শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৪

ভ্রমণ :: মাদারীপুর।

মাদারীপুরের পর্বত বাগান 



প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা আমাদেও এ দেশ । এদেশের কোথাও কোথাও অবহেলিত ,অযত্নভাবে পড়ে আছে এসৌন্দর্য । সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ একটু সৌন্দর্যেও জন্য ছুটে যাচ্ছে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত । যেখানে প্রকৃতির সৌন্দর্যের লীলাভূমি যেখানে মানূষ ছুটে গেছে  সৌন্দর্য পিপাসু  মানুষ সৌন্দর্য যেমন চয়ন করেছে তেমনি লালন করেছে প্রানের আবেগ দিয়ে । এমনি এক প্রকৃতিকপ্রেমি,সৌন্দর্যপিপাসু রাস বিহারী পর্বত মাদারীপুরের মস্তফাপুর ইউনিয়নের বড়বাড্ডা গ্রামের অধিবাসী ছিলেন । ময়মনসিংহ জমিদার সেরেস্তার নায়েবের চাকরি শেষে আপন শখেই গড়ে তুলেছিলেন বাগান ।

তৈরি হয়েছিল যেভাবে 
১৯৩০সালে রাসবিহারী পর্বতদেশ-বিদেশি প্রায় ৫০০ জাতের ফল ও ফুলেরচারা সংগ্রহ কওে প্রায় ২০একর জমির ওপর গড়ে তোলেন এ বাগান । সেই থেকে তার নামানুসারে এ বাগান টি পর্বত বাগান নামে পরিচিত পায় । বাগানের পাশ দিয়ে বযে যাওয়া খরস্রোত কুমারনদ বাগানের আকর্ষনীয় অনুষঙ্গ হিসেবে বাড়তি সৌন্দর্য এনে দেয় । নানা আকৃতির সুন্দও শৈল্পিক পথ বাগান প্রতিষ্ঠালগ্নে হাজার হাজার নারিকেল ও সুপারি গাছ বাগানটি ঘিরে রেখেছে । ছিল আম ,জাম ,কাঁঠাল,কামরাংগা, আমড়া,কুল,সফেদা , জলপাই, আমলকী, কমলা জামরুল,তেজপাতা,দারুচিনি, লবঙ্গ,এলাচ সহ দেশ বিদেমি বিভিন্ন ফল ও ভেষজ গাছ । বাগাটি নয়নাবিরাম করার জন্য গোলাপ,গন্ধরাজ টগর, কামিনী, হাসনাহেনা বকুল, জুই বেলি ,জবা সহ দেশ বিদেশী সংখ্য ফুলের গাছ । 

পবর্ত বাগানের সৌন্দর্য ও রূপ 
প্রয়ি ১২ রকমের গোলাপ গাছ ছিল পবর্ত বাগানে । বিচিত্র পাখির কল-কাকলিতে বাগানটি ছিল মুখরিত । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আকৃষ্ট বহু দেশি-বিদেশি পর্যটকও পিকনিক পার্টিও আগমন ঘটতো এ বাগানের শোভা দর্শনের প্রত্যাশায় । শীতকালে বাগান সংলগ্ন পুকুরের আগমন ঘটতো বিচিত্র পাখির ।ফলে খুব সহজেই আকৃষ্ট হতো পর্যটক । বাগানের মধ্যে ৬টি শান বাধানো পুকুরও রাজবিহারি পবর্তেও বাসভবনটি সবচেয়ে আকর্ষনিয় । এগুলো এখন পরিনত হয়েছে ধ্বংসস্তুপে । ঠুয় এক সময় বৃহতর ফরিদপুর অঞ্চলের মধ্যে আর কোথাও চিত্য-বিনোদনের এবং পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো এমন নয়নাভিরাম পরিবেশ দ্বিতীয়টি ছিলনা। জানা যায় তৎকালীন মাদারীপুর মহকুমা শহরে যেসব উচ্চপদস্থ কর্মকতার আগমন ঘটেছিল তাদের প্রত্যেকেই এসেছিলেন এ বাগানে । গাছপালা ও নানা প্রজাতীর পাখির পাশা-পাশি এ বাগানে ছিল বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তু । হসুমান , বানরের ছিল অবাধ বিচরন । নিবিঘ্নে তারা ঘুরে বেড়াতো বাগানের এ ডাল থেকে ওডালে । 

যেভাবে সৌন্দর্য হারালো 
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধেও সময় স্থানীয় কিছু রাজকার ও পাকসেনাদের দ্বারা নিমর্মভাবে রাজবিহারি পবর্ত নিহত হন । রাজকার ফকু মাতুব্বর দ্বারা দখল হয়ে যায় তার বাগান বাড়ি । এ মর্মান্তিক ঘটনার পর থেকেই বাগানটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসে । এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা উজার করে দেয় বাগানের গাছপালা । বাগানের মধ্যে এখনো রাসবিহারি পবর্তের ১৪কক্ষ বিশিষ্ট দোতালা বাস ভবন, একটি মন্দির এবং বাবা রাজকুমার পবর্ত ও মা  বিধুমুখি পবর্তের দুইটি সমাধি সৌধ ঐতিহ্যের ধরক হয়ে আছে । 

কেমন আছে পবর্ত বাগানের উওরসূরী 
রাসবিহারি পবর্তের স্ত্রী শোভরানী পবর্ত পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে দির্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন । ২ ছেলের মধ্যে বড়ছেলে রাজেন্দ্র বিহারি পবর্ত এখন বাগানের দেখাশোনা করেন এবং ছোট ছেলে রনজিৎ বিহারি পবর্ত স্কুলে শিক্ষকতা করেন । সরেজমিন গিয়ে আলাপ হয় রাসবিহারি পবর্তের বড়ছেলের স্ত্রী মালতী রানী পবর্তে সঙ্গে । তিনি বাড়ির গাছ-পালা ও পুকুর লিজদিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে কোন রকম সংসার চলে নানা ধরনের অত্যাচারের কথা বলে জানালেন , এখনো অনেকেরই সম্পওির উপর লোভ আছে । আমরা খুব ভয়ে থাকি  । 

বর্তমান অবস্থা  
বাগান ঘুরে দেখা যায় বেম কয়েকটি বসত বাড়ি । এদেও কেউ কেউ ্ক্রয় সূত্রে আবার কেউ দখল সূত্রে বাড়ি তৈরি করেছেন । আগের মতো বাগানটির শোভা  না থাকালেও কাছাকাছি জমিদার সুরেশ চন্দ্র পোদ্দারের বাড়ি মিলিয়ে  এলাকাটি আর্কষনীয়  ।  এব্যাপারে অধ্যাপক ডঃ অরুণ কুমার গোস্বামী বলেন  এ বাগানে অনেক দুর্লভ প্রজাতির গাছ আছে , যারক্ষা করা প্রয়োজন  । সরকার  ইচ্ছে করলেই  দক্ষিন বাংলার  ঐতিহ্য এ বাগান টি হতে পারে বিনোদ কেন্দ্র । মৌসুমে বেশ কয়েকটি পিকনিক পার্টি দেখা গেলেও পর্যটকদের  তেমন দেখা বেশী একটা দেখাযায় না । বাগানটি রক্ষা হলে  আবার হয়তো পরিবেশ প্রেমী সৌন্দর্যপিপাসু পযৃটকদেও পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে ঐতিহ্যবাহী পর্বত বাগান ।



সময় করে ঘুরে আসুন, নিজের দেশকে জানুন ও অপরকে জানান। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন