝুলন্ত সেতু পেরিয়ে ওপারে গেলে দেখা যাবে গাছগাছালি সমৃদ্ধ এ পাহাড়ে সবার জন্য তৈরী করে রাখা হয়েছে সিমেন্টের বেঞ্চি এ বেঞ্চেতে ক্লান্ত মানুষ গুলো বিশ্রাম নিতে পারেন। এখান থেকে কাপ্তাই নৌকা ভ্রমন করতে পারেন। নৌকা ভ্রমনের জন্য এখানে পেয়ে যাবেন নানা রকম বাহন। এ জায়গায় প্রথম দিনে ভ্রমন শেষ করে হোটেলে ফিরে যান। পরের পুরো দিনটি রাখুন কাপ্তাই লেক ভ্রমনের জন্য। শহরের রিজার্ভ বাজার ঘাটেই পাবেন কাপ্তাই লেকের ভ্রমনের নানা ইঞ্জিন বোট। ঝুলন্ত সেতুর কাছেও এরকম অনেক বোট পাবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে একটু বাড়তি টাকা গুনতে হবে শুধু শুধু। সারাদিনের জন্য একটি বোট ভাড়া করে সকালে সোজা চলে যান শুভলং বাজার। শুবলংয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে এবার ফিরতে শুরু করুন। ফিরতি পথের শুরুতেই হাতের বায়ে পাবেন শুভলং ঝরনা। ইচ্ছে হলে শরীরটা ভিজিয়ে নিতেন পারেন। কাপ্তাই লেকের দুপাশের আকাশছোঁয়া পাহাড়গুলো দেখতে দেখতে চলতে থাকুন। পথে দুপুরের খাবার সেরে নিতে পাবেন। টুকটুক ইকো ভিলেজ কিংবা বা পেদা টিংটিয়ে। শুরুতেই পড়বে টুকটুক ইকো ভিলেজ। কাপ্তাই লেকের একেবারে মাঝে এই ইকো ভিলেজটির সুন্দর সুন্দুর কটেজ রাত ও কাটাতে পারেন। এই রেস্তোরাটিতে পাবেন বিবিন্ন রকম পাহড়ি ম্যনু। সারাদিন কাপ্তাই লেকের এসব জায়গা ভ্রমনের জন্য একটি ইঞ্জিন বোটের ভাড়া পড়বে ১৫০০-৩০০০ টাকা। এছাড়া রাঙ্গামাটি শহর থেকে এখন প্রতিদিন শুভলং ছেড়ে যায় ভ্রমন তরী কেয়ারী, কর্ণফুলী। প্রতিদিন সকালে ছাড়ে আবার বিকেলে ফিরে আসে। ফিরতি পথে টুকটুক ইকো ভিলেজের বিরতি। যাওয়া আসা ভাড়া জনপ্রতি ২২০ টাকা। 

কিভাবে যাবেনঃ 
ঢাকার কলাবাগান, ফকিরাপুল ও কমলাপুর থেকে সরাসরি রাঙ্গামাটির উদ্দেশে ছেড়ে যায় ডলপিন পরিবহন, এস আলম পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, ইউনিক সার্ভিস ইত্যাদি। শ্যামলী পরিবহনের একটি শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস ঢাকা থেকে প্রতিদিন রাত দশটায় এবং রাঙ্গামটি থেকে সকাল সাড়ে দশটায় ছাড়ে। এছাড়া যে কোনো বাস, ট্রেন কিংবা বিমানে চট্টগ্রাম এসে সেখান থেকেও রাঙ্গামাটি যাওয়া যাবে। চট্টগ্রাম শহরের সিনেমা প্যালেসা এবং বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে সকাল সাতটা থেকে সন্ধা পর্যন্ত বিশ মিনিট পরপর রাঙ্গামাটি উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় বিরতিহীন বাস, ভাড়া জনপ্রতি ১০০-১২০ টাকা।

কোথায় যাবেনঃ 
রাঙ্গামটি শহরে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি হোটেল আছে। পর্যটন কমপ্লেক্সের ভেতরে পর্যটন হোটেল (০৩৫১-৬৩১২৬) শহরের কাঁঠাল তলীতে হোটেল সুফিয়া (০৩৫১-৬২১৪৫) রিজার্ভ বাজারে হোটেল গ্রিন ক্যাসেল (০৩৫১৬৩২৮২) কলেজ গেইট এলাকায় হোটেল জজ (০৩৫১-৬৩৩৩৪৮) নতুন বাজার ষ্টেশনে হোটেল আল বোমা (০৩৫১-৬১৯৫৯) পর্যটন রোডে হোটেল মাউন্টেন ভিউ (০৩৫১-৬২৮৪৮) ।  





ধন্যবাদ সবাইকে। 




ভ্রমণ :: মৌলভীবাজার, সিলেট -৩।

 পাহাড়ের সৌন্দর্য চায়ের ঘ্রাণে 



শ্রীমঙ্গলের রমেশ রামগৌড়ের সাতরঙ্গের চা : পর্যটকদের বিস্ময়
তিনি বাস করেন শ্রীমঙ্গলে। এখানে এখন তিনি দারুন জনপ্রিয়। তবে তার বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাওয়ে। তার নাম রমেশ রাম গৌড়। কিন্তু এ নামের চেয়ে তার অন্য একটি পরিচিতি এখন শ্রীমঙ্গল ছাড়িযে বাংলাদেশের অন্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে।তা হলো- রমেশ রাম গৌড়ের সাত রংয়ের চা। শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের বিস্মিত করে। লাউয়্যাছড়ায় ঘুরতে আসা পর্যটক সাত রঙের চা পান করেনি এমনটি খুব একটা হয়নি। এ চা পান করতে এেসছেন দেশের বিখ্যাত এবং স্বনামধন্যরা। এর থেকে বাদ পড়েননি সাবেক রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধানসহ গায়ক শিল্পী রাজনীতিবিদরাও। তাদের সাথে  তোলা ছবি স্বগৌরবে টাঙ্গিয়ে রেখেছেন তার -নীলকন্ঠ চা কেবিনে। রংয়ের সাথে স্বাদও ভিন্ন ভিন্ন এ চা প্রতি কাপ ৭০ টকা। অনেক গোপনীয়তায় তৈরী করেন এ চা। এক বারের লিকার দিয়ে একবারই চা বানানো যায়, তাই প্রতি লেয়ারের জন্য রাখা হয় ১০টাকা।লিকারটি ঠান্ডা হয়ে গেলে আর তা দিয়ে চা বানানো যায় না। শ্রীমঙ্গলের কালীঘাট সড়কের বিডিআর ক্যান্টিনটি এখন নীল কন্ঠের জণ্য রাতারাতি ব্যিখাত হয়ে গেছে ।
রমেশ জানান, শুধুমাত্র আগ্রহ থেকেই এক বছর চেষ্টার পর এটা আবিস্কার করতে সমর্থ হন। ভবিষ্যত পরিকল্পনা ১০ রঙয়ের চা বানানোর। এ চা বানানোর কৌশল জানতে কানাডার এক ব্যক্তি তাকে ১কোটি টাকা প্রস্তাব করেছিল, তাতেও তিনি রাজি হননি। এ চা বানানোর কৌশল শিখিয়েছেন ৩ ছেলে রাজু, রাজীব ও দীপ্তকে।
মনিপুরী ও খাসিয়া সংস্কৃতি সমতলের মানুষকেও টানে প্রবলভাবে
শ্রীমঙ্গলে এসে পাহাড়ে চড়বো না,তা কী হয়। পাহাড়ের চূড়ায় বাস করে স্থানীয় খাসিয়া আদিবাসীরা। উচু-নিচু, আকাঁ-বাকাঁ-সর্পিল পথে সাহসের সাথে জীপ চালায় ড্রাইভাররা। পাহরের উচুতে খাসিয়াদের অভ্যর্থনা আগতদের অভিভূত করে। ‘খ্যুবলাই’ বলে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। খাসিয়া ভাষায় খ্যুবলাই মানে নমস্কার বা সালাম। খাবার পর অতিথিদের পান না খাইয়ে ছাড়বেই না তারা। ছোট শিশুদের অবাক দৃষ্টি যেন এক বিস্ময়। খাসিয়া ও মনিপুরী সংস্কৃতি সমতলের মানুষকে টেনে নিয়ে যায় পাহাড়ের উচু চূড়ায় মনিপুরীদের তাঁত বোনা, খাসিয়াদের বড়দিনের অনুষ্ঠান এবং মনিপুরী নৃত্য : এ যেন এক পার্বত্য এবং সমতলের মেলবন্ধন। মাতৃতান্ত্রিক খাসিয়ারা প্রমান করেছে প্রযুক্তির ব্যবহারে কোন অংশে পিছিয়ে নেই। বাড়িতে ব্যবহার করছেন সোলার প্রযুক্তি। ঘরে ঘরে এখন টেলিভিশন। পাহারের ঢালুতে ছড়ায় গোসল সারেন মহিলারা। চূড়ায় কবরে খ্রিস্টান রীতিতে সমাহিত করা হয় মৃতদের । বিয়ে হয় খ্রিস্টান রীতিতে। বিয়ের রাতে শুকরের মাংস, বন্য হরিন বন্য মোড়গ রান্না করে ভোজের আয়োজন করে সবাই মিলে। মাতৃতান্ত্রিক হওয়ায় বিয়ের পর খাসিয়া বর চলে যায় বৌয়ের বড়িতে। 





সময় করে ঘুরে আসুন; সাত রং এর চা খেয়ে আসুন। ধন্যবাদ সবাইকে। 

ভ্রমণ :: মৌলভীবাজার, সিলেট -২।

নৈসর্গিক দৃষ্টিনন্দন লাউয়াছড়া 





ছোট্ট শহর শ্রীমঙ্গল। দৃষ্টিজুড়ে সবুজ, উটের পিঠের মতোন টিলা আর মনোরম চা বাগান- কোন স্থান ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে মেলে ধরবার জন্য যথেষ্ট। আরও যা রয়েছে তা হচ্ছে লাউয়াছড়া বন যা এক কথায় অনবদ্য। রেইন ফরেষ্ট হিসেবে খ্যাত এই বনে রয়েছে হরেক প্রজাতির বন্যপ্রাণী আর বৃক্ষাদি। রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির বৃক্ষরাজি। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান শ্রীমঙ্গল হতে মাত্র ১০ কিঃমিঃ আর ঢাকা থেকে ১৯৬ কিঃমিঃ। এর  আয়তন ১২৫০ হেক্টর। বিরল প্রজাতির উল্লুকের বাস এখানে। মোট ১৬টি উল্লুক পরিবার হাজারো পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। উল্লুক গিবনস্ লেজ বিহীন বন্য প্রাণী, অনেকটা বানরের মত। ভারত, চায়না, মায়ানমার এবং বাংলাদেশসহ ৪টি দেশে ওদের প্রজাতি সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করছে। আর কোন দেশে উল্লুকের বসবাসের তথ্য পাওয়া যায়নি। উল্লুক সাধারণত পরিবারবদ্ধ হয়ে কমপক্ষে ২ থেকে ৫সদস্য মিলে বসবাস করে। পুরুষ উল্লুক কালো রঙের এবং মহিলারা হয়ে থাকে সাদা ও বাদামী মিশ্রিত। উল্লুক পাহাড়ের উচু ও বড় বড় গাছের ডালে বাস করে। সব চেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে উল্লূকের হই হুল্লা ডাক। অনেক দুর থেকে শুনা যায় উল্লুকের ধ্বনি। যা চুম্বকার্ষনের মতই টেনে নেয় পর্যটকদের। এছাড়াও এই বনের উল্লেখযোগ্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে বানর, চশমা বানর, মুখপোড়া হনুমান, লজ্জাবতী বানর, মায়া হরিণ, বন্য শুকর ইত্যাদি। ২৪৬ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এরমধ্যে ৮ প্রজাতির সুচক পাখিও আছে। সুচক পাখির মধ্যে ভিমরাজ, পাহাড়ী ময়না, কাওধনেস, বন মোরগ, ফোঁটা কন্টি সাতভায়লা এবং শ্যামা। লাউয়াছড়ার নৈসর্গিক দৃশ্য আর একটানা ঝিঁঝিঁ পোকার গুঞ্জন সত্যিই প্রশান্তি দেয় চোখ আর মনের। শুধু কি তাই? বিভিন্ন ধরণের হরিণ হয়তো অনেকেই দেখেছেন, কিন্তু মায়া হরিণ! হ্যাঁ, মায়্া হরিণ অবলোকন করতে হলেও লাউয়াছড়া। ভোরে লাউয়াছড়ার ফুট ট্রেইলে হাটতে থাকুন। চারদিকে র্নিঝুম আর নির্জনতা ভেদ করে পাহাড়ের মধ্য থেকে ভেসে আসবে মায়া হরিণের ডাক! ভয়ের কিছু নেই, শব্দগুলো পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনিত হয়ে পর্যটকদের কর্ণকুহরে মায়াময়ী ইন্দ্র জালের সৃষ্টি করবে। হয়তো শরীরটা খানিক ছমছম করতে পারে, লাগতে পারে রোমাঞ্চ!

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গা ঘেষা রয়েছে ৩টি আদিবাসী পল্লী। আদিবাসি ২টি খাসিয়া ( মাগুরছড়া ও লাউয়াছড়া) ও ১টি ত্রিপুরাদের পাড়া। আদিবাসীদের জীবনযাত্রা সাধারণত পাহাড়ী কৃষ্টি কালচারের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠে যা সাধারনের থেকে অনেক আলাদা। আদিবাসিদের জীবনযাত্রা, কৃষ্টি, ঐতিহ্য ইত্যাদি দেখাও পর্যটকদের জন্য বাড়তি পাওনা।



কিভাবে যাবেন : 
ঢাকা থেকে ট্রেন ও বাস দুভাবেই যাওয়া যায় শ্রীমঙ্গল। সিলেটগামী আন্তঃনগর ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যেতে সময় লাগে ৫ থেকে সাড়ে ৫ ঘন্টা। আর বাসে সময় লাগে প্রায় ৪ ঘন্টা। ঢাকার কমলাপুর ও সায়দাবাদ থেকে বাস ছাড়ে এক ঘন্টা পরপর। শ্রীমঙ্গল পৌছে মাইক্রোবাস অথবা সিএনজি নিয়ে খুব সইজেই চলে যাওয়া যায় লাউয়াছড়া বনে।

কোথায় থাকবেন : 
শ্রীমঙ্গল শহরে রয়েছে ভালোমানের দুটি হোটেল। একটি টি-টাউন ও অন্যটি ইাউনাইটেড। আর চা বাগান ও এর আশেপাশে রয়েছে বেশকিছু বাংলো টাইপের থাকার জায়গা। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গা ঘেষা হিড। তবে এখানে এসে নিরাপদে বন ও বনের পরিবেশের পরিপূর্ন আনন্দ উপভোগ করতে চাইলে একজন গাইড থাকা ভালো । যার ব্যবস্থা বন কতৃপক্ষ করে থাকেন। তবে আর দেরি কেন বেড়িয়ে পড়ুন লাউয়াছড়ার উদ্দেশ্যে।  




ধন্যবাদ সবাইকে।

ভ্রমণ :: মৌলভীবাজার, সিলেট - ১।

মাধবকুণ্ডের ঝরনা তলায়


মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ড ঝরনা যে কোনও ভ্রমণপিপাসুর নজর কাড়বে। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এ পাহাড়ি ঝরনাধারা ও তার চারপাশের অপরূপ মনোলোভা সবুজ প্রকৃতি সব শ্রেণীর পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। গঙ্গাসাড়া নামক পাহাড়ি ছড়ার প্রায় ২০০ ফুট উপর থেকে যুগ যুগ ধরে গড়িয়ে পড়ছে অবিরাম জলরাশি। দৃষ্টিনন্দন এ ঝরনা শুধু পর্যটকদের কাছেই আকর্ষণীয় স্থান নয়, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছে তীর্থস্থান হিসেবেও সুপরিচিত। এ ঝরনাধারায় যে কুণ্ডের সৃষ্টি হয়েছে সে কুণ্ডের পাশেই স্থাপন করা হয়েছে শিবমন্দির। হিন্দুমতে, এ শিবমন্দির স্থানটির মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। এ শিবমন্দিরকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর চৈত্রের মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীতে স্মানে আসে শত শত পুণ্যার্থী।
সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার কাঁঠালতলী থেকে রিকশায় অথবা স্কুটারে যেতে হয় মাধবকুণ্ডে। ১৫ কিলোমিটার সমতল ও পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পিচঢালা পথ, সেই সঙ্গে পাহাড়ের পাদদেশে বোনা চা বাগানের অপরূপ প্রকৃতি উপভোগ করতে করতে কখন যে মূল স্পটে চলে যাবেন, ভাবতেই পারবেন না। ঝরনার শব্দ কানে আসতেই এক অন্যরকম আনন্দানুভূতিতে মন নেচে উঠবে। চারদিকেই গাঢ় সবুজের হাতছানি। এখানে পাহাড়ের গায়ে ঘন গাছপালা, পাথরের সাজ, সুনিপুণ মাটির স্তরবিন্যাস, বৈচিত্র্যময় শিলাগঠন সবকিছুতেই যেন চোখ স্থির হয়ে যেতে চায় বারবার। কঠিন শিলায় গড়া পাহাড়ের উঁচু থেকে ঝিরিঝিরি ছন্দে নেমে আসছে পানির রেশমি লহর। সাদা সাদা ফেনা তুলে উচ্ছল সেই পানির স্রোত অবিরাম গতিধারায় নিচে পড়ছে। পানি পড়ার স্থানটিতে তৈরি হয়েছে একটি ছোট্ট লেক। দেখলেই ইচ্ছা হবে পানিতে নামার। সাঁতার জানা থাকলে আর সঙ্গে বাড়তি কাপড় থাকলে নেমে যেতে পারেন লেকের হিমশীতল জলধারায়। তবে ঝরনার একেবারে কাছে যাওয়া মোটেই সমীচীন নয়, যে কোনও সময় ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। কেননা, লেকটি গভীর। কেউ পানিতে গা ভেজাতে না চাইলে তাদের জন্য রয়েছে নৌকার ব্যবস্থা। যে কেউ নৌকায় করে ছোট্ট আয়তনের পুরো লেকটি ঘুরে দেখতে পারেন। চারদিকে পাহাড় আর পাহাড়ের বুকে জঙ্গল, এর মাঝখানে জলপ্রপাতের দৃষ্টিনন্দন ঝরনা যে কোনও পর্যটকের ভ্রমণপিপাসার মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে। এখানে একটানা তিন-চার ঘণ্টা কাটানোর পর জলপ্রপাতের অনতিদূরেই পর্যটন কর্পোরেশনের ছোট রেস্টহাউসে বিশ্রাম নিতে পারেন। চারদিকে বাগানঘেরা রেস্টহাউসে বসে চা অথবা হালকা নাশতা করে শরীরটাকে একটু চাঙা করে নিয়ে ফেরার জন্য রওনা হতে পারেন। ফেরার পথে যেতে পারেন মনিপুরী আদিবাসী পল্লীতে। তাদের হাতে বোনা কাপড়ও কিনে নিতে পারেন। তবে আদিবাসী পল্লীতে যাওয়ার আগে অবশ্যই একজন গাইডকে সঙ্গে নিতে হবে। কেননা পাহাড়ি পথে রয়েছে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা।


যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি মাধবকুণ্ডে যাওয়ার কোনও ট্রান্সপোর্ট নেই। বাসে মৌলভীবাজার নেমে সেখান থেকে বড়লেখার গাড়িতে করে কাঁঠালতলী নামতে হবে। সেখান থেকে লোকজন কম হলে রিকশায় আর বেশি হলে স্কুটার ভাড়া করে মাধবকুণ্ডে পৌঁছাতে হবে। রিকশায় ভাড়া নেবে ৭০-৮০ টাকা আর স্কুটারে জনপ্রতি ৬০-৭০ টাকা। তবে যে বাহনই নেন না কেন ফেরার সময় ওই বাহনেই ফিরতে হবে। কেননা সেখানে অতিরিক্ত কোনও যানবাহন নেই। আর যদি ট্রেনে আসতে চান, তাহলে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সিলেটের ট্রেনে কুলাউড়া জংশনে নামতে হবে। সেখান থেকে বড়লেখাগামী বাসে চড়ে কাঁঠালতলী আসতে হবে। অথবা রেলস্টেশন থেকে সরাসরি স্কুটার ভাড়া করেও যেতে পারেন।



থাকা-খাওয়া
কুলাউড়ায় রয়েছে কয়েকটি বিভিন্ন মানের হোটেল। ট্রেনে এসে এসব হোটেলে 
উঠতে পারেন। বাসে এলে মৌলভীবাজারের হোটেলে উঠতে হবে। কেননা কাঁঠালতলীতে তেমন কোনও ভালো মানের হোটেল নেই। এখানে খাবার-দাবার দামের দিক থেকে ঢাকার সাথে তেমন কোনও তারতম্য নেই। তবে মূল স্পটে যাওয়ার আগে বিস্কুট বা হালকা স্ম্যাক্স ও খাবার পানি সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার জন্যও মূল স্পটের কাছেই কিছু হোটেল রয়েছে। দিনব্যাপী সেখানে থাকতে চাইলে এ হোটেলগুলো থেকে দুপুরের লাঞ্চ সেরে নিতে পারেন। দামের দিক থেকে তেমন কোনও ঝামেলা নেই।



শুক্রবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৪

ভ্রমণ :: কক্সবাজার।

গন্তব্য তৈঙ্গা পাহাড়


বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের উপজেলা টেকনাফের অন্তর্গত সংরক্ষিত বন টেকনাফ গেম রিজার্ভ। কক্সবাজার থেকে ৪৮ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং টেকনাফ থেকে উত্তর দিকে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে এই গেম রিজার্ভের অবস্থান। সংরক্ষিত এ বনের ভূ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য এককথায় অনন্য। সবুজ এ পাহাড়ি অঞ্চলে ভঙ্গিল পর্বতের নমুনা, মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক ঝরণা, উষ্ণমণ্ডলীয় চিরসবুজ বন পর্যটকদের রোমাঞ্চের বহুবিধ স্বাদ উপভোগের সুযোগ করে দেবে। এই গেম রিজার্ভের মধ্যবর্তী স্থানে লম্বা ও সরু পাহাড়ের শ্রেণী দক্ষিণ দিক থেকে উত্তরে বিস্তৃৃত। গেম রিজার্ভের সর্বোচ্চ চূড়া ‘তৈঙ্গা’ নামে পরিচিত। তৈঙ্গা পাহাড়ের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০০ ফুট। ১৯৮৩ সালে এই সংরক্ষিত গেম রিজার্ভ ঘোষিত হয়। এই গেম রিজার্ভের আয়তন ১১,৬১৫ হেক্টর।



জীববৈচিত্র্য : এই গেম রিজার্ভ দেশের সর্বোচ্চ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ। এখানে প্রায় ৩০০ প্রজাতির বৃক্ষরাজি, ২৮৬ প্রজাতির পাখি, ৫৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৩ প্রজাতির উভচর, ৫৬ প্রজাতির সরীসৃপ পাওয়া গেছে। বুনোহাতির সবচেয়ে বড় দলটি এই গেম রিজার্ভে অবস্থান করে যা দেশের মোট হাতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এছাড়া বনে বিলুপ্তপ্রায় বুনোকুকুর, উল্লুক, সাম্বার হরিণ, উডুক্ক– কাঠবিড়ালী, সজারু প্রভৃতি প্রাণীর দেখা মেলে। ১৯৮২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগ পরিচালিত জরিপে দুর্লভ প্রজাতির স্ট্যাম্প টেইলড্ ম্যাকাক বা খাটো লেজি বান্দর দেখার রেকর্ড রয়েছে।

কুঠি বা ভঙ্গিল পাহাড় : বিশেষজ্ঞদের মতে, অতীতে এই পাহাড় শ্রেণী বঙ্গোপসাগরের তলদেশে ছিল। লাখ লাখ বছরের বিবর্তনের ফল বর্তমানের এই অবস্থা। ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এই কুঠির শিলাস্তরে শামুক-ঝিনুকের জীবাশ্ম বা ফসিল এবং সল্টক্রিক বা লবণাধার। কুঠির সল্টক্রিক বুনো প্রাণীর লবণের অভাব মেটায়। রাতে বুনোপ্রাণী সল্টক্রিক চেটে শরীরে লবণের চাহিদা পূরণ করে। 



তৈঙ্গা ঝিরি : কুঠির আনুমানিক ২০০ ফুট পশ্চিমে প্রবাহিত তৈঙ্গা ঝিরি। ঝিরির পানি স্ফটিক স্বচ্ছ এবং জলজপ্রাণী বৈচিত্র্যে ভরপুর। প্রায় ৭০০ ফুট উচ্চতা থেকে শিলাময় পাহাড়ের ধাপে ধাপে এই ঝরণা ক্রমান্বয়ে ঝিরি ধরে প্রবাহিত হয়েছে।
 
তৈঙ্গা চূড়া  : গেম রিজার্ভের অন্যতম আকর্ষণ হল তৈঙ্গা চূড়া। এ চূড়া অত্যন্ত খাড়া এবং ট্রেকারদের জন্য আদর্শ। তৈঙ্গা চূড়া থেকে দূরে বঙ্গোপসাগর, নাফ নদী, মিয়ানমার সীমানার পাহাড় শ্রেণী এবং গেম রিজার্ভের এরিয়েল ভিউ অবলোকন বাস্তবেই এক অপার্থিব অনুভূতি।

ভ্রমণের সেরা সময় : অক্টোবর মাস থেকে ফেব্র“য়ারি মাস অবধি এই এলাকা ভ্রমণের সেরা সময়। মার্চ-এপ্রিল মাসে পাহাড়ের গাছগাছালি মারা যাওয়ায় সব ন্যাড়া হয়ে যায় এবং ঝিরির পানি ক্ষীণ ধারায় প্রবাহিত হতে থাকে। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটক জুন-জুলাই মাসের সবুজ পাহাড়, সতেজ ঝিরি-ঝরণা দেখে আসতে পারেন।
 
যাতায়াত : ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিমান অথবা বাসে। সেখান থেকে ননস্টপ টেকনাফগামী বাসে হ্নীলা বাজার। হ্নীলা বাজার থেকে তৈঙ্গা পাহাড় অভিমুখে ট্রেকিং। এসি বাস : ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে যোগাযোগ করতে পারেন গ্রিনলাইন (৯৩৩৯৬২৩, ৯৩৪২৫৮০) সোহাগ পরিবহন (ফোন ৯৩৩১৬০০, ৭১০০৪২২), সিল্ক লাইন (ফোন ৭১০২৪৬১, ৮১০৩৮২) ভাড়া ৬৫০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকা। নন এসি বাস : নন এসি বাসে যেতে যোগাযোগ করতে পারেন এস. আলম (ফোন ৯৩৩১৮৬৪, ৮৩১৫০৮৭)
 
আবাসন : ধারের কাছে হ্নীলা বাজার সাধারণ মানের হোটেল। ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা প্রতি রাত। টেকনাফ শহরে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেল ভাড়া ৫০০-১২৫০ টাকা। এছাড়া টেকনাফ শহরে সাধারণ মানের একাধিক হোটেল পাওয়া যাবে ২৫০-৫০০ টাকার মধ্যে।
 
গাইড : তৈঙ্গা পাহাড় ভ্রমণের সময় প্রশিক্ষিত গাইড সঙ্গে নেয়া আবশ্যক। নৈসর্গ সাপোর্ট প্রজেক্ট এই এলাকায় ইকোট্যুরিজম ইনফ্রোসট্রাকচার নির্জনে কাজ করে চলেছে। হ্নীলা বাজারের কাছে কক্সবাজার-টেকনাফ রোডের পাশে নিসর্গ অফিসে গাইডের খোঁজ করা যেতে পারে।


বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করতে পারেন :  ফোন ৯৮৭৩২২৯ 


ধন্যবাদ সবাইকে।