বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫

বর্ষায় রাঙ্গামাটির পথে।

বর্ষায় রাঙ্গামাটির পথে।  

বর্ষায় অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়ে ওঠে পাহাড়িয়া শহর রাঙ্গামাটি। চারদিকে হ্রদ, এরই মাঝখানে পাহাড়ের গায়ে রাঙ্গামাটি শহর। বর্ষায় এখানের হ্রদ ও কর্ণফুলী নদীপথে জলে থই থই করে। মনে হয়, রাঙ্গামাটি হ্রদের শহর। বর্ষায় এখানে হ্রদ দেখায় আনন্দ আছে। 
                        নীল নব ঘনে আষাঢ় গগনে... 
                                  আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে... 
বর্ষায় রাঙ্গামাটিতে গেলে কবিগুরুর কথা কেউ মানতে চায় না। যতই বর্ষা হোক না কেন, ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে হ্রদ হয়ে দূরে বহুদূরে হারিয়ে যেতে মন চায়। বর্ষায় রাঙ্গামাটির যেদিকে যাবেন সেদিকেই হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হবে। এমন নয়নলোভা জায়গা পাহাড়িয়া রাঙ্গামাটি। বাংলার সব সৌন্দর্য এখানে এসে উছলে পড়েছে...। যেদিকে চোখ যায় তখন মনে হয়, আমরা আসব বলেই কি রাঙ্গামাটি বুঝি রঙিন হয়ে সেজে বসে আছে। রাঙ্গামাটি হয়ে শুভলং কিংবা বরকলের দিকে গেলে দেখবেন নদীর দুই পাশে পাহাড়, অরণ্য আর ঝরনা। নৌকায় বসে ঝরনার সৌন্দর্য উপভোগ করা জীবনের স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকতে পারে। ঝুমুর ঝুমুর নূপুর বাজে ঐ পাহাড়ে... এরকম মনে হবে কখনও কখনও। হ্রদের পর হ্রদ দেখে দূরে বহুদূরে চলে যেতে ইচ্ছে হবে।


যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি যাওয়ার জন্য রয়েছে ডলফিন পরিবহন। ইচ্ছে করলে হানিফ পরিবহন, টোকিও লাইন, গ্রিন লাইনের যে কোনও একটি পরিবহনে চট্টগ্রাম গিয়ে এরপর রাঙ্গামাটির বাস ধরে রাঙ্গামাটিতে। চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি পৌঁছতে ১ ঘণ্টা সময় লাগে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে হানিফ পরিবহনে যেতে চাইলে আগেভাগে টিকিট বুকিং দিন। এজন্য যোগাযোগ করুন ম্যানেজার আবদুস সামাদ মণ্ডলের সঙ্গে। ফোন-০১৭১১-৮৮৩৬৮৯।  

হোটেলের খোঁজখবর : রাঙ্গামাটিতে রাত যাপন করার জন্য পর্যটনের মোটেল, হোটেল সুফিয়া, হোটেল জেরিন, মধুমতি, গোল্ডেন হিল, বনফুল, ডিগনেটি, শাপলা, সৈকত প্রভৃতি রয়েছে। যেখানে পছন্দ হয় সেখানে উঠুন। তবে পর্যটন মোটেলে ভাড়াটা একটু বেশি।
যা যা দেখবেন : বাস থেকে রাঙ্গামাটি নেমে এক স্বপ্নের ভুবনে হারিয়ে যাবেন। এখানে দেখার জায়গা অনেক। দু-তিন দিন কাটিয়েও মন ভরে না। ইচ্ছে হবে আরও কয়েকদিন থাকার। এখানকার মতো এদেশে আর কোথাও এমন পাহাড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দর্শন কিন্তু আর কোথাও সহজে মেলে না। এখানের চারদিকে রয়েছে সোনালি আর রুপালি খেলা। রাঙ্গামাটির হ্রদে বেড়ানোর জন্য নৌকা, স্পিডবোট রয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে নৌকা নিয়ে হ্রদে বেড়াতে ইচ্ছে হবে। তাহলে বুঝতে পারবেন হ্রদ কত যে সুন্দর, কত যে বিচিত্র এর রূপ। ঝরনা রয়েছে এখানে অনেক। পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরছে ঝরনা। এখানে গিয়ে পানি স্পর্শ করুন বেশ ভালোই লাগবে। ঝুলন্ত সেতু দেখবেন পর্যটন কমপ্লেক্স এলাকায়। এটি পেরিয়ে এপার থেকে ওপারে কয়েকবার গিয়েও মন ভরবে না। তাই এখানে বারবার ছুটে আসতে মন চাইবে। ঝুলন্ত পুল পেরিয়ে একটু দক্ষিণে এলেই দেখবেন বসবার জন্য বেঞ্চ রয়েছে। একটি বিকেল না হয় এখানে কাটিয়ে দিন। তখন চারদিকের নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে আপনিও হয়তো কোনও না কোনও গানের কথা ভাববেন। কুচ বরণ কন্যারে তোর মেঘ বরণ কেশ/ আমায় লয়ে যাওরে নদী সেই যে কন্যার দেশ/পরনে তার মেঘ ডম্বুর উদয় তারার শাড়ি... গানের এ কথাগুলো বারবার হদয়ে দোল খেয়ে যাবে।
রাঙ্গামাটির একটি সুন্দর দর্শনীয় স্থান রাজবন বিহার। এটি রাঙ্গামাটি শহরে ঢুকতেই খাগড়াতে অবস্থিত। এখানে চারদিকেই টিলা-পাহাড়। দূরের টিলা পাহাড়গুলো অবশ্য জঙ্গলে ঢাকা। বর্ষাকালে রাঙ্গামাটির হ্রদে যৌবনের ঢল নামে। রাজবন বৌদ্ধবিহার ঘুরে দেখতে পারেন।
এখানে চারদিকে আরণ্যক পরিবেশে বিহার আর মন্দির দুটি অপরিসীম শান্তির জয়গা মনে হবে। ডিঙ্গিতে চেপে কর্ণফুলী নদী পেরিয়ে আরেকটি টিলায় এসে এবার চাকমা রাজার বাড়ি দেখুন। রাঙ্গামাটির উপজাতি সংস্কৃতি জাদুঘরটি দেখে নিতে পারেন। উপজাতীয়দের আর্থ-সামাজিক জীবনের সুন্দর প্রতিফলন উঠেছে এই জাদুঘরে। দূরের পাহাড় অরণ্যাঞ্চলে যাওয়ার সময় কিছুটা ভয় ভয় লাগবে; তবুও আনন্দ আছে এখানের সৌন্দর্য উপভোগ করে, বার বার এই রাঙ্গামাটিতে উদার সম্ভারে গরিয়সী মনে হবে।
যা যা জানবেন : এখানে বেড়াতে গিয়ে জানবেন, চট্টগ্রামের ৪৮ মাইল পূর্বে এবং কাপ্তাইয়ের ২০ মাইল উত্তরে রাঙ্গামাটির অবস্থান। বনাঞ্চল কেটে ১৯৬০ সালে তৈরি করা হয় রাঙ্গামাটি শহর। এই শহরে ও আশপাশের পাহাড়িয়া এলাকায় বাস করে চাকমা, মগ, টিপরা, খুমি, মুরংসহ অন্যান্য উপজাতি। 

সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৫

বগুড়ায় ভ্রমণ।

বগুড়ায় ভ্রমণ।   




বাংলাদেশের প্রাচীন একটি জনপদের নাম বগুড়া। প্রাচীন পুন্ড্র রাজ্যের রাজধানী পুন্ড্রবর্ধনই হচ্ছে এখনকার বগুড়া জেলা। মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন প্রভৃতি আমলের বিভিন্ন নিদর্শন এখনও বিদ্যমান আছে এ জেলার বিভিন্ন জায়গায়। ইতিহাস থেকে জানা যায় ১২৭৯-১২৮২ পর্যন্ত এ অঞ্চলের শাসনকর্তা সুলতান গিয়াস উদ্দীন বলবনের পুত্র সুলতান নাসির উদ্দীন বগরা খানের নামানুসারেই এখানকার নামকরণ হয়েছে বগড়া বা বগুড়া। 

মহাস্থানগড় 

বগুড়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হলো মহাস্থানগড়। বগুড়া শহর থেকে প্রায় তের কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত এ জায়গাটি। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের এক দুর্গ নগরী এই মহাস্থানগড়। এককালে, মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন রাজাদের রাজধানী ছিল এখানে। এখন শুধু সেগুলোর ধ্বংসাবশেষ নিরবে দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে। এখানে এখনও আছে ৫০০০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৪৫০০ ফুট প্রস্থের সেই প্রাচীন নগরীর দেয়াল। দেয়ালের ভেতরে রয়েছে জীয়ত্কুণ্ড, প্রাচীন মসজিদসহ নানান নির্দশন। 

হযরত শাহ সুলতান বলখীর (র) মাজার

মহাস্থান গড়ের ঠিক আগেই রয়েছে হযরত শাহ সুলতান বলখীর (র) মাজার। এ অঞ্চলের জনগণকে রাজা পরশুরামের অত্যাচার থেকে মুক্ত করতে আফগানিস্তানের অন্তর্গত বলখ প্রদেশ থেকে শাহ সুলতান বলখীর (র) এ এলাকায় আগমন করেন। ১২০৫-১২২০ খ্রিস্টাব্দে পরশুরামের সঙ্গে তার যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত এবং নিহত হন। 

গোকুল মেধ
বগুড়া শহর থেকে দশ কিলোমিটার উত্তরে এবং মহাস্থানগড় থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণে গোকুল গ্রামে অবস্থিত এ প্রত্নস্থলটি অনেকেই জানেন বেহুলার বাসরঘর নামে। ঐতিহাসিকগণের মতে এটি আনুমানিক সপ্তম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত। ইট নির্মিত এ স্তূপটি পূর্ব পশ্চিমে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ এবং তিনকোণ বিশিষ্ট। খননের ফলে এ স্থাপনাটিতে ১৭২টি কক্ষ আবিষ্কৃত হয়েছে। 

মহাস্থানগড় জাদুঘর

মহাস্থানগড় থেকে সামান্য উত্তরে গোবিন্দ ভিটার ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থিত মহাস্থান জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৬৭ সালে। এ অঞ্চলে প্রাপ্ত নানান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষিত আছে এ জাদুঘরটিতে। এ জাদুঘরের গ্রীষ্মকালীন সময়সূচি হলো বেলা ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। দুপুর ১টা থেকে ত্রিশ মিনিট মধ্যাহ্ন বিরতি। আর শীত কালীন সময়সূচি হলো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা। দুপুর ১টা থেকে ত্রিশ মিনিট মধ্যাহ্ন বিরতি। মহাস্থান জাদুঘর সপ্তাহের রোববার পূর্ণ দিবস, সোমবার অর্ধ দিবস এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বন্ধ থাকে। 

গোবিন্দ ভিটা

মহাস্থানগড় থেকে সামান্য উত্তরে করতোয়া নদীর বাঁকে অবস্থিত একটি প্রত্নস্থল এটি। এটি মূলত একটি প্রাচীন মন্দির। খ্রিস্টীয় ১২শ-১৩শ শতকে রচিত সংস্কৃতি গ্রন্থ 'করতোয়া মহাত্ম'-তে এ মন্দিরটির কথা উল্লেখ আছে। এখানে সর্বপ্রথম ১৯২৮-২৯ সালে এবং পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে প্রত্নতাত্তিক খননের ফলে খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতক থেকে শুরু করে বিভিন্ন যুগের নানান নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। 

শীলা দেবীর ঘাট

মহাস্থানগড়ের পূর্ব দিকে করতোয়া নদীর তীরে রয়েছে শীলা দেবীর ঘাট। শীলা দেবী ছিলেন পরশুরামের ভগ্নি। যুদ্ধের সময় আত্মশুদ্ধির জন্য এখানেই তিনি আত্মহুতি দিয়েছিলেন। 

ভাসুবিহার

বগুড়া শহর থেকে প্রায় আঠারো কিলোমিটার দূরে শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এ প্রত্নস্থলটির আরেক নাম নরপতির ধাপ। খননের ফলে এখানে দুটি মধ্যম আকৃতির সংঘারাম ও একটি মন্দিরসহ আরও অনেক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়। অপেক্ষাকৃত ছোট সংঘারামটির আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ৪৯ মিটার এবং পূর্বে-পশ্চিমে ৪৬ মিটার। এর চার বাহুতে ভিক্ষুদের বসবাসের জন্য ২৬টি কক্ষ এবং কক্ষগুলোর সামনে চারপাশে ঘোরানো বারান্দা এবং পূর্ব বাহুর কেন্দ্রস্থলে প্রবেশপথ রয়েছে। বড়টিতে ৩০টি ভিক্ষু কক্ষ এবং দক্ষিণ বাহুর কেন্দ্রস্থলে প্রবেশ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে খননের ফলে এখান থেকে প্রায় ৮০০টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। 

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো সার্ভিস হলো গ্রীন লাইন, টি আর ট্রাভেলস এবং এস আর পরিবহনের এসি বাস। ভাড়া ২৫০-৩৫০ টাকা। আর এ পথে সাধারণ মানের নন-এসি বাস চলে শ্যামলী, হানিফ, এসআর, কেয়া, টিআর, বিআরটিসি, শাহ সুলতান ইত্যাদি পরিবহনের বাস চলে। ভাড়া জনপ্রতি ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা। ঢাকা থেকে বগুড়ার বাস সাধারণত ছাড়ে গাবতলী, কলেজ গেট থেকে। আর বগুড়া থেকে ঢাকার বাস ছাড়ে শহরের সাতমাথা এবং ঠনঠনিয়া থেকে। বগুড়া শহর থেকে অটো রিকশা কিংবা টেম্পুতে চড়ে আসতে পারেন মহাস্থানে। 

কোথায় থাকবেন?

বগুড়া শহরে থাকার জন্য আছে বেশ কয়েকটি ভালো মানের হোটেল। বগুড়ার সবচেয়ে আধুনিক হোটেল হলো শহরের ছিলিমপুরের নাজ গার্ডেন, ফোন :০৫১-৬২৪৬৮, ৬৩২৭২। এ ছাড়া শহরের বনানী এলাকায় পর্যটন মোটেল, ফোন ০৫১-৬৭০২৪-২৭। চার মাথার মোড়ে হোটেল সেফ ওয়ে, ফোন ০৫১-৬২৬৯০, ৬৬০৮৭। বনানী ফুলদিঘীতে হোটেল সিস্তা, ফোন :০৫১-৬৬৯৬৫, ৬৬৩১০। এসব হোটেলে ৫০০ থেকে ৯০০০ টাকা ভাড়া মানের বিভিন্ন রকম কক্ষ রয়েছে। 


আজ এ পর্য‍ন্তই। ধন্যবাদ সবাইকে।

                                        ===========

লালাখাল, সিলেট।

নীল পানির ‘লালাখাল’ সিলেটের নীল নদ!   




সিলেট শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে জৈন্তাপুর উপজেলায় স্বচ্ছ নীল পানির নদী ‘লালাখাল’। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি। প্রকৃতিকে একান্তে অনুভব করার জন্য স্থানটি বেশ উপযোগী। পাহাড়ে ঘন সবুজ বন, নদী, চা-বাগান ও নানা জাতের বৃক্ষের সমাহার লালাখালজুড়ে। পানি আর প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়া এখানকার মানুষের জীবনযাত্রাও আপনাকে দেবে নতুন করে বাঁচার প্রেরণা। লালাখালে গেলে আদিবাসীদের সঙ্গে আপনার সখ্যের সুযোগও থাকছে! সবকিছু মিলিয়ে এলাকাটি পর্যটকদের কাছে বেশ প্রিয়, কাঙ্ক্ষিত ও প্রতীক্ষিত একটি স্থান। সড়কপথ, নৌপথ দুভাবেই যাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও নৌ ভ্রমণটা বেশি উপভোগ্য বলে এটাকেই বেছে নেয় অধিকাংশ পর্যটক। নৌপথে যেতে যেতে যেদিকে চোখ যায়, মুগ্ধতায় নেমে আসে মগ্নতা! নিশ্চিতভাবে কিছুক্ষণের জন্য আপনি কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যেতে চলছেন, এ খেয়াল হবেই না! ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেই লালাখালের অবস্থান। চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন এই নদী বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। লালাখাল ভ্রমণের জন্য শীতের প্রথম ভাগটাই উপযুক্ত সময়। চাইলে বৃষ্টির দিনে ভ্রমণ করা যেতে পারে। তবে শীতের সময়টা বেশ নিরাপদ।
বলে নেওয়া ভালো, চাইলে সারা দিন লালাখালে কাটাতে পারেন, আবার দিনের শেষ ভাগটা কাটিয়ে আসতে পারেন। সারা দিনের জন্য গেলে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যায় ফিরলে দুই ধরনের আনন্দ পাওয়া যায়। লালাখালের চারপাশে সন্ধ্যার আগমুহূর্তটা আরো অবিস্মরণীয়। ওপরে আলোকিত আকাশ। ক্লান্ত সূর্য ঢলে পড়ছে পশ্চিম আকাশে। চারপাশে গাছপালার মধ্যে পাখির কিচিরমিচির। এসব দেখলে মনে হয়, পাহাড় থেকে তিরতির সন্ধ্যা নেমে আসছে। ধীরে ধীরে গোধূলিকেও আঁধার ঢেকে দেয়। ক্রমে চারপাশে নেমে আসে আঁধার। সন্ধ্যার আঁধার নেমে আসে লালাখালের স্বচ্ছ নীল জলে। সঙ্গে জ্যোৎস্না রাতে নৌকায় লালাখাল পাড়ি দেওয়ার মজাই আলাদা। তবে সতর্ক থাকতে হবে। আপনি চাইলে আগেভাগে বুকিং দিয়ে রাত কাটাতে পারবেন লালাখালের পাশে সদ্য গড়ে ওঠা একমাত্র রিসোর্টে। রিসোর্টের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাও আছে। স্পিডবোটে লালাখালের নীল জল চিরে এগিয়ে যাওয়াটা আপনার আনন্দ বাড়িয়ে দেবে।
সিলেট থেকে সড়কপথে সিলেট-তামাবিল সড়কে সারিঘাট এসে তার পর এক থেকে দেড় ঘণ্টার নৌ ভ্রমণ। ইঞ্জিনচালিত নৌযানের গতির ওপরে সেটা নির্ভর করে। সিলেট থেকে এলে সারিঘাট থেকে নৌকা ভাসাতে হয়। সারিঘাটে নামলেই যে কারোর মনটা হালকা হয়ে আসবে। পাথরের ঢাল আর খালের স্বচ্ছ নীল জল দেখতে যে কারো ভালো লাগবে। 


সারিঘাট থেকে প্রতি ঘণ্টায় নৌকা ছেড়ে যায়। স্থানীয়রা নৌকায় যাতায়াত করেন। খালের যেখানে শুরু, সেখানেই রয়েছে সুন্দর এক চা বাগানসহ ফ্যাক্টরি। বাগানটিও খুব পরিচ্ছন্ন এবং সুন্দর। পাশে পাড়ার ছেলেদের খেলার ফুটবল মাঠে চাইলে জমিয়ে ফুটবল খেলে নিতে পারেন, যদি প্রস্তুতি থাকে। ওখানেই চাইলে ঘুরে আসা যাবে আদিবাসীদের পল্লী। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ আপনাকে নিয়ে যাবে অচেনা এক দেশে। একটু এগোলেই ওপারে ভারতের সীমান্ত আপনাকে জানিয়ে দেবে, আর এগোনোর পথ নেই।
লালাখালের দুই পাড়ে তেমন কোনো বাড়িঘর নেই; কিন্তু আছে হরেক রকমের গাছপালা। যেন চারপাশে সবুজের হাতছানি। মাঝেমধ্যে কাশবনের ঝোপ চোখে পড়ে। তবে নদীতে অসংখ্য বাঁকের দেখা মেলে। প্রতিটি বাঁকই দেখার মতো সুন্দর। নদী থেকে দূরে পাহাড় দেখা যায়। দেখলে যতটা কাছে মনে হয়, আসলে তত কাছে না। পাহাড়গুলোকে দেখলে মনে হয়, কেউ যেন নিজ হাতে থরেথরে একের পর একটি করে সাজিয়ে রেখেছে। এখানে পাহাড়ের গায়ে মেঘ জমা হয়। একটু কাছ থেকে দেখা যায়, মেঘেরা দল বেঁধে পাহাড়ের গায়ে ঠেস লাগিয়ে থেমে থাকে। আবার কখনো দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে সবার অলক্ষ্যে হারিয়ে যায়। কখনো মেঘ বেশি জমা হলে এখানে বৃষ্টিপাত বেড়ে যায়। নদী আর পাহাড় মেলবন্ধনে নদীর টলটলে স্রোতস্বিনী জল আর পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণাধারা, এ যেন প্রকৃতির এক মায়াময়ী রূপের বাহানা। নদীর জলে নৌকার ওপর বসে পাহাড় দেখার সৌর্ন্দযই আলাদা। দল বেঁধে এখানে এলে সুবিধা বেশি, কারণ নৌকা ভাড়াটা কমে যায়। ভ্রমণে আনন্দও উপভোগ করা যায় এবং সবাই মিলে হৈচৈ করে আনন্দ ভাগাভাগি করা যায়।
জায়গাটার নামের সঙ্গে ‘খাল’ শব্দ যুক্ত হলেও এটা মূলত একটা নদীরই অংশ। নদীর নাম সারি। পানি স্থির নয়, সব সময় চলমান। কেননা, চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে বেয়ে আসা পানি গড়িয়ে চলেছে লালাখাল দিয়ে। নদীতে স্রোত থাকায় যাওয়ার পথে সময় বেশি লাগে, তেমনি ফিরতি পথে পাওয়া যায় বাড়তি সুবিধা। 

এ নদীর পানি নীল, কিন্তু নাম কেন লালাখাল হলো? এমন প্রশ্ন অনেকের। লালাখালকে কেন লালাখাল বলা হয়, তা জানা যায়নি। স্থানীয়দের কাছ থেকেও এর কোনো ব্যাখ্যা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। নদীর পানি নীল কেন, বলা মুশকিল। প্রকৃতিতেই এ নদীর পানি নীল। তাই নদীর পানি নিয়ে যে কারো মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। হতে পারত নীলাখাল। মিসরের নীল নদ দেখা সবার ভাগ্যে নাও জুটতে পারে। তবে দেশের এ খাল দেখে নীল জলারাশি দেখার আক্ষেপ মিটতে পারে। কেউ বা আবার নীল নদ দেখতে উদগ্রীবও হতে পারেন। ভ্রমণ শেষে আপনার মনে হতে পারে, এটা সিলেটের নীল নদ বা বাংলার নীল নদ।
থাকার জায়গা
এতক্ষণে আপনার মন চাইছে ঘুরতে আসতে লালাখাল। সঙ্গে যদি অনুসঙ্গ যোগ হয়? আপনি চাইলে পারবেন লালাখালের পাড়ে রাত কাটাতে। আগে সুবিধাটা ছিল না। এখনো যে খুব বেশি, তা বলা যাবে না। একটা মাত্র রিসোর্ট। আগে থেকে বুকিং দিয়েই আসতে হয়। না হলে জায়গা পাওয়া কষ্ট। নর্দার্ন রিসোর্ট নামে রিসোর্টটির নিজেদের পরিবহন ব্যবস্থাও আছে। এ ছাড়া সিলেট শহরে রাত যাপন করে একদিনে মাত্র লালাখাল ঘুরতে পারেন। অথবা বিছনাকান্দি ও জাফলং যেকোনো একটার সঙ্গে মিলিয়ে বিকেলের ভ্রমণটা লালাখালে হতে পারে। সিলেট শহর থেকে বেশ দূর হওয়ায় সন্ধ্যার দিকে নদীতে কোনো নৌকা থাকে না। তাই ভ্রমণ বা ঘোরাঘুরি সন্ধ্যার মধ্যেই শেষ করতে হয়। সবচেয়ে ভালো হয় নৌকা ভাড়া নিয়ে যাতায়াত করলে।
যেতে চাইলে যে পথ ধরবেন
লালাখালে যেতে হলে সিলেটের শিশু পার্কের সামনে থেকে লেগুনা অথবা জাফলংয়ের বাসে চেপে সিলেট-তামাবিল সড়ক ধরে যেতে হবে সারিঘাট। সিলেট আর জাফলং মাঝামাঝি এ স্থানটির নাম সারিঘাট। আগেই বলা হয়েছে, যাওয়ার জন্য পথ দুটি সড়কপথ ও নৌপথ। সড়ক পথে যেতে চাইলে মাইক্রোবাস বা কার ভাড়া নিলে ভালো হয়। তা ছাড়া সিলেট শহর থেকে বাস, লেগুনায় সারিঘাট গিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া নিতে পারেন। নৌপথে যেতে চাইলে আগে সারিঘাট পর্যন্ত একই নিয়মে বাস, লেগুনায় গিয়ে নৌযান ভাড়া নিতে হবে। ফেরার পথে এখান থেকে বাসে কিংবা লেগুনায় আসতে পারবেন। রাত ৮টা নাগাদ যানবাহন পাওয়া যাবে।
খরচাপাতি
সড়কপথে যেতে বেশি লোক হলে মাইক্রো ভাড়া নিলে ভালো। খরচটা কম হবে। সিলেট শহর থেকে শুধু লালাখালের জন্য মাইক্রোর ভাড়া দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে হবে, কার নিলে ভাড়া এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে। সারা দিনের প্ল্যান হলে ভোরে সিলেট থেকে রওনা দিতে হবে। তা ছাড়া বাস কিংবা লেগুনায় ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে সারিঘাট যেতে পারবেন। সেখানে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া ৮০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা আর স্পিডবোটে যেতে চাইলে ভাড়া এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা কম হতে পারে। নৌযানে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জনের বসার ব্যবস্থা আছে, ভাড়া একই।
সাবধানতা!
যেকোনো ভ্রমণে নিরবচ্ছিন্ন আনন্দ উপভোগের জন্য প্রয়োজন দুর্ঘটনা এড়ানো। অদ্ভুত নীল পানি আর ঘন জঙ্গলে বেষ্টিত লালাখালে গেলে তাই চাই বাড়তি সতর্কতা। পানিতে নামার সময় খেয়াল রাখবেন, পানির গভীরতা কতটুকু? প্রয়োজনে গাইড কিংবা সঙ্গে যাওয়া কারো সঙ্গে পরামর্শ করা যেতে পারে। আর ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা! সন্ধ্যার আগে-পরে তাদের পানিতে না নামাই ভালো। স্থানীদের মুখে প্রচলিত আছে, অনেক শিশুকেই নাকি বাকপ্রতিবন্ধী হতে হয়েছে। মাঝেমধ্যে নানা অসুখও হয়ে থাকে সতর্কতা অবলম্বন না করার ফলে। নদীপথে সন্ধ্যায় নির্জন এলাকা পাড়ি দেওয়াটা সব সময় নিরাপদ নাও হতে পারে। এ জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
ভ্রমণবিলাসী পর্যটকদের জন্য এই স্থান আরো আকর্ষণীয় হতে পারে।     


লালাখাল ঘুরে আসার আমন্ত্রণ রইলো। ধন্যবাদ সবাইকে।

জৈনসারের ঐতিহ্য প্রাচীন লোহার পুল।

জৈনসারের ঐতিহ্য প্রাচীন লোহার পুল। 





পশ্চিম বিক্রমপুরের একটি গ্রামের নাম জৈনসার। গ্রামের নাম জৈনসার কেন হলো তা নিয়ে নানা মতবাদ চালু রয়েছে। অনেকের মতে, একসময় এ গাঁয়ে জৈন সম্প্রদায় বাস করত। এ সম্প্রদায় দ্বারা এ গাঁয়ের গোড়াপত্তন ঘটে বলে গ্রামের নাম হয় জৈনসার। জৈনসার গ্রাম নানা কারণে প্রাচীনকাল থেকেই বেশ পরিচিত। এ গ্রামের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পোড়াগঙ্গা নদী। একসময় এ নদী দিয়ে বারো মাস লঞ্চ চলাচল করত। এ গ্রামে ছিল লঞ্চঘাট; লোকজন শ্রীনগর, লৌহজং, নাগেরহাট, নওপাড়া থেকে জৈনসার কাঁঠালতলী হয়ে ইছাপুরা, তালতলা, সিরাজদিখান যাতায়াত করত। ব্রিটিশ আমলে ঢাকা জজকোর্টের জজ শ্রীযুত বাবু অভয়কুমার দত্তের বাড়ি এ গ্রামে। তিনি লোকজনের সহজ যাতায়াতের জন্য ইছাপুরা জৈনসার সড়কপথ নির্মাণ করেন এবং সড়কপথের পাশে নৌপথেও সহজ যাতায়াতের জন্য পোড়াগঙ্গা থেকে জৈনসার খাল খনন করেন, জৈনসারের এ খাল কাঁঠালতলী হয়ে তালতলা-শ্রীনগর খালের সাথে সংযুক্ত হয়। জৈনসার তখন বেশ জাঁকজমকপূর্ণ ছিল। কোম্পানির আমলে বিক্রমপুরের বিভিন্ন স্থানে লোহার প্লেটে কনক্রিট ঢালাই একধরনের অদ্ভুত দৃষ্টিনন্দন পুল নির্মিত হয়, ইছাপুরা-জৈনসার গ্রামে এমন তিনটি পুল চোখে পড়ত, পুলগুলো বেশ সরু এবং নিচ থেকে ওপরের দিকে ক্রমেই খাড়া; যা দিয়ে লোকজন হেঁটে পারাপার ছাড়া কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারত না। ইছাপুরা বাজার রাস্তায় প্রাচীন সে পুলগুলো এখন আর নেই, নব্বই দশকে তা ভেঙে পরে সেখানে বিকল্প ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে জৈনসার ইউনিয়ন পরিষদের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে এখনো সে সময়কার নির্মিত একটি পুল চোখে পড়ে। ধারণা করা হয় কোম্পানি আমলে নির্মিত পুলটি বিক্রমপুরে অবস্থিত শেষ নিদর্শন হিসেবে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। পুলটি জৈনসার গ্রামের জমিদার অভয় দত্ত কিংবা তার পূর্বপুরুষেরা নির্মাণ করেন। প্রমত্তা পদ্মার করালগ্রাসে কাউলিপাড়া যখন ভেঙে যায়, তখন সে এলাকার জমিদারেরা জৈনসার, পশ্চিম পাড়া ও ইছাপুরায় এসে বসত করেন। পশ্চিম পাড়া, ভবানীপুর, জৈনসার- তিন গ্রামের ১০ হাজার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে দত্ত পরিবার জৈনসার খালের ওপর পুলটি নির্মাণ করেন। এ গ্রামে মানুষের সুবিধার জন্য দত্ত পরিবার ডাকঘর ও দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন ইংরেজ আমল থেকেই। ১৮৬৮ সালে এ গ্রাম থেকে প্রকাশিত হতো মাসিক ‘পল্লীবিজ্ঞান’ নামে এক পত্রিকা, ১৮৬৮-১৮৭০ সাল পর্যন্ত অভয়বাবু স্বয়ং পত্রিকার ব্যয়ভার বহন করে ‘পল্লীবিজ্ঞান’ প্রকাশ করতেন। এটি বিনামূল্যে পাঠকদের মাঝে বিলি করা হতো, ব্যাপক পাঠককুল থাকা সত্ত্বেও এক সময় পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। আঠারো শ’ শতকে জৈনসার গ্রাম থেকে পত্রিকা প্রকাশিত হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় কতটা আধুনিক আর শিক্ষায় পূর্ণতা থাকলে সে আমলে জৈনসারের মতো একটি গ্রাম থেকে পত্রিকা প্রকাশিত হতে পারে! পরবর্তীকালে জৈনসারের পাশের গ্রাম পশ্চিম পাড়া থেকে উনিশ শতকের শুরুর দিকে কাশিকান্ত চট্টোপাধ্যায় হিন্দুরক্ষণী সভার মুখপত্র হিসেবে ‘হিন্দুহিতৈশিনী’ নামে পত্রিকা বের করতেন। 
অভয় দত্তের সে জৈনসার গ্রামের জৌলুশ আর নেই। গ্রামের পাশ দিয়ে বহমান পোড়াগঙ্গা নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। সেখানে এখন আর বড় মোকাম বসে না। বিপুলসংখ্যক মানুষের আনাগোনা নেই। নেই আগের সেই লঞ্চঘাট আর ডাকঘর। এখন এখানে দেখার মতো বলতে কোম্পানি আমলে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন পুল আর জজ অভয় দত্তের বিশাল বাড়ি আর বাড়ির সামনে ছায়াঘেরা বড় বড় দীঘি। হয়তো আগামীতে হারিয়ে যেতে পারে যান্ত্রিক সভ্যতার এ যুগে প্রাচীন নির্দশন এ পুল আর বাড়ি।সকলেরই উচিত মিলেমিশে এই প্রাচীন নির্দ‍শন গুলোকে ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা। 




ধন্যবাদ সবাইকে।   












সাজেক ভ্যালি : হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

সাজেক ভ্যালি : হাতছানি দিয়ে ডাকছে।  




সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত সাজেক। এ পাহাড়ের চূড়া থেকে মিজোরামের লুসাই পাহাড়ের অপূর্ব দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়বে যেকোনো আগন্তুক। নাগরিক জীবনের সব ক্লান্তির অবসানে চলে আসুন সাজেক ভ্যালিতে। 

দার্জিলিংয়ের প্রতিচ্ছবি রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালি। বাংলাদেশ ও ভারতের মিজোরাম সীমান্তের কূলঘেঁষা অপার সম্ভাবনার জনপদ সাজেক ভ্যালিতে বসে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে প্রকৃতির খুব কাছাকাছি থেকে একখণ্ড সময় কাটায় প্রকৃতিপ্রেমীরা। তাদের হৃদয় ও মন ছুঁয়ে যায় নৈসর্গিক এ স্থানটির রূপ-লাবণ্যে। মেঘাচ্ছন্ন দিনে সাজেক আরো বেশি দৃষ্টিনন্দন ও অপরূপ হয়ে ওঠে। সাজেকের সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসু যে কাউকেই মুগ্ধ করবে অনায়াসে।
এক সময় সাজেক যাওয়া স্বপ্ন ছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সুবাদে কয়েক বছর আগে সাজেক পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে করে বদলে যেতে শুরু করেছে সাজেকবাসীর জীবনচিত্র। সৌন্দর্যের টানে বহু পর্যটক এখন সাজেক আসছেন। দেশের সর্ববৃহৎ ইউনিয়ন সাজেক। 
আয়তন ৬০৭ বর্গমাইল, যা দেশের কোনো কোনো জেলার চেয়েও বড়। এখানকার লোকসংখ্যা মাত্র হাজার দশেক। দীঘিনালা থেকে সাজেক যেতে সময় লাগে মাত্র দেড়-দুই ঘণ্টা। 
পথিমধ্যে চোখে পড়বে ঢেউ খেলানো অসংখ্য উঁচু-নিচু ঢেউ তোলা সবুজ পাহাড়। পাহাড়ের বুক চিরে আপন মনে বয়ে চলেছে কাচালং ও মাচালংসহ নাম না-জানা অসংখ্য নদনদী। নদীতে ভাসছে বাঁশের চালি, যা কাপ্তাই লেক হয়ে কর্ণফুলী পেপার মিলে যাবে।



প্রকৃতির সাথে মিতালি করতে এসে পর্যটকেরা যাতে আরো স্বাচ্ছন্দ্যে সময় কাটাতে পারেন, সে বিষয়টি মাথায় রেখে সম্প্রতি সেনাবাহিনী পর্যটনের নানা অবকাঠামো গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। সুদৃশ্য সড়ক, কটেজ, বিশ্রামাগার, সড়কবাতি, ক্লাবঘর, শিবমন্দির, পাবলিক টয়লেট, বিদেশী ঘরের আদলে তৈরি রিসোর্ট ‘রুম্ময়’ ও থ্রিস্টার মানের হোটেলও এ পাহাড়ে তৈরি করা হয়েছে। সাজেকের বাসিন্দাদের বেশির ভাগই ভারতে মিজো এবং বাংলাদেশের লুসাই বা পাংখোয়া নামে পরিচিত।
যেভাবে আসবেন 
সাজেক যেতে হলে সর্বপ্রথম আসতে হবে খাগড়াছড়িতে। সাজেক রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্ভুক্ত হলেও খাগড়াছড়ি দিয়ে যাওয়াই সবচেয়ে সহজ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনুমতি নিয়ে সহজেই এখানে পৌঁছে যাওয়া যায়। তাই প্রথমে ঢাকার কমলাপুর, সায়েদাবাদ, কলাবাগান ও ফকিরাপুল থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশে বাসে চলে আসুন। আবার ট্রেনে চট্টগ্রাম এসে চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় থেকে খাগড়াছড়ির বাস পাওয়া যায়। খাগড়াছড়ি থেকে চাঁদের গাড়ি (জিপ গাড়ি), মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে চড়ে যেতে পারেন সাজেক। তবে এ ক্ষেত্রে চাঁদের গাড়িই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। কারণ স্থানীয় ড্রাইভার এসব চাঁদের গাড়ি চালায়। এ কারণে দুর্ঘটনার ভয় কম থাকে। 
যেথায় থাকবেন
একসময় সাজেকে গিয়ে রাত যাপন করা অসম্ভব ব্যাপার হলেও এখন সাজেকে রয়েছে একাধিক কটেজ ও রিসোর্ট। তবে এই সুবিধা চালু হয়েছে মাত্র কয়েক বছর হলো। এর আগে এখানে ঘুরে আসার কথা চিন্তা করাটাই কষ্টকর ছিল। 
পর্যটকদের সুবিধার্থে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সাজেকে চলছে নানান অবকাঠামো তৈরির কাজ। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে আসছেন মায়াভরা সাজেকের সৌন্দর্য অবলোকনে। দার্জিলিংয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় পর্যটকেরা সাজেকের নাম দিয়েছেন বাংলার দার্জিলিং।    





সময় করে ঘুরে আসুন, বাংলার দার্জি‍লিং হতে। নিঃসন্দেহে ভালো লাগবে আপনাদের। ধন্যবাদ সবাইকে।






সাদা পাহাড়ের রাজ্যে।

সাদা পাহাড়ের রাজ্যে  । 





অপার সৌন্দর্যের আমাদের এই বাংলাদেশ। দেখার মতো কী নেই আমাদের? শুধু বেরিয়ে পড়ার অপেক্ষা। প্রকৃতি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। 
শীতের শুরুতেই তাই ঘুরে আসা যেতে পারে সীমান্তের কাছাকাছি সাদা মাটির পাহাড়ে। এই সাদা মাটির পাহাড় বিরিশিরিতে অবস্থিত। 
বিরিশিরি নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত। রিকশা করে যেতে পারেন বিরিশিরির অপার সৌন্দর্য দেখার জন্য। পথিমধ্যে পাবেন সোমেশ্বরী নদী। সমস্যা একটাই, সাদা মাটির পাহাড়ে যেতে হলে সোমেশ্বরী নদীর দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। তবে দল বেঁধে গেলে দীর্ঘ পথ একেবারেই ছোট মনে হবে। কারণ খনিজসম্পদ আহরণের জন্য স্থানীয়রা সারাক্ষণ নদীর বুকে দাপিয়ে বেড়ায়। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য আপনাকে আকৃষ্ট করবেই। 
সোমেশ্বরী নদীকে বিরিশিরির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যমণি বলা যায়। চার পাশে পাহাড়ে ঘেরা সোমেশ্বরীর উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে পানির রঙও পাল্টায়। আমরা এই নদী নৌকায় পার হলাম। গ্রীষ্ম মওসুমে এ নদী হেঁটে পার হওয়া যায়। সোমেশ্বরী নদীর কোল ঘেঁষেই রানীখং মিশনটি একটি উঁচু পাহাড়ে অবস্থিত। 
১৯১০ সালে এ রানীখং মিশন স্থাপিত হয়, যেখান থেকে প্রকৃতিকে আরো নিবিড়ভাবে উপভোগ 
করা যায়। মিশনের পাশেই সোমেশ্বরী নদী। কিছুক্ষণ বসে শরীর জুড়িয়ে নেয়া যেতে পারে এখানে। কিংবা চাঁদের আলোর অপার সৌন্দর্যও কম নয়। 
নদী পার হয়েই গেলাম বিজয়পুরে অবস্থিত চীনামাটির পাহাড়। বিরিশিরির মূল আকর্ষণ হচ্ছে এই চীনামাটির পাহাড়, যার বুক চিরে জেগে উঠেছে নীলচে-সবুজ পানির হ্রদ। 
ছোট-বড় টিলা-পাহাড় ও সমতল ভূমিজুড়ে প্রায় ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০০ মিটার প্রস্থ এই খনিজ অঞ্চল। 
খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, ১৯৫৭ সালে এ অঞ্চলে সাদা মাটির পরিমাণ ধরা হয় ২৪ লাখ ৭০ হাজার মেট্র্রিক টন, যা বাংলাদেশের ৩০০ বছরের চাহিদা পূরণ করতে পারে। 
খনিগুলো থেকে মাটি খনন করায় এসব হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে। সাদা মাটি পানির রঙ যেন আরো বেশি গাঢ় করে দিয়েছে।  হ্রদের পানি এক জায়গায় সবুজ তো অন্য জায়গায় নীল। গোসল করার কোনো প্রস্তুতি নিয়ে যেতে পারলে খুবই ভালো হবে। পাহাড় থেকে নেমে যেতে পারেন পাহাড়ি কালচারাল একাডেমি। এখানকার আদিবাসীদের ৬০ শতাংশই গারো, হাজং ইত্যাদি নৃগোষ্ঠীর। এখানে আছে টুঙ্কা বিপ্লবের কয়েকটি স্মৃতিস্তম্ভ। 
গারো ও হাজং ছাড়া প্রায় সব ক’টি গোষ্ঠীই বাংলা ভাষাভাষী। সেখান থেকে গেলাম সেন্ট যোসেফের গির্জায়। গির্জাটা বেশ সাজানো-গোছানো, নীরব আর খুব সুন্দর। গির্জার সামনেই রয়েছে যিশুর মূর্তি। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯১২ সালে। এখানে কর্তব্যরত সিস্টাররা জানালেন প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাস। বিভিন্ন স্থাপনার মধ্যে এখানে রয়েছে যিশু খ্রিষ্টের মূর্তি, শিশুদের বিদ্যাপাঠের স্থান ও বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন। সেখান থেকে গেলাম বিজয়পুর ক্যাম্প, যেখানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। সেখান থেকে ফিরে গেলাম রামকৃষ্ণ মন্দির এবং সবশেষে লোকনাথ মন্দির। পথিমধ্যে আবার দেখা হবে সোমেশ্বরী নদীর সাথে। শেষ বিকেলের আলোয় নদীর সৌন্দর্য আপনাদের মনকে গ্রাস করে নিবে। নয়নাভিরাম পানির ঢেউয়ের টান ছিল বারবার।  অতঃপর সাদা মাটির দেশকে বিদায় জানিয়ে ফিরে আসতে পারেন।  




ধন্যবাদ সবাইকে। 


বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৫

অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি উতমাছড়া,সিলেট।

  



পাহাড়ের বুকে গাঢ় সবুজের আস্তরণের বিচরণ । পাহাড়ের বুক চিড়ে চলেছে শীতল স্বচ্ছ জলরাশি আর সাদা জলরাশির ফাকে ফাকে পাথর ছড়ানো সর্বত্র । আকাশে নীল রঙের ছায়া পরেছে জমিনে।
এই বিবরণটি মিলে যাচ্ছে সিলেটের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র বিছনাকান্দির সঙ্গে! কিন্তু না, বিছনাকান্দির মতই আরেকটি জায়গার বর্ণনা এটি আর তা হচ্ছে উতমাছড়ার বর্ণনা। যে স্থানকে সিলেটের নতুন ‘বিছনাকান্দি’ বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি মধ্যে উতমাছড়ার আরেক ভূবন যেখানে ভ্রমণে নিজের সাথে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়া একই কথা । উতমাছড়া সিলেটে জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রণিখাই ইউনিয়নে অবস্থান।
রূপ-লাবণ্যে যৌবনা উতমাছড়া পরতে পরতে সাজিয়ে রেখেছে সম্মোহনী সৌন্দর্য্য। যান্ত্রিক কোলাহল থেকে মুক্ত নির্জন অরণ্যের সাহচার্য পেতে উতমাছড়ার বিকল্প নেই। আছে সবুজের সমারোহ, দিগন্ত বিস্তৃত সাদা মেঘের খেলা, পাথর ছড়ানো চারপাশ, দুধসাদা জলরাশি, পাখিদের কলতানযে যা দেখে শহরের যান্ত্রিক মানুষগুলো পরোতে পড়োতে নুতন কিছু আবিষ্কার করতে পারবে ।
বর্ষাকালে উতমাছড়ার রূপলাবন্যে অবালিল ভাবে ফূটে ওঠে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি । অন্যান্য মৌসুমে উতমাছড়াকে মরুভূমির বুকে গজিয়ে ওঠা উদ্যানের মতো মনে হয়।
যোগাযোগ ব্যবস্থা: সিলেট মহানগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সরাসরি সিএনজি অটোরিকশাযোগে যেতে হবে ৩৫ কিলোমিটার দূরবর্তী দয়ারবাজারে । সড়কের অবস্থা তেমন ভালো না হওয়ায় এ পরিমাণ সড়ক পাড়ি দিতে গুণতে হবে জনপ্রতি ১৫০-১৮০ টাকা করে।
দয়ারবাজার থেকে আবার সিএনজি অটোরিকশাযোগে আট কিলোমিটার দূরবর্তী চড়ারবাজারে যেতে হয়। এজন্য জনপ্রতি ভাড়া ২৫-৩০ টাকা পড়বে। চড়ারবাজার থেকে ১৫ মিনিটের মতো হাঁটলেই পেয়ে যাবেন উতমাছড়ার দেখা ।    


ধন্যবাদ সবাইকে। 



মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৫

হাজাছড়া ঝরণা, খাগড়াছড়ি।





খাগড়াছড়ির সাজেক পৌঁছে সেখানকার ঘরবাড়ি, হেলিপ্যাড, মানুষজন, নৃগোষ্ঠীর জীবনযাপন, আর নিসর্গের প্রবল রূপ দেখে মুগ্ধ হতেই হবে।  সামনে তাকাতেই দেখা যাবে চোখজুড়ানো সবুজ জুম। অনেক দূরে পাহাড়ের গায়ে আটকানো ছোট ছোট ঘরবাড়ি। সে দৃশ্যই যেন টেনে নিয়ে যাবে আপনাকে হাজাছড়ার দিকে।
য়াসছে শীতে বেড়িয়ে পড়ুন ভ্রমণে হাজাছড়া ঝরণায়। পাহাড়ঘেরা সবুজ বনপথ ধরে এগিয়ে যেতে যেতে বাংলার প্রাকৃতিক রূপ ঊপভোগ করবেন দু চোখ দিয়ে। পথ চলার সঙ্গে ক্যামেরা বন্ধি করুন আর কিছু ভিডিও ফুটেজও নিতে পারেন।পথ চলতে চলতে একসময় পৌঁছে যাবেন বাঘাইহাটের কাছে হাজাছড়া। পথের পাশেই ছোট্ট করে লেখা শুকনাছড়া ঝরনা। এলাকার নাম হাজাছড়া তাই ঝরনার নামও লোকমুখে হাজাছড়া হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে দেখা যায় পাহাড়িরা বসে দাবা টানছেন। এখানে জেনে রাখা দরকার দাবা হচ্ছে হুকোর পাহাড়ি রূপ। লম্বা বাঁশের মাঝখানে আগুন জ্বালিয়ে বাঁশে মুখ লাগিয়ে দম দিলেই ধোঁয়া বের হচ্ছে।
হাজাছড়া ঝরনাটি মোটামুটি খুব পরিচিত আর জনপ্রিয়। পথের ধারে এমন একটি চমৎকার ঝরনা জনপ্রিয় না হয়ে পারে না। কারণ অবশ্য আছে। এবার সবুজ জংলার পথ। পথের সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। দুপাশেই বন কেওড়ার মেলার সঙ্গে নাম না জানা গাছ মিলে এক অনবদ্য শোভার দেখা পাবেন।  চারদিক কী অসাধারণ সবুজ, দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে। এমন সবুজকে সঙ্গী করে ঝিরিপথ ধরে এগিয়ে চলতে হবে, আঁকাবাঁকা পথে।  ছায়াঘেরা সে ঝিরিপথ পেরিয়েই শুনতে পাবেন ঝরনার পানির শব্দ। সঙ্গে গায়ে ছুটে আসবে পানির ঝাঁপটা।     


জরুরী বিষয় :
হাজাছড়া ঝরনা খাগড়াছড়ির বাঘাইহাটের হাজাছড়ায় অবস্থিত। অবশ্য হাজাছড়া পৌঁছালে সাইনবোর্ডে লেখা পাবেন শুকনাছড়া। শুকনাছড়াই হাজাছড়া। এ ঝরনা দেখতে হলে আপনাকে খাগড়াছড়ি যেতে হবে। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়ার সরাসরি বাস সার্ভিস রয়েছে। খাগড়াছড়ি নেমে মোটরসাইকেল, চান্দের গাড়িতে কিংবা দলবেঁধে গেলে নিজস্ব পরিবহনে চলে আসুন বাঘাইহাটের হাজাছড়া। হাজাছড়া গেলে সাজেক ঘুরে আসতে ভুল করবেন না। সবচেয়ে ভালো সাজেক হয়ে তারপর চলে আসুন হাজাছড়া ঝরনার কাছে।

শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৫

সিলেট :: বিছনাকান্দি।

প্রকৃতির অনন্য সৃষ্টি বিছনাকান্দি। 







বিছনাকান্দি : সিলেট শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার রস্তমপুর ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষা পর্যটন কেন্দ্র। পাথর বিছানো বিস্তীর্ণ প্রান্তরের ওপর বয়ে চলা ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি ঝরনা বিছনাকান্দির মূল আকর্ষণ। জাফলংয়ের সাথে বিছনাকান্দির অনেকটাই মিল আছে। আকাশছোঁয়া পাহাড়ের কোলে এ যেন প্রকৃতির এক স্বর্গীয় বিছানা। বর্তমানে সিলেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র এটি। 




সিলেট শহর থেকে অটোরিকশায় চড়ে যেতে হবে হাদারপাড় পোস্ট অফিস ঘাট। সেখান থেকে পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানির ওপর নৌকায় চড়ে চলতে চলতে একসময় চোখে পড়বে মেঘালয়ের আকাশছোঁয়া পাহাড়। বর্ষায় পিয়াইন নদী পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ থাকে। তবে শীতে পানি শুকিয়ে যায়। তখন হেঁটেই পার হওয়া যায়। শহরের কর্ম‍ ব্যস্ততাকে পিছনে ফেলে প্রতিদিনের রুটিন চাপ থেকে মুক্ত হয়ে প্রকৃতির কোলে একটু শান্তি পেতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন বিছনাকান্দি। যার কোনো বিকল্প নেই। বিস্তীর্ণ আকাশ ও মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঝরনা অন্য রকম এক শান্তির সুবাতাস বইয়ে দেবে আপনার হৃদয়ে।    



(ঘুরে আসুন প্রাকৃতিক বিছানা "বিছনাকান্দি" হতে, অবশ্যই ভালো লাগবে, ধন্যবাদ সবাইকে।)







শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৫

বেড়াতে আসুনঃ ঢাকার আর্মে‍নিয়ান চার্চে‍।

আমাদের ঐতিহ্য: আর্মেনিয়ান চার্চ ।  




ঢাকার যে সব ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে আর্মেনিয়ান গির্জা তাদের মধ্যে অন্যতম। পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় আর্মেনিয়ান গির্জাটি ‘আর্মেনিয়ান চার্চ’(Armenian Church) নামে পরিচিত। এটি নির্মিত হয় ১৭৯১ সালে। গির্জা নির্মাণের আগে তাদের ছোট একটি উপাসনাগার ছিল। ঐতিহ্যবাহী এই গির্জার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঢাকার আর্মেনীয়দের ইতিহাস। 
আর্মেনিয়ান চার্চ বা গির্জাটি আর সব গির্জা থেকে আলাদা। প্রতিটি গির্জার কবর বা সমাধিস্থল আলাদা কিন্তু আর্মেনিয়ান গির্জা পুরোটাই যেন সমাধিস্থল। আর সেসব সমাধি দামি মার্বেল পাথর দিয়ে গড়া। এখন যে জায়গায় গির্জাটি দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে ১৭৮১ সালে ছিল আর্মেনীয়দের সমাধিস্থল।
দুইশত বছরের পুরানো এই ঐতিহ্যময় গীর্জাটির রক্ষণাবেক্ষণ এখনো অবশিষ্ট আর্মেনীয় পরিবারই করে থাকেন।
লোকশ্রুতি অনুযায়ী গীর্জাটি নির্মাণে সাহায্য করেছিলেন চারজন আর্মেনীয়। এরা হলেন মাইকেল সার্কিস, অকোটাভাটা সেতুর সিভর্গ, আগা এমনিয়াস এবং মার্কার পোগজ।



ভৌগোলিকভাবে আর্মেনিয়ার অবস্থান দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলে। রাজধানীর নাম ইরেভান। আর্মেনিয়ার মাঝখানে অবস্থিত একটা হ্রদ; নাম সেভান। 
আর্মেনীয়রা কবে ঢাকায় এসেছিলেন তা জানা না গেলেও ধারণা করা হয় মুঘল আমলে ভাগ্য বদলাতে দেশ-বিদেশ থেকে যখন অনেকেই আসতে শুরু করেন; সম্ভাব্য সপ্তদশ শতকে আর্মেনীয়রাও তখন দু’একজন করে ঢাকায় এসে বসবাস শুরু করেন এ অঞ্চলে। সেই থেকে এই অঞ্চল আরমানিটোলা নামে পরিচিত। 
উনিশ শতকের ঢাকায় পরিচিত ও প্রভাবশালী পরিবার হিসেবে যে ক’টি আর্মেনীয় পরিবারের নাম পাওয়া যায় সেগুলো হলো- পোগস, আরাতুন, পানিয়াটি, স্টিফান, লুকাস, কোজা মাইকেল, মানুক, হার্নি, সিরকোর এবং সার্কিস।
অষ্টাদশ ও উনিশ শতকের প্রথমার্ধে অতিক্ষুদ্র একটি সম্প্রদায় হওয়া সত্ত্বেও ঢাকা শহরে আর্মেনীয়রা ছিলো যথেষ্ট প্রভাবশালী। এর কারণ, তাদের ছিলো বিত্ত। অষ্টাদশ শতকে লবণ ছিলো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া ব্যবসা। লবণ উৎপাদন ও বিতরণের জন্য কোম্পানি ঠিকাদার নিয়োগ করতো। পূর্ববঙ্গে লবণের ঠিকাদারদের অধিকাংশই ছিলেন আর্মেনীয়রা। ঠিকাদারি ছাড়াও পান, পাট ও কাপড়ের ব্যবসায় ছিলো তাদের কর্তৃত্ব। জমিদারীও ছিলো অনেকের।
এদের বিত্তের ভিত্তি ছিলো জমিদারি ও ব্যবসা। বিদেশি হয়েও জমিদারি কেনার কারণ হতে পারে- আভিজাত্য অর্জন এবং সমাজের শীর্ষে থাকা। এসব ধনী আর্মেনীয়ানরা ঢাকায় নিজেদের থাকার জন্য তৈরি করেছিলেন প্রাসাদতুল্য সব বাড়ি। যেমন ফরাসগঞ্জের বর্তমান রূপলাল হাউস ছিলো আরাতুনের। মানুক থাকতেন সদরঘাটে। বর্তমানে ‘বাফা’ যে বাড়িতে, সেটি ছিলো নিকি পোগজের। পরে আরমানিটোলায় নির্মিত হয়েছিলো ‘নিকি সাহেবের কুঠি’। আনন্দরায় স্ট্রিটে ছিলো স্টিফানের বাড়ি। তাজমহল সিনেমা যেখানে রয়েছে সেখানে ছিলো পানিয়াটির অট্টালিকা। উনিশ শতকের মাঝামাঝি অনেক আর্মেনীয় ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়েন। ব্যবসাগুলো হচ্ছে চা, মদ, ইউরোপীয় জিনিসপত্র, ব্যাংক ইত্যাদি। ১৮৫৬ সালে সিরকোরই ঢাকায় প্রথম ঘোড়ার গাড়ি চালু করেন, যা পরিচিত ছিলো ‘ঠিকা গাড়ি’ নামে। কিছুদিনের মধ্যেই এই ব্যবসা বেশ জমে উঠে এবং কালক্রমে তাই হয়ে দাঁড়িয়েছিলো ঢাকার প্রধান যানবাহন। 
ব্রিটিশ শাসনামলের শুরুর দিক থেকেই ঢাকায় আর্মেনীয় সম্প্রদায়ের সংখ্যা কমতে থাকে। বর্তমানে ঢাকায় আঠারোটি আর্মেনীয় বংশদ্ভূত পরিবার রয়েছে বলে শোনা যায়। তবে কখনই ঢাকায় আর্মেনীয়দের সংখ্যা খুব একটা বেশি ছিলো না।



গীর্জাটি লম্বায় সাড়ে সাতশো ফুট, দরজা চারটি, জানালা সাতটি। এর পাশেই ছিলো একটি ঘড়িঘর। এটি নির্মাণ করে দিয়েছিলেন জোহান্স কারু পিয়েত সার্কিস। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ঘড়িঘরটি ভেঙে গিয়েছিলো বলে জানা যায়। গীর্জায় বৃহৎ আকারের একটি ঘণ্টা ছিলো। ১৮৮০ সালের দিকে আর্মেনিয়ান গীর্জার এই বিখ্যাত ঘণ্টাটি স্তব্ধ হয়ে যায়, যা আর কখনো বাজেনি। এই ঘণ্টা বাজার শব্দ নগরের প্রায় সব স্থান থেকে সবাই শুনতে পেত বলে সাক্ষ্য পাওয়া যায়। এই ঘণ্টার শব্দ শুনেই নাকি অধিকাংশ ঢাকাবাসী নিজ নিজ সময়ঘড়ি ঠিক করে নিতেন। মৃত্যুর পর ঢাকার আর্মেনীয়দের কবর দেয়া হতো আর্মেনীয় গীর্জার প্রাঙ্গণে। প্রাঙ্গণের পরিসর ছোট হওয়ার কারণে গীর্জাটির গোটা প্রাঙ্গণ এমনকি বারান্দার মেঝেতেও প্রচুর সমাধিফলক চোখে পড়ে। অধিকাংশ স্মৃতিফলকে উদ্ধৃত রয়েছে ধর্মগ্রন্থের বাণী। 
পুরো চার্চ ঘিরে আছে কবর আর কবর। সবগুলো কবরই শ্বেতপাথরসহ বিভিন্ন মূল্যবান পাথর দিয়ে বাঁধাই করা। তাছাড়া মৃত ব্যক্তির নামসহ ফুল-পাখির বিভিন্ন নকশা করা এবং আবেগ ঢেলে মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে প্রতিটি কবরের গায়ে কাব্যময় কিছু লেখা ।  

কীভাবে যেতে হবে?  
রাজধানী ঢাকার যে-কোন স্থান হতে প্রাইভেট গাড়ি, রিকশা বা সি এন জি তে করে পুরানো ঢাকার আর্মা‍নিটোলাতে আসা যাবে। 

=================







শনিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৫

কলাকোপার জমিদারবাড়ি।

কলাকোপার জমিদারবাড়ি।





রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নবাবগঞ্জ উপজেলার কলাকোপায় অবস্থিত জমিদারবাড়ি। প্রাচীন স্থাপত্যে নির্মিত বাড়িটি দেখার জন্য ভ্রমণপিয়াসী দর্শনার্থীরা ছুটে আসছেন কলাকোপার এই জমিদার বাড়িতে। 

১৮০০ সালের শুরুর দিকে তৎকালীন জমিদার ব্রজেন রায় ব্রজ নিকেতন নামে সুদর্শন একটি দ্বিতল বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন। 
সেই সময় জমিদারবাড়িটির পরিচিতি ধীরে ধীরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। চীনামাটি ও মূল্যবান বিভিন্ন পাথরের কারুকার্যে নির্মিত বাড়িটি দেখতে খুবই চমৎকার। পুরনো স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কলাকোপার জমিদারবাড়িটি দেখার জন্য দর্শনার্থীরা আসেন। সুবিশাল এই বাড়িটি প্রায় পাঁচ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। জানা যায়, দেশ বিভাগের পর ব্রজেন রায়ের শেষ বংশধর মধুসূদন রায় বাড়িটি ছেড়ে ভারতে চলে যান। বর্তমানে জমিদার বংশের কোনো লোকজন আর এই বাড়িতে বসবাস করে না। বর্তমানে জমিদার বাড়িটি স্থানীয় এক ব্যক্তি দেখাশোনা করছেন। 

যে কেউ ঘুরে আসতে পারেন কলাকোপার জমিদারবাড়িটি। 


যাতায়াত ব্যবস্থাঃ 

ঢাকার গুলিস্তান থেকে বাসে যেতে হবে কলাকোপায়। ঢাকা- বান্দুরা সড়কের সাথেই অবস্থিত বাড়িটি।

গুলিস্তান থেকে কলাকোপা যেতে সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। বাসভাড়া মাত্র ৫০ টাকা।  



                                         ++++++++++






মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

খেলারামের কোঠা।

প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন : নবাবগঞ্জের খেলারামের কোঠা । 





প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার কলাকোপার খেলারামের কোঠাটি এখন কালের সাক্ষী। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো শৈল্পিক কারুকার্যে নির্মিত এ ভবনটি এক নজর দেখার জন্য প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অনেক দর্শনার্থী।
জানা গেছে, ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে বর্তমান ময়মনহিংস জেলার তৎকালীন জমিদার খেলারাম তার বংশীয় লোকজনের সাথে দেখা করতে নবাবগঞ্জের কলাকোপায় আসতেন।
আসা যাওয়ার মাঝে এ স্থানটি তার পছন্দ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে অস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য একটি দ্বিতল পাকা ভবন নির্মাণ করেন। যেটি খেলারামের কোঠা নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রসিদ্ধ রয়েছে, তিনি এ অঞ্চলের মানুষকে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করতেন, এ জন্য তার নামের সাথে দাতা শব্দটি যুক্ত হয়ে খেলারাম দাতা হিসেবে পরিচিতি পায়। বর্তমানে খেলারাম দাতার কোঠা বললে সবাই এক নামে চেনে-জানে। খেলারামের দ্বিতল এ বাড়িটির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ প্রায় সমান। ভবনের নিচতলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ২০টির মতো সুরম্য কক্ষ রয়েছে। দোতলায় মোট ৯টি গম্বুজ রয়েছে। মাঝখানের গম্বুজটি আকারে অনেক বড়। প্রতিটি গম্বুজের ভেতরের অংশে চীনামাটির কারুকার্যে তৈরি করা হয়েছে বলে সহজেই সবার দৃষ্টি কাড়ে। ভবনটির মাটির নিচে একটি গোপন কক্ষ রয়েছে বলে জানা যায়। স্থানীয় লোকজনের মুখে জানা যায়, ওই গোপন কক্ষটিতে জমিদার খেলারাম ও তার ভক্তবৃন্দরা আরাম আয়েশ ও আরাধনা করতেন। 


এই ভবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দেয়ালের পুরু অন্য যেকোনো দেয়ালের চেয়ে বেশি। এ জন্য দর্শনার্থীরা ভবনটি দেখার পর রীতিমতো অবাক হন। 
দীর্ঘ দিন অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকায় ভবনের দেয়ালজুড়ে ফাটল ও ওপরের আস্তরণ ধসে পড়ে ভবনটি হুমকির মুখে পড়ে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় গত বছর বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ খেলারামের কোঠাটি সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয়। এরপর পর মূল নকশা ঠিক রেখে সংস্কার করা হয় ভবনটির। বর্তমানে ভবনটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন লোক নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা রাখা হয় খেলারামের কোঠাটি।
ভবনের ভেতরে প্রবেশের জন্য কোনো ফি ধার্য করা হয়নি। তবে ভবনের সামনে কোনো নির্দেশনা বোর্ড না থাকায় দর্শনার্থীরা বিভ্রান্তিতে পড়েন।



স্থানীয় জনগণ ও দূর-দূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীরা ভবনের তথ্যাদি দিয়ে একটি নির্দেশনা টানানোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একটি নির্দেশনা বোর্ড টানানোর ব্যাপারে তাগিদ দেন। স্থানীয় একজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, খেলারামের এই কোঠাটি নিয়ে অনেকেই ভিন্নমত পোষণ করে থাকেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষ যদি সবার সাথে সমন্বয় করে একটি নির্দেশনা দিতেন, তাহলে সবাই ঐকমত্যে পৌঁছতে পারত, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে বর্তমানে খেলারামের কোনো আত্মীয়স্বজন বা বংশীয় লোকজন কলাকোপায় বসবাস না করার কারণে ভবনটি সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। তবুও দৃষ্টিনন্দন খেলারামের কোঠাটি দেখার জন্য ভ্রমণপিয়াসী মানুষ ভিড় করেন এই নবাবগঞ্জের কলাকোপায়।






আজ এ পর্য‍ন্তই। ধন্যবাদ সবাইকে। 



সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড় ।


সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়।




ভ্রমণ বলতেই আমরা কেবল কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত, সুন্দরবন, পার্বত্য জেলা আর সিলেটের চা বাগান বুঝি। কিন্তু যারা ভ্রমণপিপাসু তারা ঠিকই খুঁজে নেয় নয়নাভিরাম দৃশ্য। সেই অর্থে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে দেখার মতো কী কী আছে তা অনেকের কাছে অজানাই রয়ে গেছে। তবে এই পঞ্চগড়ে কিছু দিন আগেও ছিল না চা বাগান। অথচ এখন সমতল চা বাগানের সারি জেলাটিকে এনে দিয়েছে নতুন সৌন্দর্য। কিন্তু শুধু কি চা বাগানে থেমে আছে পঞ্চগড়? না, বরং বহু ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ পঞ্চগড়। তাই দর্শনীয় স্থানগুলো জেনে নেয়া যাক- 

ভিতরগড় দুর্গনগরী

উপজেলা সদর দফতর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত ভিতরগড় দুর্গনগরী প্রাচীন যুগের একটি বিরাট কীর্তি। প্রায় ১২ বর্গমাইলজুড়ে এই বিশাল গড় ও নগরীর অবস্থান। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর বর্তমান এ দুর্গনগরীর কিছু অংশ ভারতের মধ্যে পড়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে, ভিতরগড় পূর্ণ নির্মাণ করেন প্রাচীন কামরুনের শুদ্রবংশীয় রাজা দেবেশের বংশজাত পৃথু রাজা। সম্রাট হর্ষবর্ধনের সময় পৃথু রাজার অভ্যুদ্বয় ঘটে। তিনি কামরুপে পরাজিত হয়ে ভিতরগড় এলাকায় গমন করেন এবং নির্মাণ করেন এই গড়। ভিতরগড় দুর্গে একটি বড় দীঘি (মহারাজার দীঘি) ও কয়েকটি ছোট ছোট দীঘি আছে। ’মহারাজার দীঘি’ একটি বিশালায়তনের জলাশয়। পাড়সহ এর আয়তন প্রায় ৮০০দ্ধ৪০০ গজ। পাড়ের উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। জলভাগের আয়তন প্রায় ৪০০দ্ধ২০০ গজ। পানির গভীরতা প্রায় ৪০ ফুট বলে স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস। পানি অতি স্বচ্ছ। দীঘিতে রয়েছে ১০টি ঘাট। প্রতি বছর বাংলা নববর্ষে ওই দীঘির পাড়ে মেলা বসে। ওই মেলায় কোনো কোনো বার ভারতীয় লোকের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। 

বাংলাবান্ধা জিরো (০) পয়েন্ট

হিমালয়ের কোলঘেঁষে বাংলাদেশের সর্বোত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়া। এই উপজেলার ১ নম্বর বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে অবস্থিত বাংলাদেশ মানচিত্রের সর্বোত্তরের স্থান বাংলাবান্ধা জিরো (০) পয়েন্ট ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। এই স্থানে মহানন্দা নদীর তীর ও ভারতের সীমান্তসংলগ্ন প্রায় ১০ একর জমিতে ১৯৯৭ সালে নির্মিত হয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, নেপালের সাথে বাংলাদেশের পণ্য বিনিময়ও সম্পাদিত হয় বাংলাবান্ধা জিরো (০) পয়েন্টে। সম্প্রতি এ বন্দরের মাধ্যমে ভারতের সাথে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটানের সাথেও এ বন্দরের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের একমাত্র স্থলবন্দর, যার মাধ্যমে তিনটি দেশের সাথে সুদৃঢ় যোগাযোগ গড়ে ওঠার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এখানে শিগগিরই ভারতের সাথে ইমিগ্রেশন চালু হতে যাচ্ছে। এটি চালু হলে পঞ্চগড় জেলা পর্যটকদের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হবে। 






তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো

পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরে একটি ঐতিহাসিক ডাকবাংলো আছে। এর নির্মাণ কৌশল অনেকটা ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের। জানা যায় কুচবিহারের রাজা এটি নির্মাণ করেছিলেন। ডাকবাংলোটি জেলা পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত। এর পাশাপাশি তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ কর্তৃক নির্মিত একটি পিকনিক কর্তার রয়েছে। ওই স্থান দু’টি পাশাপাশি অবস্থিত হওয়ায় সৌন্দর্য বর্ধনের বেশি ভূমিকা পালন করছে। সৌন্দর্য বর্ধনে এ স্থান দু’টির সম্পর্ক যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। মহানন্দা নদীর তীরঘেঁষা ভারতের সীমান্তসংলগ্ন (অর্থাৎ নদী পার হলেই ভারত) সুউচ্চ গড়ের ওপর সাধারণ ভূমি হতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচুতে ডাকবাংলো এবং পিকনিক কর্তার অবস্থিত। ওই স্থান থেকে হেমন্ত ও শীতকালে কাঞ্চন জংঘার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বর্ষাকালে মহানন্দা নদীতে পানি থাকলে এর দৃশ্য আরও বেশি মনোরম হয়। শীতকালে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য অনেক দেশী-বিদেশী পর্যটকের আগমন ঘটে। 

বারো আউলিয়ার মাজার

উপজেলা সদর থেকে ৯ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে মির্জাপুর ইউনিয়নের বারো আউলিয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ ভূমিতে অবস্থিত বারো আউলিয়া মাজার শরিফ। বারো আউলিয়া ওলিদের আগমনের ইতিহাস বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেলেও ওলিদের ইতিহাস রহস্যাবৃত। এদের লিখিত কোনো ইতিহাস আজো পাওয়া যায়নি। ১২ জন ওলি-সুফি-সাধক চট্টগ্রামের শহর প্রান্তে প্রথমে এসে আস্তানা স্থাপন করেন। সেই জায়গাটি আজো বারো আউলিয়া নামে প্রসিদ্ধ। জানা গেছে, ১২ জন ওলি খাজাবাবার নির্দেশে চট্টগ্রামসহ পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে আস্তানা গড়ে তুলে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। পরে স্থল পথে রওনা হয়ে ইসলাম প্রচার করতে করতে উত্তরবঙ্গের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেন এবং পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বারো আউলিয়ায় আস্তানা গড়ে তুলে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। আটোয়ারীর মাটিকে পুণ্যভূমিতে পরিণত করে সময়ের বিবর্তনে ওলিদের এখানেই সমাহিত করা হয়। 

মির্জাপুর শাহী মসজিদ

মির্জাপুর শাহী মসজিদটি আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে অবস্থিত। ১৬৭৯ খ্রিষ্টাব্দে (সম্ভাব্য) নির্মিত ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত মসজিদের সাথে মির্জাপুর শাহী মসজিদের নির্মাণশৈলীর সাদৃশ্য রয়েছে। এ থেকে ধারণা করা হয় ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত মসজিদের সমসাময়িককালে এ মির্জাপুর শাহী মসজিদের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। দোস্ত মোহাম্মদ এটির নির্মাণকাজ শেষ করেন বলে জানা যায়। মসজিদের নির্মাণ সম্পর্কে পারস্য ভাষায় লিখিত মধ্যবর্তী দরজার উপরিভাগে একটি ফলক রয়েছে। ফলকের ভাষা ও লিপি অনুযায়ী ধারণা করা হয় মোগল সম্রাট শাহ আলমের রাজত্বকালে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। মসজিদটির দেয়ালের টেরাকোটা ফুল এবং লতাপাতার নকশা খোদাই করা রয়েছে। 

মহারাজার দীঘি

পঞ্চগড় শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে পঞ্চগড় সদর উপজেলাধীন অমরখানা ইউনিয়নে অবস্থিত একটি বড় পুকুর, বর্তমানে যা মহারাজার দীঘি নামে পরিচিতি। ‘মহারাজার দীঘি’ একটি বিশালায়তনের জলাশয়। পাড়সহ এর আয়তন প্রায় ৮০০দ্ধ৪০০ গজ। পানির গভীরতা প্রায় ৪০ ফুট বলে স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস। পানি অতি স্বচ্ছ। দীঘিতে রয়েছে ১০টি ঘাট। ধারণা করা হয়, পৃথু রাজা এ দীঘিটি খনন করেন। কথিত আছে, পৃথু রাজা পরিবার-পরিজন ও ধনরতœসহ ‘কীচক’ নামক এক নিম্নশ্রেণীর দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়ে তাদের সংস্পর্শে ধর্ম নাশের ভয়ে ওই দীঘিতে আত্মহনন করেন। প্রতি বছর বাংলা নববর্ষে ওই দীঘির পাড়ে মেলা বসে। ওই মেলায় কোনো কোনো বার ভারতীয় লোকের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এই বিশাল দীঘির চার পাশে রয়েছে অনেক গাছগাছালির সবুজের কারুকার্য, স্নিগ্ধ সমীরণ, সৌম্য শান্ত পরিবেশ, যা এখনো সবার কাছে বিরল মনে হয়।  

                    ============================


ধন্যবাদ সবাইকে।