নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ দুর্গ
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক হাজীগঞ্জ কেল্লার স্থানটির সামনে দাঁড়াতেই বুকটা কেমন যেন ধক করে উঠল। অদ্ভুত সুন্দর বিশাল এক কেল্লা। একটু একটু শিহরণও জাগল ভেতরে এই ভেবে, এ বিশাল কেল্লাটি তৈরি করা হয়েছিল যুদ্ধের জন্য। ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দে মোগল শাসক ঈশা খাঁ মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের কবল থেকে এ জনপদকে রক্ষা করার জন্য শীতলক্ষ্যা-ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা নদীর মিলন স্থলে কেল্লাটি নির্মাণ করেন। এখানে দিনের পর দিন না জানি কত যুদ্ধ হয়েছে। সুগঠিত এ কেল্লার নাম খিজিরপুর দুর্গ যা বর্তমান হাজীগঞ্জের দুর্গ বা কেল্লা নামে পরিচিত। ১৭০০ শতাব্দী বা তারও আগে নির্মিত এ দুর্গের সঠিক স্থপতির নাম তেমন পরিষ্কারভাবে কোথাও নেই। তবে ধারণা করা হয়, সম্ভবত সুবেদার ইসলাম খানের সঙ্গে সংঘর্ষকালীন ঈশা খাঁ এ দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর রাজধানী সোনারগাঁয়ের নিরাপত্তার জন্য মীর জুমলা অধিকাংশ সময় অবস্থান করতেন এ কেল্লায়। প্রায় দুই কিলোমিটার জায়গা নিয়ে বিস্তৃত এ খিজিরপুর (হাজীগঞ্জ) দুর্গ। চারপাশ আবদ্ধ এ কেল্লাটির দৈর্ঘ্য পূর্ব-পশ্চিমে ২৫০ ফুট এবং উত্তর-দক্ষিণে ২০০ ফুট। একটি সু-উচ্চ প্রধান ফটক রয়েছে দুর্গের পূর্বদিকে। রয়েছে কয়েকটি গোপন দরজা কেল্লার বিভিন্ন দিকে। দুর্গজুড়ে রয়েছে আÍরক্ষার জন্য মাটির উঁচু বাঁধ, যার মাঝে রয়েছে ছোট ছোট ফাঁকা জায়গা সেখানে অস্ত্র রেখে মোকাবিলা করা হতো শত্র“দের। দুর্গের মাঝে পুরোটাই ফাঁকা মাঠ। ধারণা করা হয়, এখানে অবস্থান নেয়া-সৈন্যরা এ মাঠে তাঁবু খাটিয়ে থাকত। সেই সময়ে যেহেতু নদীপথই ছিল যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম তাই নদীপথের আক্রমণ রুখতে নদীর তীরবর্তী জায়গাতেই নির্মাণ করা হয় এ দুর্গটি। এক সময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী মীর জুমলা খানও অধিকাংশ সময় এ দুর্গে কাটাতেন। বিশেষ করে বর্ষার সময় তিনি এ খিজিরপুর (হাজীগঞ্জ) দুর্গের ভার নিজ হাতে গ্রহণ করতেন। প্রতিহত করতেন নৌপথে অভিযানকারী জলদস্যুদের। সময়ের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন লোক ব্যবহার করতেন এ দুর্গ নিরাপত্তার জন্য। আবার কখনও এখান থেকে পরিচালনা করেছেন যুদ্ধ। এক সময় ঢাকার নবাবেরা এটিকে ঘিরে হাফেজ মঞ্জিল নামক একটি প্রাসাদ ও উদ্যান নির্মাণ করে ছিলেন এমন জনশ্র“তিও আছে। সময়ের ব্যবধানে এক সময়ের রক্ত হিম করা নাম খিজিরপুর (হাজীগঞ্জ) দুর্গ এখন এক নীরব নিস্তব্ধ পুরাকীর্তি। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ক্রমেই ক্ষয়ে পড়া এ দুর্গের অভ্যন্তর এখন ব্যবহƒত হয় গৃহপালিত পশুর চারণভূমি অথবা শিশু-কিশোরদের খেলার নির্ভরযোগ্য স্থান হিসেবে। কেল্লার পথে খাসজমির ওপর পাট গুদামগুলো স্বাধীনতার পর থেকে অস্থায়ী লিজের কারণে সৌন্দর্য ক্ষুণœœ হতে থাকে। যদিও মাঝে মাঝে চলে প্রশাসনের লোক দেখানো সংস্কার যা উল্লেখ করার মতো কিছুই নয়। আর এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন পর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্প বলে প্রতীয়মান হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন