শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৪

ভ্রমণ:: বর্ষাতে রাঙ্গামাটির পথে পথে।

বর্ষায় রাঙ্গামাটির পথে। 


বর্ষায় অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়ে ওঠে পাহাড়িয়া শহর রাঙ্গামাটি। চারদিকে হ্রদ, এরই মাঝখানে পাহাড়ের গায়ে রাঙ্গামাটি শহর। বর্ষায় এখানের হ্রদ ও কর্ণফুলী নদীপথে জলে থই থই করে। মনে হয়, রাঙ্গামাটি হ্রদের শহর। বর্ষায় এখানে হ্রদ দেখায় আনন্দ আছে। নীল নব ঘনে আষাঢ় গগনে... আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে... বর্ষায় রাঙ্গামাটিতে গেলে কবিগুরুর কথা কেউ মানতে চায় না। যতই বর্ষা হোক না কেন, ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে হ্রদ হয়ে দূরে বহুদূরে হারিয়ে যেতে মন চায়। বর্ষায় রাঙ্গামাটির যেদিকে যাবেন সেদিকেই হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হবে। এমন নয়নলোভা জায়গা পাহাড়িয়া রাঙ্গামাটি। বাংলার সব সৌন্দর্য এখানে এসে উছলে পড়েছে...। যেদিকে চোখ যায় তখন মনে হয়, আমরা আসব বলেই কি রাঙ্গামাটি বুঝি রঙিন হয়ে সেজে বসে আছে। রাঙ্গামাটি হয়ে শুভলং কিংবা বরকলের দিকে গেলে দেখবেন নদীর দুই পাশে পাহাড়, অরণ্য আর ঝরনা। নৌকায় বসে ঝরনার সৌন্দর্য উপভোগ করা জীবনের স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকতে পারে। ঝুমুর ঝুমুর নূপুর বাজে ঐ পাহাড়ে... এরকম মনে হবে কখনও কখনও। হ্রদের পর হ্রদ দেখে দূরে বহুদূরে চলে যেতে ইচ্ছে হবে।

যেভাবে যাবেন : 

ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি যাওয়ার জন্য রয়েছে ডলফিন পরিবহন। ইচ্ছে করলে হানিফ পরিবহন, টোকিও লাইন, গ্রিন লাইনের যে কোনও একটি পরিবহনে চট্টগ্রাম গিয়ে এরপর রাঙ্গামাটির বাস ধরে রাঙ্গামাটিতে। চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি পৌঁছতে ১ ঘণ্টা সময় লাগে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে হানিফ পরিবহনে যেতে চাইলে আগেভাগে টিকিট বুকিং দিন। এজন্য যোগাযোগ করুন ম্যানেজার আবদুস সামাদ মণ্ডলের সঙ্গে। ফোন-০১৭১১-৮৮৩৬৮৯। 



হোটেলের খোঁজখবর : 

রাঙ্গামাটিতে রাত যাপন করার জন্য পর্যটনের মোটেল, হোটেল সুফিয়া, হোটেল জেরিন, মধুমতি, গোল্ডেন হিল, বনফুল, ডিগনেটি, শাপলা, সৈকত প্রভৃতি রয়েছে। যেখানে পছন্দ হয় সেখানে উঠুন। তবে পর্যটন মোটেলে ভাড়াটা একটু বেশি।

যা যা দেখবেন : 

বাস থেকে রাঙ্গামাটি নেমে এক স্বপ্নের ভুবনে হারিয়ে যাবেন। এখানে দেখার জায়গা অনেক। দু-তিন দিন কাটিয়েও মন ভরে না। ইচ্ছে হবে আরও কয়েকদিন থাকার। এখানকার মতো এদেশে আর কোথাও এমন পাহাড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দর্শন কিন্তু আর কোথাও সহজে মেলে না। এখানের চারদিকে রয়েছে সোনালি আর রুপালি খেলা। রাঙ্গামাটির হ্রদে বেড়ানোর জন্য নৌকা, স্পিডবোট রয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে নৌকা নিয়ে হ্রদে বেড়াতে ইচ্ছে হবে। তাহলে বুঝতে পারবেন হ্রদ কত যে সুন্দর, কত যে বিচিত্র এর রূপ। ঝরনা রয়েছে এখানে অনেক। পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরছে ঝরনা। এখানে গিয়ে পানি স্পর্শ করুন বেশ ভালোই লাগবে। ঝুলন্ত সেতু দেখবেন পর্যটন কমপ্লেক্স এলাকায়। এটি পেরিয়ে এপার থেকে ওপারে কয়েকবার গিয়েও মন ভরবে না। তাই এখানে বারবার ছুটে আসতে মন চাইবে। ঝুলন্ত পুল পেরিয়ে একটু দক্ষিণে এলেই দেখবেন বসবার জন্য বেঞ্চ রয়েছে। একটি বিকেল না হয় এখানে কাটিয়ে দিন। তখন চারদিকের নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে আপনিও হয়তো কোনও না কোনও গানের কথা ভাববেন। কুচ বরণ কন্যারে তোর মেঘ বরণ কেশ/ আমায় লয়ে যাওরে নদী সেই যে কন্যার দেশ/পরনে তার মেঘ ডম্বুর উদয় তারার শাড়ি... গানের এ কথাগুলো বারবার হদয়ে দোল খেয়ে যাবে।
রাঙ্গামাটির একটি সুন্দর দর্শনীয় স্থান রাজবন বিহার। এটি রাঙ্গামাটি শহরে ঢুকতেই খাগড়াতে অবস্থিত। এখানে চারদিকেই টিলা-পাহাড়। দূরের টিলা পাহাড়গুলো অবশ্য জঙ্গলে ঢাকা। বর্ষাকালে রাঙ্গামাটির হ্রদে যৌবনের ঢল নামে। রাজবন বৌদ্ধবিহার ঘুরে দেখতে পারেন।
এখানে চারদিকে আরণ্যক পরিবেশে বিহার আর মন্দির দুটি অপরিসীম শান্তির জয়গা মনে হবে। ডিঙ্গিতে চেপে কর্ণফুলী নদী পেরিয়ে আরেকটি টিলায় এসে এবার চাকমা রাজার বাড়ি দেখুন। রাঙ্গামাটির উপজাতি সংস্কৃতি জাদুঘরটি দেখে নিতে পারেন। উপজাতীয়দের আর্থ-সামাজিক জীবনের সুন্দর প্রতিফলন উঠেছে এই জাদুঘরে। দূরের পাহাড় অরণ্যাঞ্চলে যাওয়ার সময় কিছুটা ভয় ভয় লাগবে; তবুও আনন্দ আছে এখানের সৌন্দর্য উপভোগ করে, বার বার এই রাঙ্গামাটিতে উদার সম্ভারে গরিয়সী মনে হবে।

যা যা জানবেন : 

এখানে বেড়াতে গিয়ে জানবেন, চট্টগ্রামের ৪৮ মাইল পূর্বে এবং কাপ্তাইয়ের ২০ মাইল উত্তরে রাঙ্গামাটির অবস্থান। বনাঞ্চল কেটে ১৯৬০ সালে তৈরি করা হয় রাঙ্গামাটি শহর। এই শহরে ও আশপাশের পাহাড়িয়া এলাকায় বাস করে চাকমা, মগ, টিপরা, খুমি, মুরংসহ অন্যান্য উপজাতি।  









ধন্যবাদ সবাইকে। 


ভ্রমণ :: মৌলভীবাজার, সিলেট -৪।

বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি । 




বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত। এ হাওরের আয়তন প্রায় ২০,৪০০ হেক্টর। বর্ষাকালে বিস্তৃত জলরাশি এ হাওরের রূপ ঠিক যেন ভাসমান সাগর। আদিগন্তু বিস্তৃত জলরাশি। জলের মাঝে মাঝে দুই-একটি বর্ষীয়ান হিজল, তমাল বৃক্ষ। অথচ শীতকালে বিস্তৃত এই হাওর ধু-ধু সবুজপ্রান্তর, কোথাও বা ধান ক্ষেত এবং খানাখন্দ নিচু ভূমিতে প্রায় ২৩৬টি বিলের সমষ্টি। হাকালুকি হাওর মাছের জন্য প্রসিদ্ধ। হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের সংরক্ষিত জলাভূমি। শীত মৌসুমে এশিয়ার উত্তরাংশের সাইবেরিয়া থেকে প্রায় ২৫ প্রজাতির হাঁস এবং জলচর নানা পাখি পরিযায়ী হয়ে আসে। এছাড়া স্থানীয় প্রায় ১০০ প্রজাতির পাখি সারাবছর এখানে দেখা মেলে। এই হাওর অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। মৎস সম্পদ এবং জলজ প্রাণী-উদ্ভিদের জীববৈচিত্র্য এককথায়  আসাধারণ। ধু-ধু প্রান্তরের এই চারণভূমি ও বিলগুলো মানুষের জীবন-জীবিকা এবং পরিযায়ী পাখির কলকাকলি অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটককে দুর্বার আকর্ষণে রোমাঞ্চের হাতছানি দেয়। হাকালুকি হাওরে পরিযায়ী হাঁসের মধ্যে চখাচখী, রাজসরালী, গরাদমাথা রাজহাঁস, ধলাবেলে হাঁস, গাডওয়াল, ইউরেসীয় সিথীহাঁস, টিকিহাঁস, পাতিহাঁস ম্যার্গেঞ্জার প্রভৃতির দেখা মেলে। দেশি প্রজাতির মধ্যে বেগুনি কালেম, পানমুরসী, পাতিকুট, ডাহুক, ইউরেশীয় মুরগি চ্যাগা, ল্যাঞ্জা চ্যাগা, রাঙ্গাচ্যাগা, জলাপিপি, ময়ূরলেজা পিপি, পাতি জিরিয়া,  হাট্টিটি, ভূবনচিল, শঙ্খচিল, বিলুপ্ত প্রায় কুড়াল ঈগল, বড়খোঁপা ডুবুরি, ছোট পানকৌড়ি, খয়রা বক, ধূসর বক, শামুক খোল প্রভৃতি পাখি অন্যতম। হাকালুকি হাওরে অনেক প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। চিতল, আইড়, বাউশ, পাবদা, মাগুর, শিং, কৈ প্রভৃতি মাছ এখানে রয়েছে। জলজ উদ্ভিদের মধ্যে বিলুপ্ত প্রায় মাকনা হাওর অঞ্চলের পুটি, হিঙ্গাজুর, হাওয়া প্রভৃতি বিলে যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান। এছাড়া শাপলা, শালুক, পদ্ম প্রভৃতি জলজ উদ্ভিদ ও আশাব্যঞ্জকহারে এখানে রয়েছে। এ হাওর সংরক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও প্রতিটি বিল ৩ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়ে থাকে। ফলে মৎস সম্পদ আহরণের জন্য পানি সেচে ফেলার কারণে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ দারুণভাবে বিপন্ন হয়ে পড়ে। পালাক্রমে বিলগুলোতে মাছ ধরা হয়। যেসব বিলে মাছ ধরা হয় না সেসব বিল পাখি ও জলজ উদ্ভিদের জন্য মনোরম আবাসস্থলে পরিণত হয়। ২০০৬ সালের জানুয়ারি-ফেব্র“য়ারি মাসে এ হাওরের পুট বিল, হাওয়া বিল, হিঙ্গাজুর, জল্লার বিল, মালাম প্রভৃতি বিলে মাছধরা বন্ধ থাকায় চমৎকার জীববৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়েছে। 


হাকালুকি হাওর ভ্রমণের সেরা সময় : 

নভেম্বর থেকে ফেব্র“য়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় হাওর ভ্রমণের জন্য সেরা। এসময় এখানে প্রচুর সংখ্যায় পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে চারদিক মুখর থাকে। জলজ উদ্ভিদ, মাছপ্রেমীদের জন্য এটা সেরা মৌসুম।

আবাসন : 


হাওর এলাকায় বিল ইজারাদারদের দোচালা কুটিরগুলোয় দু‘চারজন পর্যটক থাকার জন্য চমৎকার। তবে অবশ্যই বিলমালিকের অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। সবচেয়ে ভালো হয় বিল এলাকায় তাঁবু ফেলে রাত্রি যাপন। জোছনা রাতে তাঁবুতে যাপন, পাখি পর্যবেক্ষণ যে কোনও অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটককে বিমোহিত করবে।

আহার : 


সঙ্গে আনা চাল-জলের রেশন হাওর এলাকার শ্রমজীবী মানুষকে সামান্য কিছু টাকা দিলে পছন্দ মতো টাটকা মাছের ঝোলের তরকারি দিয়ে তা পরিবেশন করবে অথবা ওদের সঙ্গেও সুস্বাদু খাবার শেয়ার করা যাবে অনায়াসে। এখানকার বাথানে গরু-মহিষের দুধও খুব সস্তায় পাওয়া যায়। সঙ্গে হালকা চা, নাশতা, বিস্কুট, পাউরুটি নিলে খুব ভালো হয়।

যাতায়াত : 


ঢাকা থেকে ট্রেনে অথবা বাসে কুলাউড়া শহর থেকে রিকশা যোগে পছন্দমতো বিলের নিকটমতো গ্রাম অতঃপর ট্রেকিং। ঢাকা থেকে কুলাউড়া ট্রেনভ্রমণে খরচ শ্রেণীভেদে ১৩০ থেকে ৪৫০ টাকা। এসি বাস নেপচুন (ফোন ৭১০১৯৫১, ৯১২৩০৯২), শ্যামলী পরিবহণ (ফোন ৭১০১৭২৫) ভাড়া যথাক্রমে ৩৫০ টাকা এবং ৩০০ টাকা। কুলাউড়া শহর থেকে অটোরিকশা ভাড়া ১০০ থেকে ১৫০ টাকা এবং রিকশা ভাড়া ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকার মধ্যে।

সঙ্গে যা নিতে হবে : 


ভালো বড় ব্যাকপ্যাক, তাঁবু, ম্যাট, এয়ার পিলো, রেইন কোট, শীতের উপযোগী জ্যাকেট, গামছা, কাদা-পানিতে চলন উপযোগী রাবারের নাগরা জুতা, পাখি পর্যবেক্ষণের জন্য বাইনোকুলার, ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যাটারি, মেমরিকার্ড, শুকনো খাবার, চা, চিনি দুই-একদিনের জন্য রেশন, প্রাথমিক ওষুধ-চিকিৎসা সরঞ্জাম ইত্যাদি।  









ধন্যবাদ সবাইকে। 

ভ্রমণ:: পাহাড়ী জেলায় , রাঙ্গামাটিতে।


পাহাড়ের গায়ে পাহাড়ি জনপদ।  



পাহাড়, নদী হৃদ উপত্যকার নৈসগিক রূপের রানী বাংলাদেশের এই পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি। উজার প্রকৃতির নিপাট আলিঙ্গন যেন আগলে রেখেছে এই জেলাটকে রঙ্গিন হাওয়া আর প্রকৃতির অনুভাব করার জন্য এখানে আছে বৈচিত্র্য। দেশ বিদেশের দর্শনার্থীদের কাছে রাঙ্গমাটি আকর্ষন অফুরন্ত। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে ৭৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাসে সময় নেবে প্রায় দুই ঘন্টা। রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে কয়েক কিলোমিটার অগ্রসর হলেই দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। পার্বত্য স্কুল রাস্তা সাপের মতো এগিয়ে গেছে। রাঙ্গামাটি যাওয়ার বাকে বাকে অনুভাব করা যাবে দারুন রোমাঞ্চ। ছবির মতো পাহাড়ের পর পাহাড়। পাহাড়ের পুরোটাই গহিন অরন্যে ঢাকা, কোন পাহাড়ে জংলা পরিস্কার কওে ঢালু জমিতে জুম চাষ করা হয়েছে। পথে পথে দেখা হবে চাকমা, মগ, মুরং প্রভৃতি অদিবাসী সম্প্রদায়ের প্ররিশ্রমী মানুসের সঙ্গে। ঢাকা থেকে রাত দশটায় বাসে উঠলে খুব ভোরেই পৌছায় রাঙ্গামাটি শহরে। শহরে নেমে হোটেলে একটু বিশ্রাম নিয়ে বেড়িয়ে পড়তে পারবেন। প্রথম দিনে শহর ও এর আশ পাশের দর্শনীয় জায়গাগুলোতে বেড়ানো যেতে পারে। রাঙ্গামাটি শহরের শুরুর দিকটায় রয়েছে উপজাতীয় জাদুঘর অটোওয়ালাকে বললে আপনাকে নিয়ে যাবে জাদুঘরের সামনেই। এখানে রয়েছে রাঙ্গামাটিসহ পার্বত্য অঞ্চলের বসবাসরত নানান অদিবাসীদের নানা সরঞ্জামাদী পোশাক, জিবনাচরন এবং বিভিন্ন ধরনের তথ্য। ছোট অথচ অত্যন্ত সমৃদ্ধ এ জাদুঘরটি। খোলা থাকে সোম থেকে শুক্রবার সকাল ৯.৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৫.৩০ মিনিট পর্যন্ত। শনি - রবিবার ও অন্ন্যান্য সরকারী ছুটির দিন গুলোতে জাদুঘরটি বন্ধ থাকে। জাদুঘরে প্রবেশে বড়দের জন্য পাঁচ টাকা ও ছোটদের জন্য দুই টাকা লাগবে। উপজাতীয় জাদুঘরটি দেখে চলে আসতে পারেন পাশ্ববর্তী রাজবন বিহারে এ অঞ্চলের বৌদ্ধ ধর্মাম্বীদের একটি তীর্থস্থান এই রাজবন বিহার। এখানে আছে একটি প্রার্থনালয়, একটি প্যাগোডা, বনভান্তের (বৌদ্ধভিক্ষ) আবাস্থল ও বনভান্তের ভোজনালয় প্রতি শুক্রবার ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপলক্ষে এখানে চলে প্রার্থনা। রাজবন বিহার দাড়িয়ে উপভোগ করতে পারেন কাপ্তাই লেকের নয়নাভিরামের সৌন্দর্য। রাজবন বিহারের পাশেই কাপ্তাই লেকের ছোট্র একটি দ্বীপজুড়ে রয়েছে চাকমা রাজার বাড়ী। নৌকায় পার হয়ে খুব সহজেই যাওয়া যায় এই রাজারটিতে। আঁকাবাকা সিড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠে ছাদের ছায়ায় ইট বাধানো পথের মাথায় এ সুন্দর বাড়ীটি। এবার লেক পার হয়ে বেবিটেক্সিতে করে চলে আসুন রিজার্ভ বাজারে। রিজাভ বাজারের পর্যটন গুরুতের ছেয়ে বানিজ্যিক গুরুত্বের বেশি। রাঙ্গমাটির বিভিন্ন এলাকার উৎপাদিত বিভিন্ন রকম পন্য এনে জমা করা হয় এ বাজারে। ব্যস্থ এ জায়গা দিন দিন রাঙ্গমাটির অন্যতম বানিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। বাজারে দ্রব্য সামগ্রী পাইকারী দরে কিনতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ফল, মসলা, করতারী কিনে নিয়ে যায়। রির্জাভ বাজার থেকে এবার চলুন পর্যটন কমপ্লেক্স। রাঙ্গমাটি শহর থেকে এখানকার দৃরত্ব দুই কিলোমিটার। রাস্তার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে এই অল্প পথ নিমিষেই ফুরিয়ে যাবে। পর্যটন কমপ্লেক্স ও ভেতরেই রয়েছে সবার চেনা সুন্দর ঝুলন্ত সেতুটি। দশটাকার টিকেট কিনে একানে ঢুকে পড়ুন। 


ঝুলন্ত সেতু ধরে যতই এগোবেন ততই ছবির মতো দৃশ্য আপনার দু চোখকে হাতচানি দিবে। ঝুলন্ত সেতু পেরিয়ে ওপারে গেলে দেখা যাবে গাছগাছালি সমৃদ্ধ এ পাহাড়ে সবার জন্য তৈরী করে রাখা হয়েছে সিমেন্টের বেঞ্চি এ বেঞ্চেতে ক্লান্ত মানুষ গুলো বিশ্রাম নিতে পারেন। এখান থেকে কাপ্তাই নৌকা ভ্রমন করতে পারেন। নৌকা ভ্রমনের জন্য এখানে পেয়ে যাবেন নানা রকম বাহন। এ জায়গায় প্রথম দিনে ভ্রমন শেষ করে হোটেলে ফিরে যান। পরের পুরো দিনটি রাখুন কাপ্তাই লেক ভ্রমনের জন্য। শহরের রিজার্ভ বাজার ঘাটেই পাবেন কাপ্তাই লেকের ভ্রমনের নানা ইঞ্জিন বোট। ঝুলন্ত সেতুর কাছেও এরকম অনেক বোট পাবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে একটু বাড়তি টাকা গুনতে হবে শুধু শুধু। সারাদিনের জন্য একটি বোট ভাড়া করে সকালে সোজা চলে যান শুভলং বাজার। শুবলংয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে এবার ফিরতে শুরু করুন। ফিরতি পথের শুরুতেই হাতের বায়ে পাবেন শুভলং ঝরনা। ইচ্ছে হলে শরীরটা ভিজিয়ে নিতেন পারেন। কাপ্তাই লেকের দুপাশের আকাশছোঁয়া পাহাড়গুলো দেখতে দেখতে চলতে থাকুন। পথে দুপুরের খাবার সেরে নিতে পাবেন। টুকটুক ইকো ভিলেজ কিংবা বা পেদা টিংটিয়ে। শুরুতেই পড়বে টুকটুক ইকো ভিলেজ। কাপ্তাই লেকের একেবারে মাঝে এই ইকো ভিলেজটির সুন্দর সুন্দুর কটেজ রাত ও কাটাতে পারেন। এই রেস্তোরাটিতে পাবেন বিবিন্ন রকম পাহড়ি ম্যনু। সারাদিন কাপ্তাই লেকের এসব জায়গা ভ্রমনের জন্য একটি ইঞ্জিন বোটের ভাড়া পড়বে ১৫০০-৩০০০ টাকা। এছাড়া রাঙ্গামাটি শহর থেকে এখন প্রতিদিন শুভলং ছেড়ে যায় ভ্রমন তরী কেয়ারী, কর্ণফুলী। প্রতিদিন সকালে ছাড়ে আবার বিকেলে ফিরে আসে। ফিরতি পথে টুকটুক ইকো ভিলেজের বিরতি। যাওয়া আসা ভাড়া জনপ্রতি ২২০ টাকা। 

কিভাবে যাবেনঃ 
ঢাকার কলাবাগান, ফকিরাপুল ও কমলাপুর থেকে সরাসরি রাঙ্গামাটির উদ্দেশে ছেড়ে যায় ডলপিন পরিবহন, এস আলম পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, ইউনিক সার্ভিস ইত্যাদি। শ্যামলী পরিবহনের একটি শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস ঢাকা থেকে প্রতিদিন রাত দশটায় এবং রাঙ্গামটি থেকে সকাল সাড়ে দশটায় ছাড়ে। এছাড়া যে কোনো বাস, ট্রেন কিংবা বিমানে চট্টগ্রাম এসে সেখান থেকেও রাঙ্গামাটি যাওয়া যাবে। চট্টগ্রাম শহরের সিনেমা প্যালেসা এবং বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে সকাল সাতটা থেকে সন্ধা পর্যন্ত বিশ মিনিট পরপর রাঙ্গামাটি উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় বিরতিহীন বাস, ভাড়া জনপ্রতি ১০০-১২০ টাকা।

কোথায় যাবেনঃ 
রাঙ্গামটি শহরে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি হোটেল আছে। পর্যটন কমপ্লেক্সের ভেতরে পর্যটন হোটেল (০৩৫১-৬৩১২৬) শহরের কাঁঠাল তলীতে হোটেল সুফিয়া (০৩৫১-৬২১৪৫) রিজার্ভ বাজারে হোটেল গ্রিন ক্যাসেল (০৩৫১৬৩২৮২) কলেজ গেইট এলাকায় হোটেল জজ (০৩৫১-৬৩৩৩৪৮) নতুন বাজার ষ্টেশনে হোটেল আল বোমা (০৩৫১-৬১৯৫৯) পর্যটন রোডে হোটেল মাউন্টেন ভিউ (০৩৫১-৬২৮৪৮) ।  





ধন্যবাদ সবাইকে। 




ভ্রমণ :: মৌলভীবাজার, সিলেট -৩।

 পাহাড়ের সৌন্দর্য চায়ের ঘ্রাণে 



শ্রীমঙ্গলের রমেশ রামগৌড়ের সাতরঙ্গের চা : পর্যটকদের বিস্ময়
তিনি বাস করেন শ্রীমঙ্গলে। এখানে এখন তিনি দারুন জনপ্রিয়। তবে তার বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাওয়ে। তার নাম রমেশ রাম গৌড়। কিন্তু এ নামের চেয়ে তার অন্য একটি পরিচিতি এখন শ্রীমঙ্গল ছাড়িযে বাংলাদেশের অন্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে।তা হলো- রমেশ রাম গৌড়ের সাত রংয়ের চা। শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের বিস্মিত করে। লাউয়্যাছড়ায় ঘুরতে আসা পর্যটক সাত রঙের চা পান করেনি এমনটি খুব একটা হয়নি। এ চা পান করতে এেসছেন দেশের বিখ্যাত এবং স্বনামধন্যরা। এর থেকে বাদ পড়েননি সাবেক রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধানসহ গায়ক শিল্পী রাজনীতিবিদরাও। তাদের সাথে  তোলা ছবি স্বগৌরবে টাঙ্গিয়ে রেখেছেন তার -নীলকন্ঠ চা কেবিনে। রংয়ের সাথে স্বাদও ভিন্ন ভিন্ন এ চা প্রতি কাপ ৭০ টকা। অনেক গোপনীয়তায় তৈরী করেন এ চা। এক বারের লিকার দিয়ে একবারই চা বানানো যায়, তাই প্রতি লেয়ারের জন্য রাখা হয় ১০টাকা।লিকারটি ঠান্ডা হয়ে গেলে আর তা দিয়ে চা বানানো যায় না। শ্রীমঙ্গলের কালীঘাট সড়কের বিডিআর ক্যান্টিনটি এখন নীল কন্ঠের জণ্য রাতারাতি ব্যিখাত হয়ে গেছে ।
রমেশ জানান, শুধুমাত্র আগ্রহ থেকেই এক বছর চেষ্টার পর এটা আবিস্কার করতে সমর্থ হন। ভবিষ্যত পরিকল্পনা ১০ রঙয়ের চা বানানোর। এ চা বানানোর কৌশল জানতে কানাডার এক ব্যক্তি তাকে ১কোটি টাকা প্রস্তাব করেছিল, তাতেও তিনি রাজি হননি। এ চা বানানোর কৌশল শিখিয়েছেন ৩ ছেলে রাজু, রাজীব ও দীপ্তকে।
মনিপুরী ও খাসিয়া সংস্কৃতি সমতলের মানুষকেও টানে প্রবলভাবে
শ্রীমঙ্গলে এসে পাহাড়ে চড়বো না,তা কী হয়। পাহাড়ের চূড়ায় বাস করে স্থানীয় খাসিয়া আদিবাসীরা। উচু-নিচু, আকাঁ-বাকাঁ-সর্পিল পথে সাহসের সাথে জীপ চালায় ড্রাইভাররা। পাহরের উচুতে খাসিয়াদের অভ্যর্থনা আগতদের অভিভূত করে। ‘খ্যুবলাই’ বলে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। খাসিয়া ভাষায় খ্যুবলাই মানে নমস্কার বা সালাম। খাবার পর অতিথিদের পান না খাইয়ে ছাড়বেই না তারা। ছোট শিশুদের অবাক দৃষ্টি যেন এক বিস্ময়। খাসিয়া ও মনিপুরী সংস্কৃতি সমতলের মানুষকে টেনে নিয়ে যায় পাহাড়ের উচু চূড়ায় মনিপুরীদের তাঁত বোনা, খাসিয়াদের বড়দিনের অনুষ্ঠান এবং মনিপুরী নৃত্য : এ যেন এক পার্বত্য এবং সমতলের মেলবন্ধন। মাতৃতান্ত্রিক খাসিয়ারা প্রমান করেছে প্রযুক্তির ব্যবহারে কোন অংশে পিছিয়ে নেই। বাড়িতে ব্যবহার করছেন সোলার প্রযুক্তি। ঘরে ঘরে এখন টেলিভিশন। পাহারের ঢালুতে ছড়ায় গোসল সারেন মহিলারা। চূড়ায় কবরে খ্রিস্টান রীতিতে সমাহিত করা হয় মৃতদের । বিয়ে হয় খ্রিস্টান রীতিতে। বিয়ের রাতে শুকরের মাংস, বন্য হরিন বন্য মোড়গ রান্না করে ভোজের আয়োজন করে সবাই মিলে। মাতৃতান্ত্রিক হওয়ায় বিয়ের পর খাসিয়া বর চলে যায় বৌয়ের বড়িতে। 





সময় করে ঘুরে আসুন; সাত রং এর চা খেয়ে আসুন। ধন্যবাদ সবাইকে। 

ভ্রমণ :: মৌলভীবাজার, সিলেট -২।

নৈসর্গিক দৃষ্টিনন্দন লাউয়াছড়া 





ছোট্ট শহর শ্রীমঙ্গল। দৃষ্টিজুড়ে সবুজ, উটের পিঠের মতোন টিলা আর মনোরম চা বাগান- কোন স্থান ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে মেলে ধরবার জন্য যথেষ্ট। আরও যা রয়েছে তা হচ্ছে লাউয়াছড়া বন যা এক কথায় অনবদ্য। রেইন ফরেষ্ট হিসেবে খ্যাত এই বনে রয়েছে হরেক প্রজাতির বন্যপ্রাণী আর বৃক্ষাদি। রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির বৃক্ষরাজি। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান শ্রীমঙ্গল হতে মাত্র ১০ কিঃমিঃ আর ঢাকা থেকে ১৯৬ কিঃমিঃ। এর  আয়তন ১২৫০ হেক্টর। বিরল প্রজাতির উল্লুকের বাস এখানে। মোট ১৬টি উল্লুক পরিবার হাজারো পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। উল্লুক গিবনস্ লেজ বিহীন বন্য প্রাণী, অনেকটা বানরের মত। ভারত, চায়না, মায়ানমার এবং বাংলাদেশসহ ৪টি দেশে ওদের প্রজাতি সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করছে। আর কোন দেশে উল্লুকের বসবাসের তথ্য পাওয়া যায়নি। উল্লুক সাধারণত পরিবারবদ্ধ হয়ে কমপক্ষে ২ থেকে ৫সদস্য মিলে বসবাস করে। পুরুষ উল্লুক কালো রঙের এবং মহিলারা হয়ে থাকে সাদা ও বাদামী মিশ্রিত। উল্লুক পাহাড়ের উচু ও বড় বড় গাছের ডালে বাস করে। সব চেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে উল্লূকের হই হুল্লা ডাক। অনেক দুর থেকে শুনা যায় উল্লুকের ধ্বনি। যা চুম্বকার্ষনের মতই টেনে নেয় পর্যটকদের। এছাড়াও এই বনের উল্লেখযোগ্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে বানর, চশমা বানর, মুখপোড়া হনুমান, লজ্জাবতী বানর, মায়া হরিণ, বন্য শুকর ইত্যাদি। ২৪৬ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এরমধ্যে ৮ প্রজাতির সুচক পাখিও আছে। সুচক পাখির মধ্যে ভিমরাজ, পাহাড়ী ময়না, কাওধনেস, বন মোরগ, ফোঁটা কন্টি সাতভায়লা এবং শ্যামা। লাউয়াছড়ার নৈসর্গিক দৃশ্য আর একটানা ঝিঁঝিঁ পোকার গুঞ্জন সত্যিই প্রশান্তি দেয় চোখ আর মনের। শুধু কি তাই? বিভিন্ন ধরণের হরিণ হয়তো অনেকেই দেখেছেন, কিন্তু মায়া হরিণ! হ্যাঁ, মায়্া হরিণ অবলোকন করতে হলেও লাউয়াছড়া। ভোরে লাউয়াছড়ার ফুট ট্রেইলে হাটতে থাকুন। চারদিকে র্নিঝুম আর নির্জনতা ভেদ করে পাহাড়ের মধ্য থেকে ভেসে আসবে মায়া হরিণের ডাক! ভয়ের কিছু নেই, শব্দগুলো পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনিত হয়ে পর্যটকদের কর্ণকুহরে মায়াময়ী ইন্দ্র জালের সৃষ্টি করবে। হয়তো শরীরটা খানিক ছমছম করতে পারে, লাগতে পারে রোমাঞ্চ!

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গা ঘেষা রয়েছে ৩টি আদিবাসী পল্লী। আদিবাসি ২টি খাসিয়া ( মাগুরছড়া ও লাউয়াছড়া) ও ১টি ত্রিপুরাদের পাড়া। আদিবাসীদের জীবনযাত্রা সাধারণত পাহাড়ী কৃষ্টি কালচারের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠে যা সাধারনের থেকে অনেক আলাদা। আদিবাসিদের জীবনযাত্রা, কৃষ্টি, ঐতিহ্য ইত্যাদি দেখাও পর্যটকদের জন্য বাড়তি পাওনা।



কিভাবে যাবেন : 
ঢাকা থেকে ট্রেন ও বাস দুভাবেই যাওয়া যায় শ্রীমঙ্গল। সিলেটগামী আন্তঃনগর ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যেতে সময় লাগে ৫ থেকে সাড়ে ৫ ঘন্টা। আর বাসে সময় লাগে প্রায় ৪ ঘন্টা। ঢাকার কমলাপুর ও সায়দাবাদ থেকে বাস ছাড়ে এক ঘন্টা পরপর। শ্রীমঙ্গল পৌছে মাইক্রোবাস অথবা সিএনজি নিয়ে খুব সইজেই চলে যাওয়া যায় লাউয়াছড়া বনে।

কোথায় থাকবেন : 
শ্রীমঙ্গল শহরে রয়েছে ভালোমানের দুটি হোটেল। একটি টি-টাউন ও অন্যটি ইাউনাইটেড। আর চা বাগান ও এর আশেপাশে রয়েছে বেশকিছু বাংলো টাইপের থাকার জায়গা। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গা ঘেষা হিড। তবে এখানে এসে নিরাপদে বন ও বনের পরিবেশের পরিপূর্ন আনন্দ উপভোগ করতে চাইলে একজন গাইড থাকা ভালো । যার ব্যবস্থা বন কতৃপক্ষ করে থাকেন। তবে আর দেরি কেন বেড়িয়ে পড়ুন লাউয়াছড়ার উদ্দেশ্যে।  




ধন্যবাদ সবাইকে।

ভ্রমণ :: মৌলভীবাজার, সিলেট - ১।

মাধবকুণ্ডের ঝরনা তলায়


মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ড ঝরনা যে কোনও ভ্রমণপিপাসুর নজর কাড়বে। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এ পাহাড়ি ঝরনাধারা ও তার চারপাশের অপরূপ মনোলোভা সবুজ প্রকৃতি সব শ্রেণীর পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। গঙ্গাসাড়া নামক পাহাড়ি ছড়ার প্রায় ২০০ ফুট উপর থেকে যুগ যুগ ধরে গড়িয়ে পড়ছে অবিরাম জলরাশি। দৃষ্টিনন্দন এ ঝরনা শুধু পর্যটকদের কাছেই আকর্ষণীয় স্থান নয়, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছে তীর্থস্থান হিসেবেও সুপরিচিত। এ ঝরনাধারায় যে কুণ্ডের সৃষ্টি হয়েছে সে কুণ্ডের পাশেই স্থাপন করা হয়েছে শিবমন্দির। হিন্দুমতে, এ শিবমন্দির স্থানটির মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। এ শিবমন্দিরকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর চৈত্রের মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীতে স্মানে আসে শত শত পুণ্যার্থী।
সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার কাঁঠালতলী থেকে রিকশায় অথবা স্কুটারে যেতে হয় মাধবকুণ্ডে। ১৫ কিলোমিটার সমতল ও পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পিচঢালা পথ, সেই সঙ্গে পাহাড়ের পাদদেশে বোনা চা বাগানের অপরূপ প্রকৃতি উপভোগ করতে করতে কখন যে মূল স্পটে চলে যাবেন, ভাবতেই পারবেন না। ঝরনার শব্দ কানে আসতেই এক অন্যরকম আনন্দানুভূতিতে মন নেচে উঠবে। চারদিকেই গাঢ় সবুজের হাতছানি। এখানে পাহাড়ের গায়ে ঘন গাছপালা, পাথরের সাজ, সুনিপুণ মাটির স্তরবিন্যাস, বৈচিত্র্যময় শিলাগঠন সবকিছুতেই যেন চোখ স্থির হয়ে যেতে চায় বারবার। কঠিন শিলায় গড়া পাহাড়ের উঁচু থেকে ঝিরিঝিরি ছন্দে নেমে আসছে পানির রেশমি লহর। সাদা সাদা ফেনা তুলে উচ্ছল সেই পানির স্রোত অবিরাম গতিধারায় নিচে পড়ছে। পানি পড়ার স্থানটিতে তৈরি হয়েছে একটি ছোট্ট লেক। দেখলেই ইচ্ছা হবে পানিতে নামার। সাঁতার জানা থাকলে আর সঙ্গে বাড়তি কাপড় থাকলে নেমে যেতে পারেন লেকের হিমশীতল জলধারায়। তবে ঝরনার একেবারে কাছে যাওয়া মোটেই সমীচীন নয়, যে কোনও সময় ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। কেননা, লেকটি গভীর। কেউ পানিতে গা ভেজাতে না চাইলে তাদের জন্য রয়েছে নৌকার ব্যবস্থা। যে কেউ নৌকায় করে ছোট্ট আয়তনের পুরো লেকটি ঘুরে দেখতে পারেন। চারদিকে পাহাড় আর পাহাড়ের বুকে জঙ্গল, এর মাঝখানে জলপ্রপাতের দৃষ্টিনন্দন ঝরনা যে কোনও পর্যটকের ভ্রমণপিপাসার মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে। এখানে একটানা তিন-চার ঘণ্টা কাটানোর পর জলপ্রপাতের অনতিদূরেই পর্যটন কর্পোরেশনের ছোট রেস্টহাউসে বিশ্রাম নিতে পারেন। চারদিকে বাগানঘেরা রেস্টহাউসে বসে চা অথবা হালকা নাশতা করে শরীরটাকে একটু চাঙা করে নিয়ে ফেরার জন্য রওনা হতে পারেন। ফেরার পথে যেতে পারেন মনিপুরী আদিবাসী পল্লীতে। তাদের হাতে বোনা কাপড়ও কিনে নিতে পারেন। তবে আদিবাসী পল্লীতে যাওয়ার আগে অবশ্যই একজন গাইডকে সঙ্গে নিতে হবে। কেননা পাহাড়ি পথে রয়েছে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা।


যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি মাধবকুণ্ডে যাওয়ার কোনও ট্রান্সপোর্ট নেই। বাসে মৌলভীবাজার নেমে সেখান থেকে বড়লেখার গাড়িতে করে কাঁঠালতলী নামতে হবে। সেখান থেকে লোকজন কম হলে রিকশায় আর বেশি হলে স্কুটার ভাড়া করে মাধবকুণ্ডে পৌঁছাতে হবে। রিকশায় ভাড়া নেবে ৭০-৮০ টাকা আর স্কুটারে জনপ্রতি ৬০-৭০ টাকা। তবে যে বাহনই নেন না কেন ফেরার সময় ওই বাহনেই ফিরতে হবে। কেননা সেখানে অতিরিক্ত কোনও যানবাহন নেই। আর যদি ট্রেনে আসতে চান, তাহলে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সিলেটের ট্রেনে কুলাউড়া জংশনে নামতে হবে। সেখান থেকে বড়লেখাগামী বাসে চড়ে কাঁঠালতলী আসতে হবে। অথবা রেলস্টেশন থেকে সরাসরি স্কুটার ভাড়া করেও যেতে পারেন।



থাকা-খাওয়া
কুলাউড়ায় রয়েছে কয়েকটি বিভিন্ন মানের হোটেল। ট্রেনে এসে এসব হোটেলে 
উঠতে পারেন। বাসে এলে মৌলভীবাজারের হোটেলে উঠতে হবে। কেননা কাঁঠালতলীতে তেমন কোনও ভালো মানের হোটেল নেই। এখানে খাবার-দাবার দামের দিক থেকে ঢাকার সাথে তেমন কোনও তারতম্য নেই। তবে মূল স্পটে যাওয়ার আগে বিস্কুট বা হালকা স্ম্যাক্স ও খাবার পানি সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার জন্যও মূল স্পটের কাছেই কিছু হোটেল রয়েছে। দিনব্যাপী সেখানে থাকতে চাইলে এ হোটেলগুলো থেকে দুপুরের লাঞ্চ সেরে নিতে পারেন। দামের দিক থেকে তেমন কোনও ঝামেলা নেই।



শুক্রবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৪

ভ্রমণ :: কক্সবাজার।

গন্তব্য তৈঙ্গা পাহাড়


বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের উপজেলা টেকনাফের অন্তর্গত সংরক্ষিত বন টেকনাফ গেম রিজার্ভ। কক্সবাজার থেকে ৪৮ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং টেকনাফ থেকে উত্তর দিকে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে এই গেম রিজার্ভের অবস্থান। সংরক্ষিত এ বনের ভূ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য এককথায় অনন্য। সবুজ এ পাহাড়ি অঞ্চলে ভঙ্গিল পর্বতের নমুনা, মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক ঝরণা, উষ্ণমণ্ডলীয় চিরসবুজ বন পর্যটকদের রোমাঞ্চের বহুবিধ স্বাদ উপভোগের সুযোগ করে দেবে। এই গেম রিজার্ভের মধ্যবর্তী স্থানে লম্বা ও সরু পাহাড়ের শ্রেণী দক্ষিণ দিক থেকে উত্তরে বিস্তৃৃত। গেম রিজার্ভের সর্বোচ্চ চূড়া ‘তৈঙ্গা’ নামে পরিচিত। তৈঙ্গা পাহাড়ের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০০ ফুট। ১৯৮৩ সালে এই সংরক্ষিত গেম রিজার্ভ ঘোষিত হয়। এই গেম রিজার্ভের আয়তন ১১,৬১৫ হেক্টর।



জীববৈচিত্র্য : এই গেম রিজার্ভ দেশের সর্বোচ্চ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ। এখানে প্রায় ৩০০ প্রজাতির বৃক্ষরাজি, ২৮৬ প্রজাতির পাখি, ৫৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৩ প্রজাতির উভচর, ৫৬ প্রজাতির সরীসৃপ পাওয়া গেছে। বুনোহাতির সবচেয়ে বড় দলটি এই গেম রিজার্ভে অবস্থান করে যা দেশের মোট হাতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এছাড়া বনে বিলুপ্তপ্রায় বুনোকুকুর, উল্লুক, সাম্বার হরিণ, উডুক্ক– কাঠবিড়ালী, সজারু প্রভৃতি প্রাণীর দেখা মেলে। ১৯৮২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগ পরিচালিত জরিপে দুর্লভ প্রজাতির স্ট্যাম্প টেইলড্ ম্যাকাক বা খাটো লেজি বান্দর দেখার রেকর্ড রয়েছে।

কুঠি বা ভঙ্গিল পাহাড় : বিশেষজ্ঞদের মতে, অতীতে এই পাহাড় শ্রেণী বঙ্গোপসাগরের তলদেশে ছিল। লাখ লাখ বছরের বিবর্তনের ফল বর্তমানের এই অবস্থা। ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এই কুঠির শিলাস্তরে শামুক-ঝিনুকের জীবাশ্ম বা ফসিল এবং সল্টক্রিক বা লবণাধার। কুঠির সল্টক্রিক বুনো প্রাণীর লবণের অভাব মেটায়। রাতে বুনোপ্রাণী সল্টক্রিক চেটে শরীরে লবণের চাহিদা পূরণ করে। 



তৈঙ্গা ঝিরি : কুঠির আনুমানিক ২০০ ফুট পশ্চিমে প্রবাহিত তৈঙ্গা ঝিরি। ঝিরির পানি স্ফটিক স্বচ্ছ এবং জলজপ্রাণী বৈচিত্র্যে ভরপুর। প্রায় ৭০০ ফুট উচ্চতা থেকে শিলাময় পাহাড়ের ধাপে ধাপে এই ঝরণা ক্রমান্বয়ে ঝিরি ধরে প্রবাহিত হয়েছে।
 
তৈঙ্গা চূড়া  : গেম রিজার্ভের অন্যতম আকর্ষণ হল তৈঙ্গা চূড়া। এ চূড়া অত্যন্ত খাড়া এবং ট্রেকারদের জন্য আদর্শ। তৈঙ্গা চূড়া থেকে দূরে বঙ্গোপসাগর, নাফ নদী, মিয়ানমার সীমানার পাহাড় শ্রেণী এবং গেম রিজার্ভের এরিয়েল ভিউ অবলোকন বাস্তবেই এক অপার্থিব অনুভূতি।

ভ্রমণের সেরা সময় : অক্টোবর মাস থেকে ফেব্র“য়ারি মাস অবধি এই এলাকা ভ্রমণের সেরা সময়। মার্চ-এপ্রিল মাসে পাহাড়ের গাছগাছালি মারা যাওয়ায় সব ন্যাড়া হয়ে যায় এবং ঝিরির পানি ক্ষীণ ধারায় প্রবাহিত হতে থাকে। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটক জুন-জুলাই মাসের সবুজ পাহাড়, সতেজ ঝিরি-ঝরণা দেখে আসতে পারেন।
 
যাতায়াত : ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিমান অথবা বাসে। সেখান থেকে ননস্টপ টেকনাফগামী বাসে হ্নীলা বাজার। হ্নীলা বাজার থেকে তৈঙ্গা পাহাড় অভিমুখে ট্রেকিং। এসি বাস : ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে যোগাযোগ করতে পারেন গ্রিনলাইন (৯৩৩৯৬২৩, ৯৩৪২৫৮০) সোহাগ পরিবহন (ফোন ৯৩৩১৬০০, ৭১০০৪২২), সিল্ক লাইন (ফোন ৭১০২৪৬১, ৮১০৩৮২) ভাড়া ৬৫০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকা। নন এসি বাস : নন এসি বাসে যেতে যোগাযোগ করতে পারেন এস. আলম (ফোন ৯৩৩১৮৬৪, ৮৩১৫০৮৭)
 
আবাসন : ধারের কাছে হ্নীলা বাজার সাধারণ মানের হোটেল। ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা প্রতি রাত। টেকনাফ শহরে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেল ভাড়া ৫০০-১২৫০ টাকা। এছাড়া টেকনাফ শহরে সাধারণ মানের একাধিক হোটেল পাওয়া যাবে ২৫০-৫০০ টাকার মধ্যে।
 
গাইড : তৈঙ্গা পাহাড় ভ্রমণের সময় প্রশিক্ষিত গাইড সঙ্গে নেয়া আবশ্যক। নৈসর্গ সাপোর্ট প্রজেক্ট এই এলাকায় ইকোট্যুরিজম ইনফ্রোসট্রাকচার নির্জনে কাজ করে চলেছে। হ্নীলা বাজারের কাছে কক্সবাজার-টেকনাফ রোডের পাশে নিসর্গ অফিসে গাইডের খোঁজ করা যেতে পারে।


বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করতে পারেন :  ফোন ৯৮৭৩২২৯ 


ধন্যবাদ সবাইকে।